somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

“একফোটা অশ্রু”

২৬ শে এপ্রিল, ২০১৮ দুপুর ১২:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
শেষ পর্ব
আমার গল্পের নাম চেঞ্জ করে দিলাম। কেউ রাগ করবেন না।



আজ কয়েকদিন হলো রিয়াকে সবাই বাড়ি নিয়ে আসছে। পাড়া-প্রতিবেশি, আশেপাশের আত্মীয়-স্বজনরা শুনে সবাই দেখতে এসেছে রিয়াকে। বাড়ি ভর্তি কত মানুষ তা দেখে রিয়া খুব আনন্দে পাচ্ছে। ছেলেমেয়েদের সাথে খেলছে, হাসছে ,আনন্দ করছে। অথচ রিয়ার মনেই নাই ওর জীবন থেকে চলে যাওয়া 20/25টা দিন কি ঘটেছিল। হয়তো ভুলে গেছে সব। উপর থেকে মেয়েটা কত ভালো দেখাচ্ছে কিন্তু ওর ভিতরটাকে বিধাতা ঝাঝরা করে দিয়েছে মরণব্যধি দিয়ে। দেখলে কেউ বুজতেই পারবেনা যে এই মেয়েটাকে কোন এক মরণব্যধি এসে মৃত্যুফাদে ঠেলে দিচ্ছে। ডাক্তার বলেছেন আর কিছুদিন হয়তো বেচে থাকবে, বেশি হলে ১৫দিন কিংবা ১ মাস। সবার ভিতর হতাশ কিন্তু রিয়ার ভিতর কোনো হতাশের ছাপ নেই, বাড়িতে এসে একে বারেই নরমাল, আগের মতো হয়ে গেছে। মেয়েটা ভুলে গেছে হাসপাতালের কথা, ডাক্তাদের কথা, অসুখের কথা।

হঠাৎ একদিন রিয়ার প্রসাবের পরিবর্তের রক্ত পরছে। রিয়া মাকে ডাকালো মা বাবা দেখে যাও প্রসাব থেকে রক্ত বের হচ্ছে আমার। মা বাবা সবাই দৌড়িয়ে গেলো দেখলো সত্যিই তো প্রসাব না পরে রক্ত বেড় হচ্ছে। এভাবে প্রতিদিন এমন করে একটু একটু করে রক্ত পরছে। ডাক্তার বলেছিলন রিয়ার যে নতুন রক্ত যেওয়া হয়েছে সেগুলো বেশি দিন থাকবেনা। এগুলো আস্তে আস্তে বের হয়ে যাবে শরীরে বিভিন্ন অংশ থেকে, প্রসাবের সাথে। রিয়ার মা এই সব দেখে বারবার অজ্ঞান হয়ে পরে যায়, আজ কত দিন ধরে মা-বাবা কিছুই মুখে দেয়না। মনের মধ্যে শুধু ভয় আর হতাশ । কোনো মা-বাবা কি চায় তাদের চোখের সামানে সুন্দর ফুটফুটে একটা সন্তান হাড়িয়ে যাক। এটা পৃথিবীর কোন মা-বাবা চায়ন।

অনেক দিন হলো রিয়া স্কুলে যায় না, মাদ্রাসায় যায়না। এদিকে স্কুল মাদ্রাসার সব বন্ধুরা জেনে গেছে রিয়া আর বাচবে না। রিয়াকে এক বড় মরণব্যধি আক্রমণ করছে। সেই দুষ্টু বন্ধুরা আজ রিয়াকে একনজর দেখার জন্য আসছে ওদের বাড়িতে। অনেক বন্ধুরা আজ নিরুপায়, অপরাধি মনে করে নিজেকে। কারণ একদিন এই রিয়াকে ওরা মেরেছে, কত মার খাওয়েছে স্যার, হুজুরদের কাছে মিথ্যে নালিশ দিয়ে। আজ আর রিয়াকে ওরা কিছু বলতে পারবে না। মারতে, চিমটি কাটতে, কাল মলা দিতে, চুল ধরে টান দিতে, পেচা, খরগশের বাচ্চা বলে পারবে না ক্ষেপাতে। না পারছে সরি বলতে, না পারছে মাপ চাইতে, না পারছে আগের মতো করে রিয়াকে ফিরিয়ে আনতে। আজ ওরা হয়তো রিয়ার কাছে হেরে গেছে। সব সময় তো ওরাই জিতে আজ মনে হয় রিয়াই জিতে যাবে;

