somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কনডম

১৬ ই নভেম্বর, ২০১৭ সকাল ৭:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


একবার দু-বার নয়, এই নিয়ে কয়েকবার হলো; আর সহ্য হয় না। পিয়ার মহম্মদ ফাতরা লোক। দোকানে বসে জুল জুল করে মানুষ দেখে, মানুষ বলতে মেয়েমানুষ। দুচোখের দৃষ্টিতে শয়তানি ডিগবাজি খায়। মাথায় চটুল বুদ্ধি আঁটে। সেদিন কয়েকটি খালি প্যাকেট গুছিয়ে রাখতে রাখতে তার দিকে অপাঙ্গে দৃষ্টি ফেলে। সকাল সাড়ে এগারো বাজে। আকাশ মেঘলা। ভেতরে আট ওয়াটের এনার্জিবাল্ব জ্বলছে। ফিকে আলো। সবকিছু রহস্যময়।

‘আকমল তোকে যে পরশুদিন ঘাসিপাড়া যেতে বলেছিলাম...যাসনি তো বে।’
‘ভালো লাগে না বস।’
‘তোর ভালো লাগা না লাগা নিয়ে তো আমার ব্যবসা চলবে না...আনতে বলেছি, নিয়ে আসবি।’
‘আ রে ভাই কাউন্টারে যে মহিলা বসে থাকে কেমন করে তাকায়। সেদিন বলছিল, কতদিন বিয়ে হয়েছে?’
‘হ্যাঁ তোর অবশ্য শাদি করা দরকার। আমার তো বাইশ বছর পার হয়ে গেল। তোর বয়স কত?’
‘একুশ।’
‘বলিস কি বে, ইতনা শাল কা হো গিয়া আব তক কুছ হলো না।’

আকমল অন্যদিকে চোখ ফিরিয়ে রাখে। রুকসানার কথা মনে পড়ে যায়। পাশের বাড়ির মেয়ে। অদ্ভুতরকম ডাঙর হয়ে উঠেছে। স্বপ্নে এসে শরীর-মন রাঙিয়ে দেয়। একদিন সাহস করে কথা বলে বসবে। কিন্তু তার বুকে বল আসে না। যে শালার মনের মধ্যে তাকত নেই, তার কিছু হবে না। শক্তি জোগানোর বুদ্ধিও তো হচ্ছে না। ছোট একটি চাকুরি। দোকানের সেলসম্যান। কাঁধের উপর বুড়ো বিধবা মা আর ছোট দুই ভাইবোন। স্বপ্নেরা শক্তি তার কল্পনার মধ্যে ঘুরপাক খেতে থাকে। অনেক দায়িত্ব। কবে যে কীভাবে শেষ হবে কে জানে! সে-সময় দুজন মহিলা দোকানের সামনে এসে দাঁড়ায়। আশাপাশের বাতাস মুহূর্তে অন্যরকম সৌরভে ভুর ভুর করে উঠে।

‘ভালো পারফিউম দেখান তো...আর ডাভ কিউকাম্বার।’
‘আসেন আসেন আফা...আকমল সেদিন যে নতুন সেন্ট এলো বের কর।’

পিয়ার মহম্মদ সেদিনের দৈনিক একপাশে সরিয়ে রাখে। দিনে দিনে বুদ্ধিজীবি হয়ে উঠেছে আজকাল। মানুষজনকে দেখাতে হবে। আকমল জানে সকল জারিজুরি। তার সময় নেই, তাড়াহুড়ো করে। পিয়ারের ব্যস্ততাও বাড়ে। ঘাগু লোকের অনেক কায়দাকানুন। গ্রাহক ফাঁসাতে কখনো ব্যর্থ হয়নি। চাই কি আরও কতগুলো জিনিস গছিয়ে দেবে। এই যেমন চুলের জন্য ই-ক্যাপসুল, সুতির ব্রা অথবা হেয়ার ক্লিপ কিংবা...সে যাক। আকমল আলগোছে পুবদিকের শেলফ খোলে। নিচের তাকে ন্যাফথালিন আর স্যানিটারি ন্যাপকিনের প্যাকেট। হয়তো এরা এসবই কিনবে। সেন্ট হলো বাহানা। অনেক মানুষ বাইরের দুনিয়ায় লাজু লাজু থাকলেও ভেতরে ন্যাংটা। এ অভিজ্ঞতার তার নতুন নয়। একবার এক মধ্য-বয়স্ক লোক এলো। মাথায় ভি-ক্যাটেগরির টাক। কানের দু-পাশ আর পেছনের ঘন চুল অদ্ভুত করে তুলেছে চেহারা। সে এটা চায়...ওটা দেখে। দেখতে দেখতে বুঝতে বুঝতে অবশেষে ওগুলোই কয়েক প্যাকেট কিনে নেয়। আ রে এসবই যদি কিনবি তো এ তো বাহানা কিসের? সেলফ থেকে নানান জিনিস বের করে দেখাতে দেখাতে পিয়ার মহম্মদও বিরক্ত। লোকটি চলে গেলে যুতমতো গালি দেয়, -

‘শালা! এ্যয়সা কাস্টোমার আয়েগা তো ব্যবসার লালবাত্তি জ্বল যায়গা।’
‘ক্যান বস?’
‘আ বে তু চুপ যা...সময়ের কিমত জানিস?’
‘জি বস!’

