আসলে রুইংগাদের এই টপিকটা নতুন কিছু না। বেশ পুরোনো । তারা মূলত জঙ্গলরাজ্যের পাশের ‘ পাহাড়রাজ্যের’ বাসিন্দা যুগযুগ ধরে তারা সেখানে বাস করে আসছিল। কিন্তু বেশ কয়েক শতাব্দী ধরে তাদের ওপর অত্যাচার চলছে। পাহাড়রাজ্যের ক্ষমতায় আছে চিতাবাঘের দল। সেখানে নেই কোন ডেমক্রেসি । চিতাবাঘের লেজের ইশারায় চলছে পাহাড়রাজ্য। তারা বেশ কয়েক যুগ ধরেই বলে আসছে বনরুইরা আসলে পাহাড়রাজ্যের বাসিন্দা না। তারা আসলে পাশের জঙ্গলরাজ্যের বাসিন্দা। অন্যায়ভাবে আছে পাহাড়রাজ্যে এবং বনরুইদের মেরে কেটে যেভাবেই পারা যাক খেদিয়ে দিতে হবে পাহাড়রাজ্য থেকে ।আর তাই অন্যায় অবিচারে মাতম পড়ে গেছে পাহাড় রাজ্যে।চিতাবাঘেরা যা খুশি তাই করছে। যাকে খুশি মারছে। ‘ আন্তর্জাতিক পশুসুরুক্ষা’ আইন মেনে চলার কোন লক্ষণই তাদের মাঝে নেই।
বনরুইরা আছে চরম বিপদে। পাহাড়রাজ্যে তাদের উপর চলছে নিধনযজ্ঞ।যারা ‘ টাফ নদী’( দুইরাজ্যের সীমানির্দেশকারী নদী, পার হওয়া অনেক কঠিন বলেই এমন নাম) পার হয়ে জঙ্গলরাজ্যে আসছে তাদের অবস্থা ও শোচনীয়।নেই খাবার , থাকার জন্য নেই জায়গা। বরং জঙ্গলরাজ্যের কিছু পশুর নারকীয় মানবিক আচরণে তারা অতিষ্ঠ। কিছু বন্যশুকর তাদের ইজ্জত নিয়ে টানাটানি শুরু করেছে। বলছে আমাদের নামের আগে ও বন আছে, বনরুইদের নামেও বন আছে। আমাদের সংগে ওদের মিল অনেক। আমরা ওদের বিয়ে করতে চাই।হাস্যকর প্রস্তাব মনে হলেও আজকে সকালে ‘সেক্সি কাব’ যেটা কিনা বাঘ্রশাবকের অ্যাসবুক প্রোফাইল সেখানকার স্ট্যাটাসে ও এমনটাই ইঙ্গিত দেয়া আছে। বাঘরাজা অবশ্য ব্যাপারটাকে খুব বেশি পাত্তা দেননি। বরং’যুবক বয়সে রক্তে টেস্টস্টোরনের দৌড়াদৌড়ি’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন।
রুইংগাদের ওপর অত্যাচার দিন দিন বেড়েই চলছে। পাহাড়রাজ্য ছেড়ে অনেকেই তাই জীবন হাতে নিয়ে জঙ্গলরাজ্যের দিকে আসতে লাগল। এদিকে জঙ্গলরাজ্যের প্রাণীদের মধ্যে ও দলাদলি শুরু হয়ে গেল। কেউ বলল জঙ্গলে এমনিতেই প্রানীর সংখ্যা বেশি। ওরা এলে আমাদের খাবারদাবারে ভাগ বসাবে। কেউ বলল রুইংগারা অসভ্য, গা ভর্তি আইশ ,আমাদের সংগে ওরা যায় না। আবার বন্য শুয়োরের মত অনেকেই ওদের ইজ্জতের উপর হামলা চালানোর সুযোগের অপেক্ষায় থাকল। আবার কিছু কিছু পশু বেশ ভাল । তারা অ্যাসবুকে রোজ স্ট্যাটাস দিতে লাগল যে ‘ আমরা কি মানুষের মত নিষ্ঠুর হয়ে গেছি? আমাদের কি পাশবিকতা বলে কিছু নেই ?’ সেই সব স্ট্যাটাসের সংগে জুড়ে দিতে লাগল টাফ নদীতে ভেসে বেড়ানো মৃত রুইংগাদের লাশের ছবি।
