somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলা চলচ্চিত্রের তিন দশকের বাণিজ্যিক তিনটি ছবির রিভিউ ঃ

১৫ ই আগস্ট, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রিয় ব্লগার বন্ধুদের আজ একসাথে বাংলা চলচ্চিত্রের তিন দশকের তিন ধরনের গল্প নিয়ে মুল ধারার বাণিজ্যিক ছবির তিনটি সুপারহিট ছবির রিভিউ নিয়ে এলাম। এইখানে আমি তিন দশকের বাংলা চলচ্চিত্রের পরিবর্তন এর একটি উদারহন তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। তিনটি ছবির তিন পরিচালক ও কাহিনীকার ,শিল্প ও কলাকুশলী সবাই আমাদের বাংলা চলচ্চিত্রের মেধাবী ও কিংবদন্তী হয়ে আছেন। বর্তমান প্রজন্মের চোখে বাংলা বাণিজ্যিক ছায়াছবির যে ভুল ধারনা আছে আশাকরি সেটা এই পোস্টের মাধ্যমে কিছুটা হলেও ঘুচবে। বর্তমানে যারা ভালো ছবির কথা বলে তথাকথিত বাংলা সিনেম তৈরি করে বর্তমান প্রজন্মকে বিভ্রান্ত করছে এবং বাংলা ছবির ধরন সম্পর্কে ভুল ধারনা পোষণ করতে বাধ্য করছে আশাকরি এই পোস্টের মাধ্যমে সেই সকল ছবি দেখে প্রতারিত হয়ে ফেরা দর্শকরা ভবিষ্যতে সেই সকল তথাকথিত বাংলা সিনেম দেখা থেকে বিরত থাকবেন। আমরা চাই আমাদের চলচ্চিত্রের উন্নয়ন কিন্তু ভুল পথে ভুলভাবে ধাবিত হোক তা চাইনা।

১) ৭০ দশকের জহির রায়হান এর 'টাকা আনা পাই' (পারিবারিক সম্পর্কের টানাপোড়নের গল্প নিয়ে মুল ধারার বাণিজ্যিক ছবি ঃ তৎকালীন জনপ্রিয় অভিনেত্রী ও জহির রায়হান এর স্ত্রী সুচন্দা রায়হান প্রযোজিত, সুচন্দা চলচ্চিত্র সংস্থার প্রথম নির্মিত পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র 'টাকা আনা পাই' নির্মিত হয় ১৯৬৯ সালে। ছবিটির কাহিনী ও চিত্রনাট্য তৈরি করেন জহির আহমেদ, গানের কথা লিখেন - গাজী মাজহারুল আনোয়ার ও আলতাফ মাহমুদ , সঙ্গীত পরিচালনায় ছিলেন আলতাফ মাহমুদ। আনিস ফিল্মস কর্পোরেশন এর পরিবেশনায় ছবিটি পরিচালনা করেন বাবুল চৌধুরী। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান চলচ্চিত্র উন্নয়ন সংস্থায় গৃহীত ও নির্মিত হয় ছবিটি।
কাহিনী সংক্ষেপ - বাবা হানিফ বাবুর্চি (শওকত আকবর) ও মা রওশন জামিলের ছেলে শহীদ (রাজ্জাক) । বাব সহায় সম্বল সমস্ত কিছু বন্ধক রেখে ছেলেকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করেছেন । ওকালতি পাস করিয়েছেন । বাবা এক সময় তাঁর বন্ধু দিন মোহাম্মদ এর মেয়ের সাথে ছেলের বিয়ে দিবেন বলে প্রতিশ্রুতি করেছিলেন । বিষয়টা শহীদ কখনও জানতো না। অন্ধ হয়েও ছেলের জন্য বৃদ্ধ বয়সে বাবুর্চির কাজ করতেন যাতে ছেলের লিখাপড়ার কোন অসুবিধা না হয়। ছেলে ওকালতি পাশ করার পর বাবাকে বাবুর্চির কাজ করতে নিষেধ করেন। বন্ধক রেখে টাকা ধার এনেছিলেন মহাজন আব্দুল্লাহ মিয়া (ইনাম আহমেদ) এর কাছ থেকে। পাওনাদার ইনাম আহমেদ এর তাগাদায় হানিফ বাবুর্চি অতিষ্ঠ হয়ে পড়েন।