somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলা ব্যান্ড মিউজিক --- ফিডব্যাক ও এক মাকসুদুল হক

২৮ শে অক্টোবর, ২০১১ রাত ২:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

(বাংলা ব্যান্ড মিউজিক নিয়ে লেখা আমার দ্বিতীয় পোষ্ট এটি। প্রথম পোষ্টে ফিচার করেছিলাম এবি'কে নিয়ে। ঐ লেখায় প্রচুর বাঁক দিয়ে বিভিন্ন প্রসঙ্গ তুলে আনার একটা চেষ্টা করেছিলাম। অনেকে বিকক্ত হয়েছেন। অনেকেই আবার ঐ এলোমেলো পোষ্ট-টিকে ভালবেসে এক দুটো কথা বলেছিলেন। তাই আপনাদের সবাইকেই আমার এই পোষ্টে স্বাগতম।)



আমার এই ছোট্ট পরিসরের শিক্ষা জীবনে বহুবার স্কুল পরিবর্তন করতে হয়েছে। ক্লাস থ্রী'তে উঠেই নিজ গ্রামের স্কুল ছেড়ে চলে এসে ভর্তি হই নানু বাড়ির অজপাড়া গাঁয়ের স্কুলে। সেই ক্লাস থ্রী'র কিছুটা বলেছি প্রথম পোষ্টে। চমৎকার সব মানুষ জনের সাথে সময় কাটিয়েছি। প্রাইমারী'র গন্ডী পেরিয়ে ভর্তি হই অনেক দূরের একটা হাই স্কুলে। আমার নানু বাড়ি থেকে প্রায় ৭-৮ কিলো'র হাটা রাস্তা। ততদিনে নিয়মিত মিউজিক শুনতে শুনতে অভ্যস্থ হয়ে গেছি। একটা সময় ক্লাস "ছক্কা" পেয়িয়ে সপ্তম শ্রেণীতে উঠলাম। আর সেই সাথে আবারো স্কুল পরিবর্তন করতে হল। ফিরে গেলাম নিজের গ্রামের হাই স্কুলে।



নতুন স্কুলে নতুন বন্ধুরা, সব কিছুই নতুন নতুন লাগে। যেহেতু মিউজিকের সাথে আমার একটা সখ্য ছিল, সেহেতু আমার মনের মননশীল একজন বন্ধু জুটে গেল অনেক অনেক নতুন বন্ধুদের ভীড়ে। সে-ই আমার দ্বিতীয় গানের বন্ধু "সুমন"। দুই বন্ধু মিলে খুজে খুজে পুরোনো চমৎকার চমৎকার সব অ্যালবাম কিনে নিয়ে আসতাম আর মুগ্ধ বিভোরতায় চুটিয়ে শুনতাম সেই সব গান। সেই সময়টাতে এবি'র "একা" ও "সময়", ব্যান্ড মিক্সড "একটি গোলাপ", আহমেদ রিজভী'র কথায় ও আশিকুর রহমান সান্টুর সুরে "শুধু তোমারই কারণে", প্রিন্স মাহমুদের সুরে "শেষ দেখা", জুয়েল-বাবু'র সুরে "মেয়ে", প্রিন্স মাহমুদের সুরে "দাগ থেকে যায়", জুয়েল-বাবু'র সুরে "ও আমার প্রেম", মাইলসের "প্রয়াস", সোলসের "অসময়ের গান", ওয়ারফেইজের "অসামাজিক" সহ আরো অনেক ব্যান্ড ও মিক্সড অ্যালবাম শুনছে সারা বাংলাদেশ। সেই সময়টাতে আমিও শুনছি সেই সব অতি চমৎকার গান। আমি আর সুমন দুই বন্ধু মিলে প্রচুর ক্যাসেট কিনতাম (আমার থেকে সুমনের কালেকশান ছিল ঈর্ষণীয়)। দিন কাটতে লাগল। সময় এল নতুন শতাব্দী'র।



খ্রিষ্টাব্দ ২০০০('৯৯ এর শেষটা সহ) প্রিন্স মাহমুদের "স্রোত" ও "দেয়াল দুই হৃদয়ের মাঝে", কিশোর শাহীনের "মিলেনিয়াম", মাইলসের "প্রবাহ" সহ আরো অনেক অনেক অ্যালবাম চারপাশজুড়ে। একদিকে যেমন চমৎকার চমৎকার সব অ্যালবাম রিলিজ হচ্ছে অন্যদিকে বিক্রিও হচ্ছে লক্ষ লক্ষ কপি। ক্যাসেটের দোকানে ঢুকতে গেলে লাইনে দাড়াতে হত মাঝে মাঝে।। কি যে সুখের দিনগুলি কাটছিল সে সময়। পড়াশোনা করছি, আর অবসরের পুরোটা সময়ই গান শুনে কাটাচ্ছি। ঠিক সেই সময় আবারও স্কুল বদলের পালা (ফ্যামিলি শিফটমেন্টের জন্য)। ফিরে গেলাম সেই পুরোনো স্কুলে; ৭-৮ কিলো'র এলোমেলো মেঠোপথ ধরে।



এমনি ভাবেই সময় গড়িয়ে যেতে থাকে। একদিন আচমকা আমার সেই স্কুলের বন্ধু "সুমন" আসে আমার সাথে দেখা করতে। সাথে নিয়ে আসে ছোট্ট একটা উপহার --- ফিডব্যাকের "বঙ্গাব্দ ১৪০০"। উপহার হাতে নিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়ি। "এত প্রেম এত প্রেম জানা ছিল নাতো প্রিয়তমা (অভিশাপের পালা -মাকদুলুল হক/ওগো ভালবাসা) "। সারারাত, সারাদিন, টানা ১ মাস শুনি এই "বঙ্গাব্দ-১৪০০"। তবুও তৃপ্তি মেটে না। এক একটি গান যেন শুধুই গান নয়; জীবনের প্রতিচ্ছবি।। এক একটি সুর ও সঙ্গীতায়োজন মনে হতে থাকল স্বর্গীয় অনুভূতি থেকে পাওয়া।। সবচেয়ে বড় ধাক্কা পেয়েছিলাম অ্যালবামের কাভার দেখে। অ্যালবামের কাভার পেইজ খুললে যে-কাউকেই থমকে যেতে হবে "অবাক বিষ্ময়ে"। মেধা ও মননশীলতার অনন্য ছাপ স্পষ্ট সমস্ত কাভারজুড়ে। জড়াজীর্ণ একটি পুরোনো স্থাপনার সামনে দাড়িয়ে আছে পাঁচ-জন দুরন্ত সাহসী যোদ্ধা; চোখে মুখে সমস্ত ক্লেদ, গ্লানি ও শীর্ণ মানসিকতা ধুয়ে মুছে দেবার দৃঢ় সংকল্প।। সাথে ররিঠাকুরের সেই হাহাকার বাণী "সাত কোটি সন্তানের হে মুগ্ধ জননী/রেখেছো বাঙ্গালী করে মানুষ করনি"।



