হাজার বছর ধরে ২০০৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত একটি বাংলাদেশী চলচ্চিত্র । প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক ঔপন্যাসিক ও গল্পকার জহির রায়হান এর কালজয়ী উপন্যাস হাজার বছর ধরে অবলম্বনে একই শিরোনাম নির্মিত হয়েছিল ছবিটি । সরকারি অনুদানের এই ছবিটি পরিচালনা করেছেন জহির রায়হানের সহধর্মিনী এক সময়ের বিখ্যাত চলচ্চিত্র অভিনেত্রী কোহিনুর আক্তার সুচন্দা । ছবিতে প্রধান দুটি চরিত্র মন্তু ও টুনির ভুমিকায় অভিনয় করেছেন রিয়াজ এবং নবাগত শশী । এছাড়াও শাহনুর, সুচন্দা, এটিএম শামুজ্জামান সহ আরো অনেকে অভিনয় করেছেন । ছবিটি দক্ষ নির্মাণ শৈলী দিয়ে নির্মাণ করে সুচন্দা চলচ্চিত্র বোদ্ধাদের কাছে দারুন ভাবে আলোচিত হয়েছেন । এবং জিতে নেন মেরিল প্রথম আলো পূরস্কার এবং জাতীয় চলচ্চিত্র পূরস্কার এর শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র পূরস্কার । ছবিটি শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র পূরস্কার সহ মেরিল প্রথম আলো পূরস্কার এর একটি বিশেষ পুরস্কারসহ মোট চারটি বিভাগে ও পরে ঘোষিত জাতীয় চলচ্চিত্র পূরস্কার ২০০৫ এর মোট ছয়টি বিভাগে পূরস্কার লাভ করেন । নদী বয়ে চলেছে আপন গতিতে । গাছে গাছে ফুল ফোটে । আকাশে পাখি উড়ে আপন মনে গান গায় । হাজার বছর ধরে যেই জীবনধারা বয়ে চলেছে তাতে আশা নিরাশা প্রেম ভালবাসা চাওয়া ও পাওয়ার খেলা চললেও তা সহজে চোখে পড়ে না অন্ধকারে ঢাকা থাকে। কঠিন অচলায়তন সমাজে আর যাই থাকুক নারীর কোন অধিকার নাই । নারী হাতের পুতুল মাত্র । পুরুষ তাকে যেমন নাচায় তেমন নাচে । নিজের ইচ্ছেতে কাউকে বিয়ে করাটা এমন সমাজে অপরাধ গুরুতর অপরাধ । অন্ধকার এই সমাজে আনাচে কানাচে বাস করে কুসংস্কার, বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহ, নারী নির্যাতন ।
পরীর দীঘির পাড়ের একটি গ্রামকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে কাহিনী। কখন এই গ্রামের গোড়াপত্তন হয়েছিল কেউ বলতে পারে না। এক বন্যায় কাষেম শিকদার আর তার বউ বানের পানিতে ভেলায় ভাসতে ভাসতে এসে ঠাই নিয়েছিল এই জায়গায় । সেই থেকে এখানে পত্তন হয়েছিল শিকদার বাড়ির ।
