somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

“যে সব ছেলেরা মেয়েদের অসতী, অসতী বলে বেড়াচ্ছে তারা কতটা সৎ”?

২১ শে জুন, ২০১৮ বিকাল ৫:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



কিছুদিন যাবত আমাদের পাশের বাড়ির এক প্রবাস ছেলের বিয়ে নিয়ে হড্ডোগোল চলছে। হড্ডোগোলটা ছিলো ঠিক এই রকম- ঐ মেয়ে বিয়ে করা যাবে না, মেয়ের দোষ আছে, মেয়ে ভালো না, তো মেয়ে কলেজে পড়ে ক’জনের সাথে লাইন আছে কে জানে, তো মেয়ে অসতী, সৎ নয়, এটা ওটা হাবি-জাবি এই আর কি।

এবার আসল কথা বুজাই বলি।
আমাদের পাশের বাড়ির একজন ভাইয়া বাহিরে থেকে এসেছেন বিয়ে করবেন। মেয়ে দেখেছেন গোটা কয়েক তা কাউকেই পছন্দ হয়না। তার কাছে সবই অপছন্দ। কি একজন রাজাবাবু ভাবেন একবার! বয়স তার চল্লিশ ছুঁই ছুঁই, তয় ভাবুন এবার মরনের বয়সে বিয়ে করতে গেছে। তার বয়সের মেয়েদের বিয়ে হয়ে গেছে সেই এক-দেড় যুগ আগে, তাদের এখন নাত-নাতনীও হয়ে গেছে। যাগগে সে কথা, ছেলে বলে কথা, বয়সে কি আসে যায়, তাই না!!! মেয়ে হলে সমাজের মানুষ কত কথা বলতো তার কোন ইয়াত্তা নাই!!!

অনেক দিন পর আজ আবার ছেলে এবং তার আত্মীয়-স্বজন দশ/পনেরো জন মিলে গেছে মেয়ে দেখতে। আগে তো কত মেয়েই দেখেছে কারো সাথেই মনের মিল হয়নি, এবার যদি হয়। তাদের আবার কত রকমের চাহিদাও আছে। মেয়ের বেশি বয়স না 22/23 তো নাই, 18/20 হলেই চলবে। সুন্দরী হতে হবে, খাটো না লম্বা হতে হবে, চাল-চলন ভালো হতে হবে, কর্মঠো, অল্প শিক্ষিত হলে হবে এই তো মেট্রিক-ইন্টার হলেই ভালো ইত্যাদি ইত্যাদি........

মেয়ে দেখা-টেখা শেষ হলো, যাগগে গোটা কয়েক মেয়ের মধ্যে খুজে পেয়েছে একটি মেয়ে। মেয়েকে চেইন পরিয়ে আসছে বিয়ের কথা কিছুটা পাকাপাকি করেও আসছে। এখন দিনখন দেখে বিয়ের তারিখটা ঠিক করলেই হবে। মেয়ের বাড়ি থেকে দশ কদম পা না বাড়াতেই সামনে এসে হাজির হলেন হাজি সাহেব। আপনার আবার যে হাজি সাহেবের কথা ভাবছেন সেই হাজি সাহেব না কিন্তু আবার, এই হাজি হলো সেই হাজি যেসন- গ্রামের কিছু মানুষ থাকে দু’একজন, যেমন কার মাথায় একটি পিটান দেওয়া যায়, কারে ভাতের থালা একটু থাম্পা মারা যায়। আরো আছে কে কি করলো না করলো সব খবার আর কারো কাছে না পেলেও তাদের কাছে ঠিকই পেয়ে যাবেন। এরা সহজে কারো ভালো চায় না। অন্যের ভালো তো মোটেও সহ্য করতে পারে না। সেই রকমেরই একজন এসে দাড়ালো তাদের সামনে, মেয়ের নামে যত বদনাম আছে সব মুখ থেকে সত্য মিথ্যা বানিয়ে বডবড করে বেড় করে দিলো, সমাজে যাকে বলে বিয়ের ভাঙ্গানী।

