somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

অগ্নিপাখি
কংক্রিটের জঞ্জালে একজন সাধারণ মানুষ।

৭১ এ ঢাকার গেরিলা অপারেশনগুলো। পর্ব ০১ -মিশন ইন্টারকন

০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৩ ভোর ৪:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কিছু পূর্ব কথাঃ
এই বছরের মার্চ এর প্রথম দিকের কথা। এপ্রিল থেকে মাস্টার্স ফাইনাল, পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরির আবেদন করছি। সেই কাজেই একটা এন জি ও তে সি ভি দেবার জন্য বনানী যাওয়া। যাই হোক কাজ শেষ করে কাকলী বাস স্ট্যান্ড এ দাড়িয়ে আছি। এইখানে এমনিতেই অনেক প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি। আবার এই সময়টায় ছাত্র ছাত্রীদের ভিড় থাকে অনেক। অনেকটা কৌতূহলের বশেই এগিয়ে গেলাম বাস স্ট্যান্ড এর সামনেই ফুটপাথের একটা টং দোকানে যেখানে পাশেরই একটা নামকরা প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির ছেলে-মেয়ে আড্ডা দিচ্ছিল। এগিয়ে গিয়ে নিজের পরিচয় দিলাম, বললাম আমার মাস্টার্স এর একটা পেপার এর জন্য একটা রিসার্চ করছি- বর্তমান প্রজন্মের মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে সচেতনতা, জানার আগ্রহ কি রকম তার উপর। তাদের কে প্রশ্ন করবার পর যে উত্তর গুলো পেলাম- তা শুধু হতাশাব্যাঞ্জকই নয় আমাকে অবাক করেছে। তাদের কি একটুও জানতে ইচ্ছা করে না নিজেদের গৌরবময় ইতিহাস সম্পর্কে, আমাদের সবচেয়ে বড় অর্জন মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে। বেশিরভাগ প্রশ্নের উত্তরই তারা দায়সারাভাবে দিয়েছিল এবং এড়িয়ে গিয়েছিল। আমি সবার কথা বলছি না- কিন্তু এখন বেশিরভাগ প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির ছাত্র ছাত্রীর এই অবস্থা। তারা হয় জানতে চায় না আর না হলে এগুলোকে নিয়ে আলোচনাকে আতলামি আর ব্যাকডেটেড মনে করে। আগেই বলেছি- মুক্তিযুদ্ধ আমার অন্যতম আগ্রহের বিষয়। আমি বলবনা আমি অনেক কিছু জানি কিন্তু প্রতিদিনই জানার চেষ্টা করি, বোঝার চেষ্টা করি। ঢাকার গেরিলা অপারেশন সম্পর্কে প্রথম পড়ি- শহীদ জননী জাহানারা ইমাম এর ৭১ এর দিনগুলি বইতে এরপর মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক অনেক বই আর চলচ্চিত্রে এই গেরিলাদের উল্লেখ দেখি। ২ নম্বর সেক্টর এর কিংবদন্তী মেজর খালেদ মোশাররফ এই সাহসী গেরিলাদের বলতেন- কোন স্বাধীন দেশ জীবিত গেরিলা চায় না; চায় রক্ত স্নাত শহীদ। তাঁর মতে- এটা একটা দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধ হবে। এর জন্য দরকার রেগুলার আর্মির পাশাপাশি গেরিলা বাহিনী। আমার মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রথম লেখা এটা। আমার বলব না- বই থেকে পড়ে তারপর লেখা। এই পর্বের সব লেখাগুলোই সেলিনা হোসেন এর ৭১ এর ঢাকা বই থেকে সংক্ষেপিত করে নিজের ভাষায় লেখা হয়েছে। অনেকেই এখন বই কিনতে চান না। নাগরিক ব্যাস্ততায় হয়ত বই পড়া হয়ে উঠে না। অনেক তরুন তরুণীই এখন দিনের একটা বড় সময় ব্যয় করে ফেসবুক আর ব্লগ এর জগতে। তাদের কেউ যদি এই লেখা পড়ে মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় ইতিহাস আর অর্জন সম্পর্কে সামান্যতম আগ্রহী হন তাহলেই আমার এ পরিশ্রম সার্থক।

