somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অসমাপিকা, ১৭শ অধ্যায়

১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ সকাল ৯:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


১৬শ অধ্যায় Click This Link
ঝড়ের বেগে ঘটে গেল লীনার এন্গেজমেন্ট , ঠিক ঝড় বললে কম বলা হয় ; কালবৈশাখী ঝড়ের মত দুর্দান্ত প্রবল বেগে । এ ঝড়ে যেমন কোন্ দিকের বাতাস ঘুরিয়ে কোন্ দিক দিয়ে আসে কোন পূর্বাভাষ দেয়া কঠিন । ঝড়ের সময় কেউ শীতল বাতাসের পরশে শিহরিত হয় আবার কারো বা ঘর ভেঙ্গে চুরমার , ততক্ষনে বিধ্বংসী ঝড় চলে যায় দূর বহুদূর । আর ঝড়ের পরে কিছু দীর্ঘশ্বাস কোন চোখের পাতার আড়ালে লুকিয়ে থাকে অবান্তর জিজ্ঞাসা হয়ে ।

বিয়ে হয় নি শুধু এন্গেজমেন্ট হয়েছে অথচ আনন্দের আতিশয্যে ভাসছে চৌধুরী পরিবারদ্বয় । সানোয়ার সাহেব এবং আনোয়ার সাহেবের পরিবারের সবার সুখীমুখ দেখে লীনা নিজের প্রয়োজন এবং প্রাপ্তির হিসেব কষতে গিয়ে বিভ্রান্ত হয় ।
কোথায় দীপু ? কেন দাড়ালো না এসে তার দু:সময়ে ? দু:সময়ই তো ! যখন লীনা আর পারছিল না সামাল দিতে তখন কেন এলো না তাকে উদ্ধার করতে ? ডেকেছিল লীনা তারপরেও নি:শব্দে কেন সরে দাড়ালো দীপু তার জীবন থেকে ? আদৌ কি কোন ভালবাসা ছিল দীপুর, যে ভালবাসার শক্ত ভিত্তির ওপর দাড়িয়ে সব সব কিছু তুচ্ছ করা যায় ? দীপু এত ভীরু এত দূর্বল ! আর ভাবতে পারে না লীনা , ভাবতেও চায় না । যে তাকে অবহেলা করে পালিয়ে থাকতে পারে তার সাথে আর কোন লেনা দেনা নয় । ভালই হয়েছে এই বিচ্ছেদ - সম্পর্ক তৈরী হবার আগেই বিচ্ছেদের আবহ ।

