গ্রামের দিনগুলো মন্দ যাচ্ছে না। শুধু একটা দিক বাদে। এখানে ইলেকট্রিসিটি নেই।সোলার পাওয়ার আছে ।তাও খুব অপ্রতুল।একবিংশ শতাব্দীতে বাংলাদেশে এমন একটা দ্বীপ আছে ভাবতেই অবাক লাগে। মোবাইল এর নেটওয়ার্ক দুর্বল ।থ্রিজি ইন্টারনেট পাওয়াই যায় না। অবশ্য একদিক দিয়েই ভালই লাগছে। সারাদিন দুজনে কাছাকাছি থাকার সুযোগ বেড়েছে।দাদী ও হয়ত ব্যাপারটা বুঝেছেন।বারবার খালি ফাহিম কে বলেন নাতবৌ কে এখানে ঘুরে আয় ,ওখানে ঘুরে আয়।ফাহিম ও সূযোগ পেয়েছে। আর তাই আমাকে খালি বারবার ওর নানা দুষ্টু আবদার পূরন করতে হয়।একপক্ষ যখন এতোটা আদরে শরীর ভরিয়ে দেয় তখন আরেকপক্ষের কি সাড়া না দিয়ে কোন উপায় থাকে! সন্ধ্যার পরে বসে গল্পের আসর।দাদার গল্প, ফাহিমের বাবার গল্প ,দাদীর ছেলেবেলার গল্প, অল্প বয়সে বিয়ে হয়ে যাওয়ার গল্প।গ্রামের মানুষেরা বেশ তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়ে । যেহেতু কারেন্ট বা টিভি নেই ।তাই তাদের খুব বেশি কিছু করার সুযোগ থাকে না। জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণ হিসেবে সমাজ বইতে কেন বিনোদনের অভাব প্রথমে লিখা হয় এখন বুঝতে পারছি। আমরা তাড়াতাড়ি শুতে যাই। কিন্তু এত তাড়াতাড়ি কি আর ঘুম আসে? তাই শুরু হয়ে যায় ফাহিমের দুষ্টমি। শীতের রাত্রে লেপের নিচে আমাকে জড়িয়ে ধরে ফাহিম কানে কানে জানায় সে আমাকে কত ভালোবাসে । চুমোয় চুমোয় ভরিয়ে দেয় আমার নাক,মুখ ,ঠোঁট ।আমি তো জানি এসব আমকে জাগিয়ে তোলার ষড়যন্ত্র। তবু ভাললাগে বিয়ের কয়েক বছর পরে হুট করে এভাবে নববিবাহিতার মত এতটা আদর পেতে।
সেদিন ছিল পূর্ণিমা রাত। আকাশে বিশাল থালার মত একটা চাঁদ উঠেছিল। ফাহিমের ও যেন ঘোর লেগেছিল। আমাকে বলল চল বাগানে হেঁটে আসি। হালকা শীত পড়ছিল। আমি গায়ে একটা শাল চড়িয়ে বের হলাম ওর হাত ধরে। ফকফকে চাঁদের আলোয় পৃথিবী ভেসে যাচ্ছিল। বাগানে বিশাল বিশাল সুপুরি আর নারিকেল গাছের ছায়া ।সারি সারি গাছের মধ্য দিয়ে আমরা হেঁটে যাচ্ছিলাম। নিজেদের যেন মনে হচ্ছিল আদি মানব মানবী।
.।.।.।.।.।.।.।.।।
চলবে
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই নভেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৩৭