মেয়ে এটা করেছে, ওটা করেছে, এর সাথে ইটিস করেছে, ওর সাথে পিটিস করেছে। এমন সোনা ছেলের সাথে ঐ মাইয়া বিয়া দিবেন আপনেরা কি পাগল হইয়া গেলেন নাকি বুজলাম না। আরে ভাই বাদ দেন বাদ দেন এইয়ার থাক্কাও ভালো মাইয়া পাইবেন সোনার পোলা বাইচা থাকলে। তাই তো বলি ছি. ছি ছি এমন সোনা পোলার সাথে কি ওমন বেজাত মায়ইয়ার বিয়া করায় কেউ। এমন খাটিসোনার ছেলের আমার, যেনো ধোয়া তুলতী পাতার পানি, তওবা তওবা!!!! হাজি সাহেবের নিকট এই সব কথা শুনে কি আর কারো মাথা ঠিক থাকে, সবার মাথা প্রায় নষ্ট এখন। এতা দামের স্বর্ণের চেইন একখানা দিয়া আসিলো। সবার মাথায় তো এখন বজ্রপাত পরেছে। হনহন করিয়া সবাই বাড়ি ফিরিয়া আসিলো।

এখন বলা যাক হড্ডোগোলের কথা। বাড়িতে এসে সবাই ঘরে খাটের উপর বসে মেয়ের নামে যা শুনেছে এখন তারা আরো কিছু জোড়া-তালি দিয়ে বলতে শুরু করলো। এই মাইয়া আনা যাবে না, এই মাইয়ার নিশ্চয় কোন না কোন দোষ আছে, না থাকলে কি আর কে্উ কারো নামে এমনি এমনি মিথ্যে বলে। দোষ আছে বলেই তো বলেছে, মেয়ে অসৎ, সৎ নয়। এই সব হড্ডোগোল শুনে পাশের আরো কিছু মানুষজন গেলো তাদের ঘরে, সাথে আমিও গেলাম, মনে মনে ভাবলাম দেখে আসি, এই গরমের মধ্যে আরো গরমের উত্তাপ হলো কেনো!!!

প্রথমে ছেলের বড় ভাই- মেয়ে ভালো না, সুন্দরী হলে কি হবে বেজাল আছে। ছেলের ছোট বোন বলল-মেয়েটা নাকি অন্যান্য ছেলেদের সাথে আড্ডা দিতো, সেই মাইয়া কি ভালো হয়!! ছেলের ছোট ভাই বলল- মেয়ে অসৎ, সৎ না। ছেলে, মানি যে বিয়ে করবে সেই বলল হুম ঠিকই বলছিস মেয়ে অসৎ, কত জনের সাথে ফস্টি নস্টি করছে তা কেডায় জানে। ঐ ধরনের মেয়ে বিয়ে করা যাবে না।

এদিকে ঘটক সাহেবকে তো কেউ পাত্তাই দিচ্ছে না। অনেক কষ্ট করে একটু কথা বলার সুযোগ খুজে পেয়েছে মনে হয়। সে বলল আপনেরা যা বলছেন আর যা ভাবছেন তা কিন্তু সত্যি না। এই সব কথা যে বা যারা আপনাদের বলছে সে তো মেয়ের শত্রুও হতে পারে। আরে ভাই কে শুনে কার কথা। এখন সবাই আছে চেইনের চিন্তায়, বিয়ের চিন্তায় না। ঘটক সাহেবকে বলে চেইন ফিরিয়ে আনতে। আমি তা শুনে একটু মুচকি হাসি হাসলাম।

কিন্তু যে কথাটি শুনে আমার অসস্তি লাগছে সেই একই কথা বারবার সবাই বলে যাচ্ছে। বুজলাম না তারা সবাই কথাটি কি বারবার রিপিড করছে, না মুখস্ত করছে। বারবার সেই একই কথা- মেয়েটি অসৎ, মেয়েটি অসৎ, মেয়েটি অসৎ!!!!

