নীলার সাথে আমার সব কথাগুলো শাহেদ জানত। একদম প্রথম পরিচয় থেকে । আমি বলতে না চাইলে ও শাহেদ শুনতে চাইত। একসময় আমাদের আড্ডার মূল বিষয়বস্তু হয়ে দাঁড়িয়েছিল একটাই-নীলা। নীলার জন্মদিনে ' যে জলে আগুল জ্বলে ' গিফট করা থেকে শুরু করে আমাদের প্রথম চুমু ।
শাহেদ ভাল ছাত্র ছিল। ভাল ডিপার্টমেন্টে পড়ত। ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড ও ভাল। আর আমি সামান্য প্রাইমারী স্কুল টিচারের ছেলে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় গুরুত্বহীন একটা সাবজেক্টে টেনেটুনে পাশ করি।
পাশ করার পর আমরা আলাদা হয়ে গেলাম।শাহেদ নিজের নতুন চাকরি নিয়ে ব্যস্ত।আমি ও ছোটোখাটো একটা কম্পানিতে কাজ করেছি। এদিকে নীলাদের বাড়ি থেকে বিয়ের জন্য চাপাচাপি চলছিল ।বেশ কিছুদিন নীলার সাথে যোগাযোগ করতে না পেরে আমি একদিন উপস্থিত হলাম নীলাদের বাসার সামনে। দারোয়ান জানালো ,আপামনির বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। পাত্র শাহেদ।
ব্যাপারটা শুনে সামলে নিতে বেশ সময় লাগল। কিন্তু আমি আমার বন্ধুর কথা ভুলে যাই নি। বিয়ের দুদিন আগে গিয়ে উপস্থিত হলাম শাহেদের বাসায়।শাহেদ আমাকে দেখে বেশ বিব্রত। আমিই বরং হাসিমুখে এগিয়ে গেলাম। কিরে বন্ধু, এভাবে দাঁড়িয়ে থাকলে হবে? শেরোয়ানী, পাঞ্জাবী ,পাগড়ি সব অর্ডার করতে হবে ।
আমরা দুদিন ঘুরে ঘুরে সব কিনলাম। শাহেদের শেরোয়ানি,পাগড়ি ,নীলার জন্য নীল শাড়ি ,লেহাঙ্গা সব কিছু ।আমার পছন্দের শেরোয়ানি আর পাগড়ি পড়ে শাহেদ শ্বশুরবাড়ি গেল। সংগে বরযাত্রী আমরা।শাহেদ স্টেজে উঠে উঠে বসল।আর আমি নীলাদের কাজের মেয়েকে দিয়ে নীলার কাছে একটা চিরকুট পাঠালাম
**********************************
এখন আমি একটা বাসে বসে আছি। পাশের সীটে নীলা।জানালা খোলা।বাতাসে চুলগুলো উড়ে এসে বারবার নীলার মুখটা ঢেকে দিচ্ছে,শাহেদ বোধহয় এখনো বিয়ের মঞ্চে বসে আছে।আমার পছন্দ করে কিনে দেয়া ঘড়িটাতে বারবার সময় দেখছে আর ভাবছে কনে আসতে এত দেরি হচ্ছে কেন?
আমার কাঁধে মাথা রেখে ঘুমুচ্ছে নীলা।যেন কতদিন ঘুমায়নি ও । নীল শাড়িটাতে ওকে ঠিক নীল পরীর মত লাগছে ।
ভুরুঙ্গামারি কিংবা টেকনাফ, কোথাও কি এই নীল পরীটা আর আমার জন্য একটুকরো ছাদ হবে???
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জুন, ২০১৭ রাত ৩:১০