somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

কালো_পালকের_কলম
আমি এক শেকড় বিচ্ছিন্ন পুষ্প, আসলে সূতো কাটা ঘুড়িআমি স্নিগ্ধ করা শুভ্র গগন ছেড়ে, কলঙ্কিত শামিয়ানার নিচে উড়ি।আমি রিক্ত হয়েছি, সিক্ত করেছি, ধরেছি ধ্বংসের গতিআমি আপন হস্তেই করিয়াছি বিনাশ, নিজের সর্বস্তুতি।

মেয়েটির বিপদে সাথী (পুনঃ)

২১ শে নভেম্বর, ২০১৮ রাত ৯:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


[ছবি গুগল থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে]



আমি, সালেহ, রায়হান, আলি দাড়িয়ে আছি ব্রিজের উপরে। পরিবেশটা খানিকটা আলাদা, আসলে সাধারণ ভাবে বলতে পারি পুরো অন্যরকম। যেমনটা আমরা গল্প উপন্যাসের শিহরণ জাগানো রাতে মতো। কারণ আকাশে তখন চৌদ্দ তারিখের চাঁদ অর্থাৎ পূর্ণিমা, এবং ব্রিজের নিচ দিয়ে বয়ে চলা নদীর জল আর তার বালি ভরা তীর জোৎনার আলোয় এমন অদ্ভুত দেখাচ্ছে যা বর্ণনা করার শব্দ আমার কলমে নেই। তবুও যদি হে পাঠক...!!! আপনার লোভ জন্মে, আর কল্পনা করতে পারেন তাহলে আমার বিশ্বাস নদীর তীর আর তার জল দেখে আপনি নিশ্চয়ই বিভ্রান্ত হবেন যে আপনি নিশ্চয়ই ব্রিজের নিম্নদেশে কোন চন্দ্রখন্ড দেখছেন। আর নদীর জল...??? নির্ঘাত চন্দ্রের গলিত রুপ।

এমন জোৎনা ভরা রাতে নিশ্চয়ই যে কোন স্বাভাবিক মানুষের ইচ্ছে হবার কথা নিজের প্রিয় মানুষটার সাথে হাতে হাত রেখে খানিকটা পথ চলা, যে কেউ এমন পরিস্থিতিতে অভিসারী হয়ে উঠবে বলে আমার বিশ্বাস।

এই পূর্ণিমা রাতের জোৎনার আলোয় মন খারাপের অসংখ্য কারণ থাকে... কখনো শৈশবের স্মৃতিচারণ, কখনো প্রিয় মানুষটার বিরহ যন্ত্রণা, কখনো পাখি হয়ে উড়তে না পারার ব্যর্থতা।

যাইহোক সালেহ প্রস্তাব দিলো চল চা খেয়ে আসি, আমারও রাজি তবে চা খাওয়ার জন্য নির্ধারিত হলো লেচুবাড়ির চা স্টল। আমরা এখন যেখানে দাঁড়িয়ে আছি সেখান থেকে আড়াই কিলোমিটার পাহাড়ী রাস্তা অতিক্রম করতে হবে সে চা স্টলে পৌঁছতে তদুপরি সাথে একটা মাত্র বাইসাইকেল। ঠিক করলাম হেঁটে হেঁটে যাব আর ফিরবার সময় সিএনজি করে ফিরবো।

গল্প করতে করতে আমরা পৌঁছে গেলাম লেচুবাড়ির সেই বিখ্যাত চা স্টলে... গরুর তাজা দুধ দিয়ে তৈরি চা সঙ্গে জোৎনা ভরা নিস্তবদ্ধ রাত্রি আর হাসি ঠাট্টা করতে থাকা আমার তিন সহপাঠী। আমি খানিকটা হলেও মন মরা...

প্রায় ঘন্টা খানেক আড্ডাবাজির পর এখন ফেরার পালা, কিন্তু সিএনজি পাওয়া যাচ্ছে না। খানিকক্ষণ অপেক্ষার পর হেঁটেই আবারো যাত্রা শুরু অনেক দূর চলার পর সিএনজিতে দুটি সিট পাওয়া গেল। সালেহ আর রায়হান কে সিএনজিতে উঠিয়ে আমি আর আলি সাইকেল নিয়ে চলছি......

রাবার বাগানের সামনে কয়েক জন লোক দেখা যাচ্ছে... কিছু একটা নিয়ে তর্জন গর্জন হচ্ছে। ক্ষানিক দূর থেকে আমি বুঝতে পারলাম এদের মধ্যে একজন নারীমূর্তিও আছে, আর ঝামেলাটা নির্ঘাত তাকে নিয়েই, কাছে যেতে যেতে অবলোকন করলাম মেয়েটি বিপদে আছে, কিন্তু বুঝতে পারছিলাম না মেয়েটা কোন ক্যাটাগরির, তদুপরি রাতের বেলা এই নির্জন রাস্তা দিয়ে হেঁটে হেঁটে যাচ্ছিলই বা কোথায়...??? মিথ্যা বলবো না মেয়েটা পতিতা হতে পারে এটাই ভাবছিলাম। কিন্তু কয়েক গজ দূর থেকে যখন মেয়েটির তীব্র প্রতিবাদ শুনলাম "বাগানে যাব কেন? সমস্যা কি আপনাদের?" সাথে সাথে ঠিক করে নিলাম যাই হোক মেয়েটিকে সাহায্যে করবো। ততক্ষনাৎ দৌড়ে এগিয়ে গিয়ে বললাম "কিতা অইছে বে রেবা?" (কি হয়েছে রেবা?) মেয়েটিও সুযোগ বুঝে বলে উঠলো "কই আছলায় অন থাকি আইতে অতক্ষন লাগে নি?" (কোথায় ছিলা এতক্ষণ এখান থেকে আসতে এতো সময় লাগে?)

