somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"মাকতুবাতে কুতুবুল ইরশাদ ও ইমাম শায়খ বোরহানুদ্দীন (রা)"

০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৫:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


"মাকতুবাতে কুতুবুল ইরশাদ ও ইমাম শায়খ বোরহানুদ্দীন (রা)"
-জাহিদ মোস্তাফি

==================================
জম্মভূমি বাংলার মাটি দেহরক্ষী হয়ে শত শত কামেল মোকাম্মেল ওলীগণকে ধারন করেছে বক্ষের বাগানে।

যে ওলীগণের ওসিলায় অস্তিত্ব সমগ্র ভূমন্ডলের। বাংলার মাটি ধন্য হয়েছে আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের বুকে ধারন করে।

এই বাংলার মাটিতে ইসলামের বীজ বপন হয়েছে সূফী সাধকদের মাধ্যমে।

আমরা যদি আল্লাহর ওলীদের জীবনী খুলে দেখি তাহলে দেখবো বিভিন্ন সূফি সাধকগণ তাঁদের অনুসারীদের চিঠিপত্রের মাধ্যমে আদেশ উপদেশ মূলক নসীহত প্রদান করেছেন।

চিঠি প্রেরনের এই সুন্নত আল্লাহর ওলীগণ মূলত গ্রহণ করেন প্রিয়তম নবীজী সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া আলি’হি ওয়া সাল্লাম এর মুবারক জীবন থেকে। বিভিন্ন দেশের রাজা বাদশাহর কাছে দ্বীনের দাওয়াত দিয়ে প্রিয় নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পত্র প্রেরণ করেছেন।

মোঘল বাদশা আকবরের ভ্রান্ত মতবাদ উচ্ছেদ করেছিলেন যে মহান ওলী ইমামে রাব্বানী কাইউমে জামান মুজাদ্দিদে আলফে সানী শায়খ আহমাদ ফারূকী সেরহিন্দী (রা)। তাঁর পবিত্র জীবন ধারায় আমরা দেখতে পাই তিনি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মুরীদদের শরীয়তের দিক নির্দেশনা এবং ত্বরীক্বতের বিভিন্ন আধ্যাত্মিক মাক্বামের বিষয়াদি চিঠির মাধ্যমে জানিয়েছেন। সমস্ত চিঠিগুলোর সংকলন বর্তমানে মকতুবাত শরীফ নামে সুপরিচিত।

এই ধারা প্রায় ওলীগণের বেলায়ই লক্ষ্য করা যায়,তেমনি ছতুরা শরীফের জমিনে শুয়ে আছেন। যিনি সাড়ে চার হাজার কুতুবের সর্দার ছিলেন। তাঁর জীবনীতে পাওয়া যায় এই মহান আল্লাহর অলীও তাঁর মুরীদদের চিঠির মাধ্যমে বিভিন্ন বিষয় অবগত করেছেন ।

কুতবুল ইরশাদ প্রফেসর আবদুল খালেক (রা)
প্রধান প্রিয়তম খলিফা হলেন আল্লামা শায়খ সায়্যিদ মুহাম্মাদ বোরহানুদ্দীন (রা)। তাঁরই মুবারক এযাযতে নেদায়ে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করেন ইমামুত্ব ত্বরীক্বত (রা)।

এই দুইজন মহান সাধকের পারস্পরিক সম্পর্কের মেছাল ছিলো হযরত বাকী বিল্লাহ (রা) ও হযরত মুজাদ্দিদে আলফে সানী (রা) এর অনুরূপ ।

পীর প্রফেসর আবদুল খালেক (রা.) বিভিন্ন চিঠির মাধ্যমে তাঁর বিভিন্ন খলীফাগণকে তাঁর প্রিয়তম খলিফা সুফী বোরহানুদ্দীনের শান,মাকাম,রুহানী পদমর্যাদা সম্পর্কে ইশারা ইংগিতে জানিয়েছেন।

একজন পীর মুর্শিদ যখন স্বয়ং তাঁর কোন বিশিষ্ট রুহানি ফরজন্দের প্রশংসা করে গর্বিত হোন, অন্য মুরিদদের কাছে বিশেষ শান,মাকাম বর্ণনা করে মকতুব বা চিঠি লিখেন তখন ইলমে তাসাউফের জগতে এর ফাযায়েল,গুরত্ব যে কত গভীর তা বর্ণনাতীত।

