somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তোমার দিলকি দয়া হয় না

২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছাদে যাবার আগে প্রিয়ক চাদরটা ভাল করে জড়িয়ে নিল। জনুয়ারির এই সময়টায় বেশ জোরেশোরেই ঠাণ্ডা পড়া শুরু করে। মাঝরাত থেকে শুরু হয়। শেষরাতে হাত পা জমে যাবার মত অবস্থা। আসলে একটা সোয়েটার পড়ে নেয়া উচিত ছিল। কি আর হবে ? একটু পরেই তো সব প্রয়োজন ফুরিয়ে যাবে। আচ্ছা , লাশের কি ঠাণ্ডা লাগে? আফটারলাইফ নিয়ে পড়াশুনাটা আরেকটু ভাল করে করা উচিত ছিল। বড্ড তাড়াহুড়া হয়ে যাচ্ছে না? প্রিয়ক নিজের মনেই হেসে উঠল। সিদ্ধান্তটা ও নিজেই নিয়েই নিয়েছিল। কেউ চাপিয়ে দেয়নি। আর নিজের উপর কন্ট্রোলটা ওর প্রবল। সকাল পাঁচটায় ঘুম থেকে উঠবে বলে ঠিক করে ঘুমুতে গেলেই পাঁচটাতেই উঠতে পারে। নাহ, শব্দটা আসলে পারত হবে। এখন আর সেই কন্ট্রোল নেই। এই যে অবচেতনমন ওকে বিভিন্নভাবে বাঁধা দেবার চেষ্টা করছে। বলছে যেওনা। অথচ ব্যাপারটা এমন ছিল না।একসময় যা চাইত তাই করতে পারত। এখন পারে না বলেই হয়ত এই অবস্থা! যেখানে সব কিছুর ইতি টানতে যাচ্ছে সেখানে সামান্য ঠাণ্ডার ভয়!আচ্ছা, এককাপ কফি খেয়ে গেলে কেমন হয়! শেষবারের মত ।ক্যাপুচিনোর একটা স্যাশে এখনো ড্রয়ারে আছে। শ্যুগার কিউব দিয়ে এককাপ ক্যাপুচিনো খাওয়া যেতেই পারে। বেহেশতে কি কফি পাওয়া যাবে? হা হা। এইবার বেশ শব্দ করেই হেসে উঠল। সিড়ির গোড়ায় রুমটায় কেউ একজন খুক করে কেশে উঠল। এত রাতেও ও জেগে আছে! জেগে থাকাই স্বাভাবিক । সপ্তহাএর এই একটা রাতেই সবাই একটু হাঁপ ছেড়ে বাঁচে। অনেকের কাছে এই রাত ঈদের আগের রাতের মতই। অন্য কোন সময় হলে প্রিয়ক নিজেও হয়ত তাই করত । কোন একটা হরর মুভি ছেড়ে দিয়ে ভোরের অপেক্ষা করত। মাঝখানে হয়ত একবার উঠে বারান্দায় দাঁড়াত। ভূতের মুভি দেখায় ভীতু রুমমেটটা বাথরুমে যেতে পারত না বলে। ভয়! মানুষ মিথ্যে ভূতের ভয় পেয়ে কাবু। মিথ্যে ভয়ের কত আয়োজন। অথচ মানুষের চেয়ে ভয়ংকর আর কেউ কি আছে? মানুষ চাইলে কত নিষ্ঠুর হতে পারে।আজকে প্রিয়কের এই সিদ্ধান্তের পেছনে ও তো কিছু মানুষ দায়ী। নাহ, ও ঠিক করেছিল কাউকে দোষারোপ করবে না। কিন্তু অবচেতন মনে ঠিকই করে যাচ্ছে। মন আজ তার চেয়ে বেশি চালাক হয়ে গেছে। আজ আর তার নিয়ন্ত্রনে নেই। এককাপ কফি আসলেই খুব দরকার। মনের পাগলা ঘোড়াকে লাগাম পরাতে। এটলিস্ট শেষবারের মত মনটাকে নিয়ন্ত্রণে আনা দরকার। তারপর সব শেষ হয়ে গেলে তো হয়েই গেল। তার পর মনের কি হবে? যেখানে খুশি যাক।ও শুনেছিল ভাল আত্মারা ইল্লিনে যায়। ওর টাও কি ইল্লিনে যাবে? নাহ সিজ্জিনে যাবে? মাথা একেবারেই কাজ করছে না। এককাপ কফি আসলেই দরকার। কিন্তু সমস্যা হল যে কফি খেলে ওর খালি ঘুমই ধরে।কেন এমনটা হচ্ছে। বেঁচে থাকলে এন্টিবায়োটিক রেজিস্টেন্সের মত করে কফি রেজিস্টেন্সের উপরটা একটা গবেষণা করা যেত। ওর আসলে মানুষের মনোজগৎ নিয়ে খুবই আগ্রহ।
