somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অসমাপিকা, ১২শ পর্ব

০১ লা ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ১০:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


১১শ পর্ব Click This Link
ঘরে বাইরে সংযত লীনা । মনের ভেতর যা কিছু ঝড় তোলপাড় সব চেপে রাখে রাখতে হয় ।
চাচাতো বোন রুমানার বিয়ে কদিন পর । বাড়ীতে আনন্দ হৈ চৈ গরম করে রেখেছে সারাক্ষন । রুমানার ছোট বোন রিমি হলুদ অনুষ্ঠানের দায়িত্ব নিয়েছে, আর্থিক ব্যাপারটা সানোয়ার সাহেবের । উনি নগদ এবং চেকে নিরলস সেটা সামাল দিয়ে যাচ্ছেন । কিছু অফিসিয়াল নিমন্ত্রনের দায়িত্ব তার । বাদবাকী এবং প্রকৃত দায়িত্ব সব মিসেস রেহানার ; কনের মা বলে কথা ।
ওদিকে রুমানার ভাই রাকিবকে যখন যেটা বলা হয় করতে করে দেয়;নিজ থেকে কোন ব্যাপারে মাথা ঘামায় না ।
মেয়ের বিয়ে উপলক্ষে রেহানা নিজের এবং দোতলায় দেবরের মেয়েদের সবাইকে টাকা দিয়েছেন কাপড় কেনার জন্য । বাকী ছিল লীনা । লীনাকে ডেকে টাকাটা দিতে গেলে সে বলল, চাচী আপনার একটা ছাই রঙ কাতান আছে না নীল আর সিলভার কালারের পাড়ওয়ালা সেটা রুমানার বিয়ের দিন পরতে দিলে হবে , অবশ্য আপনার যদি কোন আপত্তি না থাকে ।
রেহানার বুকের ভেতরটা কেমন মোচড় দিয়ে উঠল । এই মেয়েটা তার পেট থেকে হয়নি ঠিকই, বুকের বা পাশ থেকে জন্মেছে । সে জন্মের একটা তীব্র সুগন্ধ আছে যা তাকে মা তাকে এই মেয়েটার কথা সারাক্ষন মনে করিয়ে রাখে ।
কিছুদিন আগে পুরোন শাড়ীগুলো ছাদে মেলে দিচ্ছিলেন রেহানা । লীনা দেখছিল , ছাইরঙ শাড়ীটা হাতে নিয়ে নেড়ে চেড়ে দেখল ; পরে বলল , ' খুব সুন্দর, অন্যরকম এই শাড়ীটা '। নিজের বিয়ের সময় এই শাড়ীটা পছন্দ করে কিনেছিল রেহানা , এখনও এই শাড়ীটা তার ভাল লাগা শাড়ী । লীনার বলা কথায় অবাক হলেন , মনটাও কেমন ভাল লাগায় ভরে গেল ।
আর আজ নির্বাক হলেন ; বললেন , পারিসও তুই । ঐ পুরোন শাড়ী কি করে পরবি সেদিন ? সবাই কত আধুনিক শাড়ী পরবে, এখন কত কি ডিজাইন বেরিয়েছে ।
তারপর ওর জন্য বরাদ্দ টাকাটা প্রায় জোর করে ওর হাতে ধরিয়ে দিলেন আর বললেন পরিস তোর পছন্দের সেই শাড়ী সেদিন । দেব বের করে তোকে সেটা ।
বিয়েবাড়ী বলে কথা ! কত হৈচৈ, কেনা কাটা , কারনে অকারনে শোরগোল ।
হলুদ সন্ধ্যার আয়োজন চলছে আজ । দুপুরের খাবারের পর রেহানা কাজের লিস্ট হাতে নিয়ে দেখছিলেন সব ঠিক আছে কিনা । হঠাৎ মনে পড়ল লীনার জন্য সেই কাতান শাড়ীটা বের করে দেয়া হয়নি । তারপর মনে পড়ল সেটার ব্লাউজও তো নেই লীনার মাপের । রুমানা বিউটি পারলারে গেছে গাড়ী নিয়ে সাথে দীনারা । রিমি মহাব্যস্ত হলুদ মঞ্চ সাজানোর কাজে । লীনাকে দেখেছে একটা বাসন্তী রঙের শাড়ী পরা ; কোমরে আঁচল পেচিয়ে ছোটাছুটি করছে । বিয়ের দিনটা বেশী ফরমাল আজকাল, হলুদের দিনটাই আজকাল বিয়ে বিয়ে আমেজ নিয়ে আসে ।
লীনাকে পাঠাতে হবে শাড়ীটা সাথে দিয়ে , রঙ মিলিয়ে ব্লাউজ বানাতে । যেমন এক মেয়ে সে , দেখা যাবে অন্য একটা ব্লাউজের সাথে শাড়ীটা পড়ে মহা সুখী । আজ এখুনি পাঠানো দরকার । রাকিবকে ডেকে অনুরোধ করলেন লীনার সাথে একটু নিউমার্কেট যেতে, তেমন কাউকে পাচ্ছেন না লীনার সাথে পাঠাবার জন্য । লীনাকে ডেকে বুঝিয়ে দিলেন ।

