somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

লাউয়ের প্রতি ভালবাসা

২২ শে অক্টোবর, ২০০৯ সন্ধ্যা ৬:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

লাউয়ের প্রতি ভালবাসা

সাধের লাউ আমাকে কখনো বৈরাগী হতে দেয়নি বরং রাগের কারণ হয়েছি। আর এই রাগের পেছনে যিনি থাকতেন তিনি আমার প্রিয়তমা গিন্নী। কতদিন যে এই সবুজাভ ত্বকের লিকলিকে তন্বী অথবা মোটাতাজা নাদুস-নুদুস গোছের লাউয়ের প্রেমে পরে নিজের দুর্গতি ডেকে এনেছি তার হিসেব নেই। স্বামীর অন্তরের খবর গিন্নীরা কী করে যেন টের পেয়ে যায়। বিয়ের পরপরই গিন্নী আমার ঠিকই টের পেয়েছিল লাউয়ের প্রতি আমার একটু বেশী মাত্রার দুর্বলতা। তাই থলে হাতে বাজারে গেলেই থলের ভেতর থেকে বিড়ালের উঁকি দেয়ার মতোই লাউ কেনার বাসনাটা কেমন যেন মাথা চাড়া দিয়ে উঠতো। লাউয়ের প্রতি মনটা ব্যকুল হয়ে উঠতো। কিন্তু বরাবরই লাউ কিনতে আমি ভীষণ ভয় হয়। আমার কেনা সুন্দরী কোন লাউ কচি হয়না। সব পাকনা বুড়ি। বাসায় নেবার পর বুঝতে পারি। গিন্নী নির্দয়ভাবে যখন তার সতীন লাউকে বটির নীচে ফেলে তখন লাউয়ের ধবধবে সাদা বিচিগুলো দাঁত বের করে হাসে। গিন্নী বুঝতে পারে তার সতীন যথেষ্ট পাকাপোক্ত গোছের। সহজে দমেনা। রান্নার সময় সেই লাউ অবিগলিত হাসি দিয়ে বলে তোমার স্বামী একটা আস্ত একটা গবেট- আজ পর্যন্ত কচি লাউ চিনলোনা। গিন্নী দূর থকে কটমট করে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে। আমি কাছে যেয়ে হাঁড়িতে আদর করে দুই/এক চামচ চিনি ঢালি, বেহায়া লাউ তবুও গলতে চায়না। রান্নার পরে আধাসেদ্ধ বিচিগুলো এতিম পোলাপানের মতো কাতর দৃষ্টিতে আমার দিকে চেয়ে থাকে। আমার খেতে মায়া হয়, অরুচি লাগে।

আমার গিন্নীর সাথে যুবতি লাউয়ের সম্পর্ক কিছুটা নমনীয় হলেও বুড়ি লাউয়ের সাথে শত্রুতা আজও অব্যাহত। সম্পর্কটা রীতিমত সতীনসুলভ। বিয়ের এতো বছর পরেও বুড়ী লাউয়ের প্রতি আমার প্রগাঢ় মমতা ও প্রেম দেখে বউ শুধু রাগে ফুসতে থাকে। ছোটবেলা থেকেই লজ্জা শরম কম বলেই হয়তো এসব গায়ে মাখিনা। আমি যখন ঘর্মাক্ত শরীরে, গদগদ চিত্তে এক হাতে বাজারের ব্যাগ আর অন্য হাতে একটা লাউ ঝুলিয়ে বাজার থেকে ফিরি- বউ তখন আমার দিকে ফিরেও তাকায় না। কপাল বেয়ে ঘাম ঝরতে থাকে- ভাবি, বউ হয়তো আঁচল দিয়ে মুখটা মুছিয়ে দেবে। বলবে, বাজার করা সত্যিই একটা ঝকমারি কাজ। আর এই কাজটা করে তুমি আমাকে সারাজীবন উদ্ধার করলে। কিন্তু তা নয়! সে আমার হাতে ধরা লাউয়ের দিকে তাকিয়ে বলবে- আজ দুপুরটা আমার মনে হয় উচ্ছন্নে গেল। কারণ এই লাউ গলতে কতক্ষণ সময় লাগবে আল্লাহ্ মালুম। সে ভয়ে অস্থির। আমি মনে মনে ঢোঁক গিলি। অন্য রান্না আজ সে শেষ করতে পারবে কিনা সেই চিন্তায় অস্থির। আমি অভয় দিয়ে বলি- আজকের লাউটা কিন্তু দারুন পেয়েছি! একদম কচি। তুমি যেমন যেমন বলেছো ঠিক সেইভাবেই চিমটি কেটে এনেছি। লাউ বিক্রেতা নিজের হাতে বেছে দিয়ে বললো আজ এই লাউ খাবেন আর আমাকে স্মরণ করবেন (বেটা যে ঠিক বলেছিল বুঝেছিলাম পরে)। গিন্নী তাচ্ছিল্যের ভঙ্গিতে বললো- তাহলেই হয়েছে। ঠিক ঐ বেটা হতচ্ছাড়া তোমার ঘাড়ে এবারো বুড়ী লাউ গছিয়েছে। এমন কথা শুনলে কার না আঁতে ঘা লাগে! তবুও আমি চুপ থাকি। উত্তরটা রান্নার পর জমবে ভাল, সেই আশাতেই থাকি। হাতের লাউটা মেঝেতে নামিয়ে বলি- কোন কিছু যাচাই না করে সে সম্পর্কে মন্তব্য করা ঠিক না। বউ বলে- সেতো আমি আজ নতুন দেখলাম না। এই বলেই সে চুপ। আমিও গোছল সেরে রান্না শেষ হবার প্রহর গুনি।

