বর্ষীয়ান আওয়ামী নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত পরপারে চলে গেলেন। তিনি নিঃসন্দেহে উপমাদেশের একজন বিখ্যাত পার্লামেন্টেরিয়ান ছিলেন এবং দেশের সবচেয়ে সিনিয়র রাজনীতিবিদের মধ্যে একজন। ব্যক্তিগত ভাবে আমি আওয়ামী ঘরোয়ানা রাজনীতির খুব একটা সমর্থক না হলেও তার মত ঝানু রাজনীতিবিদকে ভক্তির চোখে দেখি।
বাবু সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত সুনামগঞ্জের একটি আসন থেকে বেশ কয়েক বার পার্লামেন্ট সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত আর বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী পার্লামেন্টে বক্তৃতা দিতে দাড়ালে পার্লামেন্টের চেহারাই পাল্টে যেত, টেলিভিশনের সামনে বসা দর্শকদেরও শরীর গরম হয়ে যেত। তারা একজনের পরে আরেকজনের ফ্লোর পাওয়া যেত অঘোষিত রেওয়াজ হয়েগিয়েছিল। দুইজনেই ছিলেন অসম্ভব মেধাবী, আইনজ্ঞ। দুইজনেই আজ ভিন্ন ভিন্ন কারনে পরলোকগত। সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী যুদ্ধাপরাধের মামলায় জেলে বন্দি হয়ে যাওয়ায় নবম পার্লামেন্টে তাদের দুজনের দ্বৈরথ দেখা থেকে দেশবাসী বঞ্চিত হয়, যদিও কিছুদিন দেখেছিল। ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রনব মুখার্জীর ঘনিষ্ঠ বন্ধু হওয়া সহ ভারতীয় রাজনীবিদদের সাথে সখ্যতা থাকায় বাংলাদেশের একাংশ মানুষের ধারনা ছিল সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত আওয়ামীলীগের ভারতীয় লবি মেইনটেইন করেন। অন্যদিকে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বাবা পাকিস্থানের স্পীকার বা ক্ষনকালের রাষ্ট্রপতি হওয়ার সুবাধে বাংলাদেশের একাংশ ও ভারতীয় কতৃপক্ষ মনে করত সালাউদ্দিন কাদেরের সাথে পাকিস্থানের আইএস আইয়ের সখ্যতা আছে। সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত সারাজীবন খালেদা জিয়াকে কথার চাবুকে রক্তাক্ত করেছেন, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীও শেখ হাসিনাকে নিয়ে বিদ্রুপ করেছেন। সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ কে নিয়ে অনেক বিতর্কিত বক্তব্য দিয়েছেন, বিভিন্ন কারনে বিতর্কের সৃষ্টি করে তুমুল সমালোচিত হয়েছেন। সংবিধানের যে বিতর্কিত পঞ্চদশ সংশোধনের মাধ্যমে কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা বাতিল করা হয়েছিল, যার থেকে বাংলাদেশের রাজনৌতিক সংকটের শুরু সেই সংশোধন কমিটিরও প্রধান ছিলেন বাবু সেনগুপ্ত। ৫৫ বছরের রাজনীতির জীবনে মাত্র একবার মন্ত্রী হয়েছিলেন কিন্তু দুর্নীতির অভিযোগে কালো বিড়ালের তকমা পেয়ে মন্ত্রীত্ব থেকে তাকে ইস্তফা দিতে হয়েছিল। এতকিছুর পরেও তিনি যে বর্নাট্য রাজনৈতিক জীবন রেখে গেছেন, তার জন্য তিনি বেচে থাকবেন অনেকদিন।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৪৬