আমার শৈশব-কৈশোরের রমজানের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে প্রথম পর্বেই যে কথাটার উল্লেখ করা উচিত ছিল এবং যা আমি মিস করে গেছি, তা হচ্ছে মধ্যরাতের ক্বাসিদা। সে সময় পাড়ায় মহল্লায় তরুণ যুবারা রাত দু’টা আড়াইটার পর থেকে দলবেঁধে গান গেয়ে এলাকাবাসীদেরকে ঘুম থেকে জাগিয়ে তুলতো। কোন দুয়ারে করাঘাত না করেও শুধু গান গেয়ে এবং গানের ফাঁকে ফাঁকে সঠিক সময় জানান দিয়ে তারা এলাকাবাসীকে শয্যাত্যাগের অনুরোধ জানাতো। বেশীরভাগ ক্ষেত্রে তারা হামদ, না’ত, গযল ইত্যাদি গাইতো, কোথাও কোথাও এতদুপলক্ষে বিশেষভাবে রচিত গানও তারা গাইতো। তখন সেলফোন বিহীন আমাদের জীবন কেমন ছিল তা কল্পনা করতেও বর্তমান প্রজন্মের কষ্ট হবে। ঘুম থেকে ওঠার জন্য একমাত্র ভরসা ছিল টেবিল ঘড়ির এলার্ম। কোন কারণে কোনদিন সেটা মিস হয়ে গেলে সেদিনের রোযাটা সেহরী না খেয়েই রাখতে হতো। এই অবস্থায় মহল্লার যুবকদের এই ক্বাসিদার আয়োজন বেশ ভাল কাজ দিত এবং এলাকাবাসী তাদের উপর ভরসা করে নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারতেন। এই স্বেচ্ছাশ্রমের বিনিময়ে তারা ঈদের দিন নামায পড়ে ঘরে ঘরে গিয়ে মুরুব্বীদের কাছ থেকে “ঈদী” আদায় করতো। শীতের রাতে লেপের নীচে শুয়ে ওদের কন্ঠে সেই ঘুম ভাঙানিয়া গান শুনতাম আর আবেশে চোখ দুটো আবার বন্ধ হয়ে আসতো এই ভেবে ভেবে যে ইস, ওরা কী কষ্টটাই না করছে!
রোযার মাসে আরেক ধরণের গান বাজনার প্রচলন দেখেছি ওমানে থাকতে। তারাবীর নামাযের পর ওমানিরা অনেকে সপরিবারে বের হয়ে যেত কোন পার্কে অথবা সাগর সৈকতে। সাথে থাকতো তাদের এক ধরণের দেশী বাদ্যযন্ত্র। উপসাগরীয় অন্যান্য আরব দেশের তুলনায় ওমানিরা ছিল সঙ্গীত ও বাদ্যযন্ত্রের প্রতি অধিকতর সহনশীল। ওদের ট্রাডিশনাল মিউজিকেও ছিল অনবদ্য রিদম। সামাজিক বিভিন্ন অনুষ্ঠান, যেমন বিয়ে, খৎনা এমনকি শোকদিবস পালনেও ওরা ছেলে বুড়ো, নারী পুরুষ সবাই মিলে দিবস অনুযায়ী বিশেষ ধাঁচের নৃত্যগীতে অংশ নিয়ে থাকে। আমাদের একতারা দোতারার মত ওদের “ঊদ” নামের এক ধরণের বাদ্যযন্ত্র আছে। সালেম রাশেদ আল-সূরী নামে ওমানের একজন বিখ্যাত ঊদবাদক এবং গায়ক সমগ্র আরব বিশ্বে একজন জনপ্রিয় কন্ঠশিল্পী ছিলেন। তিনি একাধারে গীতিকার, ঊদবাদক এবং গায়ক ছিলেন, “সট” নামের এক ধরণের উপসাগরীয় গান রচনা ও নিজস্ব শৈলীতে গায়কির জন্য তিনি বিখ্যাত ছিলেন। ওমানের “সূর” প্রদেশে তার জন্ম ও মৃত্যু হয় (১৯১০-১৯৭৯), এজন্য নামের শেষে তিনি নিজ বংশের উপাধির স্থলে “আল সূরী” উল্লেখ করে গর্ব বোধ করতেন। সূর বন্দর থেকে বিভিন্ন