somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হাসিমুখ

১৭ ই নভেম্বর, ২০১৭ সকাল ১০:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


দোলাকে ভালবাসার গল্পটা নেহাত‌ই সাদামাটা টাইপের।কি একটা দিবস ছিলো নাকি সাধারণ দিন‌ই মনে নাই,দোলা একটা লালপেড়ে কচি কলাপাতা রঙের শাড়ি প‌ইরা ভার্সিটির মাঠে ব‌ইসা মুখে হাত দিয়া খলখলাইয়া হাসতেছিলো।হাতে পরা শাখার আড়ালে ঢাইকা যাওয়া আংশিক ঠোঁট দেইখা আমি প্রথমে বুঝতে পারি নাই যে ওইটা ফটোশ্যুট চলতেছিলো।হাসিটা এত প্রাণবন্ত ছিলো যে না বুইঝাই আমি ওর প্রেমে প‌ইড়া যাই ততক্ষণাৎ।এছাড়া আমার আর কিছুই করার ছিল না বলতে।ওই হাসি দেইখা যে পুরুষ প্রেমে পড়বো না সে ফটোগ্রাফার ছাড়া আর কিছুই না।

তো এই অযাচিত প‌ইড়া যাওয়া প্রেম নিয়া আমি দারুণ অস্বস্তিতে থাকি ক্যাম্পাসে গেলে।যদিও দোলা আমারে চেনেও না ভালো ক‌ইরা,কোনদিন জানি একবার পরিচয় হ‌ইছিলো শান্তর মাধ্যমে,ওইটুকুই,পরিচয় আর আগায় নাই।তারপরেও দোলারে দেখলে আমি সংকুচিত হ‌ইতে হ‌ইতে ভাইঙ্গাচুইরা নিজের ভেতরে ঢুইকা যাই যেন।ভাবি-এইরকম কেবল হাসি দেইখা প্রেমে পড়ারে দোলা কোনভাবে নিতে পারে!ভাইবা কুল‌-কিনারাও পাই না।

আমার অবস্থা যখন নাজেহাল মানে ঘুমাইতে,খাইতে,গোসল করতে,শুইতে এমনকি কদর কাকার দোকানে চা খাইতে খাইতে অন্য কোন মোটাসোটা মেয়েরে দেখলেও আমি তার ম‌ইধ্যে দোলারে পাইতে শুরু করি,তখন‌ই সিদ্ধান্ত নিয়া ফেলি যে ভালবাসার কথাটা জানাইয়া ফেলা দরকার।মনে চাইলে ও যত্ন ক‌ইরা তুইলা রাখবো,না রাখলে নাই।সবচে ভালো হয় যদি ও আমারে রিজেক্ট করার পরে ঠাইসা অপমানসূচক কিছু কথা কয়।অনেকদিন মদ-টদ খাওয়া হয়না,মীরার লগে দ্যাখাও হ‌ইয়া ওঠেনা।দোলার করা অপমানের সুযোগ নিয়া গলাটা অন্তত ভিজানো যাইবো,সুযোগ নেয়া আরকি!

পরেরদিন‌ই ক্যাম্পাসে গিয়া দোলারে একলা খোঁজা শুরু করলাম।একলা তো দূর অরে খুঁইজা পাইতে জান যায় যায় খা খা র‌ইদে।তারপরে যখন পাইলাম তখন অর লগে অর আর‌ও দুই তিনটা বন্ধু জোড়াপাইতা আছে।নাচের রিহার্সাল ক‌ইরা ফিরতেছিলো মেবি।দোলার পরনে সাদা শাড়ির লগে টকটকা লাল ব্লাউজ।আমার মনডায় ক‌ইলো আমি তখন‌ই কোন কিছু না ভাইবা ম‌ইরা যাই।এই মেয়ের জন্যে মরতে পারা আমার সাত জনমের ভাগ্য।পরক্ষণেই মনে হ‌ইলো মরলেই তো খেলা শ্যাষ,আর তো অরে দেখতেও পারুম না,আর ছুঁতানাতায় মদ‌ও খাইতে পারুম না,মরার চিন্তা বাদ দিয়া দোলারে দিলাম ডাক।

"অই শোনো!"

দোলা অপ্রস্তুত ঘুইরা তাকাইয়া আমারে চিনতে পাইরা অল্পহাস্যে বললো-"আরে তুমি যে!কি অবস্হা?ক‌ই ক‌ই থাকো?"


আমি কথা আউলাইয়া ফালাইলাম।ও এমনভাবে কথা শুরু করলো না জানি আমি অর কত চেনা!এইখানেই ঘটলো বিপত্তি।চেনা মানুষেরে ভালবাসার কথা বলা যায় না।ভালবাসার কথা বলতে লাগে অর্ধচেনা-অচেনা মানুষ।সিদ্ধান্ত নিয়া ফেললাম যে এই মেয়েরে এখন প্রস্তাব দেয়া মানে নিজের কাছে নিজেরে ক্ষ্যাত ব‌ইলা প্রমাণিত করা।ওসমান স্যার যেইভাবে উপপাদ্য পড়ানের পর শেষে জোর দিয়া ক‌ইতো প্রুভড,ওইরকম।কথা কি দিয়া শুরু করা যায় ভাবতে ভাবতে‌ই ব‌ইলা ফেললাম-"কয়দিন ধ‌ইরা দেখতেছি নাচানাচি খুব ‌হ‌ইতেছে।কোন প্রোগ্রাম-ট্রোগ্রাম আছে নাকি?"

