দোলাকে ভালবাসার গল্পটা নেহাতই সাদামাটা টাইপের।কি একটা দিবস ছিলো নাকি সাধারণ দিনই মনে নাই,দোলা একটা লালপেড়ে কচি কলাপাতা রঙের শাড়ি পইরা ভার্সিটির মাঠে বইসা মুখে হাত দিয়া খলখলাইয়া হাসতেছিলো।হাতে পরা শাখার আড়ালে ঢাইকা যাওয়া আংশিক ঠোঁট দেইখা আমি প্রথমে বুঝতে পারি নাই যে ওইটা ফটোশ্যুট চলতেছিলো।হাসিটা এত প্রাণবন্ত ছিলো যে না বুইঝাই আমি ওর প্রেমে পইড়া যাই ততক্ষণাৎ।এছাড়া আমার আর কিছুই করার ছিল না বলতে।ওই হাসি দেইখা যে পুরুষ প্রেমে পড়বো না সে ফটোগ্রাফার ছাড়া আর কিছুই না।
তো এই অযাচিত পইড়া যাওয়া প্রেম নিয়া আমি দারুণ অস্বস্তিতে থাকি ক্যাম্পাসে গেলে।যদিও দোলা আমারে চেনেও না ভালো কইরা,কোনদিন জানি একবার পরিচয় হইছিলো শান্তর মাধ্যমে,ওইটুকুই,পরিচয় আর আগায় নাই।তারপরেও দোলারে দেখলে আমি সংকুচিত হইতে হইতে ভাইঙ্গাচুইরা নিজের ভেতরে ঢুইকা যাই যেন।ভাবি-এইরকম কেবল হাসি দেইখা প্রেমে পড়ারে দোলা কোনভাবে নিতে পারে!ভাইবা কুল-কিনারাও পাই না।
আমার অবস্থা যখন নাজেহাল মানে ঘুমাইতে,খাইতে,গোসল করতে,শুইতে এমনকি কদর কাকার দোকানে চা খাইতে খাইতে অন্য কোন মোটাসোটা মেয়েরে দেখলেও আমি তার মইধ্যে দোলারে পাইতে শুরু করি,তখনই সিদ্ধান্ত নিয়া ফেলি যে ভালবাসার কথাটা জানাইয়া ফেলা দরকার।মনে চাইলে ও যত্ন কইরা তুইলা রাখবো,না রাখলে নাই।সবচে ভালো হয় যদি ও আমারে রিজেক্ট করার পরে ঠাইসা অপমানসূচক কিছু কথা কয়।অনেকদিন মদ-টদ খাওয়া হয়না,মীরার লগে দ্যাখাও হইয়া ওঠেনা।দোলার করা অপমানের সুযোগ নিয়া গলাটা অন্তত ভিজানো যাইবো,সুযোগ নেয়া আরকি!
পরেরদিনই ক্যাম্পাসে গিয়া দোলারে একলা খোঁজা শুরু করলাম।একলা তো দূর অরে খুঁইজা পাইতে জান যায় যায় খা খা রইদে।তারপরে যখন পাইলাম তখন অর লগে অর আরও দুই তিনটা বন্ধু জোড়াপাইতা আছে।নাচের রিহার্সাল কইরা ফিরতেছিলো মেবি।দোলার পরনে সাদা শাড়ির লগে টকটকা লাল ব্লাউজ।আমার মনডায় কইলো আমি তখনই কোন কিছু না ভাইবা মইরা যাই।এই মেয়ের জন্যে মরতে পারা আমার সাত জনমের ভাগ্য।পরক্ষণেই মনে হইলো মরলেই তো খেলা শ্যাষ,আর তো অরে দেখতেও পারুম না,আর ছুঁতানাতায় মদও খাইতে পারুম না,মরার চিন্তা বাদ দিয়া দোলারে দিলাম ডাক।
"অই শোনো!"
দোলা অপ্রস্তুত ঘুইরা তাকাইয়া আমারে চিনতে পাইরা অল্পহাস্যে বললো-"আরে তুমি যে!কি অবস্হা?কই কই থাকো?"
আমি কথা আউলাইয়া ফালাইলাম।ও এমনভাবে কথা শুরু করলো না জানি আমি অর কত চেনা!এইখানেই ঘটলো বিপত্তি।চেনা মানুষেরে ভালবাসার কথা বলা যায় না।ভালবাসার কথা বলতে লাগে অর্ধচেনা-অচেনা মানুষ।সিদ্ধান্ত নিয়া ফেললাম যে এই মেয়েরে এখন প্রস্তাব দেয়া মানে নিজের কাছে নিজেরে ক্ষ্যাত বইলা প্রমাণিত করা।ওসমান স্যার যেইভাবে উপপাদ্য পড়ানের পর শেষে জোর দিয়া কইতো প্রুভড,ওইরকম।কথা কি দিয়া শুরু করা যায় ভাবতে ভাবতেই বইলা ফেললাম-"কয়দিন ধইরা দেখতেছি নাচানাচি খুব হইতেছে।কোন প্রোগ্রাম-ট্রোগ্রাম আছে নাকি?"