পাওনা শোধ করতে হবে অথবা তাঁর কুৎসিত মেয়ের সঙ্গে ছেলে শহীদের বিয়ে দিতে হবে । এমন অবস্থায় হানিফ অসুস্থ হয়ে পড়ে। বাবার চিকিৎসা করানোর মতো সামর্থ্য নেই শহীদের। একদিকে বাবার চিকিৎসা অন্যদিকে মহাজনের ঋণ শোধের শর্ত এসব নিয়ে শহীদ চিন্তায় পড়ে যায়। এদিকে শহরের বিত্তশালি খান বাহাদুর এর একমাত্র আহ্লাদি মেয়ের সঙ্গে ঘোটক আলতাফ শহীদের বিয়ে দেয়ার ফন্দি আঁটেন। অসুস্থ বাবাকে বাঁচানোর জন্য খান বাহাদুরের মেয়েকে বিয়ে করে ঘর জামাই হওয়ার শর্তে শহীদ রাজি হয়ে যায়। যার ফলে শহীদ সেই টাকা দিয়ে মহাজনের আব্দুল্লাহ মিয়ার সব ঋণ শোধ করে অসুস্থ বাবার হাতে জমির দলিল ফিরিয়ে দেয়। শহীদের বাবাও সুস্থ হয়ে উঠেন । সুস্থ হয়ে উঠার পর বন্ধুর মেয়ে রানুর সঙ্গে বিয়ে দেয়ার সব ব্যবস্থা করেন কিন্তু বিয়ের দিন শহীদ জানিয়ে দেয় সে আসতে পারবে না এবং এই রানুকে বিয়ের করতে পারবেনা। ওদিকে শহরের খান বাহাদুর এর মেয়ের সঙ্গে বিয়ের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হওয়ার পর বিয়ের আসরে শহীদের অন্ধ বাবা তাঁর বন্ধুকে নিয়ে হাজির হয়। বিয়ের আসরেই শুরু হয়ে যায় পিতা ও পুত্রের অনিবার্য সংঘাত । সেই থেকে শুরু হয় সন্তানের প্রতি এক মমতাময়ী ও অভিমানি পিতা এবং পিতার মমতা বঞ্চিত এক সন্তানের টানাপোড়ন। যে সন্তান পিতার জন্যই কঠিন শর্ত মেনে নিয়েছিল যা তাঁর পিতাকে বলতে পারেনি এবং সবসময় লুকিয়ে পিতাকে সাহায্য করার চেষ্টায় থাকা ব্যকুল এক সন্তানের চিত্র যা একবার দেখলে মনে গেথে থাকবে সবসময়। বারবার দেখতে ইচ্ছে করবে। এই ছবিতে শহীদ আলতাফ মাহমুদ এর কণ্ঠে ছোট্ট একটি গান আছে -

সুনিপুন অভিনয় - এই ছবিতে যারা অভিনয় করেছিলেন তাদের সকলের অভিনয় এক কথায় অসাধারন হয়েছিল। একটি ক্লাসিক ছবির যতগুলো গুনাগুন থাকার দরকার তাঁর সবগুলো ছিল এই ছবিতে। ছবির কেন্দ্রীয় চরিত্র শওকত আকবর ও রাজ্জাক তাদের সেরা শিল্প সম্মত অভিনয় করেছিলেন। এছাড়াও রওশন জামিল, গোলাম মোস্তফা, ইনাম আহমেদ, ব্ল্যাক আনোয়ার ,আলতাফ, দিন মোহাম্মদ, আনিসুর রহমান সকলেই যার যার চরিত্র অনুযায়ী অভিনয় করেছিলেন।