নৌযানে করে তিনি ভারতীয়, আরব উপসাগরীয় এবং আফ্রিকান বন্দরে বন্দরে যেতেন এবং গান করে বেড়াতেন, এজন্য তাকে “সালেম- দ্য সিঙ্গিং সেইলর” উপাধি দেয়া হয়েছিল। ওমানী জাতির সঙ্গীতের ‘আইকন’ হিসেবে তিনি স্বীকৃত হন। ওমানের বর্তমান সুলতান ক্বাবুস বিন সাঈদ ১৯৭০ সালে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হবার পর ১৯৭১ সালে তিনি বাহরাইনের অস্থায়ী নিবাস ছেড়ে ওমানে চলে আসেন এবং সুলতানের সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা নিযুক্ত হন।
রোযার মাসে দেখেছি, সাগরের তীরে বসে ওমানি পুরুষ লোকটি হয়তো আনমনে ঊদ বাজিয়ে চলেছে, সাথে কন্ঠ মেলাচ্ছে তার স্ত্রী ও সন্তানেরা, কিংবা সাথে আসা পারিবারিক বন্ধু বান্ধবেরা। বয়স্করা হয়তো কেউ কেউ সীসা খাচ্ছে, কম বয়েসীরা সিগারেট টানছে। সেহরীর আগে পর্যন্ত বীচে থাকা যায়, ভয়ের কোন কারণ নেই। ঘোড়ায় চড়ে মাউন্টেড পুলিশ সাগরের তীর ঘেঁষে টহল দিয়ে যায়, কাউকে কিছু বলে না, তবে তাদের উপস্থিতিই অপরাধ ঠেকানোর জন্য যথেষ্ট। কেউ কেউ কিছুক্ষণ গান করে আর সাগর তীরের হাওয়া খেয়ে শপিং মলে চলে যায়, কিংবা কোন রেস্টুরেন্টে সেহরী খেতে অথবা কোন আত্মীয় স্বজনের বাসায় সামাজিক কল অন করতেও যায়। একসাথে সেহরী খেয়ে বাসায় ফিরে এসে তাহাজ্জুদ আর ফজর নামায পড়ে ঘুমিয়ে পড়ে। আমরাও দুই একটা পরিবার মিলে বাচ্চাদের নিয়ে মাস্কাটের রিয়াম পার্কে কিংবা বাসার কাছের কুরম বীচ অথবা আল খুওয়াইর বীচে চলে যেতাম। বাচ্চারা ছুটোছটি করে ক্লান্ত হয়ে যেত, আমরাও গল্প গুজব করে একসাথে সেহরী খেয়ে ঘরে ফিরতাম। খুব ভাল কেটেছিল সেসব দিন। আর বিশ্বকাপের খেলা চলাকালীন সময়ে তো থাকতো কত না নানাবিধ আয়োজন! ওমানে থাকতে ফুটবল ও ক্রিকেটের একটি করে বিশ্বকাপ প্রতিযোগিতা পেয়েছিলাম, যা সবান্ধবে, সপরিবারে উপভোগ করে প্রভূত আনন্দ লাভ করেছিলাম।
মাস্কাটের বেশীরভাগ বড় মাসজিদগুলোতে সেখানকার গণ্যমান্যদের বদান্যতায় মুসল্লী ও মুসাফিরদের জন্য বিনামূল্যে ইফতারী সরবরাহ করা হতো। কোন কোন মাসজিদে ফ্রী সেহরীও দেওয়া হতো। আমি থাকতাম মেদিনাত ক্বাবুসে। আমাদের মহল্লার একটা মাসজিদে আমি তারাবীর নামায পড়তাম, যেখানে এক জামাতে বিভিন্ন মাযহাবের লোকের সাথে নামায পড়েছি। সেই মাসজিদের ইমাম সাহেব ছিলেন পেশায় একজন স্কুল শিক্ষক, সামাজিক দায়িত্ব হিসেবে তিনি পাঁচ ওয়াক্ত নামাযে ইমামতি করতেন। তিনি ‘আল্লাহু আকবর’ বলে যখন নামায শুরু করতেন, কখনো নিয়্যাৎ এর পর হাত বাঁধতেন না, তাঁর হাত সব সময় ছাড়া থাকতো। এটা দেখে প্রথমদিন আমি