"হ,আছে তো।শামীম আরা নিপা আপা ভার্সিটিতে আসবে সামনের মাসের ৪ তারিখ।বড় আয়োজন করা হইতেছে।ভার্সিটির খবর তো কিছুই রাখোনা দ্যাখা যায়।"
"ওয়াইচ্ছা!তুমিও নাচবা নাকি ওইদিন?"
"হ,নাচা লাগে যে!"
"ঠিকাছে,এইজন্যই ডাক দিছিলাম।আর হ্যাঁ!শান্ত কই আছে জানো?অর তো পাত্তাই লাগানো যায় না।"
"ও তো পাগলা মানুষ।ফোন-টোন বন্ধ কইরা কই দিয়া ঘুরতেছে কে জানে!"
"ঠিকাছে।যাও তাইলে,অরা খাড়ায়া আছে।"
"আচ্ছাহ্!ভালো থাইকো।"
ভালো থাকতে কইয়া বিদায় নেয়া দোলার প্রস্হানের দিকে তাকাইয়া আমার নিজেরে খুব বেশি চরিত্রহীন মনে হইলো।সাথে সাথে রুদ্রর একটা কবিতার লাইনও মনে পড়লো,
“ চলে যাওয়া মানে প্রস্থান নয়- বিচ্ছেদ নয়
চলে যাওয়া মানে নয় বন্ধন ছিন্ন-করা আর্দ্র রজনী
চলে গেলে আমারও অধিক কিছু থেকে যাবে আমার না-থাকা জুড়ে ”
যদিও দোলারে আমার ভালবাসার কথা জানানো হইলো না এবং দোলা সেই কথা জাইনা আমারে রিজেক্ট কইরা যাচ্ছেতাই অপমান না কইরা বরং স্মার্টলি ভালো থাকার কথা বইলা বিদায় নিলো,তারপরেও আমি এইখান থেইকা কষ্ট খুঁইজা বাইর করতে চেষ্টা করলাম,এবং পাইলামও এই যে-আমার প্রতি দোলার যদি একটুও টান থাকতো তাইলে ও আমারে অর নাচ দেখার আমন্ত্রণ জানাইতেই পারতো আগ্রহ কইরা।আমি রিহার্সাল ফেরত অরে দেইখা ফেলার পরেও যেহেতু ও আমারে কোনভাবে অনুষ্ঠানে থাকার কথা না বইলাই গেলোগা কোমড় বাইড়াইতে বাইড়াইতে,এতে আমি খুব কষ্ট পাইলাম যেন।আর কষ্ট মানেই মীরাবাঈ,কষ্ট পাইলেই মীরাবাঈ।
টানবাজারের দোতলার যে ঘরে সান্ধ্যকালীন আমারে নিয়া আসছি সেইটা একটা নিষিদ্ধপল্লী,এইখানের কাজকামও সব নিষিদ্ধ নিষিদ্ধ।আমার সামনে সুন্দরমতো একটা মেয়ে।দোলার মতোই তার ভরাট স্বাস্থ্য,দোলার মতোই খলখলাইয়া হাসে,শাড়িও পরে দোলার ঢঙে।শাড়ির আঁচল কায়দা করে সেফটিপিনে আটকায় রাখা বুকের মীরাবাঈ আমার জলরাতের প্রেমিকা।ও আমার দুঃখ বোঝে,সুখ বোঝে।সামনে আয়োজন কইরা বরফের গামলা রাখে,বোতল থেইকা গ্লাসে ঢাইলা দেয় নিষিদ্ধ পানি।তারপর কোমড়ে বিছা,পায়ে ঘুঙুর পইরা "পরদেশী পরদেশী জানা নেহি" গানে দুইলা দুইলা নাচে।কখনো কখনো নাচার ফাঁকে আইসা আমার গালে টকাস টকাস চুমা খাইয়া যায়।উড়ানোর মতো টাকা না থাকার কারণে আমি সিনেমার নবাবগো মতো টাকা ছিটানোর ভান করি।আর মীরাবাঈ সেই কাল্পনিক টাকা কুড়াইয়া নিয়া বুকের খাঁজ বের হওয়া ব্লাউজের ভেতর রাইখা দেয়ার সুন্দর অভিনয় কইরা আমার মন জিতা নেয়।আমি ধরা গলায় নবাবী চালে বলি,বারেহ্ বাহ্!
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই নভেম্বর, ২০১৭ সকাল ১০:১২