somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

লাখো 'কণ্ঠে' সোনার বাংলা, ইবনে সিনা এবং পদদলিত দেশপ্রেম

২৭ শে মার্চ, ২০১৪ দুপুর ১২:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গতকাল (২৬শে মার্চ, ২০১৪) ছিল বাঙালিদের জন্য এমনিতেই এক বিশেষ দিন, সাথে তাকে আরও বিশেষ করার উদ্দেশ্যে সরকার “লাখো কণ্ঠে সোনার বাংলা” নামের এক বিশ্বরেকর্ড গড়ার অনুষ্ঠানের আয়োজন করে জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে। অন্য সবার মত আমিও খুবই উৎসাহ বোধ করেছিলাম এমন এক বিশ্বরেকর্ডের অংশ হতে এবং হয়েছিলামও। অন্য সবার সাথে এক হয়ে গলা মিলিয়ে “আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি...” গেয়েছি। কিন্তু শেষমেশ আশাহত হয়ে ফিরে আসলাম, তবে সেটা হল চরম মাত্রায় বাজে ম্যানেজমেন্টের জন্য। এতগুলো মানুষ একসাথে একটা জায়গায় জড় হবে সেটা সামলানোর জন্যও তো একটা ভাল ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের দরকার ছিল কিন্তু সেখানে তা ছিল আমার মনে হয় না, শুধু আমার কেন, ওখানে যারা গিয়েছিল কারোরই মনে হবে না।



সকাল থেকেই জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডের বিভিন্ন গেট দিয়ে মানুষ ঢুকতে শুরু করেছিল আর তখন থেকেই চরম মাত্রায় ধুলা উড়ছিল। ম্যানেজমেন্ট কি পারত না আগের রাতে সে এলাকাটায় পানি ছিটিয়ে দিতে যাতে করে ধুলা না ওড়ে? পারত, কিন্তু করেনি কারন তাড়া বড় বড় ব্যাপার নিয়ে মাথা ঘামান তো, তাই এইসব ছোট খাটো ব্যাপার তাদের মাথায় রাখার সময়ই পান না। তারপর বিভিন্ন গেট দিয়ে ঢোকার পর কে কোনদিকে অবস্থান নিবে তা নিয়ে এক ভোগান্তি। প্যারেড গ্রাউন্ডের ভেতরে অবস্থান করা প্রত্যেক মানুষই একটা করে ব্যাগ পাওয়ার কথা ছিল যেখানে একটি পতাকা, জুস, জাতীয় সঙ্গীতের কথা সংবলিত একটা কার্ড এবং কিন্তু ঔষধ থাকার কথা কিন্তু দুর্ভাগ্যবসত বেশিরভাগ মানুষই ‘কেন যেন’ সে ব্যাগ পায়নি। সবশেষে যখন সবাই মিলে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া হল তারপর বের হওয়ার সময় আরেক ভোগান্তি, কে কোনদিক দিয়ে বের হবে তার কোন ঠিক ঠিকানা নাই, মহিলারা পড়েছিল চরম ভোগান্তিতে। আর খুব ‘মজার’ একটা ব্যাপার লক্ষ্য করেছিলাম বের হওয়ার সময়, সেটা হল অনেকেই তাদের হাতে থাকা কাগজের পতাকা ছুড়ে ফেলছিল মানুষের চলার রাস্তায় আর সমানে সবাই সেগুলকে পদদলিত করে চলে যাচ্ছিল। আমার চোখে পড়া মাত্রই আমার বন্ধু ফুয়াদকে দেখাই আর সে সেগুলো রাস্তা থেকে তুলে তুলে আরেক দিকে রাখতে শুরু করে। হায়রে আমাদের কমনসেন্স, লাখো কণ্ঠে সোনার বাংলা গেয়ে আমরা লাখো পায়ে পদদলিত করলাম আমাদের জাতীয় পতাকাকে। আহ! কত সম্মান কত সম্মান। এত সম্মান আর এত দেশপ্রেম কই রাখি?!



