somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শাহবাগ জার্নাল

২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১২:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ধর্মকর্ম সম্পর্কে আমার জ্ঞানের পরিধি খুবই কম ।জন্মসূত্রে মুসলমান হওয়ার দরুন পিতা-মাতা বা পরিবারের অন্যান্যদের কাছে ধর্ম সম্পর্কিত যে অল্পবিস্তর জ্ঞান পেয়েছি এই আমার সম্বল।সত্যি কথা বলতে কি ধর্ম নিয়ে স্বতন্ত্র কোন মতবাদ প্রতিষ্ঠিত করবার মতো প্রজ্ঞা বা জ্ঞান কোনটাই আমার নেই ।আমি ব্যক্তিগতভাবে সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাস করি এবং এর পেছনে যুক্তিটা অনেক বেশী সাধারন।একটি প্রতিষ্ঠিত মতবাদকে ভেঙ্গে তার উপর নিজস্ব যুক্তি স্থাপন করতে পারে যারা তাদেরই আসলে নাস্তিকতা মানায় নচেৎ নিতান্তই আর পাঁচ জনের দেখাদেখি নিজেকে নাস্তিক দাবী করাটা কেউ যদি স্মার্টনেস মনে করে সেক্ষেত্রে তাকে এই সারমর্মহীন বেঁচে থাকা না থাকার যাঁতাকলে পিষ্ট হওয়া ছাড়া অন্যকোন গত্যন্তর থাকেনা।



আমি এই দ্বিধা-দন্দকে ভয় পাই, কোন একটি মতবাদ যদি কারো অনিষ্ট করতে না শেখায় আমি সেই মতবাদ কে সমর্থণ এবং শ্রদ্ধা করি । তবে সেখেত্র্রে নিজের অবস্থানটা অনেক বেশী স্পষ্ট তা হলো ধর্মের যে বিষয়গুলোর সাথে একমত হতে পারিনা আলগোছে সেগুলোকে পাশ কাটিয়ে চলে যাই ।আমার এক বন্ধু একদিন মজা করে বলেছিলো যে ধর্ম এবং লুঙ্গী এই দুই’টা তুলে যে কোন তর্কে যাওয়াটাই বিপজ্জনক । কেননা দু’পক্ষের মানুষের পন্থায় চরম পর্যায়ের, সবাই কোন বিষয় সম্পর্কে একে অপরের চোখ খুলে দেবার পরিবর্তে নিজের বিশ্বাসকে অপরের ওপর চাপিয়ে দেয়ার ঘৃন্য বাক যুদ্ধে লিপ্ত হয় । কখনো কখনো যেটি বাকযুদ্ধের গন্ডী পেরিয়ে জঘন্য রক্তারক্তি ও খুনোখুনির পর্যায়ে চলে যায় ।বিগত কয়েক বছরে আমি যেটির বেশ কয়েকটি নজির দেখেছি ।



সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা শাহবাগ চত্ত্বরের গনজাগরন। ছোট্র একটি জায়গা থেকে শুরু হওয়া হাজারো মানুষের দাবী আদায়ের মিছিল এখন আর শুধু শাহবাগের প্রজন্ম চত্ত্বরেই সীমাবদ্ধ নেই তা ছড়িয়ে গেছে বাংলাদেশের প্রতিটি কোনায় কোনায় । সময়ের সাথে সাথে আন্দোলনের জোয়ারকে অনেক রাজনৈতিক গোষ্ঠি তাদের নিজের দিকে নেবার চেষ্টা করেছে, আবার কোন কোন গোষ্ঠী এটিকে নস্যাৎ করবার জন্য একের পর এক ঘৃন্য ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। এ্ই দুইয়ের লড়াইয়ের মাঝখানে স্যান্ডউইচের টিকিয়া হয়ে পিষ্ট হচ্ছে আমাদের মতো আমজনতা । সাম্প্রতিক সময়ে ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দার হত্যাকান্ড হঠাৎ করেই যেনো আমাদের ভেতরের ধর্মীয় চেতনাকে বারুদের মতো জাগিয়ে তুলেছে ।বিভিন্ন অনলাইন ব্লগ, সামাজিক যোগাযোগের সাইটগুলোতে একের পর এক ধর্মীয় পোষ্ট দেখে আমি নিজেই দ্বিধাদন্দের মধ্যে পড়ে গেছি যেনো এই একটি মৃত্যুই আমাদেরকে স্বরন করিয়ে দিয়েছে যে আমরা মুসলমান ।তাইতো রাজীবের মৃত্যুর পর চিরাচরিত হুজুগে বাঙ্গালীর মতো নিজের সমস্ত বিশ্বাস চেতনাকে বলি দিয়ে শাহবাগ আন্দোলনকে নাস্তিকদের আন্দোলন বলে অভিহিত করে তথাকথিত ধর্ম ব্যবসায়ী/কসাইদের প্রতি সহানুভূতি জানাতে আমাদের বিবেকে একটুও বাঁধছে না ।



