১৯৯৫ সালের কথা। তখন ছাত্রজীবন, ছাত্র রাজনীতির পাশাপাশি সাহিত্যচর্চা করতাম। বিভিন্ন জাতীয় দিবস গুলোতে সাহিত্য সাময়িকী বের করতাম। সে সময় বিজয় দিবসে ‘মুক্তি’ নামে একটি সাহিত্য সাময়িকী বের করবো, কিন্তু আমার কাছে টাকা নেই।
কারো কাছেই টাকা চেয়ে পেলাম না অতঃপর সাহস করে মাকে বললাম। আমার মা কিছু না ভেবেই তার গলার সোনার হারটি বন্ধক রেখে আমাকে টাকা দিলেন পত্রিকা করার জন্য। একবার মা তার কানের দুল বিক্রি করে আমাকে টাকা দিয়েছিলেন আমার প্রথম বই ছাপানোর জন্য। আমার সাহিত্যচর্চার ২৬ বছর পার হলো। আজ ২৬ বছর পরে আমার মায়ের হাতে তুলে দিলাম আমার ১৪তম কাব্যগ্রন্থ 'নির্বাচিত কবিতা'। এর চাইতে আমার সুখের আর কি আছে? আমার ১৪ টি বই, অনেক গুলো পত্রিকা, আমার পরিচিতি, আমার লেখালেখি, সাংবাদিকটা, চাকুরী, সংসার আর আমার যা যা কিছু অর্জন আছে, সব কিছুর পিছনে আমার মায়ের দীর্ঘ অবদান। আমার বাবা ভাষা সৈনিক এবং মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। তিনি সরকারি বেসরকারি চাকুরীর পাশাপাশি লেখালেখি করতেন (ইত্তেফাকে তার অসংখ্য কলাম ও চিঠিপত্র বিভাগে লেখা প্রকাশিত হয়েছে)। তিনি আমার জন্য বই কিনে আনতেন। বাবা চাইতেন আমি লেখক হওয়ার পাশাপাশি যেন একজন মানুষ হই। আসলে, মায়ের প্রেরণায় লেখক হয়তো হয়েছি কিন্তু এখনো মানুষ হতে পারিনি। এক জীবনে পুরোপুরি মানুষ হওয়া যায় না, বাবা। আজ বাবা নেই। তিনি বেঁচে থাকলে তাঁর হাতেও আমার বইটি তুলে দিয়ে ছবি তুলতে পারতাম।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১২:২১