জঙ্গলরাজ্যের বাঘরাজা দেখলেন এভাবে আর চলতে দেয়া যায় না। তিনি পাহাড়রাজ্যের চিতানেত্রি ভংচং টুকি কে বললেন , এর একটা বিহিত করা প্রয়োজন। কিন্তু নেত্রি টুকি যিনি কিনা লুকোচুরি খেলায় এক্সপারট বলেই আন্তর্জাতিক ভাবে টুকি উপাধি পেয়েছেন তিনি রুইংগাদের ব্যাপারে ও লুকোচুরি খেলতে লাগলেন। বললেন , নাহ, রুইঙ্গারা পাহাড়রাজ্যে ভালই আছে। অ্যাসবুকে যেসব লাশ আর কালোবন্দুকের ছবি দেয়া হয়েছে সবই এডিট করা।
নেত্রি টুকি এভাবে লুকোচুরি খেলতেই থাকতেন। কিন্তু আন্তর্জাতিক পশুসঙ্ঘের সভাপতি ওনাকে চেপে ধরলেন । বললেন, যদি সব ঠিকই থাকে তবে আমি আর জঙ্গলরাজ্যের বাঘরাজা একদিন পাহাড়রাজ্যে বেড়াতে যেতে চাই। সরেজমিনে দেখে আসতে চাই পাহাড়রাজ্যের মনোরম প্রাকৃতিক সৌন্দরয। নেত্রি টুকি বলতে চাইলেন , না না এখন আসবেন না। আমাদের আগে রেডি হবার সুযোগ তো দিন। কিন্তু বাঘরাজা কোন কথাই শুনলেন না। পশুসঙ্ঘের প্রধান আর বাঘরাজা বিরাট দলবল আর সৈন্যবাহিনি নিয়ে চললেন পাহাড়রাজ্যে। পথিমধ্যে যখন তারা টাফ নদি পাড়ি দিচ্ছিলেন তখন দেখতে পেলেন টাফ নদির পানি রক্তে লাল হয়ে আছে। এই দেখে পশুসঙ্ঘের প্রধান খুবই রেগে গেলেন। শুরু হল যুদ্ধ । একপক্ষে পশুসঙ্ঘ আর জঙ্গলরাজ্যের বীরসেনানি । অন্যপক্ষে অত্যাচারী নেত্রি টুকির চিতাবাঘের দল। তুমুল সেই যুদ্ধে চিতবাঘেরা শোচনীয়ভাবে পরাজিত হল। অত্যাচারী নেত্রি টুকি আর তার চিতবাঘ সাঙ্গপাঙ্গ দের বন্দি করে আন্তর্জাতিক পশুঅধিকার আইনে বিচারের জন্য নিয়ে যাওয়া হল। পাহাড়রাজ্যের ফিরে এল ডেমক্রেসি আর শান্তি।তারা পেল নতুন রাজা যে সবাইকে ভালবাসে। আর জঙ্গলরাজ্যের কি হল?
বাঘরাজা আর তার জঙ্গলসেনাদের বিপুল সমাদরে দেশে পাঠিয়ে দেয়া হল। পাহাড়রাজ্য পেল তাদের নতুন বন্ধু ‘জঙ্গলরাজ্য’ । পাহাড়রাজ্যের ইতিহাস বইতে তাই বড় বড় করে লেখা হল এই যুদ্ধের নাম ‘জঙ্গলযুদ্ধ’।
তারপর কি হল?
সবাই সুখে শান্তিতে বাস করতে লাগল।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১০:৪০