বেশ কনফিউজড হয়ে গিয়েছিলাম। অনেকেই তার অনুসারী ছিলেন। আবার কেউ কেউ নিয়্যাৎ এর পর বুকে হাত বাঁধতেন, কেউ কেউ আমারই মত নাভীর উপরে। তবে মূল বিষয়গুলোতে বিশেষ কোন পার্থক্য ছিল না, যেমন সুরা ক্বিরাত পাঠ, রুকু সিজদা, সালাম ফিরানো, ইত্যাদি। তারাবির পর সেই মাসজিদে প্রত্যেককে একটা করে ঠান্ডা জুসের বোতল কিংবা সফট ড্রিঙ্কস ধরিয়ে দেয়া হতো। নামাযের পর জুসপানের সময় মুসল্লীরা নিজেদের মধ্যে সংক্ষেপে ভালমন্দ আলাপচারিতা সেরে নিতেন। বেশ ভাল লাগতো এসব ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আনুষ্ঠানিকতা।
ওমান থেকে দেশে ফিরে এসে আমি প্রতিটি রোযার মাসে আমার তিন ছেলেকে নিয়ে যখন যেখানে থেকেছি, সেখানকার স্থানীয় মাসজিদে তারাবীহ এর নামায পড়েছি। আমার তিন ছেলেকে পবিত্র ক্বোরান পাঠ এর তালিম আমি নিজেই দিয়েছি, যেমন আমাদের সাত ভাইবোনকে আমার আব্বা দিয়েছিলেন। ক্বোরান পাঠের সময় যেখানে যেখানে প্রার্থনার আয়াত পেয়েছিলাম, সেগুলো নিজেও যেমন মুখস্থ করেছিলাম, ছেলেদেরকেও করিয়েছিলাম। ছেলেরা তারাবীর তেলাওয়াতের সময় মনযোগী থাকে কিনা, সেটা পরীক্ষার জন্য মাসজিদ থেকে হাঁটতে হাঁটতে ঘরে ফেরার সময় ওদেরকে জিজ্ঞেস করতাম, বলতো, আজকের তেলাওয়াতে তোমাদের মুখস্থ করা কোন আয়াত ছিল কিনা? দেখতাম, বেশীরভাগ সময়েই ওরা সে পরীক্ষায় পাশ করতো। আমার মন তা দেখে আনন্দে ভরে উঠতো।
আমি তখন ঢাকার অর্ডন্যান্স এস্টেট এ থাকি। সেবারের রোযায় আমরা সবাই মিলে নিকটস্থ আর্মী ইঞ্জিনীয়ার্স ব্রিগেড এর মাসজিদে মাগরিব, খতমে তারাবীসহ এশা আর ফজর এর নামায পড়তাম। যোহর আর আসর যে যার সুবিধেমত পড়তাম। আমার বড় ছেলে তখন ক্যাডেট কলেজে পড়তো, এসএসসি এর টেস্ট পরীক্ষা দিয়ে ছুটিতে বাসায় এসেছে। ও এমনি ভীষণ বইপ্রেমী ছিল আশৈশব, শুধু স্কুলের পাঠ্যপুস্তক বাদে। ও ছুটিতে এসেই ঘোষণা দিয়েছিল যে এসএসসি পরীক্ষার জন্য ওর প্রস্তুতি পর্যাপ্ত নয়, কাজেই সেই রোযার মাস টার ও পূর্ণ সদ্ব্যবহার করতে চায়। আমরা এর আগে পাঠ্যসূচীর পড়াশুনার ব্যাপারে ওকে এতটা আগ্রহী কখনো দেখিনি, যদিও পাঠ্যসূচী বহির্ভূত পড়াশুনায় ওর জুড়ি ছিলনা। তাই আমরাও মনে মনে খুশীই হ’লাম। একসাথে শীতের মধ্যে মাসজিদ থেকে ফজরের নামায পড়ে বাসায় এসে যখন আমরা একে একে যার যার রুমের বাতি নিভিয়ে শুয়ে পড়তাম, তখন শুধু ওই একা একা বাতি জ্বালিয়ে রেখে নীরবে পড়াশুনা করতো। এটা দেখে যতক্ষণ ঘুমে আমার নিজের চোখদুটো বুঁজে না আসতো, ততক্ষণ আমি যিনি আমাদের কৃতকর্মের পুরস্কার দেয়ার মালিক, তাঁর সমীপে আর্জি জানাতে