কিন্তু সব যেন ছেলে খেলা হয়ে যাচ্ছে । রাকিবের সাথে লীনার বিয়ে হবে, এন্গেজমেন্ট হয়ে গেল অথচ স্বয়ং রাকিব এ সবের কিছুই জানে না । লীনার বাবা - মা চেয়েছিলেন রাকিবের সাথে কথা বলে তার পরিষ্কার মতামত জেনে নিয়ে তারপর বিয়ের বিয়ের সিদ্ধান্ত চুড়ান্ত করতে। মিসেস রেহানা রাজী হননি ওকে জানাতে এখুনি , ছেলের ওপর একরকম প্রতিশোধ নেয়ার বাসনা জেগেছে ওনার মনে । এমন সুযোগে মধুর এই প্রতিশোধ না নিলে চলবে না বলে দিয়েছেন তিনি। অবশ্য কারো মনে যেন কোন কুয়াসা না থাকে তাই রাকিবের বন্ধু ইমনকে বাসায় ডেকে নিয়েছেন । তারপর পরিকল্পনা করে ফোনের স্পীকার চালু করে যে আলাপ শুনেছেন ইমন আর রাকিবের মধ্যে তার মমার্থ করলে দাড়ায় রাকিব কোনদিনও বিয়ে করবে না , অবশ্য লীনাকে পেলে সে বিবাহিতদের তালিকাভুক্ত হতে রাজী । এ আলাপ শোনবার সময় লীনার মা , রুমানা এবং লীনাও ছিল ওনার সাথে । যদিও লীনা শুরুতে উঠে চলে গেছে ।
অতএব যথারীতি আয়োজন এবং এন্গেজমেন্ট সম্পন্ন হয়ে গেলে ।
এক এক করে সব মনে পড়তে লাগল লীনার এন্গেজমেন্ট হয়ে যাবার পর ।
লীনা শুধু অবাকই হয়নি দীপুর নীরবতায় আহতও হয়েছে । সে চিঠি পাঠিয়েছিল এবং অপেক্ষায় ছিল দীপু দ্রুত সাড়া দেবে তার আহ্বানে । তারপর যা হবার হোত । তার মাথার ওপর বিষম ভার হয়ে ছিল রাকিবের বিষয়টা এবং সংশ্লিষ্ট কারনে পরিবারের মধ্যে গুমোট আবহাওয়া । সে নিজেও জানে রাকিব ভাই ছেলে হিসেবে কতটা ভাল এবং তার প্রিয় চাচীর ছেলে সে । বড় অসহায় কেটেছে এ কয়টা দিন । সাতদিন সময় দিয়েছিল দীপুকে । সেই সাত দিন তার কেমন উৎকণ্ঠায় কেটেছে সে কথা সেই জানে । কতবার ভেবেছে এই এলো বুঝি দীপু , এসেই তোড়জোড় শুরু করে দেবে । নাহ্ আসে নি । কোন যোগাযোগও করে নি । আটদিন পার হয়ে গেল । তারপর অজানা আশঙ্কায় পেয়ে বসলো লীনাকে । শঙ্কিত লীনা বান্ধবী মিতাকে অনুরোধ করেছে দীপুর খবর জানতে কোন অসুস্থতা বা বিশেষ কোন অসুবিধায় পড়েছে কিনা সে । মিতা চাঁদপুরের মতলবে আগেই লোক পাঠিয়েছিল সে কথা গোপন রেখে খবর নেবার ভান করে আস্বস্থ করলো লীনাকে যে দীপু ঠিক আছে । মিতা নিজেও বিস্মিত হয়েছে যখন তার খবর সংগ্রহকারী কাজিন জানিয়েছিল দীপু ঠিক মত সব করছে অফিসের কাজ , চিঠিটাও পেয়েছে এবং মিতার অনুরোধ উপেক্ষা করে লীনার সাথে ফোনেও কথা বলল না; এমনকি মিতার সাথেও ফোনে কথা বলা এড়িয়ে গেল ।
মানুষের মন এক বিশাল আকাশ; কত ছবি ছায়া ফেলে, কত মেঘ স্থির আবার কত মেঘ চঞ্চল , কত উত্তাপ জমাট । মানুষের মনের চেয়ে বড় আর কি আছে ? কি আছে এমন ধারনক্ষম ? কে কার মনের ঘরে ঢুকতে পারে সম্পূর্ন ? কেবল জানালায় উঁকি দেয়া , কেবল চোখ বাড়িয়ে দেখতে চাওয়া । তাই তো দীপুর মনের ঘরের খবর ওদের কারো জানা হোল না; একান্ত ভাবে জানতে চেয়ে লীনাও ব্যর্থ ।
চব্বিশ বছর বয়সের একজন সাধারন আটপৌরে মেয়ে লীনা । কিছু কিছু সিদ্ধান্ত আছে যা নিজেকে নিতে হয় যতই অন্যরা উদ্যোগ নিক বা পরামর্শ দিক । বিয়ের ব্যাপারটা আসলেই সেরকম কিছু , একান্তই ব্যক্তিগত । তবে পারিপার্শ্বিকতা অনুকূলে থাকলে লীনার এমন চাপ সহ্য করতে হোত না ।