কফি খাবে বলে পানি গরম করলেও শেষমেশ দু চামচ মধু দিয়ে এককাপ রঙ চা খেল।গলাটা গতকাল থেকে খুসখুস করছে। ছাদে এমনিতেই আরো ঠাণ্ডা লাগবে। ঠাণ্ডাটা লাগিয়েছে গতকাল । একটা কাজে বেশ দূরে যেতে হয়েছিল। ঢং করে পাঞ্জাবি আর চাদর পড়ে গিয়েছিল। আর রাতে ফেরার সময়ই ঠাণ্ডা লাগল। ঠাণ্ডায় মধুর এই ব্যাবহারটা শিখেছে আব্বুর কাছ থেকে । আব্বু ! আচ্ছা কালকে আব্বুর কি হবে? খবর শুনেই হয়ত ঢাকায় চলে আসবে। আম্মু কি আসবে? নিশ্চই। আম্মু নিশ্চই অনেক কান্নাকাটি করবে। ওরা কি বাসে আসবে? নাহ প্লেনে? মরে গেলেতো গেলামই।শুধু শুধু এওগুলা টাকা খরচ করে প্লেনে আসলেই বা কি এমন হাতিঘোড়া হবে! লাশটা তো আর উঠে দৌড়ে যাবে না। টাকা ! আসলেই ! আমাদের পেছনে বাবা-মার কত বিনিয়োগ ! মরে গেলে তো সব শেষ। মরে গেলে বাবা-মার কি হবে? কি আর হবে ! পৃথিবীর সব শোকই সামলে ওঠার মত। হয়ত!
ঠাণ্ডাটা বেশ জাঁকিয়ে পড়েছে। ভাবতে ভাবতেই অনেকটা সময়ই কেটে গেল।ভোর প্রায় হয়ে এলো বলে। এখন ছাদে যাওয়া উচিত। শেষবারের মত রুমের সব জিনিস একনজরে দেখে নিল। সাইকেল ,পানির বালতি ,টেবিলে মাইক্রবায়লজির লেঞ্জরিভিউ, ওয়াটার হিটার , হ্যাঙ্গগারের কাপড়চোপড় । আচ্ছা যাওয়ার আগে এগুলো গুছিয়ে যাওয়া উচিত? পরে অনেক মানুষ আসবে । অগোছালো এগূল দেখে সবাই কি ওকে জাজ করবে! অদ্ভুত মানুষ আমি! এই সময়ে ও মানুষে কি বলবে এই চিন্তা! শেষ সময়টাতে ও কি ভাল সাজার মিথ্যা অভিনয় করতে হবে? যাক ।এসব বাদ দিয়ে ও ছাদের দিকে গেল। ছাদের দরজাটা একটু খোলা । বেশ আলো আলো হয়ে উঠেছে চারদিকটা। একটু পরে হয়ত সূর্য উঠবে। কোন জায়গায় কাজটা করবে আগেই ঠিক করে রেখেছিল। শেষ মুহূর্তে যাতে এসব নিয়ে হেজিটেশন না হয় সেজন্য। অন্তত এই কাজটা ও গুছিয়ে করতে চায়। চারপাশ কুয়াশায় ঢাকা। সব সাদা সাদা। কিন্তু কিছুই দেখা যায় না। কাছের উঁচু বিল্ডিঙটাও না। কিন্তু ও জানে যে বিল্ডিঙটা ওইদিকেই আছে। মানুষের জীবনটা ও কি এমন না! চারপাশে অনেকেই হয়ত আছে। আমরা হয়ত জানি ।কিংবা কুয়াশার চাদরে ঢাকা।
সূর্য উঠছে। কুয়াশা চিরে একটা আলোক রশ্নি আসছে।
কি চমৎকার দৃশ্য!
অনেকদিন ভোরে ছাদে উঠা হয় না।এখন থেকে রোজ আসতে হবে।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৫১
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×