পরের দিন ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায় রিয়াকে। আবারও রিয়াকে নিয়ে মা সেই সদর হাসপাতালেই গেলো। কিন্তু রিয়ার এই অবস্তা দেখে ডাক্তার সাহেবেরা কিছুই বলতে পারছে না। জরুরী ভাবে ঢাকায় পাঠাতে বলল। তাদের ভাষ্য অনুযায়ী তারা নাকি এমন রোগ কখনও দেখেনি। তারা বলল আরো ভালো কিংবা বড় ডাক্তার দেখান। এই হয়তো রিয়ার মায়ের মনে ভয় ডুকে গেলো। সবাইকে রিয়ার বিষয়টি জানালো, রিয়ার বাবার কাছে ফোনে বলল, বাবা শুনে তো রেগে গেলো মায়ের উপর।
সবার পরার্মশে রিয়াকে নিয়ে ঢাকায় গেলো রিয়ার মা আর ছোট চাচু। বড় ফুফুর বাসায় উঠলো যেয়ে ওরা। সকাল বেলাই মা আর চাচু রিয়াকে নিয়ে হাসপাতালে ডাক্তারের কাছে গেলো। ডাক্তার রিয়াকে দেখে খুব আদর করলো, ডাক্তার বাবুর মনটা ভরে গেলো, কি সুন্দর ফুটফুটে একটা মেয়ে। কি নাম তোমার মামনি? রিয়া আমার নাম রিয়া; বাহ খুব সুন্দর নাম তোমার, কোন ক্লাসে পড়ো তুমি? ক্লাস ফোরে, গুড মেয়ে।
ডাক্তার অনেক কিছু চেকাপ করে দেখলো, তবে এই মূহুর্তে কিছু্ই বলতে পারছে না, ভালো ভাবে না দেখা পর্যন্ত। রিয়ার চাচুর হাতে কিছু টেস্টের কাগজ দিলো ডাক্তার বাবু। সেগুলোর রির্পেোট চেক করে এখনি দিতে হবে বলে দিলো। চাচু দৌড়িয়ে যেয়ে টেস্ট করে আনলো। কিন্তু ডাক্তার দেখলো এগুলো পজেটিভ কিছুই না, সবগুলোই নেগেটিভ আসছে। আবারও কিছু টেস্ট দিলো, আর বলে দিলো যত তারাতারি সম্ভব টেস্ট করে আনুন। আমার মনের জটিলতাটাকে দূর করতে হবে। আর আল্লাহকে ডাকেন যেনো আমার মনের ভয়টাই না আসে এই রির্পেোটে।
কিন্তু না হেরে গেলো ডাক্তার মনের সাথে, নির্ভাক হয়ে তাকিয়ে আছে ডাক্তার বাবু রিয়ার দিকে। মনটা মানাতে পারতো যদি রিয়া তার মেয়ের বয়সি না হতো। সে যদি বয়স্ক কিংবা মধ্য-বয়স্ক হতো। তাহলে আর মনের সাথে যুদ্ধ করতে হতো না। এতো তারাতারি নিভে যাবে রিয়ার এই ফুটফুটে সুন্দর জীবনটা। মেনে নিতে পারবে তো ওর মা-বাবা। বিধাতার এটা কেমন খেলা! এ কেমন পাপরে শাস্তি দিলো মেয়েটাকে বিধাতা। কিন্তু কিছু করার নাই যে, ওর মাকে তো বলতেই হবে তার মেয়ে কথা, না বলে তো আর পারা যাবে না।
দেখুন রিয়ার আম্মু, আপনি কিন্তু বেশ দেরি করে ফেলেছেন, ওর এমন একটি জটিল রোগ হয়েছে যার থেকে আপনি চাইলেও বাচাতে বা ফিরাতে পারবেন না। মৃত্যুর খুব কাছে আছে মেয়েটা। ওর বেচে থাকার আশাটি শেষ হয়ে গেছে। রিয়ার ব্লাড ক্যান্সার হয়েছে! রিয়ার মা সাথে সাথে অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেলো মেজেতে। রিয়া দৌড়িয়ে এসে মাকে জড়িয়ে ধরে বলল কি হয়েছে মায়ের, ডাক্তার আঙ্কেল? কিছু হয়নি মামনি, এই একটু মাথাঘুরে পড়ে গেছে। একজন র্নাসকে ডেকে মাকে বেডে শুয়ে দিলো। রিয়া মায়ের পাশে বসে আছে, ডাক্তার বাবু রিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। মনে মনে ভাবছে কত রোগি তো দেখলাম কিন্তু কারো জন্যই তো মনে এতো কষ্ট হয়নি, এতো মায়া হয়নি। তাহলে এই মেয়েটার জন্য আজ আমার এতো কষ্ট হচ্ছে কেনো, কেনো এতো মায়া হচ্ছে!