গত কয়েকদিন ফেসবুকে অনেক নব্য ধার্মীক মুসলমানকে দেখছি রাজীবের হত্যাকে যৌক্তিক এবং রীতিসিদ্ধ করবার জন্য কোমরে গামছা পেঁচিয়ে নেমেছেন ।আমার পরিচিত একজন বড় ভাই যিনি শাহবাগ প্রসঙ্গ নিয়ে পক্ষ-বিপক্ষের মাঝখানে দোল খাচ্ছিলেন, যখন তিনি জানতে পারলেন যে ব্লগার রাজীব একজন নাস্তিক ছিলেন, তিনি বেশ আক্ষেপের সুরেই বললেন “ইস যদি রাজীবকে হত্যা করতে প্রথম কোপটা নিজ হাতে দিতে পারতাম!। যেনো একজন নাস্তিককে হত্যা করতে পারলেই একজন মুসলমান হিসেবে পাকাপোক্তভাবে ঈমানদারের তকমাখানা ললাটে লেপন করতে পারতেন । শুধু একজন নয় এই চিত্র এখন আমাদের বেশ বড় অংশের মানুষের ভেতর, ধর্মের অনুশাসন পালনের বেলায় আমরা য্তই পিছপা হইনা কেন, ঘুষ খাওয়া, দুর্নীতি করা থেকে শুরু করে যাবতীয় নষ্টামীতে ধর্মকে উহ্য রাখতে আমাদের একটুও বাধেনা,নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য একজন মুসলমান ভাইকে খুন করার সময়ও আমাদের খেয়াল থাকেনা আমরা মুসলমান।একজন নাস্তিককে হত্যা করাতেই আমাদের মুসলমানিত্ত্ব, বিধর্মীদের প্রার্থনালয়ে আগুন দেয়াতেই আমাদের মুসলমানিত্ত্ব, হিন্দু নারীকে গনিমতের মাল বলে উপুর্যপুরী ধর্ষণেই আমাদের মুসলামানিত্ত্ব, রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধি করতে মসজিদের জায়নামাজে আগুন দেওয়াতেই আমাদের মুসলমানিত্ত্ব । আমি জানিনা শান্তির ধর্ম বলে পরিচিত ইসলাম সময়ের সাথে সাথে শুধুমাত্র নাস্তিকদের ধরে ধরে হত্যা করা কিংবা দেশ ও দশের প্রয়োজনের সময় মসজিদের দরজা জানালা বন্ধ করে তজমী গোনাকেই একমাত্র অনুশাসন বলে স্থির করেছে কিনা ।যদি তাই হয়ে থাকে তাহলে আমি সেই পুরোনোকেই আঁকড়ে ধরে পড়ে রইলাম ।



রাজীবকে আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনিনা, সে আস্তিক কি নাস্তিক ছিলো এ্ই প্রশ্ন আমার কাছে নিরর্থক । আমি রাজীবকে চিনি গনমানুষের একজন হিসেবে যে আমাদের সো কলড বু্‌দ্ধিজীবিদের মতো চারদেয়ালে মাঝখানে বসে হাজারো মানুষের জাগরনকে যুক্তি দিয়ে উপর্যুপূরী মুন্ডুপাত করেনি বরং আমাদের মানচিত্র, পতাকাকে কলংকমুক্ত করবার সংগ্রামে আপোষহীনতার পরিচয় রেখেছে ।সুতরাং যে সমস্ত মানুষ রাজীবকে নাস্তিকতার প্লাকার্ডে ঝুলিয়ে অবিরাম প্রশ্নবিদ্ধ করছে, তাদের নিজেদের জাতীয়তা অবশ্যই প্রশ্নবিদ্ধ ।এ্ই মাটি কোন বিশেষ ধর্মের বা গোষ্ঠীর রক্তের অবদান নয় ।এ্ই মাটি বাংলার কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র, চাকুরীজিবী মুটে, মজুর, কুলি ,সবোর্পরি দেশের আপারমর জনসাধারণের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত । ইদানিং সকল ধর্ম কিংবা বিশ্বাসের উর্ধ্বে “মানুষ” শব্দটা আমাকে অনেক বেশী ভাবায় ।আমি জানিনা দেশের ধর্মপ্রান মুসল্লীগন আমাকে কাদের কাঁতারে ফেলবেন, আমি বিশ্বাস করি “ মানুষের জন্য ধর্ম, ধর্মের জন্য মানুষ নয়” ।

---সংগ্রহ
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×