এবার আমার ধর্য্যের বাঁধ ভেঙে গলো, সবাইকে চুপ করালাম। এরপর ছেলের দিকে তাকিয়ে- ছেলেকে একটি প্রশ্ন ছুড়ে মারলাম। প্রশ্নটা ছিলো এই রকম “সবাই মিলেতো বলাবলি করছেন মেয়েটা অসৎ, মেয়েটা অসৎ, মেয়েটা অসৎ, আপনাদের ছেলেটা কতটা সতী-সাদ্ধ্য পবিত্র ছেলে”? কই তার দিকে তো একবারও এই একই প্রশ্ন তুলে ধরেননি। সব প্রশ্নর ভাগিদার তো মেয়েটাকেই বানালেন। আপনাদের ছেলেটা কতটা সৎ বলতে পারবেন। সে বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবে সে একজন সতী-সাদ্ধ্য ছেলে। সে জীবনে কোনদিন কখনো কোন মেয়ের দিকে কুনজরে তাকায়নি, সে কোন মেয়েকে ছুঁয়েও দেখেনি, পারবে বলতে। প্রবাস জীবনের এই 10 বছরে সে কোন মেয়ে স্বামী কিংবা প্রমিক হয়নি। তাহলে কেনো মেয়েটাকে একা বলছেন অসৎ, মেয়েটি যদি অসৎ হয় তাহলে আপনার ছেলেটাও তো অসৎ তাই কি নয়। এবার তো খেয়েছে চান্দু ধরা, বিড়ালের মতো ডেপডেপ করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে ছেলেটি। তাকিয়ে আছে সবাই আমার দিকে, কারো মুখে কোন উত্তর নাই।
---------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমার কথা-
হ্যা এবার আমার আসল কথা শুনেন- এই সমাজ, এই সমাজের মানুষেরা প্রতিটি দায়, প্রশ্ন শুধু মাত্র মেয়েদের দিকেই ছুঁড়ে মারে কিন্তু কেনো? একটি মেয়ে প্রেম করেছে একটি ছেলের সাথে, প্রেম ভেঙে গেছে, কিছু কিছু মেয়েদের প্রেমের কারণে অসতীও হতে হয়। যারা অসতী হয় আমি তাদের কথা বলছি। অসতী কি শুধু তারা একাই হলো সাথে কি ছেলেটি অসতী হয়নি? হয়েছে কিন্তু সমাজ, সমাজের মানুষ ছেলেটির দোষ দেখছে না, দেখছে শুধু মেয়েটার দোষ, তা কেনো? কেনো সেই একই রকমের দোষ ছেলেটাকে দেওয়া হচ্ছে না।

বিয়ের সময় নাকি স্বামীরা স্ত্রীকে প্রশ্ন করে তুমি কি সতী নাকি অসতী, আচ্ছা বলুন তো- সে কি নিজেকে কখনো প্রশ্ন করেছে সে ছেলেটি সতী নাকি অসতী। এই প্রশ্ন অন্যের দিকে ছুঁড়ে দেওয়ার আগে কেনো নিজের দিকে ছুঁড়ে মারছে না। সমাজের মানুষ কেনো মেয়েটাকে একা বলে, ছেলেটাকে বলছে না?
তবে আমার প্রশ্ন- “যে সব ছেলেরা মেয়েদের অসতী, অসতী বলে বেড়াচ্ছে তারা কতটা সৎ”?
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------




সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জুন, ২০১৮ সকাল ১১:২৪
৪০টি মন্তব্য ৩৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার কিছু ভুল!

লিখেছেন মোঃ খালিদ সাইফুল্লাহ্‌, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮

১। ফ্লাস্কে চা থাকে। চা খেতে টেবিলে চলে গেলাম। কাপে দুধ-চিনি নিয়ে পাশে থাকা ফ্লাস্ক না নিয়ে জগ নিয়ে পানি ঢেলে দিলাম। ভাবছিলাম এখন কি করতে হবে? হুঁশ ফিরে এল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×