"হ,আছে তো।শামীম আরা নিপা আপা ভার্সিটিতে আসবে সামনের মাসের ৪ তারিখ।বড় আয়োজন করা হ‌ইতেছে।ভার্সিটির খবর তো কিছুই রাখোনা দ্যাখা যায়।"

"ওয়াইচ্ছা!তুমিও নাচবা নাকি ওইদিন?"

"হ,নাচা লাগে যে!"

"ঠিকাছে,এইজন্যই ডাক দিছিলাম।আর হ্যাঁ!শান্ত ক‌ই আছে জানো?অর তো পাত্তাই লাগানো যায় না।"

"ও তো পাগলা মানুষ।ফোন-টোন বন্ধ ক‌ইরা ক‌ই দিয়া ঘুরতেছে কে জানে!"

"ঠিকাছে।যাও তাইলে,অরা খাড়ায়া আছে।"

"আচ্ছাহ্!ভালো থাইকো।"


ভালো থাকতে ক‌ইয়া বিদায় নেয়া দোলার প্রস্হানের দিকে তাকাইয়া আমার নিজেরে খুব বেশি চরিত্রহীন মনে হ‌ইলো।সাথে সাথে রুদ্রর একটা কবিতার লাইন‌ও মনে পড়লো,
“ চলে যাওয়া মানে প্রস্থান নয়- বিচ্ছেদ নয়
চলে যাওয়া মানে নয় বন্ধন ছিন্ন-করা আর্দ্র রজনী
চলে গেলে আমারও অধিক কিছু থেকে যাবে আমার না-থাকা জুড়ে ”


যদিও দোলারে আমার ভালবাসার কথা জানানো হ‌ইলো না এবং দোলা সেই কথা জাইনা আমারে রিজেক্ট ক‌ইরা যাচ্ছেতাই অপমান না ক‌ইরা বরং স্মার্টলি ভালো থাকার কথা ব‌ইলা বিদায় নিলো,তারপরেও আমি এইখান থেইকা কষ্ট খুঁইজা বাইর করতে চেষ্টা করলাম,এবং পাইলাম‌ও এই যে-আমার প্রতি দোলার যদি একটুও টান থাকতো তাইলে ও আমারে অর নাচ দেখার আমন্ত্রণ জানাইতেই পারতো আগ্রহ ক‌ইরা।আমি রিহার্সাল ফেরত অরে দেইখা ফেলার পরেও যেহেতু ও আমারে কোনভাবে অনুষ্ঠানে থাকার কথা না ব‌ইলাই গেলোগা কোমড় বাইড়াইতে বাইড়াইতে,এতে আমি খুব কষ্ট পাইলাম যেন।আর কষ্ট মানেই মীরাবাঈ,কষ্ট পাইলেই মীরাবাঈ।

টানবাজারের দোতলার যে ঘরে সান্ধ্যকালীন আমারে নিয়া আসছি সেইটা একটা নিষিদ্ধপল্লী,এইখানের কাজকাম‌ও সব নিষিদ্ধ নিষিদ্ধ।আমার সামনে সুন্দরমতো একটা মেয়ে।দোলার মতোই তার ভরাট স্বাস্থ্য,দোলার মতোই খলখলাইয়া হাসে,শাড়িও পরে দোলার ঢঙে।শাড়ির আঁচল কায়দা করে সেফটিপিনে আটকায় রাখা বুকের মীরাবাঈ আমার জলরাতের প্রেমিকা।ও আমার দুঃখ বোঝে,সুখ বোঝে।সামনে আয়োজন ক‌ইরা বরফের গামলা রাখে,বোতল থেইকা গ্লাসে ঢাইলা দেয় নিষিদ্ধ পানি।তারপর কোমড়ে বিছা,পায়ে ঘুঙুর প‌ইরা "পরদেশী পরদেশী জানা নেহি" গানে দু‌ইলা দুইলা নাচে।কখনো কখনো নাচার ফাঁকে আইসা আমার গালে টকাস টকাস চুমা খাইয়া যায়।উড়ানোর মতো টাকা না থাকার কারণে আমি সিনেমার নবাবগো মতো টাকা ছিটানোর ভান করি।আর মীরাবাঈ সেই কাল্পনিক টাকা কুড়াইয়া নিয়া বুকের খাঁজ বের হ‌ওয়া ব্লাউজের ভেতর রাইখা দেয়ার সুন্দর অভিনয় ক‌ইরা আমার মন জিতা নেয়।আমি ধরা গলায় নবাবী চালে বলি,বারেহ্ বাহ্!
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই নভেম্বর, ২০১৭ সকাল ১০:১২
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬



এ বছরের পদ্মশ্রী (ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা) পদকে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের রবীন্দ্র সংগীত এর কিংবদন্তি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে।

আমরা গর্বিত বন্যাকে নিয়ে । ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×