somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শাহবাজপুর থেকে ডাঃ তাড়াও আন্দোলন এবং আমার কিছু কথা

২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সকাল ১১:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কেমন আছো শাহবাজপুর-০১ // কয়েছ আহমদ বকুল
-----------------------------------------------------
শাহবাজপুর থেকে ডাঃ তাড়াও আন্দোলন এবং আমার কিছু কথা

শাহবাজপুর সচেতন যুব পরিষদ নামে' একটি সামাজিক সেবা সংঘটন সৃষ্টি হয়েছে জেনে আমার ভালো লাগছে। শাহবাজপুরের যে কোন ভালো কিছু আমার ভালো লাগে। সচেতন যুব পরিষদ কে আমার প্রাণঢালা অভিনন্দন।

সচেতন যুব পরিষদের ব্যানারে শাহবাজপুর থেকে অবৈধ ডাঃ তাড়াও আন্দোলনকে আমি অন্তর মন থেকে সমর্থন করেই বয়েসে তরুণ ও ত্যাজদীপ্ত ভ্রাতৃ প্রতিম সংঘটনের নেতাদের উদ্দেশ্যে শাহবাজপুরে দীর্ঘদিন থেকে বসবাসরত কয়েকজন ডাঃ সম্পর্কে আমার কিছু স্মৃতি নিয়ে আলোচনা করতে চাই।

১৯৯৭ সালের প্রথম দিকের কোন এক ঝড় জঞ্জাময় রাতে আমার চাচাতো ভাই করমপুরের হাজী ফয়জুর রহমান সারপার বাজার থেকে গভীর রাতে বাড়ি ফেরার পথে রাস্তায় বজ্রপাতে মারাত্মক আহত হোন। মৃতপ্রায় ভাইকে বাড়ীতে নিয়ে আসার পর আমরা কেউই আর তাঁকে বাঁচাতে পারবো বলে আশা করছি না। আমাদের গ্রামের জনৈক আব্দুল আজীজ চিনু আমাকে বললেন চাচা বাজারে একজন নতুন ডাঃ এসেছেন, জানিতো লাভ হবে না তবুও কি আমরা একবার চেষ্টা করবো? সাইকেল মটরসাইকেল কিছুই ছিলোনা তখন, বৃষ্টির রাত। পাগলের মতো দৌড়ে রেলকলনিতে নতুন ডাঃ এর বাসার সামনে এসে দাঁড়ালাম। রাত তখন ২/৩ টা বাজে। অনেক্ষন গেইটে আঘাতের পর দরজা খুললো যে ছেলেটি পরে জেনেছি তার নাম লক্ষ্মী। বারান্দায় দাঁড়িয়ে দেখলাম ঘরের ভেতর একজন মানুষ নামাজ পড়ছেন। লক্ষ্মী বললো ডাঃ সাহেব এই মাত্র ইটাউরি থেকে এসেছেন, এখনও ভাতই খাননি, এখন আর কোথাও যাবেন না। কিন্তু বেটে খাটো ধরনের সেই ফেরেস্তা সমান মানুষটি যখন জানলেন বজ্রাঘাতে একজন মানুষ মরতে বসেছেন তিনি ছালাম ফেরানোর পর আর পরের নামাজের জন্য দাঁড়ালেন না, ডাঃ শব্দের যথাযত মর্যাদা দিয়ে শুধু তিনি বললেন মটর সাইকেল তুমি চালাতে হবে আমি খুব ক্লান্ত। আমি বললাম আমি তো চালাতে জানিনা। হেসে বললেন আচ্ছা চলো।
জন্মসূত্রে শাহবাজপুরের ছেলে না হয়েও যে ডাঃ দীর্ঘ ১৭ বছর থেকে শাহবাজপুরের মানুষের প্রতি একজন ডাঃ হিসাবে তাঁর সকল ধরনের দ্বায়িত্ব কর্তব্য পালন করে যাচ্ছেন সেই প্রিয় মানুষ ডাঃ ফয়জুল আজীজের সাথে এভাবেই আমার প্রথম পরিচয়। সেদিন সেই দূর্যোগের রাতে ৩ বার আমাকে নিয়ে বাজারে এসে মেডিসিন নিয়ে সেলাইন নিয়ে আবার আমাদের বাড়ীতে গিয়ে আমার ভাইকে চিকিৎসা দিয়ে মৃত্যুর মুখ থেকে বাঁচিয়েছিলেন তিনি। ডাঃ ফয়জুল আজীজ টাকার জন্য এমন করেছেন আমি বিশ্বাস করিনা, কারণ সে রাতে উনাকে কোন টাকাই দেয়া হয়নি, টাকা দেয়ার কথা কারো মনেই ছিলো না, পরে কেউনা কেউ দিয়েছিলেন হয়তো। ডাঃ ফয়জুল আজীজ টাকার জন্য চিকিৎসা করেন না তার আরেকটা সত্য প্রমান দীর্ঘদিন পর্যন্ত তিনি শাহবাজপুরে চিকিৎসা দিয়ে গেছেন কোন নির্ধারিত ফি ছাড়া। চিকিৎসা শেষে যে যা দিয়েছে হাত নিয়ে পকেটে রেখেছেন না দেখেই।