অ্যালবাম শুরু হয়ঃ "টেলিফোনে যখন ফিসফিস" দিয়ে। একি গান না নাকি চিঠি ? ? ? !!! বিষ্ময় নিয়ে একে একে শুনতে থাকি "মামা", "গীতিকবিতা-১/মনে পড়ে তোমায়", "গীতিকবিতা-২/ধন্যবাদ হে ভালবাসা", "উচ্চ পদস্থ তদন্ত কমিটি", "ভীরু মন", "পালকি-২", "ও আশা", "বিদ্রোহী", "সুখী মানুষের ভীড়ে", "আপন দেশে চল", "সামাজিক কোষ্টকাঠিণ্য"।। প্রতিটি গান সমস্ত চেতনাকে আচ্ছন্ন করেছিল আমায়। সেই থেকে আজ অব্দি নিয়মিত শুনি ফিডব্যাকের "বঙ্গাব্দ ১৪০০"। মাকসুদুল হকের গীতিকবিতার শুরু এই অ্যালবাম দিয়েই। গানের লিরিক এত বিশাল যে অবাক হতে হয়। শুধু কি বিশালতা-ই এর মূল আকর্ষণ ? ? ? অবশ্যই নয়। এত আবেগী, এত বাস্তব ধর্মী, এত রোমান্টিক, এমন শক্তিশালী কথায় গাঁথা লিরিক আমি এর আগে কখনোই দেখিনি। "বেচেঁ আছি উৎপীড়নে/বেচেঁ আছি উন্মাদনায়/বেচেঁ আছি বেচেঁ থাকার শত তাগিদে/ক্ষণিকেও তোমারি আশায়/মনে রবে তোমায় অনাগত কোন গীতিকবিতায়/মনে রবে শুধু দীর্ঘশ্বাসে/আর এক মিনিট নীরবতায় --- গীতিকবিতা-১/মন পড়ে তোমায়"। অন্যদিকে "চোখ জলে ভেজা স্যাঁতস্যাঁতে/বালিশের উপর শুয়ে কাটছে অনেক রাত/ধন্যবাদ হে ভালবাসা/ধন্যবাদ এই দুঃখ দেয়া/সুখে থেকো তুমি বলেছিলে/সুখেই আছি সবাই বলে/ঠোট-মুখে হাসি লেগেই আছে/অন্তর কাঁদে কেউ না জানে/পুরোনো চিঠি পড়তে বসে/আজো মনে সন্দেহ জাগে/আদৌ কি ভালবেসেছিলে/নাকি ছিল ছলনা অবলীলাক্রমে/. . . /ঘৃণার কথা বলেছিলে/ঘৃণায় আমার জীবন চলে/ঘৃণাতে ভালবাসা লাগে/এই সত্য কথা কেউ না মানে --- গীতিকবিতা-২/ধন্যবাদ হে ভালবাসা"। এ তো শুধুই গান নয়, নয় শুধুই গীতিকবিতা; আমার কাছে এই গান মানে প্রেম, ভালবাসা, বিচ্ছেদ, চরম বাস্তবতা'র এক মহামিলন। এ গান যেন এক একটি উজ্জল জীবন দর্শন। আমার খুব কষ্ট হচ্ছে এই ভেবে যে, আজ আমি পুরো "মাকসুদুল হক ও ঢাকা" এবং "ফিডব্যাক" নিয়ে লিখতে বসেছি। মাকসুদুল হক ও ফিডব্যাক নিয়ে পুরো পোষ্ট দিতে গেলে শত শত পৃষ্ঠা লেগে যাবে। টানা ১ মাস লিখেও আমি ব্যাক্তিগত ভাবে ফিডব্যাক এবং মাকসুদ ও ঢাকা'র গুণ কীর্তন করে শেষ করতে পারবো না, লিখে শেষ করা যাবে না বাংলা ব্যান্ডে তাদের অবদানের কথা। শুধু বঙ্গাব্দ ১৪০০ নিয়ে পোষ্ট দিলেই এর আকার এত দীর্ঘ হবে যে আমি নিজেই অবাক হয়ে যাবো পোষ্ট দেখে। (তবে নিশ্চয়ই একদিন ফিডব্যাক ও মাকসুদের প্রতিটি অ্যালবাম নিয়ে আলাদা আলাদা পুরো পোষ্ট পাবো। সেটা হোক আমার নতুবা অন্য কারো) এ আমার দৃষ্টতাঃ আমি বাংলা ব্যান্ডের মহান ও গুণী শিল্পীদের নিয়ে আজ লিখতে বসেছি। হয়ত এক পোষ্টে বাংলা ব্যান্ডে তাদের অবদানের কথা, তাদের কথা, প্রতিটি লিরিকের পেছনের কাহিনীর কথা, প্রতিটি ত্যাগের কথা, মেধা ও মননশীলতার অপরিমেয় সৌন্দর্যের কথা পুরোটা তুলে আনতে পারবো না। তবুও লিখলাম . . . ফিডব্যাক, এক মাকসুদুল হক ও তার ঢাকার গল্প।



সবসময় দেখে এসেছি যে, রাজপুত্র কিংবা রাজকন্যাদের কথা শুরু হয় অনেক অনেক বছর আগে থেকে। এক যে ছিল এক রাজপুত্র . . .

তেমনি শুরু করছি আমার মূল গল্প। একদা যুদ্ধপররর্তী বাংলাদেশে সঙ্গীতমনা কিছু তরুণ একটি গানের দল তৈরী করে যার নাম "ফিডব্যাক"।

আসুন পরিচত হই . . .



হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল (পরবর্তীতে হোটেল শেরাটন এবং বর্তমানের রুপসী বাংলা) এ লাইভ মিউজিক প্রোগ্রাম হত নিয়মিত। সেখানে মূলত ইংরেজী গানের পরিবেশনা থাকত। একদল মানুষ সেই সব ইংরেজী গানের সাথে তাল মিলিয়ে ড্যান্স করত।। আর মঞ্চ থেকে ভেসে আসতো মেলোডিয়াস পপ, রক ও জ্যাজ ঘরানা'র গান; পরিবেশনায় তরুণ গানের দল "ফিডব্যাক"। ফিডব্যাকের দলনেতা প্রতিভাবান সুরকার, কম্পোজার ও কিবোর্ডিষ্ট ফোয়াদ নাসের বাবু, পিয়ারু খান(Drums & Vocal), সেলিম হায়দার(Guitars), মুরাদ রহমান (Bass) এবং সদ্য জয়েন করা মাকসুদুল হক(Main Vocal)। মাকসুদুল হক ফিডব্যাকে জয়েন করে ১৯৭৬ সালে। পরবর্তীতে তুমুল শ্রোতাপ্রিয়তা পাওয়া ও সারা বাংলাদেশ কাঁপানো ব্যান্ড ফিডব্যাক অবশ্য ১৯৮৫ সালের আগ পর্যন্ত কোন অ্যালবাম রিলিজ করেনি।