মিশন ইন্টারকনঃ
৭১ এর মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে পাকিস্তানি জানোয়ারদের কাছে ত্রাস ছিল “ক্রাক প্লাটুন”। পুরো মুক্তিযুদ্ধের সময়ে কিছু অসাধারণ সাহসী অপারেশন সম্পন্ন করে এর গেরিলারা। তাদের প্রথম সাফল্য ছিল তৎকালীন হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল (পরবর্তীতে হোটেল শেরাটন এবং বর্তমান হোটেল রূপসী বাংলা) এ গ্রেনেড হামলা।


মে মাসের শেষের দিকে আগরতলার এক ক্যাম্পে মেজর খালেদ মোশাররফ এর নির্দেশে একটি সুইসাইড স্কোয়াড গঠন করা হয় এবং সিদ্ধান্ত হয় এই স্কোয়াড এর ১৬ জনের একটি দলকে ঢাকায় পাঠানো হবে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৬ জনের দলটি ঢাকার দিকে রওয়ানা দেয়। এই ১৬ জনের প্রত্যেক এর কাছে ৪ টি গ্রেনেড ও ২০ পাউনড বিস্ফোরক ছাড়া অন্য কোন অস্ত্র ছিল না।
ঢাকায় তখন বিশ্বব্যাংক মিশন পূর্ব পাকিস্তান সফরে। ইয়াহিয়া সরকার তখন তাদের এইটা বোঝাতে ব্যাস্ত যে পূর্ব পাকিস্তান এ যা হচ্ছে তা কিছু বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা গ্রহন মাত্র!!
বিশ্বব্যাংক মিশন এর সবাই তখন অবস্থান করছেন হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল এ- যা মার্চ এর শুরু থেকেই ছিল আন্তর্জাতিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্র। এই হোটেলেই ৯ জুন, ১৯৭১ এ সামরিক শাসকেরা বিদেশি সাংবাদিক ও সাহায্যদাতা সংস্থার প্রতিনিধিদের সম্মানে ডিনার এর আয়োজন করে। গেরিলারা এ সময়কেই আক্রমণের উপযুক্ত সময় নির্ধারণ করে।
শুধুমাত্র গ্রেনেড ছুড়ে আতঙ্ক সৃষ্টির জন্য ৬ জনের একটি দল গঠন করা হয়। এই দলে ছিল- বাদল, চুল্লু, স্বপন, মায়া, জিয়া এবং আলম। ওইদিন ৬.৩০ মিনিট এ এরা গুলশান থেকে একজন অবাঙ্গালীর গাড়ি হাইজ্যাক করে। এরপর সিদ্ধেশ্বরীর এক বাসায় এসে ৮ টি গ্রেনেড নেয়। এরপর হোটেলের সামনের দিকে গাড়ি থামিয়ে তিনজন নামে এবং দেয়াল টপকিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে। তখন হোটেল এর সামনের দিকে কয়েকটি বড় গাছ ছিল। হোটেলের মুল প্রবেশপথে তিনটি গ্রেনেড ছোড়া হয়। একটি গ্রেনেড ছোড়া হয়েছিল হোটেলে রাখা বিশ্বব্যাংক এর গাড়ির উপর এবং অপর দুটি হোটেলের সামনের বারান্দার দুপাশে।
ইন্টারকন এ হামলা শেষে গেরিলারা গাড়ি নিয়ে মুসলিম লীগ নেতা ও শান্তি কমিটির কর্মকর্তা এ.কিউ.এম. শফিকুল ইসলাম এর বাসায় তিনটি গ্রেনেড ছোড়ে। এরপর দৈনিক পাকিস্তান ও মর্নিং নিউজ পত্রিকা অফিসেও গ্রেনেড হামলা হয়। গেরিলারা তারপর পুরানা পল্টনের গলিতে গাড়ি ফেলে নিজেদের আশ্রয়ে ফিরে যায়।
এই সফল অপারেশন এর মাধ্যমেই শুরু হয় বর্বর পাকিস্তানি জানোয়ারদের বিপক্ষে ঢাকার গেরিলা অপারেশন। (চলবে)
( ২য় পর্ব ঃ অপারেশন গ্যানিজ ও ভোগ)

১৭টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×