somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দি আয়রন লেডি

১৮ ই মার্চ, ২০১২ রাত ১২:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

The Iron Lady (2011)
Director: Phyllida Lloyd
Stars: Meryl Streep, Jim Broadbent, Richard E. Grant

অস্কারের কল্যাণে ইতোমধ্যে সবাই জেনে গেছেন দি আয়রন লেডি চলচ্চিত্রটির কথা। ব্রিটেনের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী লৌহমানবী খ্যাত মার্গারেট থ্যাচারের ভূমিকায় অনবদ্য অভিনয় করে তৃতীয়বারের মত অস্কার পুরষ্কার জিতে নিয়েছেন মেরিল স্ট্রিপ। যদিও মুক্তির পরপরই চলচ্চিত্রটি আলোচনার ঝড় তুলেছিলো। মার্গারেট থ্যাচার আর মেরিল স্ট্রিপ দুজনই মহাতারকা, দুটো ব্র্যান্ডের নাম। তাই চলচ্চিত্রটি কেমন হয়েছে সেটা আশা করি না বললেও চলবে। মূলত দি আয়রন লেডি চলচ্চিত্রটি মার্গারেট থ্যাচারের দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের পুরোটা সময় জুড়ে স্বামীর ছায়াসঙ্গী হয়ে থাকার ভালোবাসামাখা এক আবেগময় আখ্যান। লৌহমানবীর মাঝেও আছে রক্ত মাংসের একটা মানুষ। আছে ভালোবাসা আর মানবিক টান। স্বামীর জন্য, নিজের পরিবারের জন্য।



মার্গারেট রবার্টসের জন্ম ১৯২৫ সালের ৯ অক্টোবর। ছিলেন সাধারন মুদি দোকানির মেয়ে, আর্থিক স্বচ্ছলতা তেমন একটা ছিলো না। মেধার জোরে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়নে ডিগ্রী নেন। নিজস্ব আগ্রহে ওকালতি বিদ্যেটা রপ্ত করলেও সেই পেশায় আর থাকা হয়নি। ক্রমেই জড়িয়ে পড়েন সক্রিয় রাজনীতিতে।যোগ দেন কনজারভেটিভ পার্টিতে । ১৯৭০ সালে ব্রিটেন সরকারের শিক্ষা ও বিজ্ঞানবিষয়ক মন্ত্রীর দায়িত্ব পান থ্যাচার। এ সময় স্কুলের শিশুদের বিনা মূল্যে দুগ্ধজাত খাবার বিতরণের ব্যবস্থা করে ভীষণ আলোচিত হয়েছিলেন তিনি। ১৯৭৫ সালে তিনি কনজারভেটিভ পার্টির নেতৃত্বে চলে আসেন। ১৯৭৯ সালে ব্রিটেনের সাধারণ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন শুধুমাত্র পার্টির সদস্যদের মাঝে আলোড়ন সৃষ্টি করার জন্য। কারন পার্টির সদস্যদের নানাবিধ কর্মকান্ডে মার্গারেট ছিলেন মহা বিরক্ত। চেয়েছিলেন পরিবর্তন আনতে। জনগণ তাকে সে সুযোগ করে দেয়। জয়লাভ করেন মার্গারেট থ্যাচার। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার পরপরই দেশের ভঙ্গুর অর্থনীতিকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেন থ্যাচার। শ্রমবাজার, ব্যক্তিমালিকানা খাতসহ রাষ্ট্রের বিভিন্ন খাত ভর্তুকি দিয়েও সচল রাখেন। কিন্তু দেশে বেকারত্ব বৃদ্ধি পেলে তিনি গ্রহণযোগ্যতা হারাতে থাকেন। তবে ঐ সময় আর্জেন্টিনার বিরুদ্ধে ফকল্যান্ড যুদ্ধ জয় তাঁর হারানো জনপ্রিয়তা পুনরুদ্ধার করে। তাই ১৯৮৩ সালে তিনি দ্বিতীয়বারের মতো ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। দুই মেয়াদে প্রায় সাড়ে এগারো বছর ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনের পর দলের সদস্যদের একরকম তোপের মুখে দায়িত্ব ছেড়ে দিতে বাধ্য হন। রক্ষণশীল রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি, শ্রমিক আন্দোলনের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান, সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে স্নায়ুযুদ্ধে সফলভাবে লড়ে যাওয়া—বিংশ শতাব্দীতে প্রবলভাবে পুরুষবাদী একটা সমাজের মধ্যে থেকেও ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীর পদে সফলভাবে দায়িত্ব পালন করা মার্গারেট থ্যাচার পেয়েছিলেন আয়রন লেডি উপাধি। তাও স্বয়ং শত্রুশিবির থেকে- সোভিয়েত ইউনিয়ন!


