somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অসমাপিকা ,১১শ পর্ব

২৬ শে নভেম্বর, ২০১১ রাত ৯:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


নবম ও দশম পর্ব Click This Link
বাসে পাশাপাশি বসে আছে লীনা আর দীপু। আজ দুপুরে পুকুর পাড়ে দীপুর কথাগুলো দুজনকে অদৃশ্য রেশম কোমল আবরনে ঢেকে দিয়েছে । লীনা সেটা ভেদ করে বাসের জানালায় চোখ মেলে দূরে তাকিয়ে, যেন স্পর্শের খুব কাছের মানুষটা থেকে দূরে নিজেকে ভাসিয়ে নিয়ে যেতে চাইছে । চোখ বন্ধ দীপুর, পেছনে হেলান দিয়ে আছে ।
কেমন করে দীপু এতটা আবেগপ্রবন হয়ে পড়ল আজ !
আড়ষ্ট ভাব কাটাতে লীনা কথা শুরু করলো; অ্যাকশন এইড অফিসের বাবুর্চীর রান্নার হাত ভাল , ওরা আপ‌্যায়ন করেছে আন্তরিকতা নিয়ে ইত্যাদি বলে হালকা করতে চাইল পরিবেশ । চোখ বন্ধ রেখেই হু হা করছিল দীপু ।
হঠাৎ চোখ খুলে সরাসরি লীনার দিকে চাইল; বলল, ' পুকুরের কাছে আজ কি কি বলে ফেলেছি , কি যে হয়েছিল আমার'।
লীনা, 'থাক্ না ওসব কথা । বাইরে দেখ, সবুজের কত প্রকার ভেদ ; গাঢ়, হালকা, কালচে, হলুদ, উজ্জ্বল চকচকে কত রকমের সবুজ । আবার দেখো বৃষ্টি ঝরে গেলে পরে পাতারা কেমন স্নিগ্ধ সলাজ সদ্যস্নাতা রূপ দারন করে । প্রকৃতি নানা রঙের ওপর তার সযত্ন পরশ বুলিয়ে দিয়ে কেমন বদলে দেয়; মনের রঙের ক্ষেত্রেও সেটা প্রযোজ্য '
দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল দীপু । তারপর বলল , ' আমার ওপর পারিবারিক কিছু দায়িত্ব আছে আমি এড়াতে পারি না । আমার অবস্থানের কোন ছেলে পারে না । কি করে আবেগ প্রবন হই ? আমাদের কি মানায় ওসব ?'
লীনা, ' হু , আমারও , আমি তিন বোনের বড় জন । পুত্রহীন পিতামাতার প্রথম সন্তান , অবলম্বন তাদের । চেষ্টার কোন ত্রুটি করতে চাইনা আমি '।
দীপু, 'সবচেয়ে নিষ্ঠুরতা কি জানো ? আমাদের মত লেখা পড়া করা মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে মেয়েদের মানসিক গড়ন এমন যে তারা হৃদয়বৃত্তিকে এড়িয়ে যেতে পারে না । রবীন্দ্র, নজরুল, সুনীল, সমরেশ রা জীবনের বিভিন্ন বাঁকে এদের বিভিন্ন দিক্ নির্দেশনা দেন । তারপর তাদের অভীরুচি অন্য ধাঁচের হয়ে যায় । অথচ জীবনের হিসেবী জালের মধ্যে ছটফট করে প্রান । প্রতি পদক্ষেপে এদেরকে সতর্ক থাকতে হয়; তা নাহলে বাস্তবের রূঢ়তা ওদের ছুড়ে ফেলে দেয় গভীর নিকষ আস্তাকুড়ের ভেতর । বিশেষ করে ছেলে হয়ে জন্মানো আমাদের দেশের মধ্যবিত্ত পরিবারে বিভিন্ন ধরনের দায়িত্বের বোঝা নিয়ে জন্মানো ছাড়া আর কিছু নয় । স্বনির্ভর হতে হতে অনেক অনুভুতি শুকিয়ে নিষ্প্রান কাঠ হয়ে যায় ; রোমান্টিক মনটা পেশাগত জটিলতায় চাপা পড়ে যায় । দীর্ঘদিনে আচ্ছাদিত দূর্বাঘাসের মত ফ্যাকাশে রুগ্ন অবস্থা ।
সময়ের সিদ্ধান্ত অসময়ে নিতে গিয়ে সমস্যার অন্তহীন ঘূর্ণিপাক ।

