somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইন্টারস্টেলারঃ নোলান এর মহাকাব্যিক আখ্যান

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

“We used to look up at the sky and wonder at our place in the stars. Now we just look down and worry about our places at the dirt.”
“Mankind was born to earth. It was never meant to die here.”



ভাবুনতো এমন একটি পৃথিবীর কথা যা প্রচণ্ড ধূলিঝড়ে বিধ্বস্ত, খাবারের জন্য সংগ্রাম সবখানে কেননা অল্প কিছু শস্য ছাড়া সব শস্য মৃত। ভাবুন এমন একটি পৃথিবীর কথা- পদার্থবিদ, বৈমানিক, মহাকাশবিজ্ঞানীরা যেখানে গুরুত্বহীন। এই খাদ্যাভাবে বিপর্যস্ত পৃথিবী শুধু ভালো কৃষক চায় যারা অর্জিত কৃষি জ্ঞান দিয়ে শুধু খাদ্য উৎপাদন করবে। “ইন্টারস্টেলার” নামক মহাকাব্যর যাত্রা এখান থেকেই শুরু।




নাসা এর সাবেক বৈমানিক ও অ্যারোনটিকাল ইঞ্জিনিয়ার কুপার তার দু সন্তান ও তার অকাল মৃত স্ত্রীর বাবা কে নিয়ে কৃষক জীবন যাপন করছে। তার মেয়ে মারফ- যে কুপার এর মতই মেধাবী এবং সে ভালবাসে গণিত ও অনন্ত মহাকাশ। যুক্তরাষ্ট্রের চন্দ্রবিজয় কে যখন পাঠ্যবইয়ে প্রোপ্যাগান্ডা হিসেবে উল্লেখ করা হয়- যে প্রোপ্যাগান্ডা এর লক্ষ্য ছিল তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নকে অর্থনৈতিক ভাবে পঙ্গু করা- এ বিতর্কে চন্দ্রবিজয় এর পক্ষে কথা বলায় তার সহপাঠীদের সাথে হাতাহাতি হয়। মারফ সবসময় তার ঘরে অন্য কোন সত্ত্বার উপস্থিতি লক্ষ্য করে যাকে সে কখনও দেখতে পারে না; তার ভাষায় – “ It’s the ghost.” কিন্তু কুপার তার মেয়েকে বলে- “Don’t tell me you are afraid of some ghost.” কিন্তু ঘটনাচক্রে কুপার সেই ঘরের ধুলোর মধ্যে যখন “বাইনারি সঙ্কেত” পায় তখন সে দৃঢ় বিশ্বাসে বলে –“It’s not a ghost; It’s gravity.” এই সঙ্কেত এর মাধ্যমেই কুপার ও মারফ একটি “কো- অরডিনেট” পায় যেখানে গিয়ে তারা আবিষ্কার করে যে লোকচক্ষুর অন্তরালে “নাসা” এখনও কঠোর গোপনীয়তার মধ্যে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে।





“ইন্টারস্টেলার” এর মূল কাহিনী শুরু মূলত এখান থেকেই। বৃদ্ধ পদার্থবিজ্ঞানী ডক্টর ব্রান্ড কুপারকে বলেন নাসা এখনও গোপনে মহাকাশ গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে। পৃথিবীর এ বিধ্বস্ত অবস্থা থেকে মানবজাতিকে রক্ষার জন্য তারা বাসযোগ্য অন্য গ্রহের সন্ধান চালিয়ে যাচ্ছেন এবং আরও বলেন এইরকম বাসযোগ্য তিনটি গ্রহের সন্ধান ইতিমধ্যে পাওয়া গিয়েছে। শনি গ্রহের বলয়ের কাছে ৪৮ বছর পূর্বে আবিষ্কার হওয়া একটি “ওয়ার্ম হোল” এর কথা বলেন যা দিয়ে পৌঁছে যাওয়া সম্ভব অনেক আলোকবর্ষ দুরের সম্পূর্ণ ভিন্ন এক গ্যালাক্সিতে এবং তা নিমেষের মধ্যেই অবিশ্বাস্য দ্রুততায়। সেই গ্যালাক্সির “গার্গেনচুয়া” নামক এক অতি বিশাল “কৃষ্ণ গহবর” এর কাছেই অবস্থান এই বাসযোগ্য তিনটি গ্রহের। সেই গ্যালাক্সির বারটি গ্রহের মধ্যে তিনটি বাসযোগ্য গ্রহের উদ্দেশ্য দশ বছর পূর্বেই “ল্যাজারাস মিশন” এর অধীনে রওনা হয়ে গিয়েছেন নভোচারী মিলার, এডমণ্ডস এবং ডক্টর মান।