বাস্তবে মার্গারেট ও ডেনিস থ্যাচার

রূপালী পর্দায় মার্গারেট ও ডেনিস থ্যাচার চরিত্রে মেরিল স্ট্রিপ ও জিম ব্রডবেন্ট

এবার চলচ্চিত্রটির প্রসঙ্গে আসা যাক। ১৯৪২ সালে স্যার ডেনিস থ্যাচারের সঙ্গে মার্গারেট থ্যাচারের বিয়ে হয়। রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ার সময় থেকেই ডেনিসের সঙ্গে মার্গারেটের পরিচয় ও প্রণয় ঘটে। ডেনিস মার্গারেটকে আর দশটা মেয়ের চেয়ে আলাদা ভাবতেন। তিনি জানতেন এই মেয়েকে দিয়ে ঘরকন্যার কাজ হবেনা। বিয়ের আগে সে ব্যাপারে সতর্কও করে দিয়েছিলেন মার্গারেট। ডেনিশ মার্গারেটের এই তেজী রূপটিকেই ভালোবেসেছিলেন। তাই আমৃত্যু ভালোবাসার মর্যাদা দিয়েছিলেন। তিনি অনেক বেশি সচেতন ছিলেন মার্গারেটের চাওয়া পাওয়া বিষয়ে । কখনই মার্গারেটের ইচ্ছের বিরুদ্ধে চাপিয়ে দেননি কিছু। তাঁকে বাধ্য করেননি পরিবারের দায়িত্ব পালনে। হয়ত মানুষ বলেই কিছু কিছু ক্ষেত্রে দ্বন্দ্ব থাকত। কিন্তু সেটা কখনই জটিল রূপ ধারন করেনি। তাই মার্গারেটের আজীবনের স্বপ্নসারথী ছিলেন ডেনিস। রাজনৈতিক ও পারিবারিক কঠিন মূহুর্তগুলোতে সব সময়ই ডেনিশ পাশে ছিলেন মার্গারেটের। প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব যখন প্রায় হারাতে বসেছিলেন তখনও মার্গারেটের লৌহমানবী রূপ অটুট ছিলো। তিনি বলেছিলেন যখন জনতা তাঁকে আর চাইবে না তখনই দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিবেন। ডেনিশ মার্গারেটের অব্যশম্ভাবী পরাজয়কে এড়ানোর জন্য তাঁকে নিজ থেকে দায়িত্ব ছেড়ে দেয়ার জন্য অনুরোধ করেন। শেষ পর্যন্ত মার্গারেট ডেনিসের কথা অনুযায়ী দায়িত্ব ছেড়ে দেন।

মার্গারেটের জীবনের প্রতিটি মূহুর্তে ডেনিসের উপস্থিতি টের পাওয়া যায়। আর এ বিষয়টিই চলচ্চিত্রটির পথপিরক্রমায় আমাদেরকে মার্গারেটের জীবনকে জানতে সাহায্য করে। ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে স্বামীর মৃত্যুতে মার্গারেট মুষড়ে পড়েন। উপলব্ধি করেন স্বামীকে কতটা চাইতেন তিনি,কতটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিলো ডেনিসের তাঁর জীবনে। জীবনের শেষ বেলায় এসে এককালের লৌহমানবী মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। সারাক্ষণই বিড়বিড় করে মৃত স্বামীর সঙ্গে কথা বলেন ৷ অনেককেই চিনতে পারেন না।নিজের অতীত সহ অনেক কিছুই পুরোপুরি ভুলে গেছেন । আর ডিমেনশিয়াতে আক্রান্ত মার্গারেটের হতবিহব্বল চোখ দিয়েই তাঁর ফেলে আসা জীবনের গল্প বলেছেন পরিচালক লয়েড।

