somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কালোজাদু-০২

০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ১০:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার বাবার স্ত্রীর সাথে খুব একটা কথাবার্তা হতোনা। অন্তত আমি নিজে গিয়ে কথা বলতে চাইতাম না। উনিই আমার ঘরে আসতে চাইতেন। উনিও চুপচাপ মহিলা ছিলেন। খুব একটা বাইরে বেরুতেন না। নায়িকা ছিলেন ।একসময় এত মানুষের সান্নিধ্য পেয়েছিলেন যে এখন আর ওসব ভাল্লাগেনা। এমনটাই উনি বলতেন। হয়ত তাই। কিংবা ক্যারিয়ারের এই পড়তি সময়ে নতুনদের ভিড়ে নিজেকে আর খুঁজে না পেয়েই তিনি দূরে সরে ছিলেন। যাই হোক।উনি বেশি সময় ঘরে দিতে লাগলেন। আমার দাদির সেবা করতে লাগলেন , আমার যত্ন নিতে চাইতেন।কিন্তু আমার ভালো লাগত না। কেমন যেন কুটিল দৃষ্টি ! মধুমাখা অইকথার আড়ালে তার লুকানো উদ্দেশ্য কি আমি বুঝি না! আমার বাবাকে বশ করেছে । আর এখন আমাকে ও বশ করতে চাইছে।না আমি তা হতে দিতে পারি না। আমি আমার পড়াশুনা চালিয়ে যেতে লাগলাম ।

প্রেতচর্চার প্রক্রিয়া যতটা সহজ হবে ভেবেছিলাম ততটা ঠিক না। অনেক দেশে অনেক প্রক্রিয়ায় যুগ যুগ ধরে এটা হয়ে এসেছে। আফ্রিকান ভুডু, প্রাচীন মিশরীয় প্রেতসাধনা কিংবা ভারতবর্ষের প্রেত সাধনা- অনেক পদ্ধতি। কিন্তু সবজায়গায় কিছু মিল ও আছে।প্রথমেই হচ্ছে শয়তান এর উপর বিশ্বাস আনতে হয়। এর পর মরা মানুষের খুলি , কালো কুকুরের হাড় ,জারজ সন্তানের চুল এসব অনেক দুষ্প্রাপ্য জিনিসপত্র নিয়ে সাধনার সূচনা । আগের সময় হলে বাসায় এসব নিয়ে কাজকরা মোটেও কঠিন হত না। কিন্তু এখন অই ডাইনিটার( বাবার নায়িকা স্ত্রীকে আমি মনে মনে এই নামেই ডাকতাম) জন্য এসব নিয়ে কাজ করা একটু মুস্কিল। হুটহাট করেই আমার ঘরে ঢুকে পড়ে। দরজা-জনালা বন্ধ করেই এসব করতে হয়।
প্রেতসাধনার একটা অন্যতম ব্যাপার হল এখানে একজন গুরু লাগে। আমাদের স্কুল কলেজের পড়াশুনার মতই। নিজে নিজে পড়ে হয়ত ভালো রেজাল্ট করা যায় । কিন্তু একজন প্রাইভেট টিউটর থাকলে মন্দ হয় না। গুরু পাওয়াতো আর চাট্টিখানি কথা না।ঢাকার মত একটা ঝাঁ চকচকে ,আলো ঝলমলে শহরে তো আর রাস্তার মোড়ে মোড়ে প্রেত সাধক থাকে না। দু-একজনের কথা যে শুনিনি তা না। কিন্তু যখন দেখা করতে গিয়েছিলাম তখনই ওদের ভন্ডামি বুঝতে পেরেছিলাম। ধাপ্পাবাজদের চিনতে খুব বেশি সময় আমার লাগে না। ভাবলাম এবার গ্রামে গিয়ে দেখতে হবে। আম,জাম,কাঠাল,তেতুল, শ্যাওড়া আর বাঁশঝাড় ঘেরা গ্রামে যেখানে ভর দুপুরে ও গা ছমছম করে উঠে সেখানেই তো ভূতপ্রেতের আড্ডাখানা। গ্রামে যাবার কথা তুলতেই দাদী আপত্তি জানালো। কিরে ,হুট করে এইসময়ে গ্রামের বাড়ি যেতে চাচ্ছিস কেন! বিগত দশবছরেও তো একবার গেলি না। এসব বলে দাদি আপত্তি জানাতে লাগল। কিন্তু আমি জেদ করতেই লাগলাম। 'তাছাড়া আর সপ্তাহখানেক পরেই তো তোর আঠারোতম জন্মদিন' । ইশ, আমিতো ভুলেই গিয়েছিলাম। আমার জন্মদিন খুব একটা ঘটা করে পালন করি না। প্রতিবছর বন্ধুরা বাসায় আসতে চায়। আমি আনি না। তাই ওরা কলেজেই আয়োজন টা করে। আমিও কোন একটা বড় রেস্টুরেন্টে ওদের খাইয়ে দেই। বাবার তরফ থেকে একটা গিফট অবশ্য আমি পাই। দামি কোন একটা গিফট। বাবা অনেক টাকার গিফট দিয়ে তার পিতৃত্বের দায়িত্বটুকু পালন করে। আর দাদী অনেকটা সময় আমাকে জড়িয়ে ধরে দোয়া পড়ে আর ফু দেয় ।এই হল আমার জন্মদিন উদযাপন। এবার ও এর ব্যতিক্রম হবার কোনো কারন নেই।তাই আমি বললাম, এখন তো অনেকবড় হয়ে গেছি। বুড়ির আবার জন্মদিন।না কোন সমস্যা নেই। আমি যাবই। আমার জিদের কাছে দাদি হার মানল।বাবাকে একবার বলে যেতে ।বাবার তরফ থেকে আপত্তি আসার কথা না। বাবার ঘরে গেলাম। অনেকদিন পরে। গিয়ে দেখি অনেক গোছানো সব।তার স্ত্রী(ডাইনিটার) কাজ নিশ্চয়ই। বাবাকে গ্রামের বাড়িতে যাবার কথা বলতেই বাবা আপত্তি করতে লাগলেন। বারবার বলতে লাগলেন গ্রামে যাবার কি দরকার। আমি জেদ করতে লাগলাম যে আমি যাবই। শেষ পর্যন্ত রাজি হলেন এই শর্তে যে দাদিকে আমার সাথে নিয়ে যেতে হবে। একা যেতে দেবে না বাবা।
সব কিছু গুছিয়ে নিতে বেশ সময় লাগলো। পাঁচদিন পরে আমরা গ্রামের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।যাত্রার শুরু থেকেই আমার একটা অশুভ অনুভূতি হতে লাগলো। গ্রামের বাড়ির যত কাছে পৌঁছুতে লাগলাম অনুভূতিটা আরো তীব্র হতে লাগলো।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ১০:১৪
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৪০



'অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ'।
হাহাকার ভরা কথাটা আমার নয়, একজন পথচারীর। পথচারীর দুই হাত ভরতি বাজার। কিন্ত সে ফুটপাত দিয়ে হাটতে পারছে না। মানুষের... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×