-মামুর বেটা খালু, আইজকা যদি মুনারে না করছস তাইলে কইলাম আমিই মাইয়ারে লইয়া ভাইগা যামু।
-মামু, এসব কয় না। দিলে লাগে তো!
-দিলে লাগে!তাইলে হালা প্রপোজ করোস না ক্যান?
-করমু তো।
-কবে করবি? আমি ভাগাইয়া লইয়া যাওয়ার পর!
-আইচ্ছা মামু আইজকাই প্রপোজ করুম। তয় তোগোরে একটা কাম করতে হইবো।
-কি কাম?
-আমি মুনারে যহন প্রপোজ করুম তহন তোরা আশে পাশে থাকবি।
-লে হালুয়া! ঐ তোরা শুনছস ফাহাদে কি কয়?হালায় কইতাছে হালায় যহন প্রপোজ করবো তহন যাতে আমরা আশে পাশে থাকি। অখন তোরাই ক এই হালারে কি করা উচিত?
সাকিবের এই কথা শুনে আমারে অলটাইম বাঁশের উপরে রাখা আমার জানে জিগার দোস্ত সাজিদ বললো,
-হালায় মনে হয় বাসর রাইতে বউয়ের কাছে যাওয়ার আগে কইবো “দোস্ত,তোরা আশে পাশে থাকিস।“
সাজিদের এই কথা শুনে সবাই হাসতে লাগলো। আমার মেজাজ সপ্তমে উঠে গেলো তাদের হাসি দেখে।কিন্তু কিছুই বলতে পারছি না। কিছু বলতে গেলেই এখন পচানি খেতে হবে। চুপচাপ বসে চিন্তা করতে লাগলাম কিভাবে মুনাকে প্রপোজ করা যায়।
মুনা। অন্যরকম একটা ভালোলাগা কাজ করে নামটার অস্তিত্বে। কলেজে যেদিন পা রেখেছিলাম সেদিনই এই মেয়ের দিকে চোখ পরে। তখন নাম জানতাম না। আস্তে আস্তে নামও জানলাম। কিন্তু মুনার সাথে আমার তেমন কোনো কথা হয় নি পড়ালেখার বিষয় ছাড়া। ভয় কাজ করতো ওর সামনে গেলেই। এই ভয়টা আরো মারাত্মক আকার ধারণ করে মুনার কুংফু স্টাইল মাইর দেখে।
প্রথম বর্ষের শেষের দিকের ঘটনা। আমাদের কলেজের এক হেব্বি স্টাইলিশ ছেলে গেছে মুনাকে প্রপোজ করতে।মুনা প্রথমে কিছু না বলে ছেলেটার দেয়া গোলাপ ফুলটা হাতে নেয়। এরপর জিজ্ঞেস করে,
-আমাকে অনেক ভালোবাসো তাই না?
ছেলেটা মুনা এই উত্তরে মুচকি হাসি দেয়। আর বলে,
-আমি তোমাকে আমার জীবনের থেকেও বেশি ভালোবাসি।
-জীবনের থেকেও বেশি ভালবাসো?হাউ চুইট! কাছে আসো। তোমাকে একটা জিনিস দেবো। তুমি আমাকে এতো ভালোবাসো তোমাকে যদি এর বিপরীতে কিছু না দিই সেটা কেমন দেখায় বলতো?
ছেলেটা মুচকি হেসে কাছে যেতেই মুনা বিরাশি সিক্কার চড় ছেলেটার গালে।চড় খেয়ে ছেলেটা তো বোকা হয়েছেই আমরাও তব্দা খেয়েছি। চড় মারার পর মুনার পাঞ্চ ছেলেটার পেটে। মুনাকে দেখে মনে হচ্ছে সে ছেলেটার সাথে কুংফু ফাইট করছে। আমি এদিকে মনে মনে ভাবছি আমি যে মনে মনে প্রস্তুতি নিচ্ছি মুনাকে প্রপোজ করবো আমার কপালেও যদি এসব জুটে! থাক বাবা! দরকার নেই প্রপোজ করার।
মন থেকে যতই মুনাকে সরিয়ে ফেলার চেষ্টা করি না কেনো পারছি না।মুনার সেই কুংফু ফাইটের কথা মনে পড়লেই যেখানে আমার ভয় পাওয়ার কথা সেখানে আমি আরো দুর্বল হয়ে পড়ছি! না পারছি মুনাকে মুখ ফুটে কিছু বলতে না পারছি মনকে মানাতে।
একবার ভেবেছিলাম যা হয় হবে মুনাকে আমি প্রপোজ করবোই। প্রিপারেশন নিয়ে সামনেও গিয়েছিলাম। কিন্তু পরে আর বলতে পারি নি। যখনই বলতে যাবো তখনই মুনার সেই মাইরের কথা মনে পরে।
কিন্তু এভাবে আর কতদিন! শেষে বাধ্য হয়ে দুই জানে জিগার দোস্ত সাজিদ আর সাকিবকে বললাম। এরা আমার কথা শুনে কই সাজেশন দিবে কিভাবে কি করা যায়, তা না! এরা উল্টো আমাকে নিয়ে মজা লুটতে লাগলো।
-শালার ঘরের নাতি আর কোনো মাইয়া পাইলি না! এই কুংফু মাস্টারের দিকে শেষ পর্যন্ত তোর নজর পড়লো!