ছবির নায়িকা বা খান বাহাদুর এর আহ্লাদি চরিত্রে ববিতার অভিনয় ছিল মনে রাখার মতো। মা মরা একমাত্র বিত্তশালী পিতার আদুরে মেয়ে যে পিতার অতি আহ্লাদে এখনও মন ও মানসিকতায় একজন কিশোরী রয়ে গেছে। যার শারীরিক গঠন ও বয়স বৃদ্ধির সাথে চিন্তা, মানসিকতার কোন কিছুর পরিবর্তন হয়নি। যার মধ্য স্বামী ও সংসার কি সেই ধারনাটাই আসেনি । একসময় সে বুঝতে চেষ্টা করে,নিজেকে তৈরি করার চেষ্টা করে। স্বামী রাজ্জাক এর সাথে মফস্বলে থাকতে শুরু করে। যা একথায় অসাধারন একটি অভিনয় ছিল। অথচ এই ববিতা ছবির অন্নসকল শিল্পির তুলনায় বয়সে ছোট এবং অভিনয়ে একেবারে নতুন। কিন্তু ছবিতে ববিতার অভিনয় যেন আলাদা একটা শিল্প হিসেবে যুক্ত হয়েছিল।
পিতা ও পুত্রের মান অভিমান। ভুল বুঝাবুঝি সবকিছুর আড়ালে যে চিরায়ত ভালোবাসা ও মমতার শক্ত বন্ধন আছে ছবিতে সেটাই অসাধারন ভাবে ফুটিয়ে তুলেছিলেন জহির রায়হান তাঁর কাহিনী ও চিত্রনাট্য। পরিচালক বাবুল চৌধুরী শুধু সেই অনুযায়ী সুনিপুন নির্দেশনা দিয়েছিলেন। বিদেশি ছবির প্রতিবেদন বা রিভিউ না দিয়ে আমাদের দেশের মাঝেই বাস্তব জীবনের সাথে মিলথাকা শিল্পসম্মত অসাধারন ছবি আছে সেটা বলার জন্যই আমার এই অতি নগণ্য পোস্ট। আশাকরি যা ছবিটি দেখেন নি তাঁরা ছবিটি দেখবেন। যারা আগে দেখেছিলেন তাঁরা আবার দেখবেন কারন এটা যে আমাদের বাংলার গর্ব করার মতো একটি ছবি। বাংলার মানুষের জীবনের কথা বলার একটি ছবি।
২)৮০র দশকের আমজাদ হোসেন এর 'ভাত দে' (আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটের বাণিজ্যিক ছবি) - অভিনেতা, লেখক ও পরিচালক আমজাদ হোসেন বাংলা চলচ্চিত্রকে তাঁর অসাধারণ কিছু ছবি দিয়ে সমৃদ্ধ করেছেন। তেমনই একটি ছবি 'ভাত দে'। শাবানা,আলমগির,রাজিব অভিনীত একটি চমৎকার ও অসাধারণ ছবির নাম 'ভাত দে'। যেখানে একটি গরীব বাউল পরিবার এর সারাজীবন এর কষ্টের চিত্র অসাধারণ ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন আমজাদ হোসেন। গরিব মানুষ যে দু বেলা দু মুঠো ভাতের জন্য কত সংগ্রাম করে আর তাঁদের সেই সংগ্রামের সুযোগে মানুষ রুপি কিছু হায়েনারা তাঁদের স্বার্থ -চরিতার্থের জন্য কত নির্মম হতে পারে তেমনই এক বাস্তবসম্মত হৃদয় ছোঁয়া একটি করুন কাহিনীর নাম 'ভাত দে'। এই ছবিটি দেখে অতি শক্ত ও কঠিন হৃদয়ের মানুষের চোখে জল আসতে বাধ্য। ছবির নির্মাণ শৈলী, সংলাপ, ও অভিনেতা অভিনেত্রীদের দুর্দান্ত অভিনয় মানুষের বিবেক কে নাড়া দিতে বাধ্য।