ঘনিষ্ঠ বান্ধবী মিতা আর চাচাতো বোন রুমানার সাথে সে গতকাল কথা বলে রেখেছে, লীনার সিদ্ধান্ত ওদের অবগত । আজ শুক্রবার দুপুরে খাবারের পর চাচী বিশ্রাম নিচ্ছিলেন , লীনা তার ঘরে প্রবেশ করে দরজা বন্ধ করে দেয় । বলে, 'চাচী আমার বিয়ে সংক্রান্ত কিছু কথা আছে আপনার সাথে বলবো এখন' ?
মিসেস রেহানা লক্ষ্য করলেন লীনার চোখে মুখে অস্থিরতার ছাপ । তারপর বললেন, 'কিরে পাগল মেয়ে কি হোল ? মাথা গরম করেছিস নাকি'?
লীনা: গরম মাথা ঠান্ডা করে এখানে এসেছি এবং এই ঠান্ডাভাব কন্টিনিউ
করতে চাই আপনার কোন অসুবিধা আছে ?
মিসেস রেহানা: নাহ্ আয় আমার কাছে এসে বস । বল কি হয়েছে ?
লীনা : আপনারা চাইলে আমার বিয়ে রাকিব ভাইয়ের সাথে হতে পারে ।
আপনাকে হুট করে কিছু জানাতে হবে না ,পরে ভেবে বললেও হবে ।
মিসেস রেহানা: কি হয়েছে বুঝতে পারছি না , কেউ কিছু বলেছে কিনা বা
কোন অবাঞ্চিত ঘটনা? আমাকে খুলে বল । আমি তোর পাশে আছি ।
লীনা : না চাচী সেরকম কিছু না । আপনারা ইত:স্থত করলে আমি সে বিষয়
আর অগ্রসর হতে চাই না , তবে দীপুর সাথে আমার বিয়েটা হচ্ছে
না এবং এ ব্যাপারে আমার কথা শেষ কথা ; একবিন্দুও হেরফের
হবে না , কোনভাবেই না । আমাকে অনেকটা সময় ভাবতে হয়েছে
আপনার কাঝে এই কথাগুলো বলবার জন্য ।
মিসেস রেহানা এই আকস্মিক অকল্পনীয় প্রস্তাবে এবং লীনার বলবার ভঙ্গীতে বিমূঢ় হয়ে গেলেন । হাত বাড়িয়ে লীনাকে কাছে টেনে নিলেন, ওর চিবুক ধরে উঁচু করে দেখলেন মেয়েটার চোখের গভীরে কেমন একটা ঘোর লেগে আছে । বললেন, ' অন্য কেউ হলে আমাকে ভাবতে হত কিন্তু আমি জানি তুই হঠাৎ একটা যা খুশী করা টাইপের মেয়ে নোস, তুউ যদি রাকিবকে বিয়ে করতে রাজী থাকিস এবং সেটা সব দিক সামলে নিয়ে তাহলে জানিস তো আমার চেয়ে বেশী সুখী আর কেউ হতে পারে না পৃথিবীতে । তুই আমার কতটা পছন্দের সবাই জানে আর রাকিব আমার বড় আদরের বড় ভাল ছেলেটা । এখন তোর ইচ্ছেমত সব হবে, এর মধ্যে যদি তোর মনে হয় তুই মত পাল্টাবি আমাকে জানাবি আমি ব্যবস্থা করবো। এবার একটু হাসিমুখ দেখতে চাই । কতকি দুর্ভাবনা করেছিস কদিন কে জানে , আগে আমাকে বললে পারতি । তোর জন্য আমার কষ্ট হচ্ছে । সুন্দরী মেয়ে হলে বা বেশী ভাল মেয়ে হলে তার মত দুর্ভাগা এ সংসারে দ্বিতীয়টি নেই । তার কারনে এই পৃথিবীতে অহর্নিশি কত প্রানে কষ্টধূপ জ্বলতে থাকে, কত জন নীরবে পার করে নি:শব্দ সোপান অপ্রাপ্তির অমাবস্যাকে লালন করে । সেটা অবশ্য শুধু মেয়ে নয়, নারী নয় পুরুষের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য । কেন যে এক একজন এত বেশী ভাল হয় , কেন যে খানিক মন্দমেশানো হয় না । তুই কেন এত ভাল হলি ? কেন করলো তোকে এমন করে তৈরী ?
কণ্ঠ ভার হয়ে আসে মিসেস রেহানার । লীনার কেন যেন মনে হয় তার চাচীর জীবনের কোন গোপন ব্যথা হঠাৎ এক ঝলক আলো হয়ে রোদ্দুর হয়ে পুড়িয়ে দিয়ে গেল ঘরের বাতাস ।
লীনা : চাচী আমি কি একটু যাবো দরকার আছে নীচে ?
মিসেস রেহানা: আচ্ছা ঠিক আছে যা ।