রিয়া বন্ধুদের দেখে আজ খুব হাসছে কিছু বলছেনা। কি করণে হাসছে রিয়া সেটা কেউ বুজতে পারছেনা। নাকি সেই দিনেগুলোর কথা মনে করে হাসছে! না এমনি এমনি হাসছে সেটা ওরা বুঝতে পারছে না। রিয়া কি এই ভেবে হাসছে, যে রিয়া চলে যাচ্ছে আর বন্ধুদের সাথে দেখা হবেনা, আর রিয়াকে স্যার, হুজুরদের দিয়ে মার খাওয়াতে পারবে না, ওরাও সবাই মিলে জোট হয়ে মারতে পারবে না। এই জন্যই কি রিয়া এমন ভাবে সবার দিকে তাকিয়ে হাসছে। কি লুকিয়ে ছিল রিয়ার এই হাসির মধ্যে। কি এমন রহস্য যা আজও কারো জানা হলোনা। আজও কোন সেই প্রশ্নের উত্তরটা রিয়ার কাছেই থেকে গেলো!

দীর্ঘা এক মাস পর বোঝা গেল রিয়ার বাড়িতে শোকের ছাড়া নেমে এসেছে আজ। দু’দিন যাবত রিযার শরীর দিয়ে প্রচুর পরিমাণে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। দাত, মুখ, কান, হাতের নখ দিয়েও প্রচুর রক্ত বের হচ্ছে। প্রসাবের সাথে তো রক্ত পানির মতো করে পরছেই। বাবা যেনো প্রায় পাগল হয়ে গেছে মেয়েটার এই অবস্থা দেখে, চোখের সামনে এই ভাবে মেয়েটা মারা যাবে। নিজেকে যেনো আর সামলাতে পারছেনা, পাগলের মতো দৌড়াচ্ছে এদিক সেদিক।

আজকের রাতে ঘর ভর্তি মানুষ, কত মানুষ রিয়াকে দেখতে আসছে। রিয়া সবাইকে একএক করে দেখে নিচ্ছে, এই চাহনি যেনে সবার মনে দাগ কেটে যাওয়া চাহনি। বাবার কোলে মাথা রেখে মায়ের কোলে হাত রেখে নিঝুম নিরালা এই রাতে। হয়তো এলাকার অন্যান্য বাড়ির সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে। পুরো পৃথিবীটাই নিস্তব্ধ হয়ে আছে। কারো চোখে নির্ঘুম নাই। নির্ঘুম শুধু রিয়ার বাড়ির মানুষদের।

এখন রাত ২টা বাজে। সবাই রিয়ার পাশে বসে আছে। কেউ কাদছে, কেউ রিয়ার মাকে শান্তনা দিচ্ছে। কিন্তু এতো কিছুর পরও দেখো রিয়াটা সবার সাথে কেমন পাকা পাকা কথা বলছে। বাবাকে বলছে বাবা তুমি দেখো আমার মতো আল্লাহ তোমাকে আর একটা রিয়া দিবে; তোমরা আমার জন্য কেদোনা। আবার হঠাৎ হঠাৎ রিয়া কান্নায় কুকরে উঠে। বলে বাবা আমার শরীরটা কেমন যেনো করছে খুব ব্যর্থা করছে, খুব জ্বালাতন করছে, বাবা আমি মনে হয় মারা যাবো। রিয়া আজ বাবা কে সব বলছে রিয়ার সাথে কে কি ব্যবহার করছে। কে কে রিয়াকে মেরেছে। আজ যাবার বেলায় রিয়া সবার নামে বাবার কাছে নালিশ করছে। এই গোমড়া মেয়েটা এতো দিন কাউকে বলেনি, মা বলল কেনো আজ তুই এই কথা বলিস, কেনো এতো দিন আমাকে বললিনা রিয়া। আমি কি তোকে আদর করিনি, আমি কি তোর কেউ ছিলাম না। এতো অভিযোগ কি ভাবে লুকিয়ে রেখেছিলি তোর বুকের মধ্যে লুকিয়ে। আজ হয়তো রিয়া ওর মনের অভিযোগ গুলো বলে, মনে হয় একটু শান্তি পেতে চায়, একটু হালকা হতে চায়। এতো এতো অভিযোগ, অভিমান গুলো ঝেড়ে ফেলে দিতে চায় ওর মন থেকে। আবার মনের অজান্তে বলে, না মা ওদের কোন দোষ নেই সব আমারি দোষ।

এখন রাত ২.২০ বাজে এর মধ্যে রিয়া বাবাকে বলল বাবা দেখো দেখো আমাকে ডাকাছে কে যেনো, ওটা কে বাবা? ঐ দেখো; তোমারা দেখতে পারছেনা। আমি তো দেখছি আমাকে ডাকাছে, আমাকে ছাড়ো আমাকে তার কাছে যেতে দেও। দেখো আমার জন্য কি সুন্দর ফুল নিয়ে এসেছে। আমি ঐ ফুলটা নিবো ছাড়ো আামাকে সরে যাও তোমরা আমার সামনে থেকে। আবার ক্ষণিকপর রিয়া বাবার বুকের মধ্যে লুকিয়ে পরে ভয়ে চিৎকার করে বলে, বাবা আমাকে কে যেনো ডাকাছে আমি তাদের চিনিনা, তাদের কে চলে যেতে বলো, আসার ভয় করছে। বাবা আমার সামনে আসতে না করো, আমি তাদের সাথে যাবোনা।