আমিঃ কিতা অইছে... কিতা মাতে তারা (কি হয়েছে এরা কি বলে?)

মেয়েঃ থানাত একটা ফোন দেও ছাইন

পিছন থেকে আলি হঠাৎ গম্ভীর স্বরে অনেকটা হুংকার মেরে উঠলো "কোনটায় বে আগে খেছ পরে বাকিতা" (কে? আগে মাইর পরে কথা)

লোকগুলো হচকিয়ে গেছিলো তাই দ্রুত পালালো তাও দৌড়ে। আমরা অবশ্য সংখ্যায় কম মাত্র দুজন আর তারা ছিল পাঁচ জন তবু পালালো হয়তো থানার কথা শুনে।

আমিঃ (অনেকটা ধমকের সুরে) চলুন। এই চল... হেঁটে হেঁটেই যাবো।

নিশ্চুপ ভাবে তিনটি প্রানী অনেকটা পথ চললাম, নিরবতা ভাঙ্গলো আলির প্রশ্নে "ইতা তো মনে হয় বাগানী?"

আমিঃ বাগানী না হইলে খরব আছিল... ভয় পাইতো না।

মেয়েঃ কি বলে যে আপনাদের ধন্যবাদ দিবো বুঝতে পারছি না।

আমিঃ আর কথা বইলেন না।

মেয়েঃ আপনি কিন্তু আমাকে ভুল বুঝছেন।

আমিঃ সন্ধ্যার পর এখানে আসার কি দরকার ছিলো?

মেয়েঃ আমি আমার বান্ধবীর সাথে আসছিলাম বিকালে, আর ওর সাথে দেখা করতে ওর বয়ফ্রেন্ড আসে দুজন আমাকে বসিয়ে উধাও ওর ফোনটাও বন্ধ এতক্ষণ অপেক্ষা করে এখন হেঁটেই ফিরতে যাচ্ছিলাম... আর পথে এই বদদের সম্মুখীন হতে হলো।

আলিঃ ওরা নিশ্চিত আগে থেকেই ফলো করছিল আর টার্গেট করেই কাজ টা করতে চাচ্ছিলো।

আমিঃ বাসা কোথায় আপনার...?

মেয়েঃ বারিধারা, শহরে পৌঁছে গেলে যেতে অসুবিধা হবে না।

আমিঃ নাম কি আপনার? কি করেন?

মেয়েঃ আমি ইন্টারে পড়ি আমার নাম দীপ্তি।

আবার চুপ হয়ে গেলাম সবাই। এভাবেই কেটে গেল অনেকটা সময়...... নিরবতা ভেঙে দীপ্তি আমার পরিচয় জানতে চাইলো। আমি সংক্ষিপ্ত ভাবে আমার আর আলির পরিচয় দিলাম। এভাবে গল্প করতে করতে শহরের কাছাকাছি পৌঁছতেই রিক্সা পেয়ে দীপ্তিকে উঠিয়ে দিয়ে বললাম "ফি-আমানিল্লাহ"

দীপ্তিঃ কি ভাবে বুঝবেন ঠিক মতো পৌঁছেছি কি না?

আমিঃ হুমম..... আশা করি আর কোন সমস্যা হবে না।

দীপ্তিঃ আপনার মোবাইলটা দেন.... তো

আমিঃ কেন?

দীপ্তিঃ একটা ফোন করবো

আমি মোবাইল দিলাম সে ফোন করলো হয়তো ওপাশের ব্যক্তি ফোন ধরলো না। সে মোবাইল ফেরত দিয়ে চলে গেল। আমি আর আলি কিছুক্ষণ এই ঘটনা নিয়ে আলোচনা করলাম মেয়েটাকে নিয়ে আলোচনা করলাম। সত্যি বলতে মেয়েটার শুনানো ঘটনা তেমন বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে, কিন্তু বেশি কিছু বললে যদি সে আমাদের ফাঁসিয়ে দেয় তাই কিছু বললাম না। আলিকে বিদায় দিয়ে বাড়ি ফিরলাম।

বাড়ি ফিরেই বিছানায় শুয়ে পড়লাম, আর ক্লান্তিতে রাজ্যের ঘুমে চোখ বন্ধ হয়ে গেল।

মোবাইলের ক্রিং ক্রিং শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেল। ফোন রিসিভ করে সালাম দিলাম। ওপাশ থেকে এক নারীকন্ঠ সালামের উত্তর নিয়ে বললো কেমন আছেন?

আমিঃ আলহামদুলিল্লাহ.... কে বলছেন?

ওপাশ থেকেঃ আমি দীপ্তি...

আমিঃ কোন দীপ্তি? দীপ্তি পাল?

ওপাশ থেকেঃ এতক্ষণ যার সাথে ছিলেন সে দীপ্তি

আমিঃ ও... আচ্ছা বাড়ি পৌঁছে গেছেন? ঠিক আছে ভালো থাকবেন, শুভ রাত্রি।

ফোন কি আমি কাঁটলাম না সে কাঁটলো মনে নেই... আমি ঘুমের রাজ্যে হারিয়ে গেলাম।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে নভেম্বর, ২০১৮ রাত ৯:২৮
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:১৩

ফেসবুকে বাঙালিদের মধ্যে ইদানিং নতুন এক ফতোয়া চালু হয়েছে, এবং তা হচ্ছে "দাওয়াতের নিয়্যত ছাড়া কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।"
সমস্যা হচ্ছে বাঙালি ফতোয়া শুনেই লাফাতে শুরু করে, এবং কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×