somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

*জঙ্গলযুদ্ধ*

১১ ই অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১০:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
জঙ্গলে ইস্যুর অভাব নেই । নিত্য নতুন ইস্যু নিয়ে সরগরম থাকে জঙ্গল।

এখন তামাক পাতার আড্ডায় হট টপিক হল বনরুই যাদের কুল ভাষায় রুইংগা বলা হচ্ছে।শব্দটা নতুন।রুই এর সংগে ভইংগা( চিটাইঙ্গা আঞ্চলিক শব্দ ,যার মানে হল বিদেশি) সন্ধি করে বানানো হয়েছে রুইংগা। জঙ্গলের আরবান ডিকশনারিতে নতুন শব্দ। এই রুইংগা টপিক নিয়ে জঙ্গলের ইয়াং পশুসমাজ যাদের কিনা গাজা পাতা চিবুনো আর জাবর কাটা ছাড়া কোন কাজ নেই তারা সকালবিকাল ‘অ্যাসবুক’ নামে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে আলোচনা করতে করতে মুখে ফেনা তুলে ফেলছে। সকাল বেলা এই নিয়ে এক জ্বালাময়ী পোস্ট দিয়েছে বাঘ্রশাবক অর্থাৎ জঙ্গলের ভবিষ্যত সম্রাট ( যদি বাঘেরা নেক্সট ইলেকশনে ক্ষমতায় যায় আরকি!) । আজকে তাই পুরো জঙ্গলজুড়ে খালি সেটা নিয়ে কথা হচ্ছে। অলরেডি কয়েক হাজার শেয়ার হয়েছে সেই পোস্টটা। যদিও বেশিরভাগ শেয়ার হয়েছে বিভিন্ন শেয়াল আর হায়েনার প্রোফাইল থেকে। তেলবাজিতে শেয়াল আর হায়েনার জুড়ি মেলা ভার।
আসলে রুইংগাদের এই টপিকটা নতুন কিছু না। বেশ পুরোনো । তারা মূলত জঙ্গলরাজ্যের পাশের ‘ পাহাড়রাজ্যের’ বাসিন্দা যুগযুগ ধরে তারা সেখানে বাস করে আসছিল। কিন্তু বেশ কয়েক শতাব্দী ধরে তাদের ওপর অত্যাচার চলছে। পাহাড়রাজ্যের ক্ষমতায় আছে চিতাবাঘের দল। সেখানে নেই কোন ডেমক্রেসি । চিতাবাঘের লেজের ইশারায় চলছে পাহাড়রাজ্য। তারা বেশ কয়েক যুগ ধরেই বলে আসছে বনরুইরা আসলে পাহাড়রাজ্যের বাসিন্দা না। তারা আসলে পাশের জঙ্গলরাজ্যের বাসিন্দা। অন্যায়ভাবে আছে পাহাড়রাজ্যে এবং বনরুইদের মেরে কেটে যেভাবেই পারা যাক খেদিয়ে দিতে হবে পাহাড়রাজ্য থেকে ।আর তাই অন্যায় অবিচারে মাতম পড়ে গেছে পাহাড় রাজ্যে।চিতাবাঘেরা যা খুশি তাই করছে। যাকে খুশি মারছে। ‘ আন্তর্জাতিক পশুসুরুক্ষা’ আইন মেনে চলার কোন লক্ষণই তাদের মাঝে নেই।
বনরুইরা আছে চরম বিপদে। পাহাড়রাজ্যে তাদের উপর চলছে নিধনযজ্ঞ।যারা ‘ টাফ নদী’( দুইরাজ্যের সীমানির্দেশকারী নদী, পার হওয়া অনেক কঠিন বলেই এমন নাম) পার হয়ে জঙ্গলরাজ্যে আসছে তাদের অবস্থা ও শোচনীয়।নেই খাবার , থাকার জন্য নেই জায়গা। বরং জঙ্গলরাজ্যের কিছু পশুর নারকীয় মানবিক আচরণে তারা অতিষ্ঠ। কিছু বন্যশুকর তাদের ইজ্জত নিয়ে টানাটানি শুরু করেছে। বলছে আমাদের নামের আগে ও বন আছে, বনরুইদের নামেও বন আছে। আমাদের সংগে ওদের মিল অনেক। আমরা ওদের বিয়ে করতে চাই।হাস্যকর প্রস্তাব মনে হলেও আজকে সকালে ‘সেক্সি কাব’ যেটা কিনা বাঘ্রশাবকের অ্যাসবুক প্রোফাইল সেখানকার স্ট্যাটাসে ও এমনটাই ইঙ্গিত দেয়া আছে। বাঘরাজা অবশ্য ব্যাপারটাকে খুব বেশি পাত্তা দেননি। বরং’যুবক বয়সে রক্তে টেস্টস্টোরনের দৌড়াদৌড়ি’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন।