৭০-৯০ দশকের বাংলা চলচিত্রের সবার প্রিয় শাবানা'র শ্রেষ্ঠ অভিনয়ের অন্যতম সাক্ষী এই 'ভাত দে' ছবিটি । সাথে আলমগির এর পুরো ছবিতে মানুষকে হাসি-কান্না দিয়ে দর্শকদের ছবির শেষ পর্যন্ত ধরে রেখেছেন। আর ছবির গানগুলো নিয়ে বলার কোন ভাষা আমার মত এক 'মহেশ' শ্রেণী মানুষের কাছে নেই।আমজাদ হোসেন এর লিখা ও আলাউদ্দিন আলির সুর ছবির গানগুলোকে অন্য এক উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিল। ছবির শুরুই হয়েছে তপন চৌধুরীর গাওয়া 'কত কাঁদলাম কত সাধলাম আইলায় না'' এর মত একটি অসাধারণ গান দিয়ে। এরপর 'গাছের একটা পাতা ঝরলে, কাছের একটা মানুষ মরলে খবর তো কেউ রাখে না'' যা আমাদের সমাজ জীবনের কথাই বলা হয়েছে। আবার প্রেমের গানের ক্ষেত্রেও ' চিনেছি তোমারে, আকারে প্রকারে, দিনের আলো রাতের আধারে'' এর মত স্মধুর ও নরনারীর ভালোবাসার এক শাশ্বত চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। তবে ছবির অন্যতম চমকপ্রদ গানটা হলো '' তিলে তিলে মইরা জাইমু, তবু তোরে ডাকবো না'' এর মত একটি শক্তিশালী কথার খুব সহজ সুরের শক্তিশালী গাঁথুনির একটি গান। কেউ যদি পুরো ছবি না দেখে তাহলে তিনি শুধু এই গানের চিত্র দেখেই পুরো ছবি দেখার জন্য বাধ্য হবেন । কারন প্রিয় শাবানা যে পুরো ছবির প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত কত দুর্দান্ত অভিনয় করেছিলেন তা ঐ গানের চিত্র দেখেই প্রমাণ পাওয়া যায়। সত্যি কথা বলতে পুরো ছবির 'প্রাণ ভোমরা' ছিল শাবানার হাতে। আর তিনি তা যথাযথ পরিপূর্ণ সদ্ব্যবহার করেছেন। শাবানা ছাড়া অন্য কোন অভিনেত্রী 'জরি' চরিত্রের জন্য উপযুক্ত ছিলেন না এই ব্যাপারে আমি ১০০ ভাগ পরিচালকের কৃতিত্ব দিবো। কারন তিনি সঠিক মানুষের কাছেই ছবির 'প্রাণ ভোমরা' তুলে দিয়েছেন। এই ধরনের একটি কঠিন চরিত্র শাবানা ছাড়া আর কেউ করতে পারবে বলে আমি ব্যক্তিগত ভাবে মনে করিনা। আরেকটি মজার কথা হলো এই ছবিতে শাবানার ছোট বেলার জরি চরিত্রে চমৎকার অভিনয় করেছিলেন আলমগীর এর মেয়ে ও কণ্ঠশিল্পী আঁখি আলমগির। একজন পরিচালক কত শিল্প সম্মত ভাবে মানুষের নিদারুণ সংগ্রাম ও দুঃখ কষ্টের চিত্র অসাধারণ ভাবে তুলে ধরতে পারেন তা আমজাদ হোসেন বুঝিয়ে দিয়েছেন। পুরো ছবি দেখতে বসলে কতবার যে মানুষের চোখের কোণে জল টলমল করবে তা না দেখে বুঝবেন না। সেই খুব ছোট বেলায় ছবিটি হল বসে দেখেছিলাম সপরিবারে। সেদিন দেখেছিলাম হল থেকে বেরনোর সময় শাবানার জন্য মানুষের সহানুভূতি ও কান্না। একজন শিল্পীর এর চেয়ে আর বড় পাওয়া কি হতে পারে?