শিকদার বাড়ীতে বাস করে বৃদ্ধ মকবুল এটিএম শামসুজ্জামান এবং তার তিন স্ত্রী সহ আবুল সিরাজ হায়দার রশিদ ফকিরের মা নাজমা আনয়ার ও মন্ত চরিত্রে রিয়াজ এবং আরো অনেকে । বৃদ্ধ মকবুলের অষ্টাদশি বউ টুনির শশী মনটা মকবুলের শাসন মানতে চায় না । সে চায় খোলা আকাশের নিচে বেড়াতে হাসতে খেলতে । তাই সঙ্গী হিসেবে বেছে নেয় অল্প বয়সী সঠামদেহী মন্তকে । মন্ত বাবা মা হারা অনাত এক যুবক । বিভিন্ন কাজ করে বেড়ায় । টুনি আর মন্ত সকলের অগোচরে রাতের বেলায় বেরিয়ে পড়ে মাছ ধরতে । বর্ষায় যায় শাপলা তুলতে । এমনি করে দুজন দুজনার কাছে এসে যায় । অব্যক্ত ভালবাসার জোয়ারে ভাসে ওরা দুজনই । কিন্ত কেউ মুখ ফুটে কেউকে বলতে পারেনা মনের কথা লোক লজ্জার ভয়ে । সমাজের রক্ত চক্ষু ওদের দুরে রাখে । গাঁও গেরামে যা হয় কলেরা বসন্তের মড়ক লাগলে উজাড় হয়ে যায় কয়েক ঘর মানুষ । ডাক্তার না দেখিয়ে টুকটাক তাবিজ করে এভাবেই দিন চলে যায় অনেকের কেউ ছুটে চলে মৃত্যুর দিকে আবার কেউ বা জীবনের সাথে যুদ্ধ করে ছুটে চলে বাঁচার দিকে একেই বলে জীবন । মকবুলের আকস্মিক মৃত্যর পর মন্ত যখন মনের কথা টুনিকে খুলে বলে তখন অনেক দেরী হয়ে যায় ।
গুন মোল্লা, আবলি, রশদ, ফকিরের মা, সালেহা কেউ নেই । টুনির সঙ্গে মন্তর অনেক দিন দেখা হয়না । টুনি হারিয়ে গেছে তার জীবন থেকে তবুও টুনিকে মাঝে মাঝে মনে পড়ে মন্তর । এমনি করে অনেকটা সময় পার হয়ে যায় অনবরত । রাতের বেলা সুরত আলীর ছেলে ওর বাপের মতোই পুঁথি পাঠ করে । শোন শোন বন্ধুগনে শোন দিয়া মন ভেলুয়ার কথা কিছু শোন সর্বজন । ভেলুয়া সুন্দরীর কথা সবাই শানে । একই তালে একই সুরে হাজার বছরের অন্ধকার এক ইতিহাস নিয়ে এগিয়ে চলে সবাই । হাজার বছরের পুরনো জোৎসনা ভরা রাতে একই পুঁথির সুর ভেসে বেড়ায় বাতাসে ।
কালের আবর্তে সময় গড়ায় । প্রকৃতিতেও পরিবর্তন আসে । শুধু পরিবর্তন আসেনা অন্ধকার কুসংস্কারাছন্ন গ্রাম বাংলার আচলায়াতন সমাজে । চলতে থাকে যুগের পর যুগ নারী অর্থাৎ মা বোনদের উপরে । শুধু এখানেই শেষ নয় অন্যবধ্য আরেকটি বাংলা সিনেমা যেমন বউ শাশুড়ীর যুদ্ধ । এই সিনেমায় দেখানো হয়েছে কিভাবে একজন শাশুড়ী একজন পুত্র বধূ অর্থাৎ একজন নারী হয়ে আরেকজন নারীকে নির্যাতন করেন । প্রতিটি গ্রাম বাংলায় চলছে নারী নির্যাতন । বাল্য বিবাহের নামে নারী দের ঠেলে দেয়া হয় ধংশের দিকে । আজকের নারী দিবসে সকলের কাছে একান্ত অনুরোধ আসুন নারীদের কাছে আরো এগীয়ে আসুন তাদের পাশে দাঁড়ান । নারীদের মা বোন ভাবতে শিখুন । বিবাহিত ভাইদের বলছি আপনার শ্ত্রী আমার বোন নয়ত ভাবী সে তার বাবা মা ভাই বোন আপন সকলকে ছেড়ে শুধু লাল শাড়ীটি পড়ে আপনার হাত ধরে চলে এসেছে তাই আপনাকে ভাবতে হবে বিয়ের পর আপনার শ্ত্রী এর আপনিই এক মাত্র আপনজন আপনি ছাড়া আর কেহ তার আপন নাই । নারী নির্যাতন দিবস সফল হউক ।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে নভেম্বর, ২০১৫ ভোর ৬:১৭