গত কিছুদিন ধরেই অনলাইনে ঝড় চলছিল জামায়াতে ইসলামীর সাথে সম্পৃক্ত ইসলামি ব্যাংকের দেয়া টাকা “লাখো কণ্ঠে সোনার বাংলা” ক্যাম্পেইনে ব্যাবহারের ব্যাপারে, যদিও সরকারের দুই নেতা দুইরকম কথা বলছিল সে টাকা কোথায় ব্যাবহার হবে তা নিয়ে। আদৌ সে অর্থ কি গতকালের ক্যাম্পেইনে ব্যাবহার করা হয়েছে কি না আমার জানা নাই, তবে জামায়াতে ইসলাম কিন্তু সে ক্যাম্পেইনে ছিলই কিন্তু একটু অন্যভাবে। কিভাবে? গতকাল প্যারেড গ্রাউন্ডে সাধারণ মানুষের মধ্যে যে খাবারের প্যাকেট বিতরন করা হয়েছিল সেটাতে দুটা ঔষধও ছিল, একটা ইউনিস্যালাইন ও একটা ট্যাবলেট ‘সিনাপল’ আর এই দুইটাই হল ইবনে সিনা ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেডের তৈরি। ইবনে সিনা ফার্মাসিউটিক্যাল হল ইসলামি ব্যাংকের স্পন্সর শেয়ার হোল্ডার যারা আমাদের স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী জামায়াতে ইসলামীর সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। যেহেতু খুব ক্ষুদ্রভাবে ছিল, তাই অনেকের চোখই সে ব্যাপারটা এড়িয়ে গিয়েছিল। আমার প্রশ্ন হল, দেশে কি আর কোন ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি নাই যারা ওরস্যালাইন আর পেরাসিটেমল ট্যাবলেট বানায়? অবশ্যই আছে, স্কয়ার আছে, ইন্সেপ্টা আছে। এদের কাছ থেকে কি এইসব ঔষধ কেনা যেত না? আমার নিজেরই মাঝে সন্দেহ হয়, আমরা আমাদের ভেতরের দেশপ্রেম বেঁচে খাচ্ছি না তো? জাতীয় সঙ্গীত, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এইসব নিয়ে ব্যবসা করছি না তো?



এবার আসি খরচের কথায়, ৫০ কোটি না ৯০ কোটি? যেটাই হোক, ধরলাম ৫০ কোটিই খরচ হয়েছে। কিন্তু কিসের পেছনে এই খরচ হয়েছে তা নিয়ে আমার বিরাট কনফিউশন আছে। যে বাজে অনুষ্ঠান অরগ্যানাইজ করা হয়েছে আর ম্যানেজমেন্ট যে কি রকম ‘বাল মার্কা’ ছিল সেটা দেখার পর এটা অরগ্যানাইজ করতে ৫০ কোটি (বা ৯০ কোটি) খরচ হয়েছে এ কথা একটা পাগলরেও বিশ্বাস করানো সম্ভব বলে আমি মনে করি না। বুঝতেছিনা সরকারের মন্ত্রী এম্পিরা কি জাতীয় সঙ্গীতের টাকাও পকেটে নিয়ে নিল নাকি নির্বাচনী তহবিলে জমা করল! করলেও অবাক হব না কারন এরা তো মানুষ না, এরা মন্ত্রী এম্পি। করতেই পারে, এনাদের জন্মই হইছে পাবলিকের টাকা মাইরা খাওয়ার জন্য।

শেষের আগে বলি, এটা ঠিক যে আমাদের দেশের মত একটা দেশে ৫০ কোটি বা ৯০ কোটি টাকা খরচ করে এমন একটা অনুষ্ঠান করা বিলাসিতার মতই তারপরও আজকে আমরা সবচেয়ে বেশি মানুষ একসাথে হয়ে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার রেকর্ড গড়েছি। সেটা অনেক বড় পাওয়া। তবে সাথে আরও কিছু ব্যাপারে রেকর্ড গড়েছি যা আমার কল্পনায়ও ছিল না যে এইসব হতে পারে, আমরা সবচেয়ে বেশি মানুষ একসাথে হয়ে জাতীয় পতাকা মাড়ানোর রেকর্ড করেছি, আমাদের স্বাধীনতার সাথে যুদ্ধাপরাধীদের সম্পৃক্ত করে রেকর্ড করেছি। আসলেই, আমাদের ভেতরে দেশপ্রেম বলে কিছু আছে বলে আমার মনে হয় না। থাকলে এভাবে নিজের দেশের পতাকা নিজে মাড়াতে পারতাম না; জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার অনুষ্ঠানে যুদ্ধাপরাধীদের সম্পৃক্ত করতে পারতাম না। আমার মনে হয় আমরা লাখো ‘কণ্ঠে’ সোনার বাংলা না গেয়ে আমাদের লাখো ‘হৃদয়ে’ সোনার বাংলাকে ধারন করা উচিৎ। তাহলে যদি আমাদের ভেতরে ‘দেশপ্রেম’ বলে কিছুর উদয় হয়, নতুন ভোরের সূর্যের মত। আশা করি কোন একদিন হবে...

© লিসান
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে মার্চ, ২০১৪ দুপুর ১২:৩৫
৭টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×