নীচে যাবার কথা বলে লীনা বেরিয়ে ছাদে চলে যায় । তার খুব ইচ্ছে করছে একা থাকতে , নিজের সাথে কথা বলতে অথবা নিজের কথা শুনতে । সেদিন কি কথা বলেছিল লীনা নিজের সাথে কেউ জানল না , স্বাক্ষীবিহীন সেই সব কথারা দূর সমুদ্রে ঢেউয়ের ফেনায় বুদবুদ হয়ে জেগে রইল ।

তারপর যেমন ভাবে বিয়ের কথা বার্তা হয় তেমন করে সব এগুলো। রাকিবের বাবা সানোয়ার সাহেবকে নিয়ে সমস্যা সৃষ্টি হতে পারতো হয়নি কারন মিসেস রেহানা তাকে সতর্ক করে দিয়েছেন । অতএব পাত্র এবং পাত্রীর অভিভাবকেরা অত্যন্ত উৎসাহী হয়ে সব গুছিয়ে নিলেন এবং পাত্রের অনুপস্থিতে শুধু নয় তার অজ্ঞাতে এন্গেজমেন্ট হয়ে গেল ।
রাকিবকে তার মা , বোন রুমানা এবং বন্ধু ইমন আলাদা করে জানালো অত্যন্ত আনন্দময় লীনার এন্গেজমেন্টের কথা, সেখানে কার সাথে বিয়ে হতে যাচ্ছে সেটা উহ্য থাকল ।
সবাইকে তার একই জবাব ' সুখী হোক লীনা , শুভকামনা তার জন্য' । মনে মনে ভাবল 'দীপু ছেলেটা কি ভীষন ভাগ্যবান ।'

চলবে.....
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ সকাল ৯:৩১
১০টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মেঘ ভাসে - বৃষ্টি নামে

লিখেছেন লাইলী আরজুমান খানম লায়লা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩১

সেই ছোট বেলার কথা। চৈত্রের দাবানলে আমাদের বিরাট পুকুর প্রায় শুকিয়ে যায় যায় অবস্থা। আশেপাশের জমিজমা শুকিয়ে ফেটে চৌচির। গরমে আমাদের শীতল কুয়া হঠাৎই অশীতল হয়ে উঠলো। আম, জাম, কাঁঠাল,... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনের গল্প

লিখেছেন ঢাকার লোক, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৩৫

মাত্র মাস দুই আগে আমার এক আত্মীয়ের সাথে দেখা আমার এক বোনের বাড়ি। তার স্ত্রী মারা গেছেন তার সপ্তাহ দুই আগে। মক্কায় উমরাহ করতে গিয়ে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমান

লিখেছেন জিনাত নাজিয়া, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:১২

" অভিমান "

তোমার ঠোঁটে বোল শিখেছি
তুমি আমার মা, কেমন করে
ভুলছ আমায় বলতে
পারিনা। এমন করে চলে
গেলে, ফিরে ও এলেনা। হয়তো
তোমার সুখেই কাটছে দিন,
আমায় ভাবছ না।

আমি এখন সাগর... ...বাকিটুকু পড়ুন

×