চলচ্চিত্রের অসংখ্য ঘরানার মধ্যে আমার বরাবরই পছন্দের ঘরানা হল ক্রাইম থ্রিলার, হরর, রিভেঞ্জ থ্রিলার ও টুইস্ট মুভি । এর মধ্যে আবার সবচেয়ে বেশি পছন্দ হল টুইস্ট মুভি। টুইস্ট মুভির মজা হল এর শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত টান টান উত্তেজনা থাকে কাহিনীতে আর শেষের দিকে পুরো মুভির কাহিনী এমনভাবে মোড় নিবে যে দর্শকরা বিস্ময়ে হতবাক হতে বাধ্য। হলিউডের এই ঘরানার কিছু বিখ্যাত চলচ্চিত্র আশা করি সব চলচ্চিত্র প্রেমিকদেরই দেখা আছে – ফাইট ক্লাব , ইউসুয়াল সাস্পেক্তস , প্রাইমাল ফিয়ার, দ্যা সিক্সথ সেন্স, দ্যা মেশিনিস্ট, সাটার আইল্যান্ড, বেসিক ইন্সটিঙ্কটস , ডেভিল, ডেভিলস এডভোকেট, এঞ্জেল হার্ট। যাই হোক এই যে বললাম রিভেঞ্জ টুইস্ট থ্রিলার- এই ঘরানার চলচ্চিত্র বানানোর জন্য দক্ষিন কোরিয়ার পরিচালকেরা কিন্তু একটা আলাদা স্থান করে নিতে পেরেছেন । দক্ষিন কোরীয় রিভেঞ্জ টুইস্তেড থ্রিলার সম্পর্কে একটা কথাই বলা যায় – “ Revenge is best when served cold.”
অনেক পাঠকেরই নিশচই কোরিয়ান “রিভেঞ্জ থ্রিলার” – “ওল্ড বয়” দেখা আছে। আমিও এটি দেখি বছরখানেক আগে এবং “নো মারসি” দেখার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত এটিই ছিল আমার দেখা সেরা রিভেঞ্জ থ্রিলার। কিন্তু কিছুদিন আগে যখন ২০১০ এ মুক্তি প্রাপ্ত “নো মারসি” দেখি তখন আগের সব ধারনাই পাল্টে যায় আমার। এটি পরিচালনা করেছেন কিম হিওং জুন। এই চলচ্চিত্রের টুইস্টে যে আপনার জন্য কি অপেক্ষা করছে আপনি ধারনাও করতে পারবেন না। এবং চলচ্চিত্রটি শেষ করে আপনিও শিউরে উঠবেন প্রতিশোধের নির্মমতা দেখে।
যাক, অনেক কথা বলে বিরক্ত করে ফেললাম। এইবার মূল ঘটনায় আসি । কাং মিন হো – একজন কোরিয়ার একজন নামকরা ফরেনসিক ডাক্তার । স্ত্রী মৃত এবং একমাত্র মেয়ে আমেরিকাতে আছে গত তের বছর ধরে। মৃত শরীরদের নিয়ে অনেকদিন কাটানোর পর আজ কাং খুব খুশি কারন সে এ কাজ থেকে শেষ পর্যন্ত অবসর নিচ্ছে এবং অনেকদিন পর তার প্রিয় মেয়ের সাথে সময় কাটাবে । কিন্তু ঠিক সেই সময়েই এক ভয়াবহ নির্মম খুনের ঘটনা ঘটে। স্থানীও একটি নদীর ধারে একটি মেয়ের লাশ পাওয়া যায়- লাশটির শরীর থেকে মাথা, দুটি হাত, দুটি পা বিচ্ছিন্ন করে অত্যন্ত নির্মম ভাবে হত্যা করা হয়েছে তাকে। ময়নাতদন্ত করবার জন্য ডাক পড়ে ডাঃ কাং মিন হো এর। এই কেসের প্রাথমিক সন্দেহভাজন হিসেবে আটক করা হয় লি সং হো নামের এক পরিবেশ কর্মীর যে তার অপরাধ সহজেই শিকার করে গোয়েন্দা কর্মকর্তা মিন সিও ইয়াং এর কাছে যে কিনা আবার ডাঃ কাং মিন হো এর প্রাক্তন ছাত্রী । এই পর্যন্ত সব স্বাভাবিক লাগছে আপনাদের কাছে তাই না পাঠক !! কিন্তু না- কাহিনীতে উত্তেজনা তখনই আসে যখন ডাঃ কাং কে খুনি লি সিং হো বলে যে – তার মেয়েকে সে আগেই অপহরন করেছে এবং তার একমাত্র মেয়েকে ফিরে পাবার একটা পথ বাতলে দেয় খুনি- “আমার বিরুদ্ধে যত প্রমাণ পেয়েছ, তার সবগুলোকে নিশ্চিহ্ন করে আমাকে সম্পূর্ণ নির্দোষ ব্যক্তি হিসেবে জেল থেকে বের করো, তা নাহলে তোমার একমাত্র মেয়ের চেহারা তোমার আর জীবনেও দেখা হবে না!”
রাগে, ক্ষোভে, দুঃখে একরকম পাগল হয়ে যান ডাঃ কাং । তিনি নিজে আইনের লোক- কিভাবে তিনি একজন স্বীকৃত খুনি কে নির্দোষ প্রমান করবেন ? কিন্তু এটা করা ছাড়া আর কোন উপায় নেই তার প্রিয় মেয়েকে ফিরে পাবার। খুনি তার সাথেই বা এই খেলা খেলছে কেন?
যাক, অনেক কিছু বলে ফেললাম । প্রশ্ন গুলোর উত্তর জানতে বসে পড়ুন “নো মারসি” দেখতে। এতদিন পর্যন্ত যারা “ওল্ড বয়” কে মনে করতেন টুইস্টেড রিভেঞ্জ চলচ্চিত্রের মধ্যে সেরা- তাদের ধারনা বদলে যাবে “নো মারসি” দেখলে।
একজন ভালো পরিচালক, ভালো কাহিনী ও ভালো আবহসঙ্গীত যে একটা চলচ্চিত্র কে কতটা উপভোগ্য করতে পারে তার উদাহারন “নো মারসি”।
দেরি না করে এখনই দেখে ফেলুন।
হ্যাপি ওয়াচিং।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:৩৭