সারা বিশ্বে মুসলিম উম্মাহর বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ইদুল ফিতর পালিত হবে আজ আগামীকাল অথবা পরশু । দীর্ঘ এক মাস রোজা পালন করার পর এক মহাউৎসবের উপলক্ষ হিসেবে সারা বিশ্বের ন্যায় বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মানুষ জাতীয় উৎসব হিসেবে এই দিনটাকে পালন করে।কিন্তু এ বছরে সারা বিশ্বের মুসলিমরা যখন তাদের পবিত্র সাওম পালন করছে ঠিক সেই সময় গত ৮ জুলাই যায়নবাদী ইসরাইলী বাহিনী প্যালেস্টাইনের পশ্চিম তীর গাজা উপত্যাকায় নির্বিচারে সাধারণ নাগরিকদের উপরে হামলা শুরু করে। বর্বর এই হা্মলায় ইতিমধ্যে হাজারের অধিক প্যালেস্টাইনি মৃত্যুরবন করেছেন যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু সহ নীরিহ নাগরিক । তাদের এই হামলা থেকে রক্ষা পায়নি গবাদি পশুও। বলতে গেলে ইসরাইলী বাহিনী গাজা নগরীকে এক অর্থে মাটির সাথে মিশিয়ে দিয়েছে।
সারা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ এই হামলার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে। প্রতিবাদে বিভিন্ন দেশের বড় বড় শহরে সাধারণ জনগণ মিছিল করেছে। কিন্তু সেই হিসেবে বাংলাদেশে গাজায় যায়নবাদী হামলার বিরুদ্ধে তেমন কোনো প্রতিবাদ হতে দেখা যায়নি। বিশেষ করে আমাদের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর প্যালেস্টাইনে এই বর্বর হামলার প্রতিবাদে যেভাবে সরব হওয়া উচিৎ ছিলো তা থেকে তারা রহস্য জনক নীরবতা পালন করেছে। একটি ধর্মপ্রাণ মুসলিম দেশের নাগরিক হিসেবে যা অত্যন্ত লজ্জার।আজকে আমাদের চোখের সামনে যে হামলা হচ্ছে তার বিষয়ে আমরা নিস্পৃহ ভাব দেখাচ্ছি তাঁর সাথে শুধু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন সময়ে হিটলার কতৃক ইহুদী নিধনের দিন গুলোতে ইউরোপীয় দেশগুলোর তৎকালীন অবস্থানের তুলনা চলে।যার খেসারাত দিতে ইউরোপীয়রা পরবর্তীতে ইহুদীদের আলাদা দেশ হিসেবে আজকের ইসরেল গঠন করে দায়মোচনের চেষ্টা করে।
যাই হোক একজন মুসলিম হিসেবে আমাদের নিজেদের বিবেকের কাছে আজকে কয়েকটি প্রশ্ন রাখতে হবে । আমরা কি প্যালেস্টাইনে আমাদের ভাই ও বোনেরা যখন নির্মম ভাবে মারা যাচ্ছে, আহত হচ্ছে , ঘর ছাড়া হচ্ছে ,তখন কি আমরা তাদের পাশে অন্ততপক্ষে নৈতিকভাবে দাড়াতে পেরেছি ?
ফিলিস্তিনি যে অবুঝ ঘর হারানো শিশুটি নির্বাক ভাবে আকাশের পানে তাকিয়ে আছে সেই ছবি দেখে কি আমাদের চোখের পাতা একবারের জন্যেও ভিজে ওঠেনি ?
নির্বিচার হামলা থেকে বেচেঁ থাকার জন্য মাথায় সোফা নিয়ে অবুঝ শিশুটি রাস্তায় হেটে চলেছে সেকি জানে শুধু মাত্র মুসলিম হওয়ার অপরাধে তাকে তার ঘরবাড়ী ছেড়ে আশ্রয়ের খোঁজে ছুটে বেড়াতে হচ্ছে ?
একটি মুসলিম রাষ্ট্রের যতটা প্রতিবাদ করা উচিৎ ছিলো তাকি তাদের জন্য আমরা কি করেছি ?
আমাদের রাস্ট্রের কি তাদের জন্য কিছুই করার নেই ?
আমাদের রাজনৈতিক দলগূলোর কিছুই করার নেই ?
আমরা মনে করি অবশ্যই আছে। একজন মুসলিম দেশের নাগরিক এবং রাষ্ট্র হিসেবে আজ আমরা তাদের পাশে একটু ব্যতিক্রমভাবে হলেও দাড়াঁতে পারি আমরা কি পারি না আমাদের প্যালেস্টাইনি ভাই বোনদের প্রতি সহমর্মিতা জানিয়ে এবারের ঈদের সমস্ত জাকজমকপুর্ণ আয়োজন বাতিল করতে? আমরা কি পারি না পৃথিবীর অন্যতম প্রধান মুসলিম রাষ্ট্র হিসেবে শুধুমাত্র ইসরেল কতৃক গাজায় হামলার প্রতিবাদে
‘’রাষ্ট্রীয় ভাবে ঘোষনা দিয়ে ঈদের যাবতীয় অনুষ্ঠান বাতিল করতে’’।
অবশ্যই পারি , আমাদের মতো দুর্বল দেশগূলোর অন্তত অহিংস পদ্ধতিতে এ ধরনের প্রতিবাদ জানানোর অধিকার নিচশিতভাবে রয়েছে। । এতে অন্তত আমাদেরকে কোনো প্রভু রাষ্ট্রের চক্ষুশুল হতেও হবে না ।
তাই দেশের সকল নাগরিকসহ দেশের সরকার ও অন্যান্য রাজনৈতিক দক গুলোর কাছে আমাদের প্রস্তাব হচ্ছে ,
১। ঈদের সমস্ত রাষ্ট্রীয় আয়োজন যেমন-আলোক সজ্জা, বিভিন্ন সরকারী ও বেসরকারী সংগঠনের ভোজ সভা বাতিল করুন।
২।প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক দল কতৃক সমস্ত ঈদ আয়োজন বাতিল করুন।
৩। বাংলাদেশের সকল সাধারণ নাগরিকরা এবারকার ঈদের সব ধরনের উৎসব থেকে বিরত থাকুন।
আসুন আমাদের এবারের ঈদের আনন্দ প্যালেস্টাইনী নিহত শিশু ও নারী , আহত মা ও ভয়ার্ত ছোট্ট শিশুর প্রতি ভালবাসা দেখিয়ে পরিহার করি। আমরা মনে করি একটি পিছিয়ে পড়া দেশের নাগরিক হিসেবে উন্নত বিশ্বের প্রতি আমাদের অহিংস প্রতিবাদ জানাই ।যার মাধ্যমে কিছুটা হলেও ভ্রাতৃপ্রতীম প্যালেস্টাইনি স্বজনদের প্রতি আমাদের সহমর্মিতা প্রদর্শিত হবে।
তাই আসুন মুসলিম উম্মাহর অংশ হিসেবে আমাদের ভ্রাতৃপ্রতীম প্যালেস্টাইনি ভাই-বোনদের প্রতি সহমর্মিতা জানিয়ে সকল প্রকার ‘ঈদ আনন্দ উৎসব’ থেকে বিরত থাকি।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জুলাই, ২০১৪ বিকাল ৫:৪৫