এদিকে ছোট চাচু রিয়ার দিকে অসহয়ের মতো তাকিয়ে আছে। কি বলবে রিয়াকে কিছুই বুজতে পারছে না, কোন ভাষাই নাই চাচুর মুখে। কেমন জানি ধোয়াশা হয়ে যাচ্ছে চারদিক। মনে মনে বিরবির করে ভাবছে সৃষ্টিকর্তা তুমি এতো নিষ্ঠুর, এতো সুন্দর নিষ্পাপ মেয়েটার সাথে তুমি এটা কেমন খেলা খেললে, এ তোমার কেমন নিয়তি।
এর মধ্যেই মায়ের জ্ঞান ফিরলো, মা তাকিয়ে দেখলো রিয়া পাশেই বসা। রিয়াকে জড়িয়ে ধরে মা বিলাপ করতে লাগলো। ‘কি হলো আমার মেয়েটার, আমি আগে কেনো বুজতে পারলাম না, না আমার এই লক্ষি মেয়েটা এতো তারাতারি শেষ হতে পারে না, আমি শেষ হতে দিবো না’। রিয়া তোর কিচ্ছু হবে না, সোনা আমার, আমি তোকে কিচ্ছু হতে দিবো না। শোন তোর বাবা না তোকে খুব ভালোবাসে, তোর ভাইদের থেকেও তোকে বেশি ভালোবাসে। তোর বাবাকে এখনি ফোন দিয়ে আসতে বলি, দেখবি সে তোর জন্য ঠিক চলে আসবে। তোকে আমার বুকে ফিরিয়ে দিবে। রিয়া মায়ের এই পাগলামীর মানিটা কিছু বুজতে পারছে না, কেনো মা এমন বিলাপ করছে, মা কেনো এভাবে কাদছে, রিয়া কিছুই বুজছেনা।
মা কেদে কেদে বাবাকে ফোনে বললো, তুমি চলে আসো, আমার মেয়ের ব্লাড ক্যান্সার! মায়ের মুখে এটা শুনে রিয়া মনে মনে ভাবলো এটা আবার কি রোগ, ব্লাড ক্যান্সার! এরকম রোগের নাম তো আগে কখনও শুনিনি। আর বাবাকেই বা কেনো দেশে চলে আসতে বলছে মা। আর যদি আমার অসুখ হয় তাহলে তো ভালো হয়ে যাবো, কিন্তু মা এতো কাদছে কেনো? মাকে তো আগে কখনও এভাবে কাদতে দেখিনি। তাহলে কি এটা অনেক বড় কোন রোগ আমার! আমি কি তাহলে মারা যাবো! সেই জন্যই কি মা এতো কাদছে। আর চাচুও এরকম করছে;
রিয়ার বাবা আজাদ সাহেব ২/৩ দিনের মধ্যে চলে এসেছে বিদেশ থেকে। আজ ১০ বছর পর বাবা মেয়ের টানে ছুটে এসেছে দেশে। গ্রাম থেকে চাচা/চাচি, খালা /খালু রিয়ার আত্ময়ি-স্বজন সবাই চলে এসেছে ঢাকায়, রিয়ার অসুখের কথা শুনে। এখন রিয়া আস্তে আস্তে বুজতে পেরেছে, আসল ঘটনাটি। রিয়ার অনেক বড় অসুখ হয়েছে এটা রিয়া খুব ভালোভাবে বুজতে পেরেছে। রিয়া আর হয়তো বাচবে না, কোন মরণব্যাধি রিয়াকে বেধে ধরেছে। ভাবতেই রিয়ার কাছে কেমন লাগছে, সবার দিকে অসহয়ের মতো তাকিয়ে আছে।
চলবে..........
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে মে, ২০১৮ সকাল ১০:১৫