somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভাবতে না শেখালে ভাবনা আসবে না, প্রকাশ ক্ষমতাও ধীরে ধীরে কমে যাবে

১৯ শে জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৪:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার ছেলেরা সবাই বড় হয়ে গেছে। আমার বাসায় এখন আর কোন স্কুল কলেজগামী ছাত্র ছাত্রী নেই। তাই এখনকার স্কুল কলেজগুলোতে কী পড়ানো হচ্ছে, সে ব্যাপারে আমার সম্যক ধারণা নেই। তবে অনুমান করতে পারি, কর্পোরেট জগতের চাহিদা মেটাতে গিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর পাঠ্যসূচীকে কাস্টমাইজ করা হচ্ছে। যার ফলে মুক্ত ভাবনার বিকাশ ঘটছে না। বেশ কিছুদিন এমন একটা কাজে জড়িত ছিলাম, যেখানে ছাত্র ছাত্রীদের সাক্ষাৎকার নিতে হতো। সেখানে দেখেছি তাদের চিন্তার সীমাবদ্ধতা। অবশ্য ব্যতিক্রম তো ছিলই। সে ব্যতিক্রমের কথা বলছি না। মেধাবী ছাত্র ছাত্রীদেরকেও দেখেছি, তাদের মনের ভাব লিখিত ভাষায় প্রকাশ করতে গিয়ে স্ট্রাগল করতে। শুদ্ধভাবে মৌখিক ভাষায়ও প্রকাশ করার সীমাবদ্ধতা চোখে পড়েছে। তাদের আরেকটা বড় দুর্বলতা যা আমি লক্ষ্য করেছি সেটা হচ্ছে মুখে মুখে সামান্য যোগ বিয়োগ করতেও ব্যর্থতা। ২০+২৫+৩০ = কত? - এর উত্তর বের করতেও একজন ছাত্র বারবার পকেটে হাত ঢুকাচ্ছিল সেলফোন বের করে ক্যালকুলেটরের সাহায্য নিতে। নিষেধ করাতে সে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়।

আমাদের সময় বেশীরভাগ প্রশ্নের উত্তর দিতে হতো একটু ব্যাখ্যামূলক। সেখানে নিজের চিন্তা বা ধারণাকে যুক্তির সাথে উপস্থাপন করতে পারলে ভাল নম্বর পাওয়া যেত। ভাল নম্বর মানে ৭০% এর মত। ৮০% পেলে খুব ভাল। ভাল ছাত্রদের তখন পাঠ্যপুস্তক পড়া ছাড়াও লাইব্রেরীতে গিয়ে ভাল ভাল লেখকদের বই পড়ে নোট করে আনতে হতো। অনেক লেখকের লেখা পড়ে একটা ধারণা নিয়ে, প্রয়োজনে তাদের লেখা থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে নিজের নোট বানাতে হতো। পরীক্ষক সে নোট পড়েই বুঝতে পারতেন যে ছাত্র বা ছাত্রীটা বেশ কষ্ট করে নোট বানিয়ে উত্তর প্রস্তুত করেছে। তাই তিনি নম্বর দিতে কার্পণ্য করতেন না। এখনকার শিক্ষকেরা করেন সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন, চানও ছকে বাঁধা সংক্ষিপ্ত উত্তর। বেশী লম্বা উত্তর পড়ার সময়ই বা তাদের কই? তাদেরকেও তো দিনের একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ সময় সংসার কর্ম ছাড়াও ফেইসবুকিং, ইন্টারনেট, ইত্যাদিতে ব্যয় করতে হয়। আমার নিকটাত্মীয়দের মধ্যে কয়েকজন শিক্ষক/প্রভাষক আছেন। তাদেরকে যখন অমনযোগের সাথে পরীক্ষার খাতা মার্কিং করতে দেখি, অবাক হয়ে যাই। প্রশ্ন করলে ওরা বলে ওপর থেকে নিষেধ আছে, কাউকে খুব বেশী কম নম্বর দেয়া যাবেনা। একটু কিছু লিখলেই নম্বর দিতে হবে। তাই এত কষ্ট করবো কেন?

এর পরে এলো অবজেক্টিভ টাইপ প্রশ্নপত্র । আরো পরে আরো সংক্ষেপিত প্রশ্ন পদ্ধতি- এমসিকিউ টাইপ। এতে করে ছাত্রদের চিন্তাশক্তি কমতে থাকলো। অনুমান নির্ভর উত্তর দেয়ার প্রবণতা বেড়ে গেল। গণ টোকাটুকির প্রবণতাও বেড়ে গেল, যা ভুল উত্তরের জন্য মাইনাস সিস্টেম চালু করেও ঠেকানো গেল না। গোল্ডেন প্লাস পাওয়া ছেলেরাও কোন একটা সমস্যাকে ব্যাখ্যা করে নিজের ভাষায় শুদ্ধ করে না বাংলায় না ইংরেজীতে প্রকাশ করতে পারে, আগে যেটা সাধারণ প্রথম বিভাগে পাশ করা ছাত্র ছাত্রীরাও বেশ স্বচ্ছন্দে পারতো। এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা যেতে থাকলো বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষাগুলোতে। ভিত যদি শক্ত না হয়, আগা শক্ত হবে কিভাবে? ধীরে ধীরে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করে বের হয়ে আসা ছাত্র ছাত্রীদের মধ্যেও ভাব প্রকাশের অক্ষমতার এ সমস্যাটা প্রকটভাবে দেখা দিতে থাকলো।

আমার মনে হয়, আমাদের আবার essay type পরীক্ষা পদ্ধতিতে ফিরে যাওয়া উচিত। আবার স্কুলগুলোতে মানসাংক পদ্ধতি শেখানো উচিত, যার সাহায্যে ক্যালকুলেটর ছাড়াও ছাত্র ছাত্রীরা সহজ সহজ যোগ, বিয়োগ, গুণ, ভাগ মুখে মুখে করা শিখতে ও চর্চা করতে পারবে। Descriptive রচনা লিখতে না দিয়ে Imaginative বিষয়ের উপর রচনা লিখতে দেয়া উচিত, যেসব বিষয় কোন রচনা বইয়ে বা নোট বইয়ে পাওয়া যাবেনা। যেমন, ‘বাংলাদেশের ঋতু বৈচিত্র’ এর পরিবর্তে ‘এমন দিনে তারে বলা যায়’ এর উপর লিখতে বলা হোক। ছেলেমেয়েরা ভাবতে শিখুক, মনের ভাব শুদ্ধভাবে প্রকাশ করতে শিখুক। বড় হয়ে যত বড় ডাক্তার, ইঞ্জিনীয়ার বা বিজ্ঞানীই হোক না কেন, সেখানেও তাকে শুদ্ধভাবে তার চর্চিত বিষয়টাকে প্রকাশ ও উপস্থাপন করা শিখতে হবে।


ঢাকা
১৯ জুলাই ২০১৮
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।

সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জুলাই, ২০১৮ রাত ৮:০২
২৫টি মন্তব্য ২৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×