১৯৮৫ সাল। মাকসুদুল হক'কে ফিচার না করেই ফিডব্যাক নিয়ে আসে "ফিডব্যাক ভলিউম-১" নামে তাদের ব্যান্ডের প্রথম প্রকাশ।(অনেকের কাছেই শুনেছি ফিডব্যাকের প্রথম অ্যালবামের কথা। কিন্তু দুঃখের কথা এই যে, অনেক খুজেও এর কোন হসিদ বের করতে পারিনি সেই ক্যাসেটের যুগে। আজও অবধি শোনার ভাগ্য আমার হয়ে উঠেনি। কেউ যদি ইনফো দিয়ে সাহায্য করেন তবে কৃতার্থ হব।)



১৯৮৭ সালে আবারো ফিরে আসে ফিডব্যাক। সেই সাথে রদবদল ঘটে লাইন-আপে। মাকসুদুল হক ফিরে আসেন পুরোদস্তুর কন্ঠ নিয়ে (মেইন ভোকাল ), মুরাদ রহমান ব্যান্ড ছেড়ে চলে গেলে ফিডব্যাকে বেইজ গিটার নিয়ে জয়েন করেন সেকান্দর আহমেদ খোকা, লীড গিটারিস্ট ও ভোকার হিসেবে আসেন লাবু রহমান , ড্রামসের সেই পুরোনো পিয়ারু খান এবং কিবোর্ডিস্ট ও দলনেতা ফোয়াদ নাসের বাবু। নতুন আঙ্গিকে, নতুন কথা ও সুরে, নতুন সঙ্গীতের নতুন পরিবেশনায় ফিডব্যাক নিয়ে আসে বাংলা ব্যান্ড মিউজিকের অন্যতম সফল অ্যালবাম ও বাংলা ব্যান্ডে বিকল্পধারার রক মিউজিকের উজ্জল দৃষ্টান্ত "উল্লাস"। সারগাম থেকে থেকে প্রকাশ পাওয়া এই অ্যালবামের কাভার পেইজটাও ছিল দীপ্ত ও বৈচিত্র্যময়। একদল মানুষ, কেউ গিটার বাজাচ্ছে, কেউ গাইছে, কেউ ড্রামস বাজাচ্ছে এরকম একটার উপড় আরেকটার অবয়ব। কভার দেখেই বোঝা গিয়েছিল "উল্লাসে" মেতেছে ফিডব্যাক। অ্যালবামের ফার্স্ট ট্র্যাক " মৌসুমি পর্ব ১"। জনপ্রিয় অনেক অনেক গানের গীতিকার ও বর্তমানের প্রথম আলো'র জ্যোতিশী কাওসার আহমেদ চৌধুরীর লেখা প্রথম গানটি দিয়েই সব-ঘরানার শ্রোতা হৃদয় কেড়ে নেয় ফিডব্যাক।। অসম্ভব চমৎকার এই গানের কথা, সুর ও সঙ্গীতায়োজনের তুলনা হতে পারেনা। আর মাকসুদুল হক তার তরুণ কোমল কন্ঠে এতটায় আবেগী কন্ঠে গেয়েছেন যে এর আর অন্য কোন বিকল্প থাকতেই পারেনা। এতো গেল শুধু প্রথম গান !!! এরপর একে একে "চিঠি", "চোখ", "মাঝি", "সেই দিনগুলি", "উদাসী", "জানালা", "ঐ দূর থেকে দূরে", "কেমন করে হায়", "আমার নতুন আকাশে", "এই দিন চিরদিন রবে", "ঝাউ বনে", "মহাশূণ্য" ও "দিন যায় দিন চলে যায়" আজও বাংলা ব্যান্ড মিউজিকের এক একটি হীরাখন্ড। (পরবর্তী কালে ফিডব্যাকের সেরাগান নিয়ে করা অ্যালবাম "জোয়ার" এর সর্বাধিক গান নেওয়া হয় "উল্লাস" থেকেই)। উল্লাসে সর্বাধিক গানে কন্ঠ দিয়েছিলেন মাকসুদুল হক এবং নিজের কন্ঠ গাওয়া গানের লিরিকগুলোর সর্বাধিক-ই মাকসুদুল হকের নিজের লেখা। কোন কোন গানে উঠে এসেছে ভালবাসার উন্মাদনা, হাজারো প্রশ্নে জানতে চাওয়া নির্মম সত্য অথচ জানার কতই না আকুতি !!! "চোখ", "চিঠি", "উদাসী" সহ প্রতিটি গানের কথা এত বৈচিত্রময়, এত বাস্তবধর্মী এর আগে কোন ব্যান্ডের অ্যালবামে এত প্রকট ভাবে উঠে আসেনি। সেই দিক থেকে বলতে গেলে এমন অসম্ভব শক্তিশালী গানের কথায় খুব খুব নিয়মিত অ্যালবাম করেছে এমন কম সংখ্যক ব্যান্ড-ই বাংলাদেশে পাওয়া যাবে যারা তাদের প্রতিটি অ্যালবামেই এর সফল ধারাবাহিকতা দেখিয়েছে একমাত্র ব্যান্ড ফিডব্যাক ছাড়া। বাংলা ব্যান্ড মিউজিক-এর এক অনবদ্য অ্যালবাম হিসেবে যতদিন বাংলা ব্যান্ড মিউজিক টিকে থাকবে ততদিন এই উল্লাস থাকবে। শুধু উল্লাসই নয় মাকসুদুল হক সহ ফিডব্যাকের প্রতিটি অ্যালবাম বাংলা ব্যান্ড মিউজিকের এক একটি উজ্জল নক্ষত্র। গতানুগতিক ধারার গান কখনোই ফিডব্যাক শ্রোতাদের উপহার দেয়নি মাকসুদুল হক থাকা অবস্থায়। প্রতিটি অ্যালবামের কথা, সুর ও সঙ্গীতায়োজন ছিল এমনই শক্তিশালী যেঃ যেই ব্যাক্তি প্রথম বারের মত ফিডব্যাকের গান শুনবে, তাকে অবশ্যই অবাক হতে হবে বিষ্ময়ে, সমস্ত দ্বিধা ছুড়ে ফেলে মেনে নিতে হবে তাদের একছত্র সৃষ্টিশীলতাকে, বলতে হবে এক একটি মিউজিক একটি একটি ক্ল্যাসিক। আর প্রতিটি গানের সঙ্গীতায়োজন ও গায়কী যে কাউকেই সহজে বশীভূত করতে বাধ্য।। (এবার আমার প্রসঙ্গে বলিঃ বন্ধু'র কাছ থেকে উপহার পাওয়া বঙ্গাব্দ ১৪০০ শোনার পর ফিডব্যাকের আরো অ্যালবাম খুজতে থাকি। আমি যখন ফিডব্যাক শোনা শুরু করি ততদিনে ফিডব্যাক ভেঙ্গে একাকার। মাকসুদুল হক নামের প্রাণীটি তখন "মাকসুদ ও ঢাকা" ব্যান্ডের ছত্রছায়ার দুটি শ্রোতানন্দিত ও পুরোপুরি ভিন্ন স্বাদের অ্যালবাম ছেড়ে কিছুটা ক্লান্ত। ফিডব্যাক তখন ভাঙ্গা নৌকা নিয়ে পানিতে হাবুডুবু খাচ্ছে। আর আমি তখন হারিকেন নিয়ে ফিডব্যাক-কে খুজতে বেরিয়েছি। দোকানে গিয়ে ফিডব্যাক এর কথা বললে শুধু নিষিদ্ধ মাকসুদের কথা শোনায়। তখনও জানতে বাকী, নিষিদ্ধ মাকসুদুল হককে। অনেক অনেক কষ্টে অনেকে অনেক প্রতীক্ষার পর ঢাকা থেকে আনিয়ে নিইঃ ফিডব্যাকের "উল্লাস", "মেলা", "জোয়ার", "দেহঘড়ি" ও "বাউলিয়ানা" এবং মাকসুদ ও ঢাকার "অ(X)প্রাপ্ত বয়স্কের নিষিদ্ধ"। ওগো ভালবাসার কথা যথা সময়েরই বলা হবে।)