আর এভাবেই কুপার এই অভিযানের সাথে যুক্ত হয়ে যায়- তার আদরের মেয়ের শত বাধা সত্ত্বেও। মারফ বারবার বলে যে তার “Ghost” কুপারকে এই অভিযানে যেতে মানা বলছে। মোর্স কোড এর মাধ্যমে কুপার এর উদ্দেশ্য তার মেয়ের মাধ্যমে শুধু একটি বার্তাই পাঠাচ্ছে- “STAY”. তবুও অজানাকে জানার উদ্দেশ্য কুপার- প্রাণীবিদ অ্যামিলিয়া ব্র্যান্ড, ভূ তাত্ত্বিক ডক্টর ডয়েল, পদার্থবিদ রোমিলি এবং দুই রোবট টার্স ও কেইস সহ মহাকাশযান “এনডুরেন্স” কে নিয়ে শুরু করে এক অনিশ্চিত যাত্রা। এই অনিশ্চিত যাত্রা, নভোচারীদের গ্রহগুলোতে মানববসতি স্থাপনের সম্ভাব্যতা যাচাই করতে গিয়ে বিভিন্ন ভয়াবহ প্রতিকূল পরিস্থিতির মুখোমুখি হবার মধ্যে দিয়েই এগিয়ে যায় এ মহাকাব্য। এই ধরনের যাত্রা যাকে বলা হয় “ইন্টারস্টেলার ট্রাভেল” বা এক গ্যালাক্সি থেকে কোটি কোটি আলোকবর্ষ দূরে সম্পূর্ণ ভিন্ন গ্যালাক্সিতে যাত্রা- যা “ওয়ার্ম হোল” এর মাধ্যমে অবিশ্বাস্য কম সময়ে সম্পন্ন করা যায়। কারন এখানে সময়ের বিপরীতে দুটো স্থানের বিশাল দূরত্বকে সঙ্কুচিত করা সম্ভব।







পদার্থবিজ্ঞান, মহাকাশবিজ্ঞানের অনেক কঠিন তত্ত্ব সমৃদ্ধ সাম্প্রতিক চলচ্চিত্র ইতিহাসের এ অসাধারণ আখ্যানটি প্রথমবার দেখে হয়তো অনেক কিছুই বোঝা সম্ভব নয়। ক্রিস্টোফার নোলান এর চিত্রনাট্য লিখেছেন বিখ্যাত তাত্ত্বিক পদার্থবিদ ডক্টর কিপ স্টেফান থর্ণ (যিনি কৃষ্ণগহ্বর ও ওয়ার্ম হোল এর একজন বিশেশজ্ঞ)এর সাহায্য নিয়ে। ডক্টর কিপ স্টেফান থর্ণ এই চলচ্চিত্রের ভি.এফ.এক্স উপদেষ্টা হিসেবেও কাজ করেছেন। তাই এই চলচ্চিত্রটি পরিপূর্ণ ভাবে উপভোগ করবার জন্য কিছু বিষয় সম্পর্কে সাধারণ ধারনা থাকা উচিত। (কৃষ্ণগহবর, ওয়ার্ম হোল, গ্রাভিটেশনাল টাইম ডিলেসন, গ্রাভিটেশনাল সিঙ্গুলারিটি, স্পেইস টাইম, বাল্ক, টু/থ্রি ডাইমেনশনাল স্পেইস, ইভেন্ট হরাইজন)।



“ইন্টারস্টেলার”- এটি কি শুধুই মহাকাশবিজ্ঞান ভিত্তিক ও পদার্থবিজ্ঞান এর জটিল তত্ত্ব সমৃদ্ধ চলচ্চিত্র? আমার উত্তর “না”। প্রায় তিন ঘণ্টা বিস্তৃত এই চলচ্চিত্রে দেখানো হয়েছে- বেঁচে থাকবার নিরন্তর সংগ্রাম, শত প্রতিকূলতা মোকাবেলা করেও এগিয়ে যাওয়া এবং সর্বোপরি বাবা ও মেয়ের চিরন্তন ভালোবাসা। এ চলচ্চিত্রের আরও একটি জাদুকরী আকর্ষণ হচ্ছে হান্স জিমার এর অসাধারণ এবং অসাধারণ আবহ সঙ্গীত। পদার্থবিজ্ঞান এর সূত্রগুলোর গভীরে না হয় নাই যাওয়া হল- কিন্তু শুধুমাত্র এর জাদুকরী আবহ সঙ্গীতগুলো শোনার জন্য হলেও এই অসাধারণ চলচ্চিত্রটি দেখা উচিত। এই চলচ্চিত্রের শেষ দৃশ্য কুপার ও তার মেয়ে মারফ এর কথোপকথন প্রত্যেক কে কাঁদাবে। “গ্রাভিটেশনাল টাইম ডিলেসন” এর প্রভাবে ত্রিশোর্ধ্ব কুপার ও মৃত্যুশয্যায় শায়িত তার শতবর্ষী মেয়ে মারফ এর কথোপকথনঃ

Murph: I knew you would come back.
Cooper: How?
Murph: Because my dad promised me.
Cooper: I am here now Murph.. I am here.
Murph: No. No parent should have to watch their own child die. I have my kids here for me now.

অসাধারণ এবং অসাধারণ উপভোগ্য আরেকটি নোলান আখ্যান।

ছবি ঃ সংগৃহীত
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:০৯
১৯টি মন্তব্য ১৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬



এ বছরের পদ্মশ্রী (ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা) পদকে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের রবীন্দ্র সংগীত এর কিংবদন্তি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে।

আমরা গর্বিত বন্যাকে নিয়ে । ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×