-দোস্ত, কিয়ারতাম ক! মনরে তো মানাইতে পারি না।
-আরি শালার মন! তুমি শালা প্রপোজ করিতে গেলে যে তোমার মন হাসপাতালের বেডে উল্টাইয়া পইড়া থাকবো সেই চিন্তা হইতাছে না? এমনও হইতে পারে তুই প্রপোজ করতে গেলি আর হেতি তোর বংশ বৃধ্বির বাত্তি নিভাইয়া দিলো তহন কি করবি?
-মজা লইস না হালা সাইজ্জা! যেডা হয় হইবো আমারে হেল্প কর।
-মর জ্বালা! এ শালা দেখি পুরা মজনু হইয়া গেছে। ঐ সাইক্কা, এতেরে কিছু ক।।
-কিচ্ছু কওয়ার নাই। কলেজে আরেকটা কুংফু ফাইট হইবো এইটা দেখার লাইগা আমার আর তর সইতাছে না।
বুন্ধুদের অনুৎসাহে মুনাকে প্রপোজ করার ইচ্ছা আবারো বাদ দিলাম।কিন্তু বাদ দিলে কি হবে! এরপর থেকে সাজিদ আর সাকিবের প্যাড়া শুরু হয়েছে। প্রপোজ করছি না কেনো এই নিয়ে তাদের বিস্তর গবেষণা। মনে মনে অবশ্য গালি দিয়ে তাদের চৌদ্দ গুষ্টি উদ্ধার করে ফেলছি। শালারা হেল্প করার নামে নাই, খালি মজা লুটার তালে আছে।
আমি আপাতত মুনার কোলে মাথা রেখে প্রেম করছি। বাকিটুকু আমার বন্ধু সাজিদের কাছ থেকেই না হয় শুনুন।
"অবশেষে ফাহাদ মুনার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।মুনার দিকে গোলাপ ফুলটা বাড়িয়ে দিয়ে মুখ অন্য দিকে ঘুরিয়ে রাখল।মুনা অবশ্য অবাক হয়ে গেছে ফাহাদের এই আচরণে।একটা ছেলে এভাবে প্রপোজ করতে আসবে!
আসল ঘটনা হলো ফাহাদ হেলমেট,জ্যাকেট গায়ে চাপিয়ে প্রপোজ করতে এসেছে। শালা পুরা পোলাগো মান ইজ্জত চুবাইয়া দিলো। মুনার বান্ধবীরা এদিকে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে।
মুনা কিছু না বলে গোলাপ ফুলটা নিয়ে ফাহাদকে মোলায়েম কন্ঠে ডাক দেয়।ফাহাদ চোখ খুলে দেখতে পায় মুনা তার সেই বিখ্যাত দজ্জ্বালনী চেহারায় দাঁড়িয়ে আছে।
এটা দেখে ফাহাদকে কে আর পায় কে!উল্টো ঘুরে দৌড়।আর ফাহাদের পেছন পেছন মুনা দৌড়াচ্ছে গোলাপ ফুল নিয়ে।
'শালা!প্রপোজ করবি কর,এভাবে করতে আসলি ক্যান?আজ খবর আছে তোর।দাঁড়া বলছি।'
ফাহাদ কি আর থামে!সে দৌড়তেই আছে।পুরো ক্যাম্পাসের চোখ গুলো ফাহাদ আর মুনার ম্যারাথন দৌড় দেখছে।কে জিতবে সেটাই দেখার বিষয়!"
(সমাপ্ত)
"গল্পটাষ কারণে গল্পটা ডিলেট করে ফেলেছিলাম।"ছোট খাটো কয়েকটা শংশোধন করে গল্পটা আবার দিলাম।"
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জুলাই, ২০১৫ রাত ২:০২