এভাবেই অনেক বৈশাখ এলো আর গেলো। রমনা বটমূলে মঞ্চ বানিয়ে রং-চঙ্গা পোশাকে গাওয়া রবিঠাকুরের চমৎকার ঠান্ডা মেজাজের সমবেত সঙ্গীত "পুরানো সেই দিনের কথা/ভুলবি কিরে হায়/ও সে চোখের দেখা/প্রাণের কথা সেকি ভোলা যায়" দিয়ে বর্ষ বরণ হতে থাকল। যেখানে নেই বাংলার ঐতিহ্যবাহী ঢোলের বাড়ি, নেই রমণীর খোঁপার সেই হরেক রকমের ফুলের মালা'র কথা, নেই উন্মত্ত রোদে আনন্দ মিছিলের কথা, নেই কোন হট্টগোলের কথা, নেই রমণীদের উৎপাত করা বখাটে ছেলেদের কথাঃ যখন প্রেমিক মন বিদেশী সুগন্ধী মেখে ঘুড়ে বেড়ায় ভালবাসার মানুষটি জন্য। নেই কোন নতুন প্রাণের কথা, নেই প্রকৃতি'র রুপে আগুন ধরে যাবার কথা। সর্বোপরি নেই প্রাণ খুলে সুতীব্র চিৎকারে জানানো বৈশাখের কথা। এরপর এলো ১৯৯০। বাঙ্গালী ১৩৯৭ সালের বৈশাখ ছিল অন্য সব বৈশাখ থেকে পুরো আলাদা। বাংলা ব্যান্ড মিউজিকে নতুন ধারার এক অনন্য ও সর্বযুগের উপযোগী সংযোজন হিসেব আত্মপ্রকাশ পেল ফিডব্যাকের তৃতীয় অ্যালবাম "মেলা"। বৈশাখের দিনে ঘরে ঘরে, পাড়াতে পাড়াতে, বাজারে বাজের, মেলার মাঠে, ক্লাব ঘরে বাজতে থাকল মাকসুদুল হকের লেখা ও কন্ঠ দেওয়া গানঃ "মেলায় যায়রে, মেলায় যায়রে, মেলায় যায়রে, মেলায় যায়রে/বাসন্তী রং শাড়ি পড়ে ললনারা হেটে যায়/মেলায় যায়রে, মেলায় যায়রে, মেলায় যায়রে, মেলায় যায়রে/ঐ বখাটে ছেলের ভীড়ে ললনাদের রেহায় নাই/ . . . মেলায় যায়রে, মেলায় যায়রে, মেলায় যায়রে, মেলায় যায়রে" (এ অংশটুকুতে যেই সময়ের কথা বলেছি, সেই সময়ের কথা আমি জানিনা। পরিবেশ কেমন ছিল তাও জানা নেই। প্রথম বৈশাখে "মেলায় যায়রে" গানটা সারা বাংলাদেশের মানুষ কতবার করে শুনেছে তাও জানা নেই। তবে ঠিক এইরুপ একটি অভিজ্ঞতা আমার ব্যাক্তিগত ভাবেই আছে। সেখান থেকেই কল্পনায় ১৩৯৭ এ চলে গিয়েছি। প্রতিটি বৈশাখে ঘুম থেকেই উঠেই আমি ফিডব্যাকের "মেলা" গানটা শুনে নিজেকে মাতিয়ে নেই উল্লাসে)। বৈশাখের আনন্দ-উৎসবের সাথে যেতে পারে এমন চমৎকার, মানানসই, আবেদনময়ী উল্লাসের গান বোধকরি এই বাংলা মিউজিকে নেই, একমাত্র ফিডব্যাক ও মাকসুদুল হকের "মেলা" ছাড়া। আসবে সেরকমও কিছু নিশ্চিত বলা যায় না।। মাকসুদুল হক, শুধুই শিল্পী নন, একাধারে তিনি গীতিকবি, সুরকার, সঙ্গীত পরিচালক ও সর্বোপরি একজন সামাজিক যোদ্ধা।। যিনি গানের মাধ্যমে সামাজিক জাগরণের জন্য কাজ করেছেন, তুলে এনেছেন স্বদেশের কথা, তুলে ধরতে চেয়ে ধূর্ত রাজনীতিবিদতের ষড়যন্ত্রের কথা, তুলে ধরেছেন প্রিয়ার নিষ্ঠুরতাকে তাও আবার মধুর আঘাতে আঘাত করা পুরোনো ক্ষতে, গানের কথায় ফিরে এসেছে জীবন-জ্বালার কথা, স্মরণ করেছেন চিরতরে বিদায় দেওয়া বন্ধু "হ্যাপি আকন্দের কথা", কৌতুহলী হয়ে জানতে চেয়েছেন মৌসুমির কথা---কারো বুকের আলিঙ্গনে লুকিয়ে প্রিয়া আজও কি আমায় মনে করে???।। ফিডব্যাকের "মেলা" বাংলা ব্যান্ড মিউজিকের এক অনন্য সংযোজন। ১২ টি গানের প্রতিটি গানই প্রথম শ্রেণীর মিউজিক। (মাকসুদুল হক ও ফিডব্যাকের গান নিয়ে লিখতে গেলে অবশ্যই গানের লিরিকে ভিন্নতা, বাস্তবধর্মী, গানের লিরিকে চমৎকার কথার শক্তিশালী ব্যাবহার বারবার লিখতে হবে নতুন করে। আর প্রটিটি গানের কম্পোজিশান সেই আগের কথা থেকে বলতে চাইঃ যেন স্বর্গীয় কোন অনুভূতি থেকে পাওয়া। ফুয়াদ নাসের বাবু এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের ব্যান্ড মিউজিকের ইতিহাসে এক অনন্য ও অনবদ্য সঙ্গীত পরিচালক। বাংলা ব্যান্ড সঙ্গীত নিয়মিত শোনের এবং একটু খোজ খবর রাখেন যারা তারা আমার সাথে একমত পোষণ করবেন খুব সহজেই, এই আশা করা অর্বাচীন কিছু নয়।)