রুইংগাদের ওপর অত্যাচার দিন দিন বেড়েই চলছে। পাহাড়রাজ্য ছেড়ে অনেকেই তাই জীবন হাতে নিয়ে জঙ্গলরাজ্যের দিকে আসতে লাগল। এদিকে জঙ্গলরাজ্যের প্রাণীদের মধ্যে ও দলাদলি শুরু হয়ে গেল। কেউ বলল জঙ্গলে এমনিতেই প্রানীর সংখ্যা বেশি। ওরা এলে আমাদের খাবারদাবারে ভাগ বসাবে। কেউ বলল রুইংগারা অসভ্য, গা ভর্তি আইশ ,আমাদের সংগে ওরা যায় না। আবার বন্য শুয়োরের মত অনেকেই ওদের ইজ্জতের উপর হামলা চালানোর সুযোগের অপেক্ষায় থাকল। আবার কিছু কিছু পশু বেশ ভাল । তারা অ্যাসবুকে রোজ স্ট্যাটাস দিতে লাগল যে ‘ আমরা কি মানুষের মত নিষ্ঠুর হয়ে গেছি? আমাদের কি পাশবিকতা বলে কিছু নেই ?’ সেই সব স্ট্যাটাসের সংগে জুড়ে দিতে লাগল টাফ নদীতে ভেসে বেড়ানো মৃত রুইংগাদের লাশের ছবি।
জঙ্গলরাজ্যের বাঘরাজা দেখলেন এভাবে আর চলতে দেয়া যায় না। তিনি পাহাড়রাজ্যের চিতানেত্রি ভংচং টুকি কে বললেন , এর একটা বিহিত করা প্রয়োজন। কিন্তু নেত্রি টুকি যিনি কিনা লুকোচুরি খেলায় এক্সপারট বলেই আন্তর্জাতিক ভাবে টুকি উপাধি পেয়েছেন তিনি রুইংগাদের ব্যাপারে ও লুকোচুরি খেলতে লাগলেন। বললেন , নাহ, রুইঙ্গারা পাহাড়রাজ্যে ভালই আছে। অ্যাসবুকে যেসব লাশ আর কালোবন্দুকের ছবি দেয়া হয়েছে সবই এডিট করা।
নেত্রি টুকি এভাবে লুকোচুরি খেলতেই থাকতেন। কিন্তু আন্তর্জাতিক পশুসঙ্ঘের সভাপতি ওনাকে চেপে ধরলেন । বললেন, যদি সব ঠিকই থাকে তবে আমি আর জঙ্গলরাজ্যের বাঘরাজা একদিন পাহাড়রাজ্যে বেড়াতে যেতে চাই। সরেজমিনে দেখে আসতে চাই পাহাড়রাজ্যের মনোরম প্রাকৃতিক সৌন্দরয। নেত্রি টুকি বলতে চাইলেন , না না এখন আসবেন না। আমাদের আগে রেডি হবার সুযোগ তো দিন। কিন্তু বাঘরাজা কোন কথাই শুনলেন না। পশুসঙ্ঘের প্রধান আর বাঘরাজা বিরাট দলবল আর সৈন্যবাহিনি নিয়ে চললেন পাহাড়রাজ্যে। পথিমধ্যে যখন তারা টাফ নদি পাড়ি দিচ্ছিলেন তখন দেখতে পেলেন টাফ নদির পানি রক্তে লাল হয়ে আছে। এই দেখে পশুসঙ্ঘের প্রধান খুবই রেগে গেলেন। শুরু হল যুদ্ধ । একপক্ষে পশুসঙ্ঘ আর জঙ্গলরাজ্যের বীরসেনানি । অন্যপক্ষে অত্যাচারী নেত্রি টুকির চিতাবাঘের দল। তুমুল সেই যুদ্ধে চিতবাঘেরা শোচনীয়ভাবে পরাজিত হল। অত্যাচারী নেত্রি টুকি আর তার চিতবাঘ সাঙ্গপাঙ্গ দের বন্দি করে আন্তর্জাতিক পশুঅধিকার আইনে বিচারের জন্য নিয়ে যাওয়া হল। পাহাড়রাজ্যের ফিরে এল ডেমক্রেসি আর শান্তি।তারা পেল নতুন রাজা যে সবাইকে ভালবাসে। আর জঙ্গলরাজ্যের কি হল?
বাঘরাজা আর তার জঙ্গলসেনাদের বিপুল সমাদরে দেশে পাঠিয়ে দেয়া হল। পাহাড়রাজ্য পেল তাদের নতুন বন্ধু ‘জঙ্গলরাজ্য’ । পাহাড়রাজ্যের ইতিহাস বইতে তাই বড় বড় করে লেখা হল এই যুদ্ধের নাম ‘জঙ্গলযুদ্ধ’।
তারপর কি হল?
সবাই সুখে শান্তিতে বাস করতে লাগল।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১০:৪০
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×