somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমাদের সংস্কৃতি জগতে পরিবারতন্ত্র ! - ১০ (শেষ)

২৬ শে জুন, ২০১১ সকাল ৯:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আগের পর্ব-
Click This Link

ঢাকার ভানু (বন্দ্যোপাধ্যায়) টালিগঞ্জে গিয়ে ভালোই জায়গা করে নিয়েছেন। ওখানে বাংলাদেশ (তখনকার পূর্ব বঙ্গ বা বাংলা) নিয়ে যে উন্নাসিক ভাব ছিলো (এখনো কমবেশী আছে) ভানু সেটাকে পাত্তাই দিতেন না। উল্টা আক্রমন করেছেন। ঢাকার ভানু শীর্ষক কৌতুক থেকে উদ্ধৃত করি-

ভানু- আমি ত বাঙাল। আপনে কি ?
কলকাতাবাসী- আমি আবার কি ? বাঙালী।
ভানু- তাইলে কি খারাইল ?
কলকাতাবাসী- কি আবার খারাইল ?
ভানু- কতাডারে ব্যাকরণে ফেলান। আমি অইলাম বাঙাল আর আপনে অইলেন বাঙালী। তার মানে আমি অইলাম পুং লিঙ্গ আর আপনে অইলেন স্ত্রী লিঙ্গ।
কলকাতাবাসী-ধুর মশাই !

রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী দেবব্রত বিশ্বাস গান গাইতেন প্রমিত উচ্চারণ মেনে। এ ছাড়া ময়মনসিংহের আঞ্চলিক ভাষার বাইরে একটা শব্দও বলতেন না। ভানু সে বালাইও রাখেননি। সর্বত্র ঢাকাইয়া ভাষায় কথা বলেই রাজ্য জয় করে গেছেন। বিক্রমপুরের ভানু জগন্নাথ থেকে বিএ পাশ করে কলকাতা চলে যান অভিনয়ে। কৌতুকের সাথে মনীষা আর সমাজ সচেতনতার যে অপূর্ব প্রয়োগ তিনি করেছেন তা তুলনাহীন। তিন শতাধিক ছবিতে অভিনয় করেছেন। যমালয়ে জীবন্ত মানুষ, ভানু পেল লটারীর মত অসাধারণ কিছু ছবি পরিচালনাও করেছেন। ১৯৭২ সালে স্বাধীন বাংলাদেশে বেড়াতে এলে ঢাকা জাতীয় প্রেস ক্লাবে ইন্টেলেকচুয়াল বলতে আপনি কাদের বোঝেন এমন এক প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন- যাগো বেবাক ইনটেলেক্ট চোয়ালে আইসা জমা অইছে তারাই ইন্টেলেকচুয়াল। (এ সংজ্ঞা কি বাংলাদেশে এখনো প্রযোজ্য নয় ?)

ভানুর ভাই কানু বন্দ্যোপাধ্যায়ও ছিলেন দুর্দান্ত অভিনেতা। পথের পাঁচালি ছবিতে হরিহরের চরিত্রে (অপু,দূর্গার বাবা) অবিস্মরীয় অভিনয় করেছিলেন।

নাজির আহমেদ ছিলেন এফ ডি সি'র প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক। লাহোরের চোখ রাঙানী উপেক্ষা করে ঢাকাকে চলচ্চিত্র নির্মানের কেন্দ্র হিসাবে গড়ে তুলতে যারা শ্রম দিয়েছেন তিনি তাদের অন্যতম। তার ভাই সাঈদ আহমেদ ছিলেন নাট্যকার ও নাট্যগুরু। আরেক ভাই হামিদুর রহমান স্থপতি। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার তার শ্রেষ্ঠ স্থাপত্যকীর্তি হিসাবে বিদ্যমান।

এখন যাদের মুম্বাই ফিল্মে আইটেম গার্ল বলে এক সময় এদের নাম ছিলো ভ্যাম্প। নামী হিরো সালমানের মা( সৎমা) হেলেন এক কালের বিখ্যাত ভ্যাম্প। মাঝে নায়িকারা ভ্যাম্পদের কাজটা (খোলামেলা পোষাকে নাচ)সেরে দিতে শুরু করায় ভ্যাম্পরা উচ্ছেদ হয়ে যান। এখন আবার নতুন নামে ফিরেছেন। ঢাকার সিনেমায় এই কাজ করতেন শর্বরী। (নূতনও করতেন। পরে নায়িকা হয়ে যান।) শর্বরীর মেয়ে তমালিকা কর্মকার ছোট পর্দার জনপ্রিয় অভিনেত্রী। আরেক মেয়ে চয়নিকা চৌধুরী এবং তার বর অরুন চৌধুরী নাট্যকার।