ডাঃ ফয়জুল আজীজের কথা এখানে বলার একমাত্র কারণ আমার তরুণ বন্ধুদের এই ম্যাসেজ দেয়া যে আপনারা যখন আন্দোলন করছেন সেই আন্দোলন হোক নির্দিষ্ট অভিযুক্তদেরকে কেন্দ্র করে ঢালাও ভাবে শাহবাজপুরে অবস্থানরত সব ডাঃ কে হাতুড়ে বা ভূয়া সার্টিফিকেটধারী ডাঃ বলা হয়তো আপনাদের আন্দোলনকে বাঁধাগ্রস্থ করবে। আমি ব্যক্তিগতভাবে জানি ডাঃ ফয়জুল আজীজ একজন এম বি বি এস তারচেয়ে বড়ো কথা তিনি শাহবাজপুরে চিকিৎসা শুরুর প্রথমদিক থেকেই এম বি বি এস হিসাবে পরিচয় দিয়ে আসছেন। আপনাদের আন্দোলনের প্রথম ফসল টি এইচ ও সাহেবের তদন্ত। কিন্তু আপনাদের কাঙ্খিত সেই তদন্তে ডাঃ ফয়জুল আজীজকে আসতে বাধ্য করে আপনারা জয় পাননি, আপনাদের আন্দোলনকে দ্বিধাবিভক্ত করেছেন।

