somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জঙ্গলে শোরগোল

১৯ শে মে, ২০১৭ রাত ১০:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
জঙ্গলরাজ্যে নিত্য নতুন ঘটনা ঘটে।এবার শোরগোল পড়ে গেল হরিনের বাচ্চাকে নিয়ে ।

এমনিতেই হরিনের বাচ্চার দিকে অনেকের চোখ । কি নধরকান্তি দেহ,টানাটানা চোখ ,লম্বালম্বা কান! অইকানে একটুখানি দোলা দিলে বাঘে মহিষে একঘাটে জল খায় শত্রুতা ভুলে । আর সেই হরিণীর বুঝি এমন দশা হল!দুটো হায়েনা মিলে আঁচড়ে-কামড়ে,ছিড়েখুটে কি অবস্থাটাই না করেছে।মা হরিণ এমনিতেই অনেক ভয়ে ভয়ে থাকে।দিনেরবেলা যখন হরিণেরা ঘাস খেতে যায় তখন কত বাঘ ,সিংহ, হায়েনা ওঁত পেতে থাকে ।খালি চেয়ে চেয়ে দেখে।কিছু করতে পারেনা ।চাইলেই তো আর যার তার উপর ঝাপিয়ে পরতে পারেনা।পশুরাজ্যের কিছু নিয়মকানুন আছে।
কিন্তু হরিনছানা সেদিন কি ভুলটাই না করল ! বন্ধু বানর দাওয়াত দিয়েছিল তার জন্মদিনের পার্টিতে।প্রথমে তো হরিনি যেতেই চায় নি।কিন্তু বানর এত করে বলল,'হরিনি,তুই কিন্তু অবশ্যই আসবি। তোর জন্য চম্পকলতা, পদ্মমধু এসবের আয়োজন থাকবে।মা হরিণ প্রথমে যেতে দিতে চায়নি।পরে হরিণীর পীড়াপীড়ির কারণে রাজি হল।
বান্দরবনে গিয়ে দেখা গেল হুলুস্থুল কারবার। পুরো এলাকা সাজানো হয়েছে ঘাস, লতাপাতা আর ফুলের কলি দিয়ে ।নানা ধরনের ফলমূল ,শাক লতাপাতা থরে থরে সাজানো। হরিনি গিয়েছিল এক বান্ধবীকে সংগে নিয়ে।দুজন মিলে অনেক মজা করে ঘুরতে লাগল।অনেক প্রানীর সাথে দেখা হল।শিয়ালদহ থেকে শিয়াল ,হাতিয়া থেকে হাতি,ঘোড়াশাল থেকে ঘোড়া ,বাগেরহাট থেকে বাঘ, চিলমারি থেকে চিল আর গাইবান্ধা থেকে গরুর দল এসেছে।
কালচারাল প্রোগ্রামের ও আয়োজন আছে।মঞ্চে এক বানর এসে কৌতুক বলতে শুরু করল। আর সব প্রানী হেসে কুটিকুটি হতে লাগল। এই বানরটি নাকি বিখ্যাত কৌতুক প্রতিযোগিতা ' বেয়াক্কেল' এর চ্যাম্পিয়ন ।
এভাবে হাসিঠাট্টায় বেলা গড়িয়ে এল। হরিনী তখন বন্ধু বানরের কাছে বিদায় নিতে গেল। কিন্তু বানর তাকে আরেকটু সময় থেকে যেতে অনুরোধ করতে লাগল।' দোস্ত ,আরেকটু সময় থেকে যা। সন্ধ্যায় জোনাকিদের বিশেষ আলোকসজ্জা আছে। বানরের জোরাজুরিতে রয়ে গেল ওরা।
সন্ধ্যায় পুরো বান্দরবন জোনাকিদের আলোয় ভরে গেল। ঝি ঝি পোকাদের কোরাসের তালে তালে কখন যে সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত নেমে এল টেরই পেলনা হরিণী।
এবার ফেরার পালা।না ফিরেও উপায় নেই। মা হরিণ নইলে খুব দুশ্চিন্তা করবে। কিন্তু হরিনডাংগা তো অনেক দূরে। একদল ময়নাপাখি কিচিরমিচির করে বলতে লাগল, আমাদের ময়নারবিল যাওয়ার পথ তো একই দিকে। চল আমাদের সাথে ।অন্তত অর্ধেকটা পথ এগিয়ে দেই। হরিণীও রাজি।ঠিক তখনই হায়েনা দুটো এসে হাজির ।তারা ও একই পথে যাবে। তাই সবাই একসাথে যেতে চায়।