কুতুবুল ইরশাদ পীর প্রফেসর আবদুল খালেক (রা) তাঁর অন্যতম খলিফা হযরত ফতেহ আলী মাষ্টার (রহ) কে করাচি থাকাকালীন এক বিশেষ পত্র লিখেন সেখানে তিনি উল্লেখ করেন -

"সুফী বোরহান উদ্দীন সাহেব হযরত দাদা পীর সাহেব রাহমাতুল্লাহে আলাইহের কদম-ব-কদম চলিতেছেন। তিনি একটি দ্বীনি মাদ্রাসা কায়েম করিয়াছেন যাহার প্রত্যেকটি ছাত্রই ভালো ছালেক হইয়া যাইতেছেন। অনেকেরই কাশফ হইতেছে।

আল্লাহ তায়ালার খাছ রহমতে তিনি যে মাদ্রাসা উপলক্ষে মাহফিল করেন তাহাতে হযরত নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম ও হযরত ওয়ায়েছ কারানী (রা) সহ রূহানী ভাবে উপস্থিত থাকেন। মাদ্রাসার জন্য সব কিছু ওয়াকফ করিয়া দিয়াছেন। নিজের কাছে এক কড়া জমিনও নাই।

তাকে রুহানী ভাবে হযরত ওয়ায়েছ কারানী (রা) ওয়ায়ছিয়া তরিকার তা'লীম দিয়াছেন এবং সোহরাওয়ারদিয়া তরীকাও হযরত শাহাবুদ্দীন সোহরাওয়ারদী (রা) হইতে তা'লিম পাইয়াছেন। দোয়া করতেছি আল্লাহ পাক তাঁহাকে আরও বহুগুণে তরক্কী দান করুন এবং মুজাদ্দেদে জামান করিয়া হায়াত দারাজ করুন।"
( পীর প্রফেসর আবদুল খালেক রহ জীবন ও কর্ম - সিদ্দিক আহমদ )

উক্ত চিঠি হতে বুঝা যায় সূফী বোরহানুদ্দীন (রা) কত উচ্চ মর্তবার আল্লাহর ওলী ছিলেন ,উনার হাল ও বুজুর্গীর বিষয়ে আর কোন মন্তব্যের প্রয়োজন হয় বলে মনে হয় না ।

সুফী বোরহানুদ্দীন কেমন আল্লার ওলী ছিলেন স্বয়ং তাঁর পীর মুর্শিদই তা নিজহস্তে লিখে গেছেন। পর্বরতীতে যা সবার জন্য দলিল হয়ে থাকবে।

ইমামুত্ব তরিক্বত (রা) তাঁর কামেল পীরের দোয়ার বরকতে বিশেষ রিয়াজত ও সাধনা, গবেষনার মাধ্যমে পরবর্তীতে আল্লাহর হাবীব (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম) কর্তৃক খাসনামে “আহমাদীয়া তরিকা” প্রাপ্ত হন।

সেখানে ১১ তম লতিফা আবিস্কৃত হয়। সুলতানুল আযকার কুবরার মাকাম বা দায়রা আবিস্কৃত হয়। ১১ তম লতিফা খলার (শূন্য) মাধ্যমে বিনয় প্রতিষ্ঠা হয় সালেকের জীবনে, বর্তমানে এই লতিফা খলার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত পরমানু বিজ্ঞানী প্রফেসর ড.এম শমশের আলী স্যার।

এই বিশাল অর্জনকে আগেই স্বীয় রুহানী দৃষ্টিতে উপলব্ধি করে পীর প্রফেসর (রা) বলে গিয়েছেন।

এ প্রসঙ্গে ইমামুত্ব তরিক্বত (রা) বলেন “বায়াত গ্রহনের শুরতেই পীর ক্বিবলা আমাকে হযরত মুজাদ্দিদে আলফে সানী (রা) সহিত রুহানী তার সংযোগ করিয়া দিলেন

১৯৪৮ ইং জানুয়ারীতে পীর ক্বিবলা (র) নির্দেশ দিলেন "আপনার সিলসিলা এক বিরাট মকবুল জামাতে পরিনত হইবে।"