জাতীয় দৈনিক কালের কন্ঠের এই বিষয়ে একটি রিপোর্ট আমার চোখে পড়েছে।সেখানে উল্লেখ ছিলো এভাবে ' রিপোর্টে লিখিত অভিযোগ সূত্রে আরো জানা যায়, ডাক্তার নামধারী মো. রেজাউল করিম, মো. আব্দুর রাজ্জাক এস.এম জসিম উদ্দিন, জামাল উদ্দিন, মকসুদ আলী তালুকদার, সৈয়দ গোলাম কিবরিয়া, এম.নূরুল আম্বিয়া, মেঘনাথ রুদ্র পালসহ অনেকে নিজের নামে ডা. লাগিয়ে এম.বি.বি.এসসহ বিভিন্ন ডিগ্রীর সাইন বোর্ড লাগিয়ে চিকিৎসা করছেন। রিপোর্টে উল্লেখিত নামদের মধ্যে এম নুরুল আম্বিয়া যতদূর জানি শাহবাজপুরে ডি, এম, এফ ডিগ্রী লিখে চিকিৎসা শুরু করেন। তবে এক সময় তিনি এম বি বি এস লেখা শুরু করেন। সেই লেখাটা কতটা স্বাভাবিক বা অস্বাভাবিক সেটা সময় সাপেক্ষ। উনার বিষয়ে হাইকোর্টের একটা নির্দেশনা আছে যে তাঁর মামলা নিষ্পত্তি পর্যন্ত তিনি তাঁর ডিগ্রীও নামের আগে ডাঃ উপাধী ব্যবহার করতে পারবেন। রেজাউল করিম একই ভাবে ডি এম এফ বা এরকম কিছু লিখে আমাদের বর্তমান চেয়ারম্যানের ভাইর ফার্মেসীতে চিকিৎসা শুরু করতে দেখেছি, কিছু দিনের ব্যবধানে হঠাৎ নিজেকে ডেন্টিস্ট হিসাবে পরিচয় দিতে শুরু করেন তিনি, হঠাৎ দন্ত বিশেষজ্ঞ হওয়ার বিষয়টি ফার্মেসী মালিক মেনে নিতে পারেন না তাই রেজাউল করিম সেখান থেকে বের হয়ে । তারপর এক সময় তিনিও যদি নিজেক এম বি বি এস পরিচয় দিতে শুরু করেন সেটা তদন্ত ছাড়াই স্থানীয় প্রশাসন মানে মাননীয় চেয়ারম্যান মহোদয়ের হস্তক্ষেপে খুব দ্রুত সমাধান হওয়া জরুরী। কারণ এই ডাঃ তো চেয়ারম্যান সাহেবের চেনা খুব। আব্দুর রাজ্জাক আমার গ্রামের মানুষ, ঘনিষ্ট বন্ধু আত্মীয়। আমার সহযোগীতায়ই তাঁর অনুষ্টানিক চিকিৎসা সেবা দেয়া শুরু তবে তা অবশ্যই ডিএম এস/ সি এম এ হিসাবে। কোন ভাবেই উনাকেও এম বি বি এস হিসাবে মেনে নেয়া যায় না। জামাল উদ্দিন, মকসুদ আলী তালুকদার, সৈয়দ গোলাম কিবরিয়া, মেঘনাত রুদ্র পাল ডিগ্রী পরিবর্তন করে রাতারাতি বড়ো বা বিশেষজ্ঞ ডাঃ হবার চেষ্টা করেছেন বলে আমার জানা নেই। তবে তাঁদের যে ডিগ্রী প্রকাশমান তা তদন্ত করে সঠিক কি না দেখার অধীকার যথাযত করতৃপক্ষের আছে।

পরিশেষে এসে শুধু এটুকু বলবো, ২০০৭ থেক ২০১১ পর্যন্ত দেশে অবস্থানকালে বিভিন্ন সামাজিক রাজনৈতিক কর্মকান্ডে জড়িত থাকার কারণে রাত বিরাতে জামাল উদ্দিন ও মকসুদ আলী তালুকদারকে উনাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে উনাদের ব্যক্তিগত ঝুঁকি জেনেও বারবার বহুবার অনেক যায়গায় রুগী দেখতে যেতে বাধ্য করেছি। উনারা বড়ো ডাঃ না, নিজেকে বড়ো ডাঃ পরিচয় দিয়েছেন বলেও জানি না তবে শাহবাজপুরের অনেক মানুষকে অনেক বড়ো বড়ো বিপদ থেকে উনারা রক্ষা করেছেন।
কুমারশাইলের সাবেক মেম্বার জামাল উদ্দীন জমিরের ভাতিজা সুমন যে রাতে ডাকাতদের হাতে খুন হোন সেই রাতে মেঘনাত রুদ্র পাল আমার এক ফোন কলে আমার সাথে খুব পরিচয় না থাকা স্বত্তেও জমির মেম্বারের বাড়ীতে চিকিৎসা দিতে গিয়েছিলেন আমি ইচ্ছে করলেও তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ না করে পারবো না।

সচেতন যুব পরিষদকে ভাবতে অনুরোধ করবো আমাদের শাবাজপুরে এখনও এই ডাঃ রা ছাড়া আসলে চিকিৎসা সেবা দেয়ার মতো কোন প্রতিষ্টান আমরা সৃষ্টি করতে পারিনি। ঠিক আছে যারা রাতারাতি বড়ো ডিগ্রীধারী হতে চলেছেন বা যাদের চরিত্রে পাগলামু দৃশ্যমান তাদেরকে শাহবাজপুরের চিকিৎসা সেবা থেকে বিরত রাখতে আমি মনে করি আমাদের শাহবাজপুরের সামাজিক নেতা ও স্থানীয় প্রশাসনই যথেষ্ট।

কয়েছ আহমদ বকুল
যুক্তরাজ্য
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×