আসলে বউ আমাকে প্রায়ই মনে করিয়ে দেয় লাউ কেনার আগে লাউয়ের গায়ে নখ দিয়ে চিমটি মেরে দেখবে- সেটা কচি নাকি বুড়ী! আমি উত্তরে বলি, তরতাজা লাউয়ের নাজুক গায়ে কেউ কী চিমটি মারে? আমি তো বিয়ের আগে তোমাকে চিমটি মেরে দেখিনি, তুমি কচি ছিলে নাকি বুড়ী! তাহলে বেচারী লাউয়ের দোষটা কোথায়? তাছাড়া তোমার মতো নেইল পলিশ লাগানো, লম্বা ধারালো নখতো আমার নেই। আর কাউকে খোঁচা মারার অভ্যাসও আমার নেই। খোঁচা দিলেই কী সব বোঝা যায়- ভেতরটা কার কেমন! এরপর কথা আর না বাড়িয়ে চুপ করে থাকাই ভাল মনে করি। কারণ এরপর কোন কথা বলে কী বিপদে পরি তার ঠিক নেই। দু’বেলা চুলোর তাপে পুড়ে দু’চারটে ভালমন্দ রান্না করে দিচ্ছে, বেশ খাচ্ছি-দাচ্ছি- এইতো অনেক! আর কী চাই! লাউ কচি হোক আর বুড়ী হোক, সংসারে তেমন কোন বড় ঝামেলা না পাকালেই হলো।

অগত্যা খেতে বসে লাউয়ের সেই চিরন্তন দশা দেখে নিজেই লজ্জা পেলাম। লাউয়ের বিচিগুলোর বিদ্রুপের হাসি দেখে নিজেরই দাঁত খিঁচিয়ে উঠলো। অগত্যা মেজাজ কিছুটা তেতে উঠলো। লাউয়ের টুকরোগুলো আচ্ছামতো ডলা দিতেই গললো বটে- তবে ডলাটা আদরে নয় রাগে। মনে মনে পণ করলাম এবার থেকে লাউয়ের চেহারা দেখে আর কিছুতেই ভুলবোনা। লাউয়ের শরীর দেখতে যতই সর্পিল কিংবা তন্বী-তরুণীর মতো কোমল অথবা যত পেলবই হোকনা কেন- চিমটি আমি একটা দেবোই। লাউয়ের গায়ে চিমটি কাটার জন্য নখ বড় হতে থাকলো। লাউ বিক্রেতার চটকদার মিষ্টি কথায় আর ভুলবো না। তার পছন্দের কোন লাউ আর আমার ঘরে তুলছি না। এবার পছন্দ হবে একান্তই আমার। চিমটিই হবে লাউ যাচাইয়ের নির্ভুল মাপকাঠি। আর এ কারণেই নখ বড় রাখছি। লাউয়ের যতই কষ্ট হোক খোঁচা আমাকে দিতেই হবে- আর নইলে লাউ খাওয়া ছাড়তে হবে। লাউ খাওয়া আমি ছাড়তে পারবোনা আর গিন্নী ছাড়াও আমার চলবে না- তাই লাউয়ের গায়ে চিমটি আমাকে মারতেই হবে! আমি জানি, আমার প্রিয় লাউ আমার চিমটি সইতে পারবে কিন্তু সতীনের অত্যাচারে প্রতিনিয়ত বিদগ্ধ হতে চাইবেনা। নিজের জীবন বিসর্জন দিয়ে হলেও সে আমার রসনা বিলাসে সহায়তা করবে। হে প্রিয়তমা লাউ, তোমার প্রতি আমার অগাধ ও অকৃত্রিম ভালবাসা রইলো।


(রিপোস্ট, পরিমার্জিত)
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে অক্টোবর, ২০০৯ রাত ১১:২২
৩০টি মন্তব্য ২২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×