somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অসমাপিকা, ১৯শ অধ্যায়

০৬ ই নভেম্বর, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


Click This Link
১৮শ পব:

আংটির দিকে তাকিয়ে রাকিব দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল । এমন একটা আংটি দীপুরা পরিয়ে গেল এন্গেজমেন্টে , বড় অদ্ভুত সব কান্ড কারখানা । এমন একটা আংটি তো ওর মায়ের ছিল যা ওর পছন্দের আংটি ছিল ।
রাকিব ভাল করে তাকিয়ে দেখল এবং এবার ওর অবাক হবার পালা ।ওর স্পষ্ট মনে পড়ল ওর মায়ের হাতের সেই আংটির এক পাশে একটা মুক্তোদানার রঙ অন্য রকম ছিল , এটাতেও তাই । কিছু বুঝতে পারছে না রাকিব ,সব কেমন গোলমেলে ঠেকছে ওর কাছে ।
রাকিবের মনে পড়ল লীনার জন্য আনা উপহারের কথা । রুমে গিয়ে সেই পুতির ব্যাগটা নিয়ে বের হতে গিয়ে আংটির বক্সটা বের করে পকেটে পুরে নিল । আগে লীনার আঙুলের পান্নার আংটি রহস্য উদঘাটন হোক ।

ব্যাগটা দিতেই লীনা চোখ তুলে চাইল এবং চকিতে নামিয়ে নিল ; রাকিবের মনে হোল যেন লীনার মধ্যে একটা পলায়নবৃত্তি ভাব , কিছু একটা গোপন করবার আপ্রান চেষ্টা , সেটা কি, কেন ?

চায়ের কাপে শেষ চুমুক দিতেই রুমানা এসে দাড়ালো; বললো, 'চল্ ছাদে যাই সবাই । লীনাও চল্ আম্মা বলেছে তোকেও নিয়ে যেতে। '

ছাদে উঠেই রুমানা কি একটা জরুরী কাজ আছে বলে নেমে এলো তড়িঘড়ি । আসবার সময় রাকিবের হাতে একটা ছোট এ্যালবাম ধরিয়ে দিল ।
ছাদের রেলিং এর কাছে মোড়া টেনে নিয়ে বসতে গিয়ে রাকিব লক্ষ্য করলো লীনা কেমন জড়তা নিয়ে দাড়িয়ে আছে । ওকে মোড়া দেখিয়ে বলল , ' তোর কি হয়েছে লীনা , কিছুই তো বুঝতে পারছি না ; এমন ভাব করছিস যেন তুই অন্য বাসার কেউ । আমার সাথে কথাও বলছিস না ঠিকমত ।'

লীনা: সব ঠিক আছে রাকিব ভাইয়া । তোমার লন্ডনের গল্প বল ।
'বলছি' বলতে বলতে রাকিব এ্যালবামটার প্রথম ছবিটা দেখে চমকে গেল থমকে গেল । লীনার এন্গেজমেন্টের ছবি এবং রাকিবের কিনে দিয়ে যাওয়া সেই জামদানী পরে আছে সেদিন লীনা , কি অপূর্ব দেখাচ্ছে লীনাকে !
তারপরের ছবিটা দেখে আরো হতবাক , রাকিবের আম্মা লীনাকে আংটি পরিয়ে দিচ্ছেন একপাশে বসে অন্য পাশে রাকিবের বাবা । দ্রুত কয়েকটা ছবি দেখে নিল রাকিব , সব ছবিতে রাকিব এবং লীনাদের পরিবারের সদস্যরা । সাথে আছে ওদের ফুফু এবং লীনার মামাদের পরিবার । কোথাও দীপুদের বা অন্য অপরিচিত কারো মুখ নেই ছবিতে ।
রাকিব কি দেখছে বুঝতে পারছে না , আবার দেখল প্রথম থেকে ; তারপর মনে হল সে বুঝতে পারছে কি ঘটেছে, লীনার এন্গেজমেন্ট হয়েছে এবং তার হবু বর দীপু নয় স্বয়ং রাকিব, অথচ রাকিব ঘুণাক্ষরেও কিছু জানল না । অদ্ভুত ব্যাপার তো ! সামনে লীনা বসে আছে, কি করে সে লীনার দিকে চাইবে ? একটু কেশে গলা পরিষ্কার করে নিয়ে বললো, ' কি ব্যাপার বল্ তো, তুই ওই আংটি কোথায় পেলি ?'
লীনা: চাচী দিয়েছে ।
রাকিব: ওই আংটি নিয়ে আমার ছোটবেলার গল্প আছে জানিস?
লীনা : জানি , চাচী বলেছে ।
রাকিব: তারপরেও পরেছিস, তোর তো অনেক সাহস ।
বলতে বলতে এমন করে হেসে দিল যে লীনাও না হেসে পারল না ।
লীনা: কেড়ে নেবে ? নাও । মারবে আমাকে ?
রাকিব: ধ্যাৎ আম্মা দেখছি সবটাই বলে দিয়েছে ।