মেলা অ্যালবামের গানগুলো হলঃ "মেলা", “মৌসুমী পর্ব -২”, ”জীবন-জ্বালা”, ”গৌধুলী”, ”নীল-নক্সা”, ”পালকী পর্ব -১”, ”স্বদেশ”, ”জন্মেছি-এই যুগে”, ”ময়ূরী আকাশ”, ”ছোট্ট পাখি”, ”মন বুঝিয়া” ও “ফিরে এসো”। অধিকাংশ গানে কন্ঠ দিয়েছেন মাকসুদুল হক ও নিজের কন্ঠে গাওয়া প্রায় এই অ্যালবামের সব গানই উনার নিজের লেখা। জন্মেছি এই যুগে গানটিতে মাকসুদুল হক সুতীব্র চিৎকারে আর্তনাদ করে বলেছেনঃ “শুনিনা পুরোনো দিনের ঐ গান/আমি বুঝিনা তোমার রাগ-রাগিনীর গান/প্রথম যেদিন হল আর্তনাদ/আর পাগল পাগল বলে দিলে অপবাদ আমাকে/আমি জন্মেছি এই যুগে/আমার অহংকার আমি গান গাই এই যুগে”। ব্যান্ড সঙ্গীতের আধুনিকায়নে ও ব্যান্ড সঙ্গীতকে বাংলাদেশে জনপ্রিয় করার পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান যার তিনি হলেন অসামান্য প্রতিভাধর বাংলা ব্যান্ড মিউজিকের অগ্রদূত এই মাকসুদুল হক ও ফিডব্যাক। ব্যাক্তি জীবনে ব্যান্ড সঙ্গীতকেই লালন করেছিলেন দীপ্ত প্রতিভায়। ব্যান্ড সঙ্গীত আন্দোলনের প্রধান ও একমাত্র সংঘঠন বামবা (বাংলাদেশ মিউজিক্যাল ব্যান্ড অ্যাসোসিয়েশান) এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসেবে ব্যান্ড সঙ্গীত আন্দোলনকে ত্বরাণ্বিত করেছিলেন।





১৯৯২, এইচ.এম.ভি/কলকাতা থেকে ফিডব্যাকের সর্বাধিক জনপ্রিয় গানগুলো নিয়ে প্রকাশ পায় "জোয়ার"। পুরোনো জনপ্রিয় গানগুলো যেমনঃ মৌসুমী-১, মৌসুমী-২, এই দিন চিরদিন, ঐ দূর থেকে দূরে, দিন যায় দিন চলে যায়, মাঝি তুমি, মাঝি-৯১(মাঝি তোর রেডিও নাই), চিঠি, জীবন-জ্বালা ও মেলা গানগুলো রিকম্পোজ করা হয় এই অ্যালবামে শুধুমাত্র মাঝি-৯১ ছাড়া। সবগুলো গানেই কন্ঠ দেয় মাকসুদুল হক। ফিডব্যাকই বাংলাদেশের প্রথম কোন ব্যান্ড যারা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ইন্ডিয়াতে ততকালীন সময়ে অডিও প্রকাশ করে।। এই জোয়ার অ্যালবাম নিয়ে বাংলা ব্যান্ডের অন্যতম পথিকৃত মাকসুদুল হক অনেক অনেক আক্ষেপ করেছেন "আমি বাংলাদেশের দালাল বলছি" নামে প্রকাশিত মাকসুদুল হকের নিজের লেখা একটি বইয়ে।। কলকাতায় জোয়ার অ্যালবাম প্রকাশের পরপরই ইন্ডিয়াতে ফিডব্যাক একটি Open Air Concert এ অংশ নেয়।। হাজার হাজার উন্মত্ত শ্রোতা অংশ নেই সেই কনসার্টে। সেই সময়ে আগে ইন্ডিয়ায় এমনটি ছিল বিরল।। ঐ কনসার্টের পর জ়োয়ার অ্যালবামের কাটতি বেড়ে যায় বহুগুনে।। শ্রোতারা হুমড়ি খেয়ে পড়ে ক্যাসেটের দোকানে। কিন্তু দুঃখ ও আক্ষেপ এই যেঃ ঐ সময়ে ওপাড় বাংলার (কলকাতার) এক শিল্পীকে সুযোগ করে দিতে সমস্ত জোয়ার অ্যালবাম প্রচুর চাহিদা থাকা সত্বেও মার্কেট থেকে তুলে নেওয়া হয় এইচ.এম.ভি।। (ব্যাক্তিগত প্রসংগঃ এ ঘটনা জানার পর থেকে আমি ওপাড় বাংলার কোন গান শুনিনা শুধুমাত্র প্রতুল দা, মৌসুমি ভৌমিক, লোপামুদ্রা মিত্র ছাড়া)।



বাংলা ব্যান্ড মিউজিকে ফিডব্যাক ও মাকসুদুল হকের করা জোয়ার অ্যালবামটি এক অনন্য সংযোজন। তখনও ফিডব্যাকের লাইন আপে ছিলঃ ফোয়াদ নাসের বাবু (কিবোর্ডিস্ট ও দলনেতা), মাকসুদুল হক (ভোকাল), পিয়ারু খান (ভোকাল ও ড্রামার), লাবু রহমান (ভোকার ও গিটারিস্ট) এবং সেকান্দর আহমেদ খোকা (বেইজ) এবং বাউলিয়ানা পর্যন্ত একই লাইন-আপ ছিল ফিডব্যাকের।। (ব্যাক্তিগত ভাবে আমি ফিডব্যাক ও মাকসুদুল হকের করা প্রতিটি অ্যালবাম শুনে মুগ্ধ হয়েছি অজস্রবার এবং প্রতিবারই নতুন নতুন করে)।