৩) ৯০ দশকের শহিদুল ইসলাম খোকনের 'টপ রংবাজ' (পুরোপুরি বাণিজ্যিক) ঃ- ঢাকা শহরের নিম্নমধ্যবিত্ত এক সংসারের অল্পশিক্ষিত একটি ছেলের নাম ''নাসির''। সংসারে এক পরিপূর্ণ আদর্শ বাংলার গৃহিণীর মতো এক স্ত্রী শাহানা ছাড়া আপনজন বলতে আর কেউ নেই। তাঁদের অর্থের অভাব ছিল, ছিল দীর্ঘদিন নিঃসন্তান থাকার যাতনা কিন্তু স্বামী স্ত্রী র মাঝে ভালোবাসার কোন কমতি ছিলনা, ছিলনা সংসারে কোন অসুখ। তাঁদের ৮ বছরের খুব সুখের সংসারে কোন সন্তান ছিলো না। এই নিয়ে নাসির এর মনে কষ্ট থাকলেও স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসা বেশী ছিল বলে সেই কষ্ট কখনও স্ত্রীর সামনে প্রকাশ করতো না। কিন্তু নারীর মন সব সময় একটি সন্তান এর জন্য ব্যাকুল থাকে শাহানাও এর ব্যতিক্রম নয়। তাই সে প্রায়ই পীর ফকির এর কাছে যেত দোয়া নেয়ার আশায়।
ওহ ভালো কথা ! নাসির পেশায় বাংলাদেশ শুটিং ফেডারেশন এর একজন 'সিকিউরিটি'। শুটিং এ তাঁর হাতের নিশানা খুব দুর্দান্ত ছিল বলে ফেডারেশন এর চেয়ারম্যান এর বিশেষ অনুমতি সাপেক্ষে ফেডারেশন এর অনুশীলন কক্ষে অনুশীলন করার সুযোগ পেতো। সেখানে একদিন তাঁর হাতের নিশানা দেখে ঢাকা শহরের একজন জুয়েলারী ব্যবসায়ী তাঁর দোকান এর নিরাপত্তার জন্য মাসিক ৪০০০ টাকা বেতনে যোগ দেয়ার জন্য প্রস্তাব দেয়। যা ছিল তাঁর বর্তমান বেতনের তিন গুন। এইভাবেই মোটামুটি সুখেই যাচ্ছিল তাঁদের সংসার।
একদিন পীরের দোয়া ও শাহানার আল্লাহর উপর অগাধ বিশ্বাস করে ধৈর্যের পুরস্কার স্বরূপ এর অবশেষে শাহানা গর্ভধারণ করে। সেই সময় একদিন তাঁর বর্তমান কর্মস্থল জুয়েলারি দোকান এর ম্যানেজার নাসির এর স্ত্রী অসুস্থের মিথ্যে সংবাদ দিয়ে নাসির কে কিছু সময়ের জন্য বাসায় যাওয়ার অনুমতি দেন। কিন্তু নাসির ঘরে গিয়ে তাঁর স্ত্রীকে সুস্থ দেখে বুঝতে পারে যে ম্যানেজার তাঁকে মিথ্যে খবর দিয়ে বাসায় পাঠিয়েছে। নাসির পুনরায় দোকানে ফেরত যায় তবে ইতিমধ্যে তাঁর অনুপস্থিতিতে দোকানে স্বর্ণডাকাতির একটি ঘটনা ঘটে যায় যার জন্য নাসির কে সন্দেহবশত পুলিশ গ্রেফতার করে নিয়ে যায় । কিন্তু নাসির ঠিকই বুঝতে পারে যে এখানে ঐ ম্যানেজার এর হাত আছে যে তাঁকে মিথ্যে ফাঁসিয়ে দিয়েছে। কিন্তু দোকানের মালিক তা বিশ্বাস করেনা। নাসির গ্রেফতার হওয়ার কয়েকঘণ্টারমাঝেশহরের অপরাধ জগতের এক ডন স্বেচ্ছায় নাসির কে জামিনে মুক্ত করে আনে যা নাসির ছাড়া পাওয়ার পর জানতে পারে। সেই ডন একসময় নাসির কে শুটিং ক্লাবে অনুশীলনের সময় নাসির এর দুর্দান্ত নিশানা দেখে তাঁর নজরে পড়ে। সেই ডন তাঁর ব্যক্তিগত নিরাপত্তার জন্য নাসির কে কাজে লাগাতে চায় এই স্বার্থে তাঁকে জামিনে মুক্ত করে আনে। থানা থেকে বের হয়েই ডন নাসির কে তাঁর জেলে যাওয়ার