টু বা থ্রীতে পড়ি তখন। প্রতি রবি ও বুধবার বিকেল ৫টায় বাবার অফিসের সামনে হাজির হতাম। শুকলাল হাটে যেতে হবে। বাবার হাত ধরে রেললাইন দিয়ে হাঁটতাম। বাবা বলতেন, বুলবুল বলতো ব্যাট্টা: মানব দেহে হাড়ের সংখ্যা কত? পৃথিবীতে কয়টি মুসলিম দেশ আছে? অমুক দেশের রাজধানী কোথায় ?........ চলতো শুকলাল হাট পর্যন্ত।
বাবার বড় স্বপ্ন ছিল তাঁর বড় ছেলেকে বিদেশে অনেক বড় ডিগ্রী নিতে পাঠাবেন; উনার সমস্ত সঞ্চয় দিয়ে হলেও। বাবার সমস্ত সুখস্বপ্নের স্বার্থে পা মাড়িয়ে নিজেকে আবিষ্কার করেছিলাম নেশার রাজ্যে। খুবই কেঁদেছিলেন বাবা। আজ অন্যের স্বার্থ উদ্ধার করতে গিয়ে আমাকে ছুটতে হয়েছে পৃথিবীর কয়েকটা প্রান্তে।
বাবার মেজো ছেলে বায়োমেকানিক্যাল ইন্জিনিয়ার নামক শব্দটার পেছনে হন্যে ছুটছে আর ছোট ছেলে টার্নিং পয়েন্টের টিবিতে উঠে দাঁড়িয়েছে। বাবার লালিত স্বপ্নের বীজ তাদের মাঝে বুনে দেয়ার কঠিন দায়িত্ব আজ আমার হাতে; আমাকে পারতেই হবে। আজ জীবনের সকল সংকটময় সময়ে সহজ সমাধানের প্রশ্নে বারবার অনুভব করি "বাবা" নামক মহামানবের প্রয়োজনীয়তা। তাই এখন বাবার দেয়া মারগুলোকে ঔষধ আর তাঁর বলা প্রতিটি কথাকে "পবিত্র বাণী" বলে মেনে নিয়েছি।
বাবাকে সন্তান হিসেবে গর্ব করার মত কতটুকুন কি দিতে পেরেছি জানিনা। তবে আমরা বাবাকে নিয়ে একবুক গর্ব করি। হয়তোবা আগামী প্রজন্মও করবে, যতদিন লাল-সবুজের পতাকা থাকবে। আমাদের শোকেজে সাজিয়ে রাখা আমার ১৫/২০টা ক্রেষ্ট ও কাপের মধ্যে পিতলের অনেক পুরানো ক্ষয়ে যাওয়া একটি কাপ আমাদের অমূল্য সম্পদ। যেখানে খোদাই করে লিখা আছে - "কক্সবাজার গুনীজন সংবর্ধনা পরিষদ। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের স্বীকৃতি স্বরূপ মুক্তিযোদ্ধা জনাব মোহাম্মদ হোছাইনকে প্রদান করা হইল - ১৬/১২/১৯৭২ইং"।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ রাত ২:১৮