somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইতিহাসের রোহিঙ্গা

১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সকাল ১০:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




এ ছবিটা ইতিহাসের অবিশ্বাস্য জবানবন্দী দেয়। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক বার্মার জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের অন্যতম কেন্দ্রভূমি ছিল রেঙ্গুন বিশ্ববিদ্যালয়। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র ইউনিয়ন (আরইউএসইউ) নেতারা বসে আছেন ছবিতে। এটা ১৯৩৬ সালের ছবি। মাঝখানের ব্যক্তিটি হলেন এম এ রাশিদ। তাঁর ডানের ব্যক্তিটি হলেন ভবিষ্যতের জেনারেল অং সান (আজকের সুচির বাবা)। এই দু'জন এবং উ নু ছিলেন তিন প্রাণের বন্ধু এবং তখন রেঙ্গুন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আন্দোলনের মুল স্তম্ভ । এরাই পরে "অল বার্মা স্টুডেন্টস ইউনিয়ন" গড়ে তুলেছিলেন এবং এম এ রাশিদ ছিলেন যার সভাপতি। এম এ রাশিদকে অং সান বলতেন "রশিদ ভাই"। অং সানের অস্বাভাবিক মৃত্যুর দিন পর্যন্ত এই রাজনৈতিক বন্ধুত্ব বজায় ছিল তাঁদের। বার্মার সংবিধানের অন্যতম খসড়াকারী ছিলেন এম এ রশিদ। পরবর্তীকালে তিনি দেশটির শ্রমমন্ত্রী হন। রাশিদের মতোই অং সানের আরেক গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক সহযোগী ছিলেন আবদুল রাজ্জাক। যিনি অং সানের সঙ্গেই ১৯৪৭-এর ১৯ জুলাই মারা যান। যেদিনকে বার্মা শহীদ দিবস হিসেবে পালন করে থাকে। রাজ্জাক ছিলেন বার্মা মুসলিম কংগ্রেসের সভাপতি। অং সান-রশিদ-উ নু-রাজ্জাক প্রমুখের বন্ধুত্ব স্বাধীনতার উষালগ্নে বার্মায় ‘বৈচিত্র্যের মাঝে ঐক্যে’র যে সম্ভাবনা তৈরি করেছিল আজ যে তার অবসান ঘটেছে সেটা বলাই বাহুল্য। [Curtsey for information and photo: Altaf Parvez]। বাপের (অং সান) ইতিহাস এবং উত্তরাধিকার মেয়ে র(সুচি) এভাবে ছুড়ে ফেলা ইতিহাসের এক নিষ্ঠুর তামাশা। আজকে যখন মিয়ানমার রাষ্ট্র বলে রোহিঙ্গা মুসলমানরা আরাকানের কেউ নয়, তখন এটাকে বুঝতে হবে ইতিহাসের নির্লজ্জ মিথ্যাচার হিসাবে।




কয়েকদিন আগে ফেসবুকের একটা লেখায় দেখলাম রোহিঙ্গাদের মধ্যে কেন কবি ও নেতা তৈরি হয়নি? এই নির্বোধেরা বুঝতে পারেনি যে, ওদের সব ছিল। কবি, সাংসদ, নেতা সব ছিল। বর্মী জাতীয়তাবাদের তিন প্রাণপুরুষের একজন রোহিঙ্গা অাব্দুর রশীদ। ৬০ বছরে এদের সব শেষ করা হয়েছে। হত্যা করা হয়েছে সব নেতাদের।
বিভিন্ন সময়ে মিয়ানমারে দুই নারীসহ ১৭ জন রোহিঙ্গা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। তাদের একজন স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেন। এই তথ্য পাওয়া যায় চলতি সংসদের চাঁদপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি। রোহিঙ্গা শরণার্থী বিষয়ে সংসদে প্রস্তাব উত্থাপনকালে নিজের বক্তব্যে দীপু মনি বলেন, ‘১৯৪৮ সালে বার্মার স্বাধীনতার ঠিক পূর্বমুহূর্তে ১৯৪৭ সালের নির্বাচনে এম এ গাফ্ফার এবং সুলতান আহমেদ নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৫১ সালে সাধারণ নির্বাচনে পাঁচ জন রোহিঙ্গা তৎকালীন বার্মার পার্লামেন্টে নির্বাচিত হয়েছিলেন। তাদের মধ্যে একজন ছিলেন জুরা বেগম। তৎকালীন বার্মার নির্বাচিত প্রথম দুইজন নারীর একজন হলেন এই জুরা বেগম। ছয়জন এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন ১৯৫৬ সালের সাধারণ নির্বাচন ও পরবর্তী যেসব উপনির্বাচন হয়েছিল তাতে। দেশটিতে ১৯৯০ সালে যে সাধারণ নির্বাচন হয়েছিল, তাতে রোহিঙ্গাদের নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি ফর হিউম্যান রাইট চারটি আসনে জয়ী হয়। ওই চারজন এমপি হলেন, সামসুল আনোয়ারুল হক, ইব্রাহিম, ফজল আহমেদ ও নূর আহমেদ। দীপু মনি বলেন, ‘সুলতান মাহমুদ একজন রোহিঙ্গা রাজনীতিবিদ। তিনি বার্মা সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বও পালন করেছেন।’ দীপু মনি বলেন, তিনি মনে করেন ১৯৮২ সালে প্রণীত নাগরিকত্ব আইন দিয়ে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের সব অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়।
অতচ আজকের মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের দেখুন। আন্তর্জাতিক আইনে শরণার্থী মর্যাদার পূর্ণ দাবিদার হওয়া সত্ত্বেও ধর্মীয় পরিচয়ের কারণে এবং পরাশক্তিগুলোর ভূরাজনৈতিক লীলাখেলার রসদ হয়েছে তারা। তাদের মারলে কোনো দোষ নেই। তাদের জন্য জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী হস্তক্ষেপ কিংবা উদ্বাস্তু তহবিলের টাকার টানাটানি কখনো শেষ হয় না।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সকাল ১০:৫৬
১৮টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×