নিশি রাত বাঁকা চাঁদ আকাশে- গীতা দত্তের এই গান এখনো শ্রোতাদের আলোড়িত করে। গীতার বর গুরু দত্ত ছিলেন চলচ্চিত্র প্রযোজক ও পরিচালক।

কবি, লেখক, সম্পাদক হিসাবে বুদ্ধদেব বসু আমাদের হৃদয়ে অনেক উঁচু মর্যাদায় আসীন। তাঁর স্ত্রী প্রতিভা বসু (রানু সোম) এক কালের হার্টথ্রব গায়িকা। স্বয়ং নজরুল রানুকে গান শিখিয়েছেন।

ড. নিলীমা ইব্রাহীম শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক হিসাবে সুপরিচিত। মুক্তিযুদ্ধ উত্তর বাংলাদেশে বীরাঙ্গনাদের জন্য সীমাহীন মমতাময় শ্রম দিয়ে এই মহিয়সী নারী ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করে গেছেন। তাঁর কন্যা ডলি আনোয়ার (ইব্রাহীম) ছিলেন উঁচু মানের অভিনেত্রী। সূর্য দীঘল বাড়ি ছবিতে জয়গুন চরিত্রে তিনি অনবদ্য অভিনয় করেছেন। ডলির বর আনোয়ার হোসেন আমাদের সেরা ফটোগ্রাফারদের এক জন। যদিও তাদের ছাড়াছাড়ি হয়ে গিয়েছিলো। পরে ডলি মারা যান (১৯৯২ সালে)।

সূর্য দীঘল বাড়ি ছবিতে শিশুশিল্পী হিসাবে অভিনয় করে নজর কেড়েছিলেন ইলোরা গওহর। এখন তিনি পুরোদস্তুর অভিনেত্রী। তাঁর বাবা নইম গওহর আমাদের জনপ্রিয় গীতিকারদের একজন। তাঁর লেখা ''জন্ম আমার ধন্য হলো মা গো'' গানটি সবার মন ছুঁয়ে যায়।

নৃত্যশিল্পী গনেশ নাথ অভিনেত্রী রওশন জামিলকে বিয়ে করে হয়ে গেলেন গওহর জামিল। তাদের কন্যা কঙ্কা জামিল সরকারী চাকুরী করেন। তবে ভালো গানও করেন।

সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিম চন্দ্রের ভাই সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় ''পালামৌ'' লিখে মাত করে দিয়ে গেছেন। (এখন আমরা যে সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়ের উপন্যাস পড়ি তিনি ভিন্ন ব্যক্তি)

''আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে
কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে।''

এই অনন্য কবিতাটি লিখেছেন কুসুম কুমারী দাশ। তার পুত্র জীবনানন্দ দাশ আমাদের শ্রেষ্ঠ কবিদের এক জন।

গীতিকার ড. মোহাম্মদ মনিরুজ্জামানের ছোট ভাই গীতিকার রফিকুজ্জামান।

সমাপনী

শুরুতে পরিকল্পনা ছিলো আমাদের সংস্কৃতি জগতে পরিবারের ইতি ও নেতিবাচক প্রভাব নিয়ে লিখবো। পরে ভাবলাম নেতিবাচক লেখার জন্য আমাদের পুরো মিডিয়া মুখিয়ে থাকে। আমি আর সে পথে গেলাম না। সবার কথা বলে গেলাম। যারা পড়বেন তারা নিজ বিবেচনায় বুঝে যাবেন।

এই দীর্ঘ সিরিজে যারা আমার সাথে ছিলেন, উৎসাহ দিয়েছেন সবাইকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।

পুনশ্চ- আর কোন নতুন তথ্য পেলে কোন একটা পর্বে সেটা আপডেট করে দেব। এর ভেতরও আগের কিছু পর্বে আপডেট করা হয়েছে। অনেক পাঠক তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন। তাদের জন্য শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা।
(শেষ)
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১:৫৬
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

একমাত্র আল্লাহর ইবাদত হবে আল্লাহ, রাসূল (সা.) ও আমিরের ইতায়াতে ওলামা তরিকায়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:১০



সূরাঃ ১ ফাতিহা, ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
৪। আমরা আপনার ইবাদত করি এবং আপনার কাছে সাহায্য চাই।

সূরাঃ ৪ নিসার ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×