কেন্দ্রীয় চরিত্র মার্গারেট থ্যাচারের ভূমিকায় মেরিল স্ট্রিপের অভিনয় অবিশ্বাস্য! এই ৬২ বছর বয়সে কাজের প্রতি তার নিষ্ঠা আর একাগ্রতা সত্যিই মুগ্ধ করেছে। নিজেকে তিনি আবারো প্রমাণ করেছেন সেলুলয়েডের আয়রন লেডি হিসেবে। অসুস্থ মার্গারেটের উদ্ভ্রান্ত চোখের চাহনি পর্দায় যখন মেরিলের চোখ দিয়ে দেখি তখন সেই লৌহ মানবীকে খুঁজে পাওয়া যায়না। তার পরিবর্তে দেখতে পাই অস্তিমিত জীবনের দ্বারপ্রান্তে ক্লান্ত নি:সঙ্গ এক সাধারন নারীকে।

পরিচালক ছবিটিকে মানবিক চলচ্চিত্র বললেও রাজনীতি থেকে মুক্ত রাখা স্বাভাবিকভাবেই সম্ভব ছিলোনা। তবে চলচ্চিত্রটিতে পরিচালক চেষ্টা করেছেন বিতর্কিত কোন বিষয়কে সরাসরি উপস্থাপন না করতে। তাই রাজনৈতিক বিষয়য়গুলো দেখানোর জন্য কৌশলী ছিলেন। যদিও সবক্ষেত্রে তিনি কতটা নিরেপেক্ষতা বজায় রাখতে পেরেছিলেন তা রাজনীতি ও ইতিহাসবোদ্ধাদের কাছে আলোচনার খোরাক যোগাবে। সেজন্য ছবিটি নিয়ে কম সমালোচনা হয়নি। যেহেতু মার্গারেট থ্যাচার এখনও বেঁচে আছেন তাই এ মূহুর্তে ছবিটি নির্মাণ কতটা যৌক্তিক ছিলো সেটি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন খোদ ব্রিটেনের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন। আরো অনেকেই আছেন এ দলে। তৎকালীন শ্রমিক অন্দোলনের নেতারা দাবি তুলেছেন শ্রমিক আন্দোলন বিরোধী থ্যাচারকে মহিমান্বিত করে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে চলচ্চিত্রটিতে। তাদের দাবি তিনি শ্রমিকদের প্রতি অত্যাচার চলিয়েছেন, শোষণের পথটাকে আরো প্রশস্ত করেছেন। তাঁর বিতর্কিত পোল ট্যাক্স (ধনী-গরীব সবার জন্য করের হার সমান) থিওরির কারনে তিনি নিজ দলেই প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছিলেন। বাধ্য হয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রীর পদ ছাড়তে ।
তাঁর বিরুদ্ধচারণ ও সমালোচনা প্রসঙ্গে ছবিটিতে ব্যবহৃত মার্গারেটের উক্তিটিই যথার্থ-
Don’t they know if you take the tough decisions, yes people will hate you today but they’ll thank you for generations.

আইএমডিবি
টরেন্ট ডাউনলোড লিংক ডিভিডি রিপ ৭০০ মেগাবাইট

তথ্যসূত্র: ইন্টারনেট
____________________________________________

উৎসর্গ:
রাইসুল জুহালা ভাই। দি আয়রন ম্যান অব সামহোয়্যার ইন ব্লগ :)
রাজু ভাই, এ ছবিটিতে মার্গারেট থ্যাচারের ভূমিকায় মেরিল স্ট্রিপের অভিনয় দেখে আপনার মত আমিও বলতে বাধ্য হয়েছি বাপরে!!
____________________________________________
**চলচ্চিত্র বিষয়ক আমার যত পোস্ট**
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে মার্চ, ২০১২ সকাল ৮:৪২
৩৬টি মন্তব্য ৩৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

×