থাকতাম, তিনি যেন ওর এই শ্রমের যোগ্য পুরস্কারটুকু ওকে আপন করুণায় দান করেন। ছাত্রজীবনে আমি নিজেও দেখেছি, ফজরের নামাযের পরের এই সময়টুকুতে পড়াশুনা খুব ভাল হয়, সহজে কনসেনট্রেট করা যায়, স্মরণশক্তিও তখন প্রখর থাকে। তাই ও একা জেগে জেগে পড়ছে, এ ভাবনাটাতে একটু কষ্ট পেলেও আমি ওকে উৎসাহিত করতাম, ঐ সময়টাতেই যেন ও বেশী করে পড়াশোনা করে। যিনি সর্বোত্তম প্রার্থনা শ্রবণকারী, তিনি একজন রোযাদার হিসেবে আমার প্রার্থনা শ্রবণ করেছিলেন এবং তা মঞ্জুরও করেছিলেন। আলহামদুলিল্লাহ, আমার ছেলে সে বছর ঢাকা বোর্ড থেকে সকল বোর্ড মিলিয়ে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে মেধা তালিকায় প্রথম স্থান অধিকার করেছিল। তার পরীক্ষার ফলাফল প্রথম শোনার স্মৃতি নিয়ে অবশ্য এর আগেও একটা পোস্ট লিখেছিলাম, যেটা একজন পাঠক মন্তব্যে উল্লেখ করেছেন। তার মন্তব্য পড়ে সে পোস্টের লিঙ্কটাও এখানে উল্লেখ করা সমীচীন বলে মনে হলো। সেই পোস্টের লিঙ্কঃ
একটি সুখের স্মৃতি—করুণাময়ের অপার দান কৃতজ্ঞতায় স্মরণ
বছর ঘুরে ঘুরে রমজান আসে। রমজান অত্যন্ত পবিত্র মাস। সৎকর্ম ও সদাচারণের মাধ্যমে সৃষ্টিকর্তার নৈকট্য লাভের মাস, করুণা ও ক্ষমা লাভের মাস। এ সুযোগটি আজ যারা পাচ্ছেন, তারা আগামী বছরে তা নাও পেতে পারেন। প্রতিদিন মাসজিদে তারাবীর নামাজ পড়ে যখন বাসায় ফিরি, তখন কয়েকটি পরিচিত মুখ মনে ভেসে ওঠে। যেমন কর্নেল নজরুল (অবঃ)এর কথা, যিনি আমার তিন শিক্ষাবর্ষের জ্যেষ্ঠ্য ছিলেন। গত কয়েক রমজান মাসে তাঁকে দেখতাম, তারাবীর শেষে তিনি দ্রুত মাসজিদ থেকে বের হয়ে এটিএম বুথের কোণায় কাঠবাদাম গাছটির নীচে দাঁড়িয়ে থাকতেন। মাসজিদের দোতলা থেকে ভাবী নেমে এলে ওনারা দু’জন একসাথে হাঁটতে হাঁটতে বাড়ী ফিরতেন। একই পথে আমার বাসাও পড়ে বিধায় কখনো কখনো আমিও তাদের পাশাপাশি হেঁটে বাড়ী ফিরতাম। এমন কি কিয়ামুল্লাইল নামায পড়েও তাদেরকে এভাবে একসাথে হেঁটে বাড়ী ফিরতে দেখেছি। আজ তিনি শায়িত বনানী কবরস্থানে, তাঁর আমলনামা শেষ হয়ে গেছে। যেটুকু সাথে নিয়ে গেছেন, সেটুকুই সম্বল। ভাবীও এখন আর একা একা মাসজিদে আসেন না। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইবনে ফজলে সাইদুজ্জামান (অবঃ) কে সব সময় মাসজিদের প্রথম কাতারে দেখতাম। এমনকি এবারের তারাবীতেও দেখেছি। হঠাৎ করে তিনি কয়েকদিন আগে মাথা ঘুরে পড়ে গেলেন, এমনকি জ্ঞানও হারান নি, শুধু হাঁটুতে চোট পেয়েছিলেন। সেখানে রক্ত জমে যাওয়াতে সামান্য সার্জারীর প্রয়োজন ছিল। সে সার্জারীর জন্য তাঁকে প্রস্তুত করতে করতেই গত ২৩শে রমজান সকালে তিনি হঠাৎ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন। আমার জীবনে আমি তার মত এতটা অমায়িক, সদালাপী এবং নিরেট ভদ্রলোক আর দ্বিতীয়টি দেখিনি। বেশীরভাগ দেখা হতো মাসজিদেই, সব সময় হাসিমুখে। তার বিয়োগব্যথা ভুলতে না ভুলতেই আজ সকালে সেহরীর সময় মেসেজ পেলাম সাবেক ডিজিএমএস মেজর জেনারেল নূরুল হক (অবঃ) ইন্তেকাল করেছেন। তিনিও একজন অমায়িক, সজ্জন ব্যক্তি ছিলেন। স্বাধীন বাংলাদেশের নবগঠিত সেনা মেডিক্যাল কোর এর পুনর্গঠনে তার অসামান্য অবদান ছিল। তিনি প্রথম জীবনে একজন শল্য চিকিৎসক ছিলেন, পরে স্বেচ্ছায় প্রশাসনিক কর্তব্যে স্থানান্তরিত হন। তাঁর কথা যখন ভাবছিলাম, তখনই আরেকটা মেসেজ এলো যে কর্নেল মাহবুব এলাহী চৌধুরী (অবঃ) আজ সকালে ইন্তেকাল করেছেন। আজ ২৬শে রমজান একই দিনে দু’জন প্রাক্তন জ্যেষ্ঠ্য সহকর্মী পরপারে চলে গেলেন। প্রবল বৃষ্টিপাতের কারণে তাঁদের দাফন প্রক্রিয়া কিছুটা বিঘ্নিত হয়েছিল, কারণ সদ্য খোঁড়া কবরে পানি উঠে গিয়েছিলো। নরম, সুশোভিত শয্যা আর কাদামাটির বিছানায় শায়িত হবার সময়ের ব্যবধানটুকু কত কম হতে পারে, ভেবে আকুল হতে হয়! শেষোক্ত যে দু’জনের দাফনের কথা বললাম, তা আজকের ঘটনা। আগামীকাল তা হয়ে যাবে স্মৃতি। ভবিষ্যতের কোন রমজানেও হয়তো কেউ তাদের নিয়ে বা আমাদের নিয়ে স্মৃতিচারণ করবে!
পুনশ্চঃ এই লেখাটা পোস্ট করার কিছুক্ষণ পরেই আমাদের আরেক জ্যেষ্ঠ্য সহকর্মী লেঃ কর্নেল বশির উল্লাহ (অবঃ) কয়েকদিন লাইফ সাপোর্টে থাকার পর গতকাল দুপুরে ইন্তেকাল করেছেন। তার পরেরদিন, অর্থাৎ আজ ২৮শে রমজান সকাল নয়টায় লেঃ কর্নেল আনিসুর রহমান (অবঃ) এর ৩৮ বছর বয়সী কন্যা লামিয়া রহমান পিঙ্কী হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে নিজ গৃহে তাৎক্ষণিকভাবে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। তিনি মাত্র ১২ বছরের একটি কন্যা সন্তান রেখে গেছেন। রমজান মাসে, আরো সঠিকভাবে বলতে গেলে গত ২৩ থেকে আজ ২৮ রমজান পর্যন্ত গত এই পাঁচদিনে আমাদের সোসাইটির পাঁচজন ব্যক্তি মৃত্যুর কাফেলায় যোগ দিলেন। আল্লাহ সুবহানু ওয়া তায়ালা তাঁদের সকলকে ক্ষমা করে দিন, তাঁদেরকে শান্তিময় পরলোক দান করুন, শেষ বিচারের দিনে তাঁদের সকলকে জান্নাত নসীব করুন এবং তাঁদের শোকসন্তপ্ত পরিবারের সহায় হউন এবং তাদেরকে সুরক্ষা করুন!
(স্মৃতিচারণ সমাপ্ত)
এই সিরিজের পূর্বের লিঙ্কঃ
রমজানের স্মৃতি – ১
রমজানের স্মৃতি – ২
রমজানের স্মৃতি-৩
ঢাকা
১২ জুন ২০১৮
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জুন, ২০১৮ সকাল ৯:৪২