দ্বিতীয় বার লিখেন "আপনার সিলসিলার তা’লীম আমাদের ত্বরিক্বার সকলকে দিতে চেষ্টা করিবেন।"

তৃতীয় বার লিখেন” আমাদের ত্বরীক্বার মধ্যে আপনি সবচেয়ে নিকটে।"

১৯৫২ ইং সনে তিনি আহকারকে পাগড়ী মুবারক দান করেন।

ইন্তিকালের কিছুদিন পূর্বে অন্তিম অবস্থায় শেষবার তিনি বলেন “সৈয়দ আহমদ শহীদ বেরেলবী (র) সাহেবের টুপী আমার কাছে আছে লইয়া যাইবেন”
-(হাদিয়াতুস সালেকিন)

মুর্শিদে বরহক্বের সমস্ত দোয়া,স্বপ্ন কবুল হলো।
মুর্শিদের প্রিয় ফরজন্দ সুফী বোরহান পরবর্তীতে হলেন ত্বরীক্বতের ইমাম। “ত্বরীকায়ে আহমাদিয়া" এর সিলসিলা এক বিরাট মকবুল জামাতে পরিণত হলো।

আহমাদিয়া ত্বরিক্বার গুলবাগিচায় সালেকদের যিকিরের সৌরভ ছড়িয়ে পড়লো। যে সৌরভে আমোদিত হয় আজো তালেবে মাওলাগণ।

কবি আরেফা বিল্লাহ কত চমৎকার করে বলছেন-
"আল্লামা শায়খ বোরহানুদ্দীন
নামেতে "ধর্মের দলীল তুমি-
দ্বীনের অকাট্য প্রমাণ"!
কামেতে- মানব হিতৈষী, এতিমের পৃষ্ঠপোষক
ত্বরীকায়ে আহমাদিয়ার ইমাম তুমি আমীরুশ শরীয়ত।"

সালাম হে ইমাম সালাম!

লেখক : ছাত্র, ইংরেজি বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।
#ইমামুত্ব_ত্বরিক্বত_দশক_২০১৭
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৫:০৭
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বাগতম ইরান

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৩

ইরানকে ধন্যবাদ। ইসরায়েলকে দাত ভাঙ্গা জবাব দেওয়ার জন্য।

হ্যাঁ, ইরানকে হয়তো এর জন্য মাসুল দেওয়া লাগবে। তবে, কোন দেশ অন্য দেশের সার্বভৌমত্বে হস্তক্ষেপে করবে আর সেদেশ বসে থাকবে এটা কখনোই সুখকর... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:৩৯




আমরা পৃথিবীর একমাত্র জাতী যারা নিজেদের স্বাধীনতার জন্য, নিজস্ব ভাষায় কথা বলার জন্য প্রাণ দিয়েছি। এখানে মুসলিম হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান চাকমা মারমা তথা উপজাতীরা সুখে শান্তিতে বসবাস করে। উপমহাদেশের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্যা লাস্ট ডিফেন্ডারস অফ পলিগ্যামি

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০


পুরুষদের ক্ষেত্রে পলিগ্যামি স্বাভাবিক এবং পুরুষরা একাধিক যৌনসঙ্গী ডিজার্ভ করে, এই মতবাদের পক্ষে ইদানিং বেশ শোর উঠেছে। খুবই ভালো একটা প্রস্তাব। পুরুষের না কি ৫০ এও ভরা যৌবন থাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার প্রিয় কাকুর দেশে (ছবি ব্লগ) :#gt

লিখেছেন জুন, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৩



অনেক অনেক দিন পর ব্লগ লিখতে বসলাম। গতকাল আমার প্রিয় কাকুর দেশে এসে পৌছালাম। এখন আছি নিউইয়র্কে। এরপরের গন্তব্য ন্যাশভিল তারপর টরেন্টো তারপর সাস্কাচুয়ান, তারপর ইনশাআল্লাহ ঢাকা। এত লম্বা... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেরত

লিখেছেন রাসেল রুশো, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:০৬

এবারও তো হবে ইদ তোমাদের ছাড়া
অথচ আমার কানে বাজছে না নসিহত
কীভাবে কোন পথে গেলে নমাজ হবে পরিপাটি
কোন পায়ে বের হলে ফেরেশতা করবে সালাম
আমার নামতার খাতায় লিখে রেখেছি পুরোনো তালিম
দেখে দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×