নিউজে পড়ছি, ভারতের আতিথেয়তায় মুগ্ধ প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। তার তিন দিনের সফরকে কেন্দ্র করে যেন সৃষ্টি হয়েছে বন্ধুত্বের এক নতুন ঐতিহাসিক যুগ। তাকে স্বাগত জানাতে প্রটোকল ভেঙে বিমানবন্দরে নিজেই হাজির হন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। চমকে দেন। অকস্মাৎ মোদীর এই উপস্থিতিতে বিমোহিত হন ওবামা।
ওবামাও মোদীকে প্রটোকল ভেঙ্গে বুকে জড়িয়ে ধরেন। অন্তরঙ্গতার এখানেই শেষ নয়। মধ্যাহ্নভোজের পর দু’নেতা খোলা প্রাঙ্গণে বেরিয়ে আসেন। সেখানে রাখা ছিল দু’টি সোফা। মোদী নিজে হাতে চায়ের পাত্র তুলে নেন। আরেক হাতে একটি সাদা কাপ নেন। সঙ্গে একটি পিরিচ। সেই কাপে চা ঢালেন। এরপর তা এগিয়ে ধরেন ওবামার দিকে। ওবামাও উষ্ণ হাতে তা গ্রহণ করেন। সেই চা পান করে ওবামার কণ্ঠে প্রশংসা ঝরে পড়ে- ‘চাই পে চর্চা’। শুরু হয় দু’নেতার একান্ত আলাপচারিতা। উহু, শেষ হয়নি আরও আছে মোদীয় অন্তরঙ্গতা।
মোদী ওবামাকে আপন করে ‘বারাক’ বলে প্রথম নামে সম্বোধন করে খুলে দেন বন্ধুতার বিশাল দরজা। ব্যস, ওবামা প্রথমবারের মতো দুজনের মাঝে ‘হটলাইন’ চালু করার ঘোষণা দেন। উল্লেখ্য যে, এক বছর আগেও আমেরিকা-ইন্ডিয়ার সম্পর্ক ছিল সুশীতল!
ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদী একের পর এক ঠিক এভাবেই কেবল দেশবাসীকেই নয়, পুরো বিশ্বকে তার নেতৃত্বের গুণাবলী দিয়ে চমকিত করেই চলেছেন। অথচ এই মানুষই কী পরিমাণ ঘৃণিতই না ছিলেন গুজরাটের ঘটনাকে কেন্দ্র করে! শুধুই কী তাই? গুজরাট দাঙ্গার পর এই আমেরিকাতেই নরেন্দ্র মোদীর সফরের ওপর নিষেধাজ্ঞা ছিল। সেই আমেরিকা আর আজকের সেই মোদীর কী অন্তরঙ্গ আচরণ ও বন্ধুতা! গেল বছর সেই ‘নিষিদ্ধ’ মোদীকে মেডিসন স্কয়ার গার্ডেনে বলিউড তারকার মতো অভ্যর্থনা দেয়া হয়!
এসব পড়ে ভাবছিলাম: দু'টি শক্তিশালী রাষ্ট্রের প্রধানগণ ওবামা ও মোদী প্রটোকল ভাঙ্গতে পারেন। একে অপরকে জড়িয়ে ধরতে পারেন। কাপে চাও ঢালতে পারেন। চাই পে চর্চাও করতে পারেন। যদিও বিগত বছরগুলিতে এই এরাই একে অপরের দুশমন ছিলেন। নিষেধাজ্ঞাও ছিল। কেবলই স্ব স্ব রাষ্ট্রের প্রয়োজনে, জনগণের স্বার্থে সেই তারাই আজ কততো ক্লোজ! দ্যাটস কলড দ্যা লীডারশীপ।দ্যা ডিপলমেসী। দ্যা 'দেশপ্রেম'।
আর পোড়া কপাল এই দেশের দু'জন সেও নারী নেত্রী প্রটোকল ভাঙ্গতে জানেন না। একে অপরকে জড়িয়ে ধরতে পারেন না। মান অভিমান রাগ গোস্বা দুশমনী ত্যাগ করে শুধুমাত্র দেশ ও জাতির কথা ভেবেও কেউই একত্রিত হতে পারলেনই না। কাউকে তো এগিয়ে আসতে হবে, উদারতা দেখাতে হবে, নয়কি? আছ্ছা, দু নেত্রীর স্থানে দু'জন পুরুষ নেতা হলেও কি এমন হতো? সুদীর্ঘকালব্যাপী এতো দ্বেষ বিদ্বেষ রেষারেষি গোয়ার্তুমি দেখতে হতো কি?? কেন জানি মনে হয়: এমনটি হয়তো হতো না।