ধনী পরিবারের ছেলেদের এতসব দু:চিন্তা করতে হয় না । তাদের জন্য হৃদয়বৃত্তিকে প্রশ্রয় দেয়া সহজতর । দুর্ভাগ্যজনক ভাবে তারা হৃদয়ের গভীর উপলব্ধিকে ঠিক অনুধাবন করতে পারে না । কিছু ব্যতিক্রম যে নেই তা নয় ; যেমন তোমার রাকিব ভাই । ধনী পরিবারের সন্তান হয়েও তার মধ্যে সুসংহত শালীন একটা বোধ আছে । শুনেছি যে উনি একটু অন্যরকম । কে জানে কোথায় কোন্ মানবীর জন্য এক মানবের আত্মনিবেদন কিনা । নিরন্তর সাধনা । '
লীনা অবাক হয়ে যায় দীপুকে এমন করে এত কথা বলতে দেখে । বলে , আমাদের একাডেমিক দিকে মনোযোগ দেয়া দরকার । লেখা পড়া শেষ না করে আর অন্য কোন কথা নয় ; আবেগের ঝুড়ি ডালা বন্ধ করে রেখে দিতে হবে '।
কেমন কঠোর শোনালো কথাগুলো । দীপু জানে লীনাকে তাই এ সব কথার পরেও কেন যেন খুব ইচ্ছে করল লীনার হাতটা একটু খানি ধরতে । পারল না । অনেক ইচ্ছা পরিস্থিতির কারনে ত্যাগ করতে হয় , এটাই ভব্যতা এটাই সভ্যতা । শুধু গভীর চোখে চেয়ে রইল লীনার মুখের দিকে ।
মনে মনে বলে লীনা, 'দীপু তুমি আর কিছু নাইবা দিলে , দুচোখের গভীর মায়ায় যে বন্ধনে জড়িয়েছো সেই ঢের, সে আমার অনেক' ।
পথ দ্রুত ফুরিয়ে আসে; দুজন দুজনকে মনে প্রানে যতটা কাছে টানে ততটাই তূরত্ব সৃষ্টির প্রচেষ্টা প্রকাশ করতে করতে ফিরে যায় পুরোন চেনা ঠিকানায় ।
চলবে.....
পরের অধ্যায় Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:৩৫
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইসরায়েল

লিখেছেন সাইফুলসাইফসাই, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৪৮

ইসরায়েল
সাইফুল ইসলাম সাঈফ

এ মাকে হত্যা করেছে ইসরায়েল
এ বাবাকে হত্যা করেছে ইসরায়েল
নিরীহ শিশুদের হত্যা করেছে ইসরায়েল
এই বৃ্দ্ধ-বৃদ্ধাদের হত্যা করেছে ইসরায়েল
এ ভাইক হত্যা করেছে ইসরায়েল
এ বোনকে হত্যা করেছে ইসরায়েল
তারা মানুষ, এরাও মানুষ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

গ্রামের রঙিন চাঁদ

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১২


গ্রামের ছায়া মায়া আদর সোহাগ
এক কুয়া জল বির্সজন দিয়ে আবার
ফিরলাম ইট পাথর শহরে কিন্তু দূরত্বের
চাঁদটা সঙ্গেই রইল- যত স্মৃতি অমলিন;
সোনালি সূর্যের সাথে শুধু কথাকোপন
গ্রাম আর শহরের ধূলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১৭



পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারের ধ্বংসাবশেষঃ
পালবংশের দ্বিতীয় রাজা শ্রী ধর্মপালদেব অষ্টম শতকের শেষের দিকে বা নবম শতকে এই বিহার তৈরি করছিলেন।১৮৭৯ সালে স্যার কানিংহাম এই বিশাল কীর্তি আবিষ্কার করেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

পরবাসী ঈদ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:২৩

আমার বাচ্চারা সকাল থেকেই আনন্দে আত্মহারা। আজ "ঈদ!" ঈদের আনন্দের চাইতে বড় আনন্দ হচ্ছে ওদেরকে স্কুলে যেতে হচ্ছে না। সপ্তাহের মাঝে ঈদ হলে এই একটা সুবিধা ওরা পায়, বাড়তি ছুটি!... ...বাকিটুকু পড়ুন

×