আলহামদুলিল্লাহ! মাসজিদে এশার নামায পড়ে বাসায় ফিরে এলাম। কিন্তু মনটা যেন পড়ে আছে সেখানেই। আজ মাত্র ২৫ মিনিটেই নামায শেষ। ইমাম সাহেব ঘোষণা দিলেন আগামী কাল ঈদের প্রথম জামাত শুরু হবে সকাল আটটায়। পরেরটা নয়টায়। অন্যান্য দিনের মত আগামীকাল ফজরের জামাত শুরু হবে ০৪-১০ এ নয়, ০৪-৪০ এ। অর্থাৎ দৈনিক রুটিনে পরিবর্তন আসবে। রমজানের শুরুতে প্রথম ৬ দিন দেড় পারা করে পবিত্র ক্বোরান থেকে তিলাওয়াত হতো, সময় লাগতো পৌনে দু’ঘন্টার মত। তারপর থেকে ২৭ রমজান পর্যন্ত এক পারা করে পড়া হতো, সময় লাগতো দেড় ঘন্টা। দু’জন হাফেজ সাহেবেরই উচ্চারণ পরিষ্কার ছিল, তাই সময় একটু বেশীই লাগতো। তাও ভালো, তুফান মেইল চালিয়ে তারা তাদের তিলাওয়াতকে দুর্বোধ্য করে তুলেন নাই। আমি তাদের তিলাওয়াত মোটামুটি অনুসরণ করতে পারতাম। ২৭ রমজানের পর থেকে সুরা ক্বিরাত দ্বারা নামায পড়ানো হতো, সময় লাগতো এক ঘন্টা পাঁচ মিনিট। এখন মাত্র ২৫ মিনিট। বাসায় ফিরে এসে ডিনার করে উঠেও মনে হচ্ছে, কালকে এরকম সময়ে হয়তো তারাবীর ১৬ রাকাতে ছিলাম।
মোক্তাদি হিসেবে এক, দেড় কিংবা পৌনে দু’ঘন্টা সময় ইমামের তিলাওয়াতের প্রতি মনোনিবেশ করে থাকা নিঃসন্দেহে একটা কঠিন কাজ। তবে যারা প্রকৃত দ্বীনদার, তাদের জন্য হয়তো ততটা কঠিন নয়। কিন্তু আমি তো একজন অতি সাধারণ মুসল্লি, অনেকদিন ধরে চর্চার ফলে এখন তবু পবিত্র ক্বোরানে যেখানে যেখানে আল্লাহ রাব্বুল ‘আ-লামীন আমাদেরকে প্রার্থনার কথা শিখিয়ে দিয়েছেন, সেগুলো কিছুটা ধরতে পারি। যেখানে যেখানে শাস্তির কথা বলেছেন, সেগুলোও কিছুটা ধরতে পারি। এ ছাড়া হাফেজ সাহেবের কন্ঠস্বর এর তারতম্যের মাধ্যমেও কিছুটা আঁচ করতে পারি। যখন পারি, তখন কখনো কখনো অন্তরাত্মা শিউরে ওঠে, কখনো কখনো চোখ হয়ে ওঠে অশ্রুসিক্ত। বাকী সময়টাতে মনটা মাঝে মাঝে ভোকাট্টা ঘুড়ির মত আপন খেয়ালে কল্পনার আকাশে ঘুরে বেড়ায়। তবে সৌভাগ্যের কথা যে বেশীক্ষণ ধরে ওভাবে ওড়ার উপায় নেই। রুকু, সিজদা, বৈঠক, ইত্যাদির আহ্বানে সম্বিৎ ফিরে আসে। তখন মনে খটকা লাগে, আমি কি শুধুই আচারানুষ্ঠান পালন করছি, নাকি একাগ্রমনে এবাদত করছি? ফিরে আসি স্রষ্টার কাছে, পুনরায় মা’ফ চাওয়া, পুনরায় একাগ্র হওয়ার চেষ্টা করা, পুনরায় ভুল করা। সবশেষে মুনাজাতের সময় একে একে সবার কথা মনে করে তাদের ইহলৌকিক এবং পারলৌকিক কল্যাণ কামনা করা।
বিগত বছরগুলোর অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, আগামীকাল থেকে এ রুটিনে ছেদ পড়বে। মাসজিদে কাটানো সময়ের স্থায়ীত্ব তুলনামূলকভাবে অনেক কমে যাবে। এই একটা মাস যে কল্যাণের আশায় ডুবে ছিলাম, সে আশার তীব্রতা কমে আসবে। এ একটা মাস জুড়ে মনের মাঝে যেমন একটা বিশুদ্ধতা নিজস্ব ভাবনায় অনুভব করতাম, সেটাও ধীরে ধীরে তিরোহিত হবে। এটা ভেবেই মনটা খারাপ হয়ে যাচ্ছে। কত সুন্দর একটা মাস অতিবাহিত করলাম! দেহ মন কত সুন্দরভাবে একটা রুটিন মেনে চলতো। স্রষ্টার একটা অনির্বচনীয় আনুকূল্য সবসময় ভেতরে ভেতরে অনুভব করতাম, সেটা ধীরে ধীরে অপসৃয়মান হতে থাকবে। আগামী রমজান আমরা কে কে পাবো আর কে কে পাবোনা, তার হিসেব তো একমাত্র স্রষ্টার কাছেই রয়েছে। প্রতিবছর একটা মাস আমরা আত্মশুদ্ধির একটা সুযোগ লাভ করি। সেটার সদ্ব্যবহার কেউ করতে পারি, কেউ পারিনা। নিশ্চিত নই, আমি নিজে কতটুকু পারলাম। তাই ব্যথা ভারাক্রান্ত মনেই রমজানের এই শেষ রাতে রমজানকে বিদায় জানাচ্ছি- আল বিদা, শাহরু রামাদান! পুনরায় যেন তোমার দেখা পাই। ততদিন পর্যন্ত অন্তরের অন্তঃস্থলেই যেন থাকে তোমার কল্যাণময় স্মৃতি!
ঢাকা
১৫ জুন ২০১৮
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।