রাকিব বেরিয়ে রিকশা ডেকে নিল । লীনাকে আগে উঠতে বলে সেও উঠে বসল । বলল, মা তাড়া দিচ্ছিল ; গাড়ীও নেই সাথে । ইমনকে বলে তার গাড়ীটা নিয়ে যাওয়া যেত, তোর এখন রিকশায় যেতে হচ্ছে ।'
লীনা অবাক হতে গিয়েও হল না, রাকিব ভাইয়ার অনেক ব্যাপারই সে বোঝেও না, আজকাল অবাক হওয়াও ছেড়ে দিয়েছে । শুধু বলল , ' কি বলছো ? আমরা তো গাড়ীতে অভ্যস্থ নই; রিকশায় কোন অসুবিধা হচ্ছে না আমার ।'
রাকিব কিছু বলল না ; আসলে সে বলতে পারল না ।
বলতে পারল না যে বাসন্তী রঙের শাড়ী পরা এই লীনাকে রিকশায় পাশে বসিয়ে প্রতিটা মূহুর্ত তার কেমন এক অবর্ননীয় ভাল লাগায় পার হচ্ছে ।
লীনাকে এমন স্নিগ্ধ সুন্দর লাগছে যে মনে হচ্ছে এর চেয়ে সুন্দর আর কিছু নেই পৃথিবীতে , হতে পারে না ।

নিউমার্কেটে ব্লাউজের কাজ সারবার পরে লীনা রিমির ফরমায়েশে গ্লিটার কিনল একটা দোকানে ঢুকে । একটা ন্যাচারাল কালারের লিপস্টিক দেখছিল নেবে বলে । রাকিব সেটা দাম দিল নিজে যেচে; নেবার সময় সাথে গোলাপী আর একটা লিপস্টিক নিল । বলল, এটাও লাগাবি , মানাবে তোকে ।
বাড়ী ফেরবার সময় রাকিব একটু কেশে নিল , যেন গলা পরিষ্কার করছে । তারপর বলল, পারলারে সবাই গেল , তুই গেলে পারতি ।
লীনা: রুমানা আপুর আজ হলুদ , সে তো সাজবেই ; অন্যরাও সখ করছে সাজুক । আমি আবার কেন?
রাকিব: কেন গায়ে হলুদ না হলে কি সাজতে যাওয়া যাবে না ? চুল বাঁধতে যাওয়া যায় না? তুই একটা খোঁপা করতে পারতি পারলারে গিয়ে ।
লীনা: কি বলছো তুমি? আমি খোঁপা করতে যাবো ? কি দরকার ?
রাকিব: কেন দেখিতো অনেকে সুন্দর করে খোঁপা করে, খোঁপায় গোলাপ গুজে দেয় । তুইও তেমন করে চুল বাঁধবি, দেখবি তোকে মানাবে খুব ।
রীনা : রাকিব ভাইয়া তোমার কি হয়েছে? তুমি দেখছি কবি কবি কথা বলছো ।
রাকিব: না মানে তোকে এই শাড়ীটায় খুব ভাল দেখাচ্ছে তাই এসব কথা মনে হল ।
লীনা: আচ্ছা দেখা যাবে , চল তাড়াতাড়ি ; কত কাজ পড়ে আছে ।
রাকিব কিছু শোনেনা কানে , চলন্ত রিকশায় পাশে একজন বসে আছে; আর কিছু জানে না সে । নিজের মনের কথা কানে কানে শোনে সে --

সুখ সুখ সূতোয় বোনা বাসন্তী এ শাড়ী
শাড়ী নয়, মুগ্ধতায় জড়ানো
এক রাশ সুখ তোমাকে ঘিরে থাকে
আমাকে ধরে রাখে শাসনের সূতোয়
ভাজভাঙ্গা এ শাড়ীটায় এক স্বপ্ন
আমার বুক ভাঙ্গে চুরমার
তুমি তার শব্দ শুনতে পাও না
তুমি তার শব্দ শুনতে পাও না
পাবে না কোনদিন ।
আমি নি:শব্দে কুড়িয়ে রাখি
মূহুর্ত সমগ্র , ঐশ্বর্য আমার ।

মনের ভেতর কবিতার মত করে কিছু কথা ঘুরপাক খায় । বন্ধু ইমনের কল্যানে কবি হয়ে যাচ্ছে নাকি আজ এই সময়টা তাকে কবি করে ফেলছে । জানে না রাকিব । অনুচ্চারিত এই কবিতা আর কারো শোনা হয় না ; কারো জানা হয় না । এমন কত কবিতার পংক্তি নীরবে ঘুমিয়ে থাকে কত প্রানে, কত প্রানের অতলান্তে ।

কেউ কি জানবে কোন দিন ?

চলবে......
পরের অধ্যায় Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:৩৩
২০টি মন্তব্য ১৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×