এরপর এল বঙ্গাব্দ ১৪০০ (খ্রিস্টাব্দঃ ১৯৯৪সাল)। ফিডব্যাক নিয়ে এল ফিডব্যাকের ইতিহাসের সবচেয়ে জনপ্রিয় অ্যালবাম বঙ্গাব্দ ১৪০০। গীতিকবিতার শুরু এই অ্যালবাম থেকেই। বঙ্গাব্দ ১৪০০ এর কথা আগেই উল্লেখ করেছি। (তবে কিছু কিছু ব্যাপার নতুন করে তুলে আনার একটা প্রবল আকাংখা আমার।) এই অ্যালবামের চারটি গান সচরাচর ধারাবাহিকতার বাইরে সবচেয়ে বেশী ভাললাগত। আগেই উল্লেখ করেছি মাকসুদুল হক বরাবরই সামাজিক অসংগতি তুলে ধরতে চেয়েছিলেন তার গানে। গানের মাধ্যমে করতে চেয়েছিলেন সামাজিক বিপ্লব। গান করেছেন ব্যান্ড আন্দোনল নিয়ে। বঙ্গাব্দ ১৪০০ তে করা "কোথাও রোমাঞ্চ নেই/খাঁটি করুণ বাস্তবতা/আর এই বাংলাদেশেরই কথা/ . . . দিয়ে শুরু(উচ্চ পদস্থ তদন্ত কমিটি)" ও "সামাজিক কোষ্ঠকাঠিণ্য" সামাজিক আন্দোলনের ব্যান্ড মিউজিকের ভূমিকা অনেক শক্তিশালী ও প্রশংসনীয় করে তোলে। এছাড়া একই অ্যালবামে করা "আপন দেশে চল" শিরোনামের গানটি চিরাচরিত বাংলার গরিমা গানের প্রতিনিধিত্ব করে। সেই সাথে মাকসুদুল হক-ই বাংলাদেশের প্রথম ব্যাক্তি যিনি বাংলার বাউল ও গরিমা গান গুলো ব্যান্ড সঙ্গীতের ছত্রছায়ায় নতুন প্রজন্মের হাতে তুলে দিতে চেয়েছিলেন। এছাড়াও "জীবন সুন্দর/আকাশ বাতাস-পাহাড় সমুদ্র সবুজ বনানী ঘেরা প্রকৃতি সুন্দর/আর সবচেয়ে সুন্দর এই বেঁচে থাকা/তবুও কি আজীবন বেঁচে থাকা যায়/বিদায়ের সানায় বাঁজে/নিয়ে যাবার পালকী এসে দাড়ায় দুয়ারে/সুন্দর প্রকৃতি ছেড়ে এই যে বেঁচে ছিলাম/দীর্ঘশ্বাস নিয়ে যেতে হয় সবাই কে অজানা গন্ত্যবে/হঠাৎ ডেকে উঠে নাম না জানা পাখি/অজান্তেই চমকে উঠি জীবন ফুরালো নাকি" চমৎকার আবৃতি অংশটুকু দিয়ে শুরু হয় পালকী-২। জীবনের সবচেয় নির্মম সত্য কথাটা স্মরণ করিয়ে দেয় এই গানটি। আর এই গানটির সঙ্গীত পরিবেশনাও চমৎকার। ভাল না লাগার কোনই অবকাশই নেই। আর সব কটি গানের চমৎকার পরিবেশনা ফিডব্যাকের। ফিডব্যাকের বাইরে এর কোন অস্তিত্ব নেই। এছাড়া এই অ্যালবামে লাবু রহমানে কন্ঠ গাওয়া "এখন আমি বিদ্রোহী" ও "সুখী মানুষের ভীড়ে" গান দুটি এবং পিয়ারু খানের কন্ঠ গাওয়া হাইলি মেলোডিয়াস "ও আশা" গানটা শুধুই শ্রুতি মধুর নয়, পাশাপাশি গানের সঙ্গীতায়োজন ও উপস্থাপনের ভঙ্গী পুরো ব্যাতিক্রম ও অসাধারণ। (লাবু রহমান ও পিয়ারু খানের কথা আমার এই পোষ্টে অনেক গুলো কারণেই তুলে আনিনি। অন্য কোন পোষ্টে নিয়ে আসব নাহয় ফিডব্যাক এর এই দুই যোদ্ধাকে।)



চিরাচরিত বাংলার আদি সঙ্গীতের একটা বিশাল অংশ জুড়েই রয়েছে বাউল গান ও গরিমা গান। হাছন রাজা, লালন সাঁই, সিরাজ সাঁই, বাউল আব্দুর রহমান বয়াতী এবং শাহ আব্দুল করিম সহ আরো অনেকেই সমৃদ্ধ করে গেছেন এই পুণ্যভূমি। জীবন, প্রেম, ভালবাসা, বিরহ, দেহতত্ত্ব, আলেক দর্শন সহ অনেক ক্ষেত্র সমৃদ্ধ আছে সেইসব গান দিয়ে। মাকসুদুল হক সেই দর্শন পেয়েছিলেন। বাংলাদেশর ব্যান্ড মিউজিকে জনপ্রিয়তার শীর্ষে থেকে শ্রোতাপ্রিয়তা হারাতে পারে জেনেও বানিজ্যিকতার কোন মানসিকতা না রেখে শুধুমাত্র বাংলার ব্যান্ড সঙ্গীত দিয়ে নতুন প্রজন্মের কাছে বাউল গানগুলো পৌছে দিতেই ফিডব্যাক শুরু করে বাউলগান নিয়ে অ্যালবামের কাজ।। ঐ সময়ের আগে ফিডব্যাক ছাড়া বাংলার অন্য কোন ব্যান্ড এত বড় সাহসীকতার পরিচয় দিতে পারেনি।। এই প্রজেক্টের আওতায় প্রথমেই ফিডব্যাক নিয়ে আসে বাংলাদেশের মিউজিকের ইতিহাসে সিঙ্গেল ট্র্যাকের একটি পুরো অ্যালবাম যার এপিঠ-ওপিঠ দুপিঠ জুড়েই শুধু একই গান বাজতে থাকে এবং সেটি গানটি হল বিখ্যাত বাউল সঙ্গীত "মন আমার দেহঘড়ি" এর ফিউশান ভার্সন। দেহঘড়ি শিরোনামের অ্যালবামটিতে ফিডব্যাকের সাথে প্রথমবারের মত পরিবেশনা করে বিখ্যাত বাউল শিল্পী আবদুর রহমান বয়াতী এবং অ্যালবামের স্বার্থে গানের লিরিকে একটু পরিবর্তন আনা হয়।



