শ্রাবণে পথচলায় আনন্দ রেশ থাকে, চিটচিটে ঘাম, রাস্তার ভেপেউঠা আঁচ অথবা আচমকা এক গাদা জমে থাকা জল। এ সবকিছুই বিরক্তি ছোঁয় ঠিক কিন্তু স্পর্শ করতে পারে না আমায়। পাশে থাকা জীবনের রঙ নিয়ে সাজা সবুজের ঝাঁপির উদারতায় আমি সিক্ত হই, ধন্য হই, আপ্লুত হই। আচ্ছা একটু এগিয়ে যদি ধানক্ষেতে বাতাসের দোলা থাকে তাতে ও কেউ অবজ্ঞা করতে পারে দিগন্তজুড়ে থাকা আনন্দ কে !
আমাদের এই ছোট্ট শহরের আলদা কোন বৈশিষ্ট নেই,অনান্য সব মফস্বলের মত এখানে ও ভোর হতেই রাস্তার মোড়ে মোড়ে গোয়ালা রা সকালের ঘোল বা মাঠা নিয়ে বসে, ফজরের নামাজ শেষে প্রাতঃভ্রমন সেরে কেউ কেউ দই মাখন নিয়ে বাড়ি ফেরে। ততক্ষনে পৌর কর্মীদের পরিছন্নতা শুরু হয়ে যায়। আশে পাশে শুরু হয় চুলোর কয়লা উঠানোর কাজ,চায়ের সুবাস আর পরোটা ভাজার ডালডা মৌ মৌ গন্ধ।
শৈশবে আব্বা মাঝে মাঝে আমাকে হাঁটতে নিয়ে যেতেন, ঘুম ভাঙা প্রজাপতি আমি ছুটেছুটে চলতাম আগুপিছু আর সঞ্চয়ে রাখতাম জীবন সঞ্জীবনী। কোনকোন দিন ফুলচুরির নেশায় কাকডাক ভোর নিঃশব্দে পারি দিতাম অবেলায়। আজ এই আমি রুপার তেমনি একটা দিন হয়ত আজই শেষ দিন। পারব আর এভাবে এই ভীষণ কোলাহলে জেগে উঠার আগ মুহূর্তের প্রিয় যায়গাটাকে দেখেতে? নাকি মেজো আপার মত আমাকেও কুঠরির মাঝেই জীবনের শেষ চিতায় উঠতে হবে,জ্বলতে হবে?
আমরা কেউ জানি না, রান্নাঘরের কোন চুলাটায় সেদিন আপার নামের আগুন জ্বলে উঠেছিলো, অন্তরের যাতনা বেশি ছিলো নাকি শরীর কয়লা হবার যন্ত্রণা? কেবল দুইবাড়ি দূরত্বে বসে জেনেছিলাম কলেজ শিক্ষকের ভীষণ শান্ত লক্ষ্মীবধু’টি আর নেই। আমাকে আগলে রাখার শান্ত চোখের বট বৃক্ষটি নেই।
দেবাশিসের জন্য কয়েকটা দোলনচাঁপার ঝাড় করেছিলাম এই বর্ষায় তা পেখম মেলেছে, ছুটি যে হয়নি তাই আর ওকে নৈবদ্য দেয়া গেলো না। গোলাপের রঙ ও আজকাল একটু পাংশুটে ওর বাগানের ই ডালছাটা জাতের গোলাপ। আজ পথে নামার আগেও কানপেতে ছিলাম প্রতিবেশীর শেষ ঘরটায় হয়ত বেজে উঠবে "যে রাতে মোর দুয়ারগুলি ভাঙল ঝড়ে "। এটুকু তো জানাই ছিলো ওর ছুটি হলেও আমার ছুটি মিলবে না এ নিয়মাতান্ত্রিক সংসারে।
বড়বোনের মেয়েটার মন টা অনেক নরম ওর জন্যই পেরেছি আজ এই শেষ পথবিলাসে নামতে, পায়েতে শৃঙ্খল কেটে পড়ে নিয়েছি তিন ঝুমকার সেই রুপালী মল। মেজো বোনের অঙ্গার হওয়া আত্মা ও আমাকে বাঁচাতে পারলো না।
ভগ্নীপতির সাথে আজ আমার বিয়ে।
বড় রাস্তা শেষ হয়ে খোয়া রাস্তায় নামতেই আমাতে প্রসন্ন প্রকৃতি। খালাম্মার উঠানে ফেলা উলটা পিঁড়ি ও আজ শ্রাবনের ঢল বুঝি আঁটকাতে পারে নি। এই শ্রাবনেই ধুয়ে যাক ভেসে যাক কলঙ্ক, মুছে যাক বুকের গভীরে থাকা দেবাশিসের ঘামের গন্ধ গালের কান্নার দাগ! মিলেমিশে একাকার বৃষ্টি আর কান্নার জল।
ঐ যে সামনে টলেটলে দিঘী! ব্যাস ঐটুকুই পথ এরপর মুক্তি!কৃষ্ণ জলে গাহনে আজ জুড়াবো প্রান
পাঠকের জন্যঃ
লেখকের প্রতি'টি লেখা নিজের হয় না,লেখক'রা সব সময় শব্দ,গল্প কুড়ায়।এরপর পাঠকের জন্য নিজের মত করে সাজায়।
গল্প'টা বাংলাদেশের একপ্রান্তের এক তরুণী রুপা'র গল্প।কিছুটা শোনা অল্প একটু দেখা-
এক সময় আমার চাকরির সুবাদে আমাকে দেশের বিভিন্ন জেলায় ,উপজেলায় আবার কখনো একেবারেই ছোট গ্রামে যেতে হয়েছে।সেখানে অনেক অনেক আনন্দ বিষাদের মুখের গল্প আমার কাছে জমা আছে,মাঝে মাঝে ভাবি তুলে আনব পাতায়,আবার কস্টের গল্প বলতে ভালো ও লাগে না।
হয়ত একদিন সাবিনা,আন্না ,পারভীন,রুপা সবার গল্প'ই আপনাদের বলে দেবো।