একজন ধর্ষকের কী সাজা হওয়া উচিত তা উঠে এসেছে একজন যৌন নিপীড়িত মেয়ের জবানিতে। ঠিক ধর্ষণ বলতে যা বোঝায় মেয়েটি তার শিকার হয়নি সত্যি, কিন্তু মেয়েটি তার অনুভূতি ব্যক্ত করেছে আমার কাছে। ধর্ষণ কী শুধুই শরীরী বিষয় নাকি আরো কিছু জড়িত আছে এখানে, সে ব্যাপারেও মেয়েটিকে প্রশ্ন করে হয়েছিল এবং মেয়েটি তার মতামত আমাকে জানিয়েছে।
***উল্লেখ্য যে মেয়েটির ব্যক্ত কথামালাই এখানে প্রকাশিত হয়েছে, কোন বিতর্ক শুরু করার চেষ্টা করা হয়নি। আর মেয়েটি তার সাক্ষাৎকার ব্লগে প্রকাশ করতে রাজি হলেও তার পরিচয় প্রকাশ করতে রাজি নয়।***
একজন ধর্ষকের কী সাজা হওয়া উচিত?পর্ব-১
নিপীড়িত মেয়েটি আমকে তাঁর কাহিনী বলে যাচ্ছিলেন.... এক পর্যায়ে তিনি বললেন যে নিপীড়ণকারী তাঁর আত্মীয় (!!)। আমি প্রচন্ড অবাক হই। আমি তাঁকে জিজ্ঞাসা করি সে, এটা কীভাবে সম্ভব হল? তিনি তাঁর আত্মীয়ের (?) হাতে নিপীড়িত হয়েছেন অথচ পারিবারিকভাবে বা আইনগত কোন পদক্ষেপ তিনি কেন গ্রহণ করলেন না কেন?
উত্তরে মেয়েটি যা জানান, তা আরও বিস্ময়কর। নিপীড়নকারী নাকি তাঁরই বাড়িতে এখনও বাস করে এবং সম্ভবত বেশ নিরাপদেই!!!
মেয়েটি এই ব্যাপারে আদালত না হোক নিদেনপক্ষে পারিবারিক বিচারের পক্ষপাতি ছিলেন এবং এই বিষয়ে সরব হতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর পরিবারের ২ জন সদস্যকে ব্যাপারটা জানানোর পর সদস্য ২জন কঠোর গোপনীয়তার সাথে ব্যাপারটি চেপে যান। পারিবারিক ও সামাজিক সমস্যা ও দৃষ্টিভঙ্গির দোহাই দিয়ে তাঁরা মেয়েটিকে
ব্যাপারটি প্রকাশ না করতে অনুরোধ করেন এবং একই সাথে চাপ সৃষ্টি করেন।
তাঁরা নিজেদের দায়িত্বে নিপীড়নকারীকে জুতোপেটা করেন, কিন্তু ব্যাপারটা গোপনই থেকে যায়। নিপীড়নকারী অপরাধ স্বীকার করলেও মেয়েটির কাছে এই শাস্তি অপ্রতুল মনে হয়। মেয়েটি এখনো নিজের ঘরে থাকতে নিরাপদ বোধ করে না একইসাথে চিৎকার করে সমাজের কাছে বিচার চাইতে পারে না। কারণ সে দেখেছে ধর্ষিতার প্রতি অনেক প্রগতিশীল (?) মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি কেমন হয়; সে বুঝতে শিখেছে এই পুরুষশাসিত সমাজের (আইনের চোখে নয়) চোখে ধর্ষিতার অপরাধ ধর্ষকের সমান কিংবা ক্ষেত্রবিশেষে বেশি!!!
তাকে এই সমাজের সামাজিক শান্তি নিয়ে বেঁচে থাকতে হলে সারাজীবন, ধর্ষিত হয়ে বিচার না পাবার মানসিক অশান্তি নিয়েই বেঁচে থাকতে হবে।
আর এই নীরবতার সুযোগ নিয়ে কতিপয় জানোয়ার নিয়ত যৌন নিপীড়ন ও হয়রানি চালিয়ে যাচ্ছে মেয়েদের উপর। যেখানে নিজের পরিবারের সদস্য থেকে শুরু করে গৃহপরিচারিকা, সহপাঠি, ছাত্রী সবাই অন্তর্ভূক্ত!! ইন্টারনেট ও মোবাইলের মাধ্যমে তথ্য-প্রযুক্তির ব্যাপক ব্যাবহারের ফলে বাস্তব ও পরাবাস্তব দুই জগতেই মেয়েদেরকে হয়রানি ও নিপীড়ন করার নিত্য নতুন পদ্ধতি উদ্ভব করছে এই জানোয়ারের দল।
আজকের পর্ব শেষ করতে চাই একটি পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন দিয়ে। যে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে ঢাকা শহরের ২টি বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন নিপীড়নের ঘটনা ঘটেছে এবং কী সুকৌশলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম (!) রক্ষার্থে ব্যাপারগুলোকে গোপন রাখা হয়েছে!
পত্রিকার প্রতিবেদন : Click This Link
বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকে দেশের সেরা সন্তানেরা, বিশ্ববিদ্যালয় হল জাতির বিবেক, এখান থেকেই শুরু হয়েছিল আমাদের ভাষা আন্দোলন। সেই বিশ্ববিদ্যালয়ই যখন এইভাবে নিপীড়ন ও ধর্ষনের ঘটনা গোপন করে মতান্তরে নিপীড়নকারী বা ধর্ষককে উৎসাহ দেয়; তখন মেয়েটি বা মেয়েটির মত হাজারজন নিপীড়িত মানুষের হতবাক-নির্বাক হয়ে তাকিয়ে থাকা ছাড়া আর কী-ই বা করার থাকতে পারে???
বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুরা যখন নিপীড়কের বিরূদ্ধে জেগে ওঠে, "সানি"র মত আরো হাজারো জানোয়ারের বিচারের দাবীতে প্রকম্পিত করে প্রাঙ্গণ; তখন সেই মেয়েটি ভাবে, "কেউ তো আছে বিচার চাওয়ার!!" কিন্তু সাথে সাথেই শিউরে ওঠে এই ভেবে যে সেই বিচার চাওয়া মিছিলেই হয়তো লুকিয়ে আছে আরো কয়েক শত কালো হাত..... তার দেহকে লোলুপভাবে লুফে নিতে..... তাকে ছিঁড়ে খেতে....