somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

***তেল***

১৪ ই জুন, ২০১৭ সকাল ১১:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আমি মাথায় তেল দেয়া পছন্দ করতাম না।আর রিমি ছিল ঠিক উল্টা। ও মাথায় জবাকুসুম তেল দিত।এতে নাকি মাথা ঠাণ্ডা থাকে।এবং মাঝে মাঝে আমার মাথায় ও দিয়ে দিত জোর করে ।একবার হল কি পরিক্ষার আগের রাতে মাথা এত গরম হয়ে গিয়েছিল যে দুইবান্ধবি মাথায় তেল দিয়ে ঘুমালাম। এমন ঘুম দিলাম যে পরদিন আর পরিক্ষা দিতেই উঠতে পারলাম না।
আমরা রুমমেট ছিলাম। মানুষের রুমমেট নিয়ে অনেক কমপ্লেইন থাকে। অনেক ঝগড়াঝাটি হয়।আমার আর রিমির কখনো এমন হয় নি।আমরা একজন আরেকজনকে অনেক ভাল বুঝতাম।প্রায়ই দেখা যেত দুইজনের একইদিনে বাইরে খেতে যেতে ইচ্ছে করছে। একজন যখন বলতাম তখন আরেকজন বলে উঠত, আরেহ আজ সকাল থেকে আমার ও বাইরে খেতে যেতে ইচ্ছে করছে। আমাদের ব্যাচমেটরা আমাদের নিয়ে হাসাহাসি করত ।বলত তোদের বিয়ে শাদি করার দরকার নেই। তোরা যেভাবে একজন আরেকজনকে বুঝিস এমন আর কেউ বুঝবেনা। আমরা ও হেসে বলতাম ,ইয়ে দোস্তি হামনেহি তোড়েংগি।
এত ভাব থাকার পরে ও একসময় আমরা আলাদা হয়ে গেলাম। পাশ করার পর হুট করে রিমির বিয়ে হয়ে গেল। পাত্র বুয়েটপাশ ইঞ্জিনিয়ার।রিমি কে বিদেশে নিয়ে গেল।ও সে্খানে কোন একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে পাব্লিকহেলথে পোস্টগ্রাড কোর্সে ভর্তি হল।আর আমি কক্সবাজারের একটা হাসপাতালে চাকরি নিয়ে চলে গেলাম ।প্রথমদিকে নিয়মিত স্কাইপে তে কথা হত।তারপর একসময় সেটা ও কমে এল।কিংবা আমরাই কমিয়ে দিলাম। কে জানে কেন! হয়ত নিজেদের এতটা মতের মিল আমাদেরই বোরিং লাগছিল। আমরা নতুন মানুষজনের সাথে পরিচিত হতে চাইছিলাম।
********************
আমার হাসপাতালটা খারাপ না।রোগির চাপ আছে বেশ।কিন্তু সময়টা ভালই যায়।কক্সবাজার শহর থেকে বেশ দূরে। যেদিন ইভিনিং শিফট থাকে না সেদিন বিচে চলে যাই।অস্তায়মান সূর্যের আলোকরশ্মিতে হয়ত স্মৃতিকাতর হয়ে যাই।মনে হয় কতদিন দেখি না সবাইকে ।এছাড়া একাকি জীবন মন্দ না। মা যদি ও বিয়ের জন্য ফোন করে রোজ কান ঝালাপালা করে ফেলে তবু আমি খুব একটা পাত্তা দেই না। মাঝে মাঝে যে ঝামেলা হয়না এমন কিন্তু না। কিন্তু বেশির ভাগ রোগীই অনেক ভাল।মাঝে মাঝে অনেকেই নিজের মুরগির ডিম কিংবা খেতের লাউ নিয়ে চলে আসে।ডাক্তার আপার জন্য তাদের ভালবাসার শেষ নেই। আমি ও চেষ্টা করি। মেডিকেল কলেজে ভরতির প্রথম দিনেই এক স্যার বলেছিলেন ,' এই সাদা এপ্রনে যেন দাগ না লাগে '।আমি ও দাগ লাগতে দেই নি।
**********
আজ সকাল থেকেই বেশ রোগির চাপ ছিল । আমি গতকাল নাইট ডিউটি ও করেছিলাম। তাই বেশ ক্লান্ত ছিলাম। বিকেলের দিকে একটা জিপ এসে থামল ।একজন মানুষ কে নামানো হল। ভদ্রলোক চোরাবালিতে ডুবে গিয়েছিলেন।দুই ঘন্টা পরে উদ্ধার করা হয় বডি। আমেরিকা প্রবাসি।এখানে একটা রিসোর্টে উঠেছিলেন। আমাদের আসলে খুব একটা কিছু করার ছিল না ।আমি সব ভাইটাল সাইন চেক করে দেখালাম। যা যা করা সম্ভব সব করে দেখছিলাম। এমন সময় ইমারজেন্সি রুমে বাইরে চিৎকার শুনতে পেলাম।একজন বলছেন, আমাকে ভিতরে যেতে দিন ,আামার স্বামীকে দেখতে দিন,আমি একজন ডাক্তার। তখনই আমি রিমিকে দেখতে পেলাম। পাঁচ বছর পর।রিমি আমাকে প্রথম খেয়াল করে নি। প্রথমে মিনিট দুয়েক লাশটাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদল।তারপর আমার দিকে চোখ পড়তেই কিছুটা অবাক হয়ে রইল।তারপর আমাকে জড়িয়ে কাঁদতে লাগত।
******************
আমরা এখন একট জিপের পেছনে বসে আছি। লাশটা ঢাকায় নেয়া হবে। রিমি সেই যে জড়িয়ে ধরেছে আর ছাড়েনি। এখনো কাঁদছে।কান্নার দমকে ওর শরীর কেঁপে উঠছে ।আর আমি ওর মাথায় তেল দিয়ে দিচ্ছি।জবাকুসুম তেলের একটা শিশি সব সময় আমার হাতব্যাগে থাকে
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জুন, ২০১৭ সকাল ১১:৩৯
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×