অর্ধেক পথে ময়নারবিল এসে পড়ে।ময়নারা তাই বিদায় নিয়ে চলে গেল।বাকি রইল হরিণী ,ওর বান্ধবি আর দুটো হায়েনা।হায়েনারা এমনিতেই টালমাটাল হয়ে হাঁটছিল।জন্মদিনের পার্টিতে অনেক পদ্মমধু খেয়ে ওদের নেশা চড়ে গিয়েছে।হরিনডাঙার কাছেই একটা জংলামত জায়গা পড়ে। বিশাল সব গাছ, লতা পাতা। চাঁদের আলো একটু ও ঢোকে না। এই অন্ধকারে হায়েনা দুটো ঝাপিয়ে পড়ল হরিণীর উপরে।
****************************
বাঘমামার দরবারে বিচারসভা বসেছে। মা হরিণ গতরাতে তার মেয়ের উপর ঘটে যাওয়া হামলার বিচার চাইতে এসেছে।বাঘের বুদ্ধিশুদ্ধি খুব একটা সুবিধার না।রগচটা মেজাজ আর গায়ের জোরে সে বনের রাজা হয়েছে ।হায়েনাদের পক্ষে ওকালতি করতে এল ফিচলে বুদ্ধির শেয়াল।সে বল,মহারাজ, আসলে আমার মক্কেল হায়েনা পুরোপুরি নির্দোষ। হরিনী তাকে সুন্দর চোখ আর নধরকান্তি দেহ দেখিয়ে প্ররোচিত করেছে। এখন আমার পক্ষে সাক্ষী হিসেবে কথা বলবে হায়েনার বাবা। হায়েনার বাবা এসে বলল, মহারাজ ,হায়েনা চ্যাংড়া ছেলে। যৌবনে এ রকম একটু আধটু দুরন্তপনা সবাই করেই। দোষ তো হরিণীর। এমন দীঘলকালো চোখ, নধরকান্তি শরীর আর চপল লেজ নিয়ে সে রাতের বেলা বনে কেন গিয়েছিল?
বাঘমামা ভেবে দেখল ,ব্যাপারটা তো আসলেই ঠিক। বাঘের ও এমন একটা যুবক ছেলে আছে। সেই বাঘ্রশাবকের মাথা ও সব সময় এমন গরম থাকে।তাছাড়া হরিণেরা তো সাধারণত রাত বিরেতে বনে যায় না।তাই অসময়ে বনে গিয়ে অপরাধটা হরিণীই করেছে। বাঘমামা তখন ঘোষণা দিলেন ,দোষ তো মনে হচ্ছে হরিণীর ।সেইই প্রলুবদ্ধ করেছে হায়েনাকে। হরিনদের রাতের বেলা বনে যাওয়া নিষিদ্ধ করতে হবে ।
এবার হরিনের পক্ষে ওকালতি করতে এল খরগোশ। সে তার বক্তব্য পেশ করতে যাবে এমন সময় বাঘ্রশাবক হুট করে কোত্থেকে জানি এসে বিচার সভার মাঝেই তিড়িং বিড়িং করে লাফাতে লাগল আর গর্জন করতে লাগল।জানা গেল তার গলায় হাঁড় ফুটেছে। তাই এমনটা করছে। তখন বাঘমামা বিচার সভায় বিরতি দিয়ে বককে ডেকে আনতে পাঠালো। বক এসে হাড় বের করার পরেই বিচার আবার শুরু হল ।এবার খরগোশের পালা।সে এসে বলল,মহারাজ, বাঘ্রশাবকের যে গলায় হাড় ফুটেছে তার জন্য আপনি কি করেছেন?
বাঘ বলল, কেন বককে দেকে এনে চিকিৎসা করিয়েছি।
-আপনি তো আর গলা কেটে ফেলে দেননি।
-গলা কেন কেটে ফেলব!
খরগোশ বল, মহারাজ আমি ঠিক এটাই বলতে চাই।এই জঙ্গল আমাদের সবার ।তাই এখানে যখন যেখানে খুশি যাবার অধিকার সবার আছে। আর হরিণীর নধর দেহ , টানাটানা চোখ এসব তো বিধাতার দেয়া।এসব সুন্দর বলে তো কেউ তাকে হটাত আক্রমন করে বসতে পারে না। এটা হায়েনার অন্যায় হয়েছে।
বাঘমামা এবার বলল ,আরেহ তাইতো । এই জংগল সব প্রাণীর। তাই সবারই অধিকার আছে এখানে ঘোরাঘুরি করার ।বদমাশ হায়েনাটা কই। ওকে ধরে এনে ৫০০ টা কুমিরের লেজের বাড়ি দাও।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে মে, ২০১৭ রাত ১০:০৪
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×