একটু সময় নিল রাকিব তারপরে বললো, ' আমি মনে হয় অনেক ঘটনা জানি না । তুই কি একটু বলবি নিজে থেকে ।'

লীনা: তুমি পরে শুনবে এখন চল নামবো ।
রাকিব পকেট থেকে আংটিটা বের করল , বলল, ' এটা তোর জন্য এনেছিলাম অনেক সখ করে , নিবি?'
লীনা: নেব তবে এখন নয় পরে দিও, আরো কত সময় আছে , চল ।

নীচে নেমে এল দুইজন একসাথে, লীনা নিজেদের দোতলায় চলে গেল । রাকিব তিনতলার নিজের রুমে ঢুকে ইমনকে ফোন করে জানল যে সন্ধ্যার পরে আসছে । রাকিব ভাবছে ইমন যে ঘটনা জানেনা হতেই পারে না সেও কেন গোপন করল ! তাছাড়া দীপুর সাথে বিয়ে হবার কথা , সেটাই বা কেন হোল না । ইমনের কাছ থেকে সব জানা দরকার । লীনার বিয়েটা যে রাকিবের সাথে হচ্ছে এটা পরিষ্কার কিন্তু আর সব অস্বচ্ছ । সবাই মিলে নীরবে এমন একটা ষড়যন্ত্র করে ফেলল আর রাকিব কিছুই টের পেল না !
লীনা স্বপ্নের কাছে চাওয়া একটা মেয়ে ছিল, বাস্তবে অসম্ভব ছিল পাওয়া । লীনাকে ছাড়া আর কোন মেয়ে তার জীবনে আসতে পারবে না তাই বিয়ে বিষয়টা সযত্নে দূরে সরিয়ে রেখেছে রাকিব । আর আজ এখন সব কেমন অন্যরকম হয়ে গেল । সেই লীনা তার জীবনে আসছে এ যেন স্বপ্নের অতীত । অতিথি করে যাকে চাওয়া শুধু কল্পনায় ছিল সে যখন দরজায় কড়া নাড়ছে তখন হতবিহ্বল রাকিবের কেবলই মনে হচ্ছে তার কোন প্রস্তুতি নেই । কি করে এমন একজনকে বরন করতে হয় ! কেমন একটা অস্বস্থিভাব ঘিরে থাকে রাকিবকে ।
ইমন আসতেই রাকিবের মনে হোল ঠিক সময়ে ঠিক মানুষটা এসে পড়েছে আবার রাগও হোল , কেন ইমন আগে ভাগে সব জানালো না । কিন্তু রাকিব খেয়াল করল তার নিজের বোধশক্তি ঠিকমত কাজ করছে না ; লীনাকে নিয়ে তার জীবনের কোথায় কেমন করে বসাবে , কিভাবে সব সহজ করে নেবে !
কোন রকম ভূমিকা ছাড়া রাকিব প্রশ্ন করল রাকিবকে ' দীপুর সাথে কেন বিয়ে হচ্ছে না লীনার , দীপু কি বেঁচে নেই?'
ইমন হকচকিয়ে গেল , এমন কথা যে কারো মনে আসতে পারে ইমন ভাবে নি আগে । সামলে নিয়ে জানাল যে দীপু বেঁচে আছে , ভাল আছে ।
তারপর বলল, ' তুই যে লীনার জন্য পাগল, এখন তোর সাথে বিয়ে হচ্ছে মিটে গেল সব। '
রাকিব: না এত সহজে সব মিটে যায় না, আমাকে জানতে হবে কেন এমন সব ঘটছে, লীনাকে কি কোনভাবে প্রভাবিত করা হয়েছে বা বাধ্য করা হয়েছে ?
ইমন: লীনা কি তেমন মেয়ে যে তুই এমন সব ভাবছিস ।
রাকিব: খুলে বল আমাকে, তা না হলে আমি কথা বলবো লীনা এবং দীপুর সাথে ; তোরা সবাই মিলে এতজনের জীবনের হিসেব ওলট পালট করে দিতে পারিস না, কোনভাবে লীনা অসুখী হোক আমি চাই না ; আমাকে কি ভেবেছিস তোরা ? আমি কি কেড়ে নেওয়ার মত মানুষ ?
ইমন: ভুল করলে বন্ধু, তুমি যা ভাবছো তা নয়, লীনা নিজে সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং দীপু স্বেচ্ছায় সরে গেছে লীনার জীবন থেকে । আমি জানতাম তোর মনে নানা প্রশ্নেরা জট পাকাবে তাই আমি লীনা দীপু সবার কাছ থেকে পরিষ্কার করে নিয়েছি । দীপুর সাথে আমার একান্তে কিছু আলাপ হয় যেটা লীনাও জানে না । সে বলে দিয়েছে সে লীনার জীবনে থাকছে না, তবে কারনটা সে কিছু বলে নি । রাকিব , তোর অধিকার আছে লীনার কাছে সব জানবার , তবে তার ধরন যেন একটা মেয়ের কাছে স্বাভাবিক থাকে, সে বিব্রত হতে পারে এমন কিছু না হলে ভাল ।
রাকিব: আমার কেন এমন লাগছে ? মনে হচ্ছে একা থাকি কটা দিন ।
ইমন: কেন এত ভাবছিস ? সময় নিয়ে ভাবতে গেলে সব আরো জটিল হয়ে যাবে , দাড়া আমি এখুনি লীনার সাথে তোর বোঝা পড়া শেষ করিয়ে দেই ।
রাকিব কিছু বলবার আগে ইমন চলে গেল উঠে । কি করবে রাকিব , কি বলে শুরু করবে আর কীইবা জানতে চাইবে লীনার কাছে !

