somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

'পাঠ অনীহা' রোগ ও অন্যান্য

০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ১০:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



লেখকদের জন্য 'রাইটিং ব্লক' ব্যাপারটা খুব স্বাভাবিক। তবে লেখকরা সেটা ঠিক 'স্বাভাবিকভাবে' নিতে পারেন না। কারণটাও অনুমেয়। মাশরাফি যেমন আজীবনের জন্য পঙ্গুত্বের সম্ভাবনা সত্ত্বেও মাঠে হুটহাট লাফ দেন, আশা ভোঁসলে যেমন আশির্ধ্বো বয়সেও সুরেলা কন্ঠে মাত করেন, ব্যাপারটাও অনেকটা তেমনি। একজন লেখকের কাছে তাঁর সবচেয়ে পছন্দের কাজই হচ্ছে লেখা। সেই কাজটাই যদি তিনি করতে না পারেন, যন্ত্রণা তো তাঁর হবেই।
আমি লেখক নই। তাই 'রাইটিং ব্লক' ব্যাপারটা বাদ। তবে আমার অদ্ভুত এক রোগ আছে। 'রিডিং ব্লক'! সরল বাংলা দাঁড়ায় 'পাঠে বাধা', আমরা যদি আরো সুন্দর বাংলা করি তাহলে হবে পাঠ-অনীহা কিংবা পাঠ বিমুখতা।
এই পাঠ অনীহাটা যে কি পরিমাণ যন্ত্রণাদায়ক তা বলে বোঝানোর নয়। বইয়ের সারি আছে, অঢেল সময় আছে, কিন্তু বই পড়তে পারছি না। অন্য কোনো কাজেও যে মনোনিবেশ করবো সেটাও হচ্ছে না। বই হাতে নিচ্ছি, পাতা উলটে যাচ্ছি, শুচ্ছি, বসছি, মাঝখান থেকে পড়ার চেষ্টা করছি, শেষেরটা দেখছি... কিন্তু কোনোমতেই আর পড়া হচ্ছে না। খুব যন্ত্রণাদায়ক অনুভূতি!

গেল বছর ভালোই বই সংগ্রহ করা গেছে। আমি পুরনো বইয়ের ক্রেতা, সামর্থ্য আর মূল্যের 'বিশাল' ব্যবধানের কারণে নতুন বইয়ের দিকে চাইলেও ঝুঁকতে পারি না। তবুও গত বছর অনেকগুলো 'নতুন' বই সংগ্রহ করা হয়েছে। এখানে কিন্তু 'অনেকগুলো' শব্দটি আপেক্ষিক। যারা বছরে কয়েক 'শ বই পড়েন, কেনেন। তাদের জন্য আমার সংগ্রহটা নিতান্তই মামুলি। তবে যদি আমার কথা বলি, এটা বিশাল সংগ্রহ। অথচ গত বছরের বেশীরভাগ সময়েই আমি খুব একটা বই পড়তে পারিনি। পাঠ অনীহা রোগে আক্রান্ত ছিলাম।

একটা সময় ছিল, পড়ার জন্য বই খুঁজে মরছি। অথচ পাচ্ছি না। ইয়া মোটা শরৎ রচনা সমগ্র বারবার পড়ি। নিষ্কৃতি, বিপ্রদাস, দত্তা, চন্দ্রনাথ... এইসব লেখা বেশ কয়েকবার পড়েছি। শরৎ-মুগ্ধতা আর এই লেখাগুলোর প্রতি আলাদা দূর্বলতা তো ছিলই, আরো একটি বড় ব্যাপার ছিল বইয়ের অভাব।
পুরনো বাসায় থাকাকালীন রানা'র কাছ থেকে বই নিয়ে পড়তাম। বাসা বদলানোর পর হঠাৎ নিজেকে আবিস্কার করি, এক মহা শূণ্যতার মাঝে। চারদিকে কেবল হাহাকার। এই হাহাকার আর সহ্য হলো না। একদিন ঝোঁকের মাথায় জমানো যা টাকা ছিল, তা নিয়ে চলে গেলাম আন্দরকিল্লাহ। সেখানে পুরনো বইয়ের দোকান ছিল একটা। ওর কাছ থেকে যা পেলাম কিনে আনলাম। তখন সমগ্র'র দিকে ঝোঁক ছিল, কারণ কম খরচে অনেক গল্প/উপন্যাস পেয়ে যাবো।
সেই শুরু। তারপর কিছু টাকা জমলেই মাস দুই/তিন পর সেই দোকানে গিয়ে বই কিনে আনতাম। পাঁচ-সাতশ টাকায় আর ক'টা বই পাওয়া যায়? তাই বইয়ের অভাব পেয়ে বসত। তখন আগেরগুলো পুনরায় পাঠ করা ছাড়া আর উপায় ছিল না।
বইয়ের অভাব নেই এখন। তবে মাঝে মাঝে আগ্রহের অভাব পেয়ে বসে।