পেছনে যে ম্যানেজার আছে তাঁকে খুন করতে বলে যে ম্যানেজার অপরাধ জগতের শীর্ষ আরেকজনের লোক যার সাথে ডন এর চরম বিরোধ রয়েছে। নাসির ডন এর নির্দেশে প্রতিশোধ নিতে ঐ ম্যানেজার কে খুন করতে যায় কিন্তু নাসির গুলি করার আগেই ডন এর লোকেরাই ম্যানেজার কে গুলি করে হত্যা করে যা ছিল সৎ ও সাহসী নাসির কে কব্জায় আনার একটি কৌশল। খারাপ পথে পা বাড়ানোর জন্য স্ত্রী শাহানার সাথে নাসির এর দূরত্ব তৈরি হয় । একদিন ঘরে ফিরে নাসির দেখে তাঁর ভালোবাসার প্রাণ প্রিয় স্ত্রী তাঁকে ঘৃণা করে চলে গেছে। নাসির স্ত্রীকে ফিরিয়ে আনার জন্য ডনের কাছ থেকে মুক্তি পেতে যায় কিন্তু ঐ মুহূর্তেই ডনের বিরোধী পক্ষের লোকেরা ডন কে হত্যার উদ্দেশ্য আক্রমণ করে । প্রথমবার নাসির এর বিচক্ষণতা ও সাহসী কতার ফলে ডন বেঁচে গেলেও শেষ রক্ষা হয়নি ,ঐ আততায়ীদের সম্মিলিত আক্রমণের ফলে ডন গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুবরন করে। আর অপরাধ জগতের শীর্ষব্যক্তি ডন এর শূন্যস্থান পূরণ করতে ডন এর আসন গ্রহণ করে সেই সৎ , সাহসী, নির্লোভী ও ভালোবাসার স্ত্রী হারানো যুবক নাসির যাকে সবাই 'টপ রংবাজ '' নামে চিনতে শুরু করে। তারপর...........? না ! আর বলবো না, এরপরের গল্পটি শুধুই এক দুর্ধর্ষ 'টপ রংবাজ'' এর নিষ্ঠুর পরিণতির গল্প যা জানতে হলে দেখতে হবে -


আরও যা বোনাস পাবেনঃ- ''টপ রংবাজ'' এর কাহিনী দেখতে গেলে উপহার স্বরূপ পাবেন বাংলা ছায়াছবির সুরের যাদুকর ও একাধিকবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রাপ্ত যাদুকর আলম খান এর মিষ্টি মধুর সুরের কিছু গান । যার মধ্য '' তুমি থাকলে কাছে ,এতো মধুর লাগে, মনে হয় পৃথিবীতে আছি বেঁচে'' ছিল সেই সময় টেলিভিশন ও রেডিও কাঁপানো গান।
আরও পাবেন সোহেল রানা, শাবানার একজনের প্রতি আরেকজনের অগাধ ভালোবাসা ও নীতিগত দ্বন্দ্বমুখর অসাধারণ অভিনয়। হুমায়ূন ফরিদীর মতো একজন অতি ভয়ানক ও কুট কৌশলী মানুষের দেখা পাবেন, তবে ঘাবড়ানোর কিছু নেই! ফরিদী আপনাদের কোন ক্ষতি করবেনা বরং দিবে ১০০% আনন্দ । আরও পাবেন রাস্তার গরীব এক পরোপকারী রুবেল নামের এক এতিম তরুণ যে মারামারিতে অনেক দক্ষ আর মারামারি করাই তার অভ্যাস। আরও পাবেন দুষ্ট এক বস্তিবাসী তরুণী চম্পাকে ।
ধুর ররররররররররর যা! সবকিছু বলে দিচ্ছি কেন? না এখানেই শেষ করছি, আপনাদের মন চাইলে দেখবেন! দেখলে পরিপূর্ণ বিনোদন পাবেন এইটুকু বলতে পারি। আর না ইচ্ছে হলে দেখবেন না! আমার কি? নিজেই পরে না দেখার যন্ত্রণায় পুড়বেন !
খোদা হাফেজ!!!!!!!! টা টা... বাই......বাই...। আবার যেন দেখা পাই!!!!!
এমন আরও অনেক কিছু জানতে সবসময় একটি শিক্ষিত রেডিও এর সঙ্গেই থাকুন ।
১৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×