লিরিকঃ মন আমার দেহঘড়ি

মন আমার দেহ ঘড়ি সন্ধান করি কোন মিস্ত্ররী বানাইয়াছে।

একটি চাবি মাইরা দিছে ছাইড়া জনম ভইরা চলতায়েছে।



হাইস্পিডিং ফ্যাপসা পেচিং লিভার হইলো কলিজায়

ছয়টি বলে আজব কলে দিবানিশি প্রেম খেলায়।



ঘড়ি তিন কাটা বারো জুয়েলে মিনিট কাটা হইলো দিলে

ঘন্টার কাটা হয় আক্কেলে মনটারে সেকেন্ডে দিসে।



কেসটা বত্রিশ চাকের, কল কব্জা বেসুমার

দুইশো ছয়টা হাড়ের জোড়া, বাহাত্তর হাজারও তার।



ও মন, দেহঘড়ি চৌদ্দতলা, তার ভিতরে দশটি নালা,

একটা বন্ধ নয়টা খোলা গোপন একটি তালা আছে।



দেখতে যদি হয় বাসনা চলে যাও ঘড়ির কাছে,

যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে ঘড়ির ভিতর লুকাইছে;



ও মন পর্দার সত্তুর হাজারে তার ভিতলে নড়ে চড়ে

জ্ঞান নয়ন ফুটলে পরে দেখতে পারবা চোখের কাছে;



রহমান বয়াতী বলছে ওরে আমার মনবোকা;

ফিডব্যাকের কর্মদোষে হইল না ঘড়ির দেখা।



যদি ঘড়ি চিনতে পারতাম, ঘড়ির জুয়েল পাল্টাইতাম,

ঘড়ির জুয়েল বদলাইবো কেমন যাই মিস্ত্ররীর কাছে?

মন আমার দেহঘড়ি সন্ধান করি, কোন মিস্ত্রী বানাইছে।



সে-ই শুরু এরপর ১৯৯৬ সালে বাউলদের গান নিয়ে বাংলাদেশের ইতিহাসের প্রথমবারের মত ফিডব্যাক নিয়ে আসে একটা পুরো বাউল অ্যালবাম। এই অ্যালবামের ১০ গানের ভেতর ৯টি গান নেয়া হয় বাংলার বাউল সঙ্গীতের জনপ্রিয় গানগুলো থেকে। আর সেগুলো হলঃ করিমানা, প্রাণকান্দে, গুরুর ভাব, জনম দুঃখী, লোকসান, কেহই করে বেঁচাকেনা, দিবার কিছু নাই, শ্যাম কালিয়া এবং হাওয়া দমে শিরোনামের গানগুলো।। হাওয়াদমে গানটিতে ফিডব্যাকের সাথে পরিবেশনা করেন বাউল সাধক "হিরু-শাহ)। বাদ বাকী ১ টি গান "ধুয়ার দানা" পিয়ারু খানের লেখা গান। বাউলিয়ানা বাংলাদেশের মিউজিকের ইতিহাসের শুধুই একক ও অনবদ্য সংযোজন নয়। এই অ্যালবামটিই একমাত্র অ্যালবাম, যে অ্যালবামটি যারা বাউলগান শুনতো না কিংবা আগ্রহ বোধ করত না তাদেরকে বাউল গানে আকৃষ্ট করেছে। আমি নিজেও তাদেরই দলে পড়ি। মাকসুদুল হক ও এই ফিডব্যাক না থাকলে হয়ত আমি এই অসম্ভব চমৎকার দর্শনের মুখোমুখি হতাম না কখনোই।। এই অ্যালবামটি বাউল ধারার গানগুলোকে নতুন প্রজন্মের কাছে জনপ্রিয় করতে অসামান্য অবদান রেখেছে এবং আজও আমি তা-ই মনে করি।। এবং বর্তমান সময়ে যারা Experiment Music করছেন তাদের সবার আদিতে কিন্তু ফিডব্যাক ও এক মাকসুদুল হক-ই।



বাউলিয়ানা করার পরপরই মাকসুদুল হক করতে চেয়েছিলেন নিজের পছন্দ মত সেইসব গান, যেই গানগুলো সামাজ গঠনের আন্দোলনে ভূমিকা রাখবে, সমাজ সচেতনতায় এগিয়ে আসবে এক একটি গান, দেশ কাল উঠে আসবে প্রতিটি লিরিকে। ঝংকারে ঝরে পড়বে সমস্ত সংকীর্ণ মানসিকতা। প্রতিটি গানের কথায় থাকবে অন্যায্য ও অন্যায়ের এবং নোংরা রাজনীতির বিরুদ্ধে প্রখর প্রতিবাদ, থাকবে নিজের অক্ষমতা, থাকবে স্বদেশ প্রেমের কথা। যেই গান গুনলে সমাজ সচেতন হবে। যেই গান জাতি গঠনে উৎসাহিত করবে তরুণ সমাজকে। নিজেও সামাজিক দ্বায়বদ্ধতা থেকে মুক্ত হবেন কিছুটা। প্রতিবাদ করতে চেয়েছেন গানে গানে।। গলায় গলা মেলাতে চেয়েছিলেন লক্ষ লক্ষ তরুণের কন্ঠের সাথে।। যখন বুঝতে পারলেন ফিডব্যাকে থেকেই এই গানগুলো করার সুযোগ পাববেন না, ঠিক তখনই বাউলিয়ানা করার পরপর ১৯৯৬ সালে ফিডব্যাক ছেড়ে এসে গড়ে তোলেন "মাকসুদ ও ঢাকা" শিরোনামের একটি ব্যান্ড। ঠিক একই সময়ে মাকসুদুল হকের সাথে ফিডব্যাক ছেড়ে চলে আসে বেইজিস্ট সেকান্দর আহমেদ খোকা।। সেকান্দর আহমেদ খোকা এখন অব্দি মাকসুদ ও ঢাকা ব্যান্ডের সদস্য হিসেবে আছেন। ফোয়াদ নাসের বাবু, পিয়ারু খান ও লাবু রহমান এখনো ফিডব্যাকের সাথে জড়িত আছেন।। মাকসুদুল হক ফিডব্যাক ছেড়ে চলে আসার পর ফিডব্যাক আর কখনোই সেই আগের জনপ্রিয়তা নিয়ে দাড়াতে পারেনি। দীর্ঘ বিরতি দিয়ে করেছিলেন ফিডব্যাক ০২ নামের একটি অ্যালবাম। সেই অ্যালবামটিতে ফিচার করা হয়েছিল 'রেশাদ'কে। "আবার মেলায়" শিরোনামে একটি গানসহ সবকটি মৌলিক গান নিয়েও ফিডব্যাক আর দাড়াতে পারেনি। এখন ২০১১ সাল। সময়ের বিবর্তনে অনেকেই জনপ্রিয়তা হারিয়েছে। হারিয়েছে ব্যান্ড মিউজিকে নিজেদের বর্তমান অবস্থান। ফোয়াদ নাসের বাবুর মত শক্তিমান কম্পোজার থাকা সত্বেও লাবু ও পিয়ারু খান নিয়ে ফিডব্যাক'কে হয়ত আগের সেই স্মৃতিচারণা করেই সময় কাটাতে হয়। সেই খবর আমরা কইজনই বা রাখি। অন্যদিকে মাকসুদুল হক হয়েছে নিষিদ্ধ মাকসুদ সেই খবরই-বা কইজনের জানা। বলেছিলাম এই পোষ্টটি হবে ফিডব্যাক, এক মাকসুদুল হক ও তার ঢাকার গল্প নিয়ে। হঠাৎ-ই মনে হল আজ শুধুই ফিডব্যাক ও ফিডব্যাকের এক মাকসুদুল হক'কে নিয়েই থাকুক এই পোষ্টটি। অন্য কোন পোষ্টে নাহয় নিয়ে আসব 'নিষিদ্ধ মাকসুদ' ও তার ঢাকার গল্প।