সন্তানের এমন অবস্থা দেখে কোনো বাবা মা কি পারে ভালো থাকতে। মা বারবার অজ্ঞান হয়ে পরে যাচ্ছে। বাবা মাথা ঠোকাচ্ছে আর বলছে কোন এমন শাস্তি আমার মেয়েটাকে দিচ্ছো হে বিধাতা। এটা কেমন খেলা তোমার, এর চেয়ে তুমি আমাকে নিয়ে যায় তাহলে এই দৃশ্য আমাকে দেখতে হবেন। আমার মেয়েটাকে একটু ঘুমাতে দেও, একটু ঘামাতে চায় রিয়া; এর মধ্যে রিয়া বাবাকে বলল বাবা আমি নারকেল খাবো, আমাকে নারকেল দেও, রিয়ার চাচু সেই রাত ২.৪০ মিনিটে গাছে উঠেছে নারকেল পেরে দিয়েছে; কিন্তু নারকেল খেলোনা। আবার একটু পর বলল আমি কোক খাবো, মা আমাকে কোক খেতে দেয়নি বাবা, বাবা আমাকে কোক এনে দেও।

বাবা রাত ২.৫০ বাড়ির পাশে দোকানে গেলো চিৎকার করে দোকানদারকে ডাকলো। আমার মেয়েটাকে একটা কোক দেন; দয়া করে একটা কোকের ব্যবস্থা করে দেন। পাগলের মতো রাস্তা দিয়ে রাতের বেলা দৌড়াচ্ছে আজাদ সাহেব। ভাগ্যিস দোকানদার কোকটি দিয়েছে। সেটা রিয়াকে এনে দিলো। এটাই ছিলো বাবার দেওয়া রিয়াকে শেষ উপহার, মাত্র একটি কোক! বাবার দেওয়া উপহারটি হাতে নিয়েই রিয়া বাবার কোলে ঠিক রাত ৩.০০ বাজে ঘুমিয়ে পরলো, চিরতরের মতো। একদিনের শিশু যেমন ঘুমিয়ে পড়ে ঠিক সেই ভাবেই রিয়াটাও ঘুমিয়ে পড়লো সবাইকে কাদিয়ে। বাবা ডাকছে, রিয়া এই রিয়া!! কথা বল মা কথা বল। কিরে কথা বলিস না কেনো। এতো ডাকাছে কিন্তু কোন সাড়া দিচ্ছেনা। হয়তো অনেক শূন্যতা বুকে নিয়ে রিয়া চলে গেলো পৃথিবী থেকে, সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে।


আজ এতো বছর পর রিয়াকে খুব মনে পরেছে, রিয়ার এক নিষ্ঠুর বান্ধবীর, খুব মিস করছে রিয়াটাকে। হয়তো সেই দিনের সেই ভুল গুলো রিয়ার কাছে শুধরাতে চায়। আজ রিয়া হয়তো ওর মতেই অনেক বড় হয়ে যেতো। হয়তো এখন আর আগের মতো বন্ধুরা মারতে পারতো না। কিংবা হুজুর স্যারের হাতে মার খেতে হতো না। সময়ের সাথে সাথে সবকিছু হয়তো পাল্টে যাতো। কিন্তু ভাগ্যের কি পরিহার এই পাল্টে যাওয়াটা রিয়া দেখলো না, তার আগেই বিধাতা রিয়াকে পৃথিবীর সবকিছুর থেকে বঞ্চিত করে নিয়ে গেছেন। তাই রিয়ার সেই বান্ধবীটার পক্ষ থেকে রিয়ার জন্য দূর থেকে “একফোট অশ্রু” উপহার।

ফিরে এসো আবার তুমি
আছি তোমারি অপেক্ষায়।
বন্ধু ফিরে এসো আবার
ফিরে এসো আমাদের মাঝে।

শেষ...........
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে মে, ২০১৮ সকাল ১০:১৭
২১টি মন্তব্য ২১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।

লিখেছেন সাইয়িদ রফিকুল হক, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:১৫



ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।
সাইয়িদ রফিকুল হক

বিএনপি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে দেশে অনুষ্ঠিত “দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে”-এ অংশগ্রহণ করেনি। তারা এই নির্বাচনের বহু আগে থেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×