ইমন এল ফিরে কিছুক্ষনের মধ্যে , সাথে লীনা । ' তোদের যা কথা বলবার বা জানবার জেনে নেয় , আমার কাজ আছে খালাম্মার কাছে' বলে দ্রুত বেরিয়ে গেল ।

হায়রে ভালবাসা , হায়রে মানুষের মন ! এই রাকিব লীনার জন্য কেমন আকুল ছিল , প্রতি মূহুর্তে মনে হয়েছে কেন লীনা ওর হোল না । অথচ আজ মনে হচ্ছে এই অপ্রত্যাশিত উপহারের ভার বড় বেশী বড় করুন । গুটিয়ে যাচ্ছে ভিতরে ভিতরে সে। না , চুপ করে থাকলে চলবে না ; লীনার মুখ থেকে শুনতে হবে সত্যিটা ।
খানিকটা সময় পার করে খেয়াল হোল লীনা তার ঘরে একা ।
লীনার আনত চোখজোড়ার দিকে তাকিয়ে ওর মনে হোল লীনা আহত হতে পারে এমন কোন কথা রাকিব পারবে না উচ্চারন করতে ।
বলল, ' লীনা , তোর কোন কারনে কোন সমস্যা হচ্ছে কি ? তুই কি তোর জীবনের এত বড় একটা বিষয়ে ভেবে সিদ্ধান্ত নিয়েছিস ? আমার সাথে সম্পর্কে তুই সুখী হতে পারবি তো?'
লীনা: রাকিব ভাইয়া, সুখী অসুখী হবার ভার ভাগ্যের ওপর ছেড়ে দিয়েছি । যা হবার হবে, তবে তুমি নিজের কথা ভেবে সিদ্ধান্ত নিও; অন্যের কথা নয় । আর তুমি যদি মত স্থির করতে না পারো আমাকে বল, আমি তোমার অনিচ্ছায় কিছু হোক চাই না।'
বলে কি মেয়েটা ! রাকিবের নিরন্তর সাধনার ধন, নিরলস আরাধনার প্রাপ্তি কে কি করে নিজ হাতে দূরে সরিয়ে দেবে ? কি করে অগ্রাহ্য করবে তার স্বপ্নের স্বর্গ বিচরন !
উঠে গিয়ে লীনার পাশে বসল রাকিব তারপর লীনার ডান হাত নিজের দুই হাতে নিয়ে বলল ' তুই কি কিছুই বুঝতে পারিসনি এত দিনে, তোর জন্য আমি সব করতে পারি লীনা, সব কিছু ।'
আরো কি যেন বলতে চাইছিল রাকিব, কিন্তু লীনার চোখের উষ্ণ কয়েক ফোটা পানি রাকিবের হাতের ওপর পড়তেই রাকিব অপ্রস্তুত হয়ে গেল ।
উঠে গিয়ে সেই আংটি টা নিয়ে এল যেটা সে তার মানসকন্যার জন্য এনেছিল এতসব ঘটনা না জেনেই। সে আর কালক্ষেপন চায় না । সোজা সেটি লীনার হাতটা নিয়ে পরিয়ে দিল যেন একটু বেশী তাড়াহুড়ো করে , যেন হাতছাড়া করতে চায় না হাতের ভেতর পাওয়া রত্ন ; তাই জাগতিক রত্ন দিয়ে স্বপ্নরত্ন বেঁধে নেওয়া ।

চলবে.......
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×