আমাকে সাধারণত কেউ উপহার দেয় না। কালেভদ্রে কেউ দিলেও সবচেয়ে কাঙ্খিত উপহার 'বই' পাই না। এটা নিয়ে আমার কোনো অনুযোগ নেই। কারণ, আমি নিজেই 'বুকভরা ভালোবাসা' দেওয়াতে বিশ্বাসী। সেদিন এক বন্ধুর বিয়ে খেয়ে এলাম। দোয়া আর ভালোবাসা উপহার দিয়ে! ছোট বোনের জন্মদিন পালন করা হতো। ওকে বড় আন্টি, ছোট আন্টি, মামা, আপুরা অনেক কিছুই দিত। বান্ধবীরা দিত। সেও দিত। সেজন্য হয়তো পেত। আমি কাউকে দিইও না, পাইও না।
অনেক আগে একবার বন্ধু শাহাদাত মরহুম হুমায়ুন আহমেদের 'প্রিয়তমেষু' দিয়েছিল। সেটা খুব যত্ন করে রেখেছিলাম। কিন্তু বড় আন্টির বাসায় গিয়ে বইটা কোথায় হারিয়ে যায়! সেই দুঃখ এখনো যায়নি। আরো কিছু বই হারিয়ে ফেলেছি। তাই এখন সিদ্ধান্ত নিয়েছি, জ্ঞান বিতরণের মহান বিশ্বাসে বই আর কাউকে বিলাব না। বরং বই নিলে আর ফেরত দেব না।
আমার এক বন্ধু আছে আবরার, সে তো বই চোর নামই দিয়ে দিয়েছে! আমি জানি বই চুরিতে পাপ নেই। তাই বই চোর হওয়াতে লজ্জার চেয়ে তৃপ্তিই বেশী।

গত বছর উপহার হিসেবে 'বই' পেয়েছি অনেকগুলো। বন্ধু শাহাদাত একবার নুপুর মার্কেটে নিয়ে বললো, "তোর জন্য একটা বই বাজেট। যা খুশী কিন।" আমি মহাদেব সাহার কাব্য সংকলণ নিলাম। শাহাদাতের প্রতিক্রিয়া ছিল, "ধুর ব্যাটা! কেনার জন্য বই পেলি না। কবিতা!" আবরারের সাথে প্রায়ই তর্ক হয়, কবি আর কবিতা নিয়ে। ওর ধারণা কবিরা সব বদ্ধ পাগল!
বাংলায় ক্রীড়া ওয়েবসাইট প্যাভিলিয়নের তরফ থেকে কিছু বই পেয়েছিলাম। আরো কিছু বই উপহার হিসেবে নিয়ে নিয়েছি। আম্মু টাকা দিল, "তোর যা ইচ্ছে কিনিস।" উপহার স্বরুপ বই কিনে রাখি। বোনের টাকার ব্যবহারটাও হয়েছে সেভাবে। আবরারকে বললাম, "জিম করবেটটা আমাকে দে।" সে বলে, "তুই বই নিলে ফেরত দিবি না। তোকে বই দেব না।" হেসে জানিয়ে দিই, "তোর বই আমার কাছে নিরাপদ থাকবে।" অনেক অনুনয়ের পর বই নিয়ে আসতে সক্ষম হই। নিয়েছিলাম 'বাংলাদেশের রক্তের ঋণ' বইটাও। সেসবও ওর কাছ থেকে উপহার হিসেবে বুঝে নিয়েছি।

আগে হাতে কিছু টাকা জমলে, একসাথে কিছু বই কিনতাম। ইদানীং সুযোগ হলেই বই কিনে ফেলি, হোক একটা! তো আম্মু দেখছেন বাসায় বই আসছে, কিন্তু পড়ছি না। পড়বো কি করে? আমি তো পাঠ অনীহা রোগে আক্রান্ত! "এত বই কিনে লাভ কী? যদি না-ই পড়িস!" একটু হেসে বলি, "পড়বো। এখন হয়তো পারছি না। তবে সংগ্রহে থাকলে তো পরে হলেও পড়তে পারবো।" আম্মু আর কিছু বলেন না।

কয়েকদিন ধরে আনন্দ লাগছে। খুব পড়তে ইচ্ছে হচ্ছে। ড্যান ব্রাউনের 'দ্য দা ভিঞ্চি কোড' বিছানা আর টেবিলের আশেপাশে ঘোরাঘুরি করছিল বহুদিন। রেহনুমা বিনতে আনিসের 'নট ফর সেল'টারও একই অবস্থা ছিল। পড়তে পারছি এখন। তাই শেষ হয়ে গেল।
উৎপল শুভ্র 'কল্পলোকে ক্রিকেটের গল্প' নিয়ে অপেক্ষায় আছেন, ডাঃ শামসুল আরেফীনও 'ডাবল স্ট্যান্ডার্ড' পড়ার আমন্ত্রণ জানাচ্ছেন, দেবব্রত মুখোপাধ্যায় ডাকছেন 'আপন চোখে ভিন্ন চোখে' পড়ার জন্য। সংশপ্তক, জিম করবেট সমগ্র, টেনিদা সমগ্র, তত্ত্ব ছেড়ে জীবনে... কত কত বই জমা হয়ে আছে। আর-রাহীকুল মাখতুম আর তালিবুল হিশামীর 'বিশ্বনবীর সাহাবা' বই দুটো পড়ার কত আগ্রহ! এই 'পাঠ অনীহা' রোগ সবকিছু আটকে দিয়েছিল।

এই রোগ থেকে কিছু পরিত্রাণ জুটেছে মনে হচ্ছে। তবে নিজের সম্বন্ধে জানি তো, ভয় হয় যে কোনো সময় এই রোগ না আবার আক্রমণ করে বসে!

সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৮ সকাল ৯:৫১
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×