কোন এক অজ্ঞাত কারণেই হোক বা অন্য কোন কারণে, পুরুষশাসিত আমাদের এই সমাজে হয়তো মেয়েদের সাফল্যগুলো খুব একটা প্রচারণার আলো পায়না। হয়তোবা প্রচারণা পেলেও আমরা আমাদের ইগোর কারণে তাদের সাফল্যগুলোকে ইগনোর করে যাই।
সে যাই হোক, দেশ ও দশের প্রেক্ষাপট ছেড়ে যদি একবার ইন্জিনিয়ারিং ভার্সিটি গুলোর দিকে তাকাই তাহলে একটা বিষয় খুব স্পষ্টভাবে দেখা যায়, ইন্জিনিয়ারিং ভার্সিটিগুলোতে মেয়েরা পুরুষদের তুলনায় এখনো সংখ্যালঘু সম্প্রদায়।
হ্যাঁ, সংখ্যাটা ক্রমাগত বাড়ছে এবং ভবিষ্যতে আরো বাড়বে এটা নিশ্চিত।এর কারণ হিসেবে অনেকেই বলে, গণিত,বিজ্ঞান বা প্র্যাকটিকাল কাজে মেয়েরা অনেক কাঁচা।
কিন্তু দেখুন বাংলাদেশী মেয়েরা আজ গণিত অলিম্পায়াডে যাচ্ছে,ফিজিক্স অলিম্পায়াডে বিজয়ী হচ্ছে, হার্ভাড বা MIT এর মতো প্রতিষ্ঠানে পড়ার সুযোগ পাচ্ছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিযোগীতায় বিজয়ী হয়ে আসছে।তাই আপাতদৃষ্টিতে আপনার কাছে কাঁচা মনে হলেও অনুকূল পরিবেশ পেলে তারা ঠিক ই তাদের যোগ্যতার পরিচয় দিয়ে দিচ্ছে। আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে এদেশের মেয়েরা আর পিছিয়ে নেই প্রতিদ্বন্দ্বীতায় ।
সম্ভবত নামের কারণেই বোধহয় জন্মের সময় ই প্রযুক্তির সাথে গাঁটছাড়া বেঁধেছেন তাসলিমা আক্তার প্রযুক্তি আপু।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত 2nd DUITS Campus IT Fest - 2013 এ Apps in Life: Mobile Application Development শীর্ষক প্রতিযোগীতায় আবু সালেহ মো. মুসা (#13) এর সাথে অংশ নিয়ে চ্যাম্পিয়ন হন 'Sanitabit' App টি Develop করার জন্য।
App টির কাজ???
হয়তোবা আপনি কোন নগরে আগন্তুক। প্রাকৃতিক কর্ম সম্পাদনের ভীষণ চাপ। কিন্তু নিকটবর্তী কোথাও কি কোনো টয়লেট আছে??? কার কাছে জিজ্ঞেস করা যায়??? অথবা রাস্তার পাশের উপচেপড়া ডাস্টবিন থেকে ছড়িয়ে পড়ছে দুর্গন্ধ। চলাচল দায় হয়ে পড়েছে। কীভাবে এ খবরটা পৌছে দেওয়া যায় নগরপতির কাছে???
তখন স্মার্টফোন ব্যবহার করেই ডাস্টবিনের ময়লার স্তূপ ছাড়াও বেশ কিছু নাগরিক সেবার হালনাগাদ অবস্থা সম্পর্কে তাৎক্ষণিক জানাতে পারবেন সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে।এছাড়াও আপনি সহজেই জানতে পারবেন কাছের হাসপাতাল, মসজিদ/মন্দির ও মার্কেটের অবস্থান সম্পর্কে। প্রাথমিকভাবে অ্যাপটি তৈরি করা হয়েছিল খুলনা নগরীর মানচিত্রের ওপর ভিত্তি করে। ইতোমধ্যেই অ্যাপটিতে যোগ করা হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং যাত্রাবাড়ীর বেশ কিছু এলাকা। জিপিএস সুবিধা কাজে লাগিয়ে আস্তে আস্তে দেশজুড়েই এই সেবা ছড়িয়ে দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। ‘স্যানিটেশন’ আর ‘হ্যাবিট’ শব্দ দুটি যুগলবন্দি করে তৈরি ‘স্যানিটাবিট’। 'স্যানিটাবিট' App টি তিনি ডেভেলপ করেছেন NerdCats এর হয়ে।
এই একটি সাফল্যের বাইরেও তার আরো একটি বড় পরিচয় আছে। আর সেটি হচ্ছে তিনি EEE ফ্যাক্টাল্টির ইন্জিনিয়ারদের আন্তর্জাতিক সংগঠন IEEE Student Branch, KUET এর President!!!!
(কুয়েটে EEE ফ্যাকাল্টির অধীনভুক্ত চারটি ডিপার্টমেন্টঃ EEE,CSE,ECE & BME )
কি, একটু চমকে যাননি???
মনে হয়নি, "ইন্জিনিয়ারিং ভার্সিটিতে তো মেয়েরা সংখ্যায় তুলনামূলক কম, প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রে মেয়েদের অংশগ্রহণ কম......ব্লা.....ব্লা......ব্লা!!"
সে আপনার যা ইচ্ছা আপনি তা ভাবতে থাকুন, আমরা বরং তার অন্যান্য সাফল্যের দিকেও আলোকপাত করি।
>> National Collegiate Programming Competion (NCPC) এর Women's Catagory তে সফলতা!!
>> Inter Hall Game Champion
>> Talentpool Scholarship, 39th Place (Combined), H.S.C 2009, Dhaka Board
>> 1st position in Drawing Scientific Pictures in College
>> Miss Close Up in School
না, এখানেই থামছি না।
HACK এর Vice President তিনি।
( HACK = Hardware Acceleration Club of KUET)
বেশকিছু সেমিনারে অংশগ্রহণ এবং আয়োজনেও তার অবদান রয়েছে।তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য বলতে গেলে-
** Seminar on Research Opportunities and Spice Simulations
** International Conference on Electrical Information and Communication Technology (EICT),2014, KUET
** GPIT CSE Festival,2012, KUET
** যন্ত্রমানব কর্মশালা
এছাড়াও ছোট-খাটো আরো অনেক সেমিনার তো আছেই।
IEEE & KUETOSN (OSN = Open Source Network) এর প্রেসিডেন্ট হিসেবে Google Map, Enterprenurship এর উপরে Work shop, HACK এর Work Shop আয়োজনেও তার ভূমিকা ছিল।
TAZ Education Village এর Teaching Instructor হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতাও আছে। বর্তমানে তিনি অন্ধদের জন্য একটি প্রজেক্টে কাজ করছেন।
এর বাইরেও আরো অনেক Voluntary কাজেও তিনি জড়িত ছিলেন।
সত্যি কথা বললে একটা কথা অবশ্যই বলতে হবে, "She deserves a huge respect." সঙ্গে এটাও বলবো, কুয়েটের রোকেয়াবাসীদের জন্যেও তিনি একজন আইডল।
বাংলাদেশের মেয়েরা এখন এভারেস্ট,কিলিমানজারোর মতো পর্বতও জয় করে ফেলে। তারা এগিয়ে যাচ্ছে, সাথে আমাদেরও এগোতে হবে। তাহলে দেশও এগোবে।