*ফিডব্যাকের অন্যান্য সদস্য পিয়ারু খান ও লাবু রহমান হয়তবা আমার এই পোষ্টে খুব একটা লাইমলাইটে আসেনি। তবে অন্য কোন পোষ্টে হয়তবা উনাদের মাঝে ফিরে যাব। আমি মনে করি ফিডব্যাক নাম উচ্চারিত হবার সাথে সাথেই ফোয়াদ নাসের বাবু এবং ক্ষ্যাপাটে নিষিদ্ধ মাকসুদুল হক'এর কথা দৃশ্যপটে ভেসে উঠে। তাই এই পোষ্টটি শুধুই ফিডব্যাক ও এক মাকসুদুল হক'এর গল্প হয়ে থাকল।



** তথ্যগত কোন ভুল থাকলে অবশ্যই সেটা হাইলাইট করবেন যেন আমি নিজেকেই সংশোধন করতে পারি।



*** অ্যালবামের প্রকাশকাল সহ কিছু তথ্য নেওয়া হয়েছে মাকসুদ ভাইয়ের অফিসিয়াল ফ্যান পেইজ থেকে

লিঙ্কঃ Click This Link



**** কয়েকটি গানের লিরিক শেয়ার করার লোভ সামলাতে পারছিনা। তাই . . .



শিরোনামঃ চিঠি

কথা ও কন্ঠঃ মাকসুদুল হক

সুর ও সঙ্গীতায়োজনঃ ফিডব্যাক

অ্যালবামঃ উল্লাস



আজ তোমার চিঠি যদি না পেলাম হায়

নাকি ভেবে নেবো ডাকপিয়নের অসুখ হয়েছে

আজ বেলা শেষে যদি খেলা ভাঙ্গে হায়

নাকি ভেবে নেবো আজ আশার মরণ হয়েছে

আমি দিন শেষে যেন রাত্রিতে দেখছি তোমারই মুখ

নাকি তন্দ্রাকে আজ স্বপ্ন ভেবে কেঁদে ভাসিয়েছি আমার বুক



আজ কুসুম কলি ভোরে ঝরে গেলে হায়

আমি ভেবে নেবো আজ আশার মরণ হয়েছে

নাকি বেলা শেষে যদি খেলা ভাঙ্গে হায়

আমি ভেবে নেবো আশার মরণ হয়েছে

তুমি বলেছিলে সেই সন্ধ্যে বেলা

আমি পথ চেয়ে থাকি

সেই পথচলা যদি থেমেই গেলো

কি দায় মোর সর্বনাশী



আজ জীবন-জ্বালা তোর আশায় থাকা হায়

তোর আশা যেন আজ আমি পূরণ করেছি

নাকি ভালবাসা তোর পথ চাওয়া হায়

এই ভালবাসা আজ আমি বরণ করেছি

তুমি বলেছিলে সেই সন্ধ্যে বেলা

আমি পথ চেয়ে থাকি

সেই পথচলা যদি থেমেই গেলো

কি দায় মোর সর্বনাশী



আজ মরণ যদি তোর চরণ তলে হায়

আমি ভেবে নেবো আজ আশার পাওয়া হয়েছে

নাকি বেলা শেষে যদি খেলা ভাঙ্গে হায়

আমি ভেবে নেবো আজ আশার মরণ হয়েছে।







শিরোনামঃ জীবন-জ্বালা

কথা ও কন্ঠঃ মাকসুদুল হক

সুর ও সঙ্গীতায়োজনঃ ফিডব্যাক

অ্যালবামঃ মেলা



তুমি কি মোর জীবন-জ্বালার

শেষ কোন এক গান

না তুমি জোছনা রাতের পূর্ণিমারই চাঁদ

তুমি কি মোর আশা ভাঙ্গার নতুন কোন দিন

না তুমি ভেসে আসা এমন সুরের দিন

তোমাকে ভালবেসে আমি হৃদয় দিয়ে

গেয়ে যাবো আশার গান



এ কোন মিছে আশায় থাকা

আর অকৃতজ্ঞ ভাল লাগা

তোমায় মন জুড়ায় রেখে

আমার রক্ত জীবন শেষে

তোমাকে ভালবেস মন শপেছিলাম

প্রদীপ ভেবে আশা জ্বেলছিলাম

তুমি গাবে জীবনের গান

তুমিতো চাওনি গেতে জীবনেরই গান

না পারো বুঝতে এই শিল্পী মনের প্রাণ

তুমি কি মোর ক্লান্ত দিনের স্তব্ধ কোন ক্ষণ

না তুমি মেঘলা রাতে হারানো এক মন

তোমাকে আপন ভেবে আমি মনের মাঝে

রাখবো বেধে মরণের গান



যায়নি তো তোমার স্বাধীনতা

বুঝিনি গভীর ব্যাকুলতা

আর কোনো আধার অতীত ভুলে

রব নিরব অবশেষে

তোমাকে স্বপ্ন ভেবে আমি ঘুমিয়েছিলাম

প্রহর ভেবে আলো নিভিয়েছিলাম

তুমি গাবে জীবনের গান


লেখক-মোখলেছুর রহমান সজল, ২৮.১০.২০১১
প্রকাশনায়- RaDiO bg24
সবগুলি গান পেতে চাইলে এখানে ক্লিক করুন- https://www.facebook.com/kokbd24

২৮.১০.২০১১
৩০টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার কিছু ভুল!

লিখেছেন মোঃ খালিদ সাইফুল্লাহ্‌, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮

১। ফ্লাস্কে চা থাকে। চা খেতে টেবিলে চলে গেলাম। কাপে দুধ-চিনি নিয়ে পাশে থাকা ফ্লাস্ক না নিয়ে জগ নিয়ে পানি ঢেলে দিলাম। ভাবছিলাম এখন কি করতে হবে? হুঁশ ফিরে এল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×