যদি তুমি আমাকে ভুলে যাও-
মূল : পাবলো নেরুদার সাড়া জাগানো কবিতা
Si tú me olvidas (Spanish)
If You Forget Me (English)
ভাষান্তরঃ রহমান লতিফ
-------------------------
আমি তোমাকে,একটা বিষয়
জানাতে চাই।
তুমি জানো তা কিভাবে !
আমি যদি ওই স্বচ্ছ চাঁদটার দিকে তাকাই,
আমার জানালায়,ধীর শরতের লাল শাখায়,
আমি যদি স্পর্শ করি,
আগুনের কাছে পড়ে থাকা
স্পর্শাতীত ছাই
অথবা
কুঁচকে যাওয়া কাঠের গুঁড়ি,
সবকিছুই আমাকে টেনে নিয়ে যায় তোমার পানে,
যেন সবকিছুই যা অস্তিত্বময়,
সুরভিসম্ভার, আলো,ধাতকসমূহ,
ছোট্ট নৌকাগুলোর যা ছিল পাল,
ছুটে যায় আমার প্রতীক্ষারত; তোমার দ্বীপপুঞ্জেরই পানে।
বেশ,ভালো তবে এখনই,
যদি একটু একটু করে তোমার ভালোবাসাবাসি থেমে যায়
তবে'তো আমার ভালোবাসা রুদ্ধ হবে একটু একটু করে।
যদি হঠাৎ
তুমি ভুলে যাও আমায়,
আর নাই'বা খুঁজো !
এই মনে করে,আমিতো ভুলেই গেছি তোমায়।
তুমি যদি ভাবো এটা দীর্ঘয়িত এবং পাগলামী,
উড্ডীন ঝাণ্ডার মধ্য দিয়ে বয়ে যায় আমার জীবন,
এবং তুমি যদি সিদ্ধান্ত নাও
আমাকে হৃদয়ের এই তটরেখায় ফেলে যাবে,
যেখানে গেঁড়েছি আমার শেকড়
মনে রেখো, সেদিন
ওই সময়
আমি আমার দূ বাহু উত্তোলন করব
আমার শেকড় যাত্রা শুরু করবে
অন্য কোনও ভূমণ্ডলের খুঁজে,
কিন্তু
যদি প্রত্যেকদিন
প্রতি ঘন্টায়,
যদি তুমি অনুভব করো,উপভোগ্য মাধুর্যে,
তুমিই আমার নির্ধারিত নিয়তি,
যদি প্রতিদিন একটি ফুল
তোমার ঠোঁটের মধ্যে আমাকেই অন্বেষণ করে,
আহ ! প্রেম আমার, আহ ! আমার একান্ত আপনজন,
আমার মাঝে বারবার প্রজ্বলিত হয় সেইসব আগুন
এই আমার কোন কিছুই নিঃশেষ হয়নি অথবা হয়নি বিস্মৃত।
আমার ভালোবাসা পুষ্টি যোগাবে তোমার ভালোবাসকে, প্রিয়তমা,
আর যতদিন তুমি তা নিয়ে বেঁচে থাকবে ; এই দেহমন আমাকে পরিত্যাগ না করে
তোমার বাহুবন্ধনে থাকবে।
---------------------------------------------------------------------------------------
ফুটনোট ---- পাবলো নেরুদা (১৯০৪-১৯৭৩) সাম্যবাদী কবি, কূটনীতিবিদ ও রাজনীতিবিদ। দক্ষিণ আমেরিকার প্রশান্ত মহাসাগরের উপকূলে স্বাধীন দেশ চিলিতে জন্ম। নেরুদার আসল নাম নেফতালি রিকার্দো রেয়েজ বেসোয়ালতো।
ছদ্মনাম সব দেশে বিশিষ্ট কবি সাহিত্যিকদের মধ্যে আমরা দেখি। যেমন উপমহাদেশে লেখকের মধ্যে বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছদ্মনাম ছিলো 'ভানু সিংহ’ আর খ্যাতিমান লেখক প্রমথ চৌধুরী ‘বীরবল’ ছদ্মনামে লিখতেন তবে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের একের অধিক ছদ্দনামে লিখতেন, ' নীল লোহিত ,নীল উপাধ্যায়, সনাতন পাঠক। এমন আরো অনেকেই। যখন কিশোর নেরুদার সাহিত্যে হাতেকড়ি, তখনকার সময়ে চেকোশ্লোভাকিয়ায় ইয়ান নেরুদা বলে একজন বিখ্যাত লেখক ছিলেন। তার নামেই ছদ্মনাম গ্রহণ করে নিজের নাম রাখেন পাবলো নেরুদা। পাবলো নেরুদা প্রথমে তাঁর ছদ্মনাম হলেও পরে নামটি আইনি বৈধতা পায়। ছদ্মনাম গ্রহণের যুগের রীতি ছাড়াও নেরুদার অন্য কারণ ছিল। তিনি কঠোর মনোভাবাপন্ন পিতার কাছ থেকে তাঁর কবিতাগুলি লুকিয়ে রাখতেন। তার পিতার চাওয়া ছিলো পুত্র কোনো "ব্যবহারিক" পেশা গ্রহণ করুক। কিন্তু তিনি তা মেনে নেননি । নেরুদার প্রথম কবিতার বই Twilight Book পাঠক সমাজে তেমন কোন সাড়া জাগাতে পারেনি। বলা হয় প্রেম জীবনকে দেয় ঐশ্বর্য, মৃত্যুকে দেয় মহিমা আর কবিকে কি দেয়? প্রেম কবিকে দেয় তীক্ষ্ণ অন্তদৃষ্টি যার আকুতি আকৃষ্ট করে পাঠকের হৃদয়ে। নেরুদার জীবনে প্রেম হয়ে এলেন সুন্দরী আলবার্তিনা। যদিও নেরুদা দীর্ঘদিন পরিচয় গোপন রেখেছিলেন। নেরুদার সেই প্রেমের নদী তীরে ভীরে নি। অল্পদিনের মধ্যেই দুজনের সম্পর্ক ভাঙন ধরে । জীবনে প্রেয়সী আলবার্তিনাকে হারিয়ে তাকে অমর করে রেখেছেন তার অসাধারণ সব প্রেমের কবিতায়। এই কবিতাগুলা নিয়ে ১৯২৪ সালে বিশ বছর বয়েসে প্রকাশিত হল Twenty Love poems. আর তা প্রকাশিত হতেই চারদিকে জয় জয়কার । কবিতার প্রচলিত ধারাকে অনুসরণ করলেও এর আঙ্কিক,ভাব ও ভাষায় নিয়ে এলেন পরিবর্তন। আনন্দ-বেদনার সুরের মূর্চ্ছনায় পরিস্ফূট কবিতা সহজেই পাঠকের অন্তরকে স্পর্শ করে। নেরুদার সাহিত্যকর্মের ভিন্ন প্রকাশ শৈলী ও ধারার সমাবেশের ফলে তাকে বিংশ শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ও প্রভাবশালী লেখক মনে করা হয়।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জুলাই, ২০১৯ রাত ১০:২৫