somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সাজেকের মেধাবী মুখ- রুপঞ্জী (Ruponjy)

০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ২:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

২৫ জানুয়ারী ২০১৮। আমরা পাঁচ বন্ধু মিলে সস্ত্রীক অবস্থান করছিলাম সাজেক রিসোর্টে। সকালে নাস্তার পর সবাই মিলে সাব্যস্ত করলাম, সাজেকের সর্বোচ্চ পয়েন্ট “কংলাক পাহাড়” এ আরোহণ করবো। অনেকটা পথ মাইক্রোবাসেই ওঠা গেল। বাকী সামান্য কিছুটা পথ পায়ে হেঁটে উঠতে হবে। পায়ে চলা পথ পাহাড় বেয়ে ওপরে উঠে গেছে, জায়গায় জায়গায় খাঁজকাটা সিঁড়িও আছে। মধ্যবর্তী একটা জায়গায় সামান্য একটু সমতল ভূমির মত পাওয়া গেল। সেখানে দেখলাম ১৩/১৪ বছরের এক পাহাড়ী ছেলে দাও হাতে বাঁশ, কঞ্চি ইত্যাদি কাটছে এবং পাহাড়ী ঝোপ ঝার পরিষ্কার করছে। ছেলেটার চেহারা বেশ মায়াবী। তবে চোখে মুখে আত্মবিশ্বাস এবং বুদ্ধিমত্তা স্বাভাবিক ঔজ্জ্বল্যে দীপ্যমান। তাকে ডেকে জিজ্ঞেস করলাম, ও সেখানে কী করছে। ও জানালো, ন্যূনতম খরচে পর্যটকদের জন্য ও সেখানে একটা অস্থায়ী টী স্টল দিতে চায়। এজন্য সে জায়গাটা পরিষ্কার করছে। চিকন বাঁশ ফালা ফালা করে কেটে জোড়া দিয়ে একটা টেবিল বানিয়েছে। কিছু পরিত্যাক্ত গাছের গুঁড়ি ও তক্তা সংগ্রহ করে পর্যটকদের বসার জন্য কয়েকটা বেঞ্চি বানিয়েছে। এই উদ্যমী কিশোরের এতটা কর্মস্পৃহা এবং প্রায়োগিক বুদ্ধি দেখে মুগ্ধ হয়ে আমাদের মধ্য থেকে একজন তার হাতে কিছু অর্থ দিয়ে বললো, মনে কর আমিই তোমার দোকানের প্রথম কাস্টমার, এবং এটা তোমার প্রথম এক কাপ চায়ের মূল্য। এর একটা সংক্রামক প্রতিক্রিয়া হলো, তার দেখাদেখি আমরা আরো দু’জন কিছুটা সাহায্যের হাত প্রসারিত করলাম। তাকে ডেকে বললাম, এ সামান্য পুঁজিটুকু সে যেন তার ব্যবসায়ে কাজে লাগায়। সে প্রথমে একটু অবাক হলো, তার পরে শুধু একটা নির্বাক হাসি দিয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলো এবং ওটুকুই তার জন্য যথেষ্ট, আর যেন না দেই, বাকী দু'জনকে দেখিয়ে আমাকে সে অনুরোধ করলো। তাৎক্ষণিকভাবে উপলব্ধি করলাম, এখানেই আমাদের আর ওদের মধ্যে পার্থক্য।

এরই মধ্যে ওর সাথে কিছুটা ঘনিষ্ঠ আলাপচারিতা জুড়ে দিলাম। ওর পরিবারে কে কে আছে জেনে নিলাম। মাতৃতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় ওরা মানুষ। মা ই সংসারের চালিকা। সাংসারিক প্রয়োজনে পাহাড়ের চড়াই উৎরাই পেরিয়ে সে বহুবার পার্শ্ববর্তী দেশের ত্রিপুরা গমনাগমন করেছে। সড়ক ধরে যাওয়া আসা করাটা ব্যয়বহুল এবং ঝামেলাপূর্ণ। ওরা এসবের ধার ধারেনা। দশ বারটা পাহাড় মারিয়ে সীমান্ত প্রহরীদের চোখ ফাঁকি দিয়ে এপার ওপার করাটা এই পুঁচকে ছেলেটার কাছেও নস্যি মাত্র। আমাদের এক বন্ধুর প্রশ্নের উত্তরে সে জানালো যে সে বহুবার জাম্পুই গেছে। জাম্পুই হচ্ছে মিজোরাম সীমান্তে অবস্থিত ত্রিপুরা রাজ্যের একমাত্র হিল স্টেশন। আলাপচারিতার পর আমরা আমাদের একটা বৃন্দছবি তুলে দেয়ার জন্য ওকে অনুরোধ করলাম। সে সন্তুষ্ট চিত্তে রাজী হলো। ক্যামেরা হ্যান্ডলিং দেখে বুঝতে পারলাম, এ কাজে সে নতুন নয়। তারপর ছবি দেখে সবাই মুগ্ধ হ’লাম।

সে তার পরিকল্পনার কথা জানালো। সাজেকে এখন পর্যটকদের অনেক ভিড় লেগেই থাকে। সে সপ্তাহে ছুটির দু’দিন এই চায়ের দোকানে সারাদিন ধরে কাজ করবে। বাকী দিনগুলোতে সে যথারীতি স্কুলে যাবে। সে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে, তার রোল নং ২। আমি তার মাথায় হাত দিয়ে দোয়া করলাম, তার সাফল্য কামনা করলাম। পরের শ্রেণীতে উঠে যেন তার রোল নং ১ হয়, সে শুভকামনা রেখে আসলাম এবং সব সময় লেখাপড়াটাকেই সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়ার পরামর্শ দিলাম। পকেট থেকে একটা চিরকুট বের করে আমি তার নামটা লিখে দিতে (মানে অটোগ্রাফ দিতে) বললাম। সে ইংরেজীতে তার নামটা লিখলো ‘Ruponjy’. ক্লাস সিক্সের ছাত্র হিসেবে তার হাতের লেখাটাও সুন্দর।

যারা হাতের কাজে ভাল, তাদেরকে আমি বরাবরই সমীহ করে থাকি। রুপঞ্জীকে দেখে আমার মনে হয়েছে, সে জীবনে যা কিছুই করুক, সাফল্যের পেছনে তাকে ছুটতে হবেনা। মেধা ও পরিশ্রমের যৌথ চর্চা তাকে একদিন কাঙ্ক্ষিত সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দেবে, যদি না সে অসৎ সঙ্গের কারণে বিপথগামী হয়।

ঢাকা
০৭ ফেব্রুয়ারী ২০১৮
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।

পথের পাশের ঝোপঝার পরিষ্কার করে বিশ্রাম নিচ্ছে রুপঞ্জী



আত্মপ্রত্যয়ী রুপঞ্জী



সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ৯:১৮
৩৪টি মন্তব্য ৩৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×