somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বর্ষায় বগালেক ও কেওক্রাডাং: ১ম পর্ব (যাত্রা হলো শুরু)

১৮ ই জুলাই, ২০১০ রাত ২:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমি বরাবরই ঘুরে বেড়াতে ভালোবাসি। অনেক দিন ধরে বগা লেক যাবো যাবো করে সময়, অর্থ ও নানা অজুহাতে যাওয়া হয়ে ওঠেনি। অবশেষে এ বর্ষায় ঘুরে এলাম নৈসর্গিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি বগা লেক। বর্ষায় বগালেক ও কেওক্রাডাং যাওয়া একটু ঝুঁকিপূর্ণ । এ অজুহাতে বিশাল একটি দলের সঙ্গে আমাদের যাওয়ার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত আমি, মুসা, রউফ আর ছোট দুই ভাই জীবন আর রতন এ পাঁচজনের দল বেরিয়ে পড়লাম ক্লান্তিহীন এক সৌন্দর্যের সন্ধানে।

৮ জুলাই ২০১০

বেলা সাড়ে বারোটার দিকে চট্টগ্রামের বহদ্দারহাট থেকে বান্দরবনের বাসে চড়ে বসলাম। বান্দরবন পৌঁছালাম সোয়া তিনটায় । সেখান থেকে টমটম করে রুমা বাস স্ট্যান্ডে গেলাম পরদিন সকালে কাইক্ষ্যাং ঝিরিতে যাওয়ার জন্য টিকিট কাটতে । কিন্তু গিয়েই সেদিনকার শেষ বাসটা পেয়ে গেলাম। আমরা আসলে পরদিন সকালে কাইক্ষ্যাং ঝিরিতে যেতে চেয়েছিলাম। আসার আগে একটা ভুল তথ্য পাই যে সকাল আটটা ছাড়া কাইক্ষ্যাং ঝিরিতে যাওয়ার কোন বাস পাওয়া যায় না। এজন্যই চট্টগ্রাম থেকে দেরিতে রওয়ানা হয়েছিলাম। মেজাজটা একটু খারাপ হয়ে গেলো। যাই হোক বাসে বসে আশপাশের মনোরম দৃশ্য দেখতে লাগলাম। বান্দরবন এর আগে দু’বার গিয়েছি কিন্তু এ পথে আগে যাওয়া হয়নি। টের পেলাম ধীরে ধীরে আমরা বেশ উপরে উঠে যাচ্ছি। বাসের জানালা দিয়ে দেখলাম যদি কোনভাবে বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে তো কমসে কম হাজার ফিট নীচে। এরই মাঝে আকাশ বেয়ে নামলো বৃষ্টি। এ বৃষ্টি আমাদের মনে যেমন আনন্দধারা বইয়ে দিলো তেমনি খানিকটা ভয়ও পেলাম। কারন বৃষ্টির মাত্রা বাড়তে থাকলে বগালেক ও কেওক্রাডাং যাওয়ার পথগুলো আরও দুর্গম হবে।

আশপাশে মেঘ আর পাহাড়ের খেলা দেখতে দেখতে প্রায় তিন ঘন্টা পর কাইক্ষ্যাং ঝিরিতে পৌঁছে গেলাম। রুমা স্ট্যান্ড থেকে কাইক্ষ্যাং ঝিরির দূরত্ব প্রায় চুয়ান্ন কিলো।

কাইক্ষ্যাং ঝিরি গিয়ে ট্রলারে চড়লাম। সূর্যাস্তের ঠিক আগে সাঙ্গু নদে ট্রলার ভ্রমণটি আমার জীবনে নৈসর্গিকতা দর্শনের এক অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। প্রতি মুহূর্তে আসমান তার রং পাল্টাচ্ছে। আহ! কী যে তার রূপ তা কেমনে বোঝাই! আকাশের গায়ে হঠাৎ দেখলাম আগুন লেগেছে। ঠিক অপর পাশে জমে উঠেছে কালো মেঘ । একটু পরেই আবার ছড়াচ্ছে রক্তিম আভা। সে সময়কার আমার তোলা কিছু ছবি নিয়ে ছবি ব্লগটি চাইলে দেখতে পারেন।

প্রায় দেড় ঘন্টা পর আমরা রুমা বাজার নামলাম। নেমেই উঠলাম হোটেল হিলটনে । রুমা বাজারের হোটেলগুলো আহামরি কিছুনা। তবে এক রাত থাকার জন্য যথেষ্ট। খরচও কম। আমরা পাঁচজন আড়াইশা টাকায় তিন বেডের একটি রুম ভাড়া নিয়েছিলাম। হোটেলে উঠে হালকা কিছু খেয়ে আমরা বের হলাম গাইড খুঁজতে। আমাদের হোটেলের খুব কাছেই একটি ট্যুরিজম অফিস আছে। সেখান থেকে আমরা গাইড ঠিক করে নিলাম। গাইডের নাম কাজল বড়ুয়া। বাঙ্গালি। গাইডের প্রতিদিনের ভাড়া তিনশত টাকা। এছাড়া গাইডের থাকা-খাওয়ার যে খরচ সেটাও দিতে হবে। চট্টগ্রাম থেকে যাওয়ার আগে আমাকে একজন সতর্ক করে দিয়েছিলেন যেন বাঙ্গালি গাইড না নেই। আমরাও পাহাড়ি গাইড খুঁজছিলাম কিন্তু জানা গেলো সেনাবাহিনীর লোকেরা গাইডদের সিরিয়াল ঠিক করে দিয়েছেন। তাই এখন যে গাইড সিরিয়ালে আছে সে গাইডকেই নিতে হবে। অগত্যা কাজলকে নিতে হলো । আমার সে শুভাকাঙ্খী কেন বাঙ্গালি গাইড নিতে মানা করেছিলেন অভিযানের শেষদিন তা বুঝতে পেরেছিলাম। পরে বলছি সে ঘটনা।

গাইড ঠিক করে আমরা রাতের খাবার সেরে ঘুমোতে গেলাম। আবার শুরু হলো ঝুম ঝুম বৃষ্টি । শুয়ে শুয়ে আগামী দিন কী হবে তাই ভাবছিলাম। কিছুটা উত্তেজনা খানিকটা ভয় ঘুম আসতে দিচ্ছিলো না। বৃষ্টিটাও চিন্তায় ফেলে দিয়েছিলো। এসব নানা কথা ভাবতে ভাবতে কখন যেনো ঘুমিয়ে পড়লাম ।
(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ দুপুর ১২:৩৪
১৩টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬



এ বছরের পদ্মশ্রী (ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা) পদকে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের রবীন্দ্র সংগীত এর কিংবদন্তি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে।

আমরা গর্বিত বন্যাকে নিয়ে । ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×