আকমল নিশ্চুপ। তার মজা লাগে। লোকটি তখন পড়িমরি ছুটছে। এখন তার সেই ঘটনা মনে পড়ে যায়। সে সেন্টের কয়েকটি শিশি রাখতে রাখতে গুনে নেয়, এরমধ্যে কোনটি ব্রান্ড কোনটি ফেক। তার দৃষ্টি নির্বিকার...যথাসম্ভব নিশ্চুপ।

পিয়ার মহম্মদের পায়ের কাছে তাকের কোণায় চার-পাঁচটি খালি প্যাকেট পড়ে আছে। ভয়ংকর ছবি ছাপা। ওগুলো জায়গা মতো সাজিয়ে রাখতে হবে। প্রায় সাত আট-দশটি জমা হয়ে গেল। এই জন্য পিয়ারের ঘুম হারাম। বার বার তাগাদা দেয়, পরিবার পরিকল্পনা বা মাতৃসদন অফিসে যেতে হবে। সে সকল জায়গায় যেতে রাজি, কিন্তু...ওখানে নয়। অদ্ভুত অনুভূতি হয়। গতবার কাউন্টারে হোতকা টাইপের এক মহিলা বসে ছিল। সে যখন চাইল, অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখে। দুচোখে অবিশ্বাস। শেষে মোলায়েম স্বরে জিজ্ঞেস করে, -

‘কত দিন হলো বিয়ে হয়েছে? কয়টি বাচ্চা নাকি নেই? আরও ভালো ব্যবস্থা আছে।’

আকমল বিমুঢ়। মহিলা কাউন্টারের দিকে মাথা বাড়িয়ে প্রায় কানের কাছে মুখ টেনে এনে ফিসফিস করে আবার।

‘কেউ বাচ্চা চায়...কারও হয় না। বয়স কত তোর?’
‘একুশ।’
‘ফাটাফাটি বয়স...চালিয়ে যা।’

আজ আবার আসতে হয়েছে। পিয়ার মহম্মদের তর সইছে না। গ্রাহক বিদায় করে বারকয়েক তাগাদা দেয়। অবশেষে আকমল দুপুর রোদের মধ্য দিয়ে সাইকেল চালিয়ে এসেছে। আজও সেই মহিলা। কুতকুতে দৃষ্টিতে তাকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে। কোনো কথা বলে না। রেজিস্টারে নাম-ঠিকানা লিখে দিয়ে দিল। আকমল স্ট্রিপগুলো গুছিয়ে বের হয়ে আসে। শরীর ঘেমে গেছে। বগলের তলা দিয়ে ভুস ভুস দুর্গন্ধ ছড়ায়। মহিলা নির্ঘাত হাণ্টার। অতৃপ্ত খেলুড়ে। হয়তো দু-চারটি পরকীয়া করে।...তো কে কী করে করুক...তার ভাবনার দরকার কি? অন্য মানুষ সম্পর্কে বাজে চিন্তায় নিজের মন কলুষিত করা কেন? সে সঙ্গে আনা হ্যান্ডব্যাগের মধ্যে ওসব ভরে নিতে নিতে নিজেকে গালাগাল করে।

আকমলের শোনা, আগে নাকি ফ্রি দেয়া হতো । ঘরে ঘরে বিতরণ। বৃটিশ আমলে চা’এর নেশা ধরিয়ে দেয়া হয়। ‘এক প্যায়সা মে এক পেয়ালা চা পিলো...দিল খুশ।’ ফ্রি খেতে খেতে নেশা ধরে গেল। এখন মনের প্রশান্তির জন্য টাকা খরচ করে চা’এ চুমুক দিতে হয়। একদিন চা না পেলে পেট খালি হয় না। এসব জিনিসও এখন টাকা দিয়ে নিতে হয়। অফিসে কাউন্টার আছে। লোকজন আছে। তারা রেজিস্টারে নাম ঠিকানা লিখে রাখে। সে পিয়ার মহম্মদের নাম জানিয়ে দেয়। লাভ তো তার...তার কি? এখন হাজাররকম লাভস্টোরিতে এ জিনিস চাই। বিনে পয়সার জিনিস দিন দিন দামি হয়ে যাচ্ছে।

আকমল সাইকেলের ঝুড়িতে ব্যাগ রেখে বাঁ প্যাডেলে পা তুলে দেয়। তারপর হ্যাঁচকা টানে উঠতে গিয়ে শোনে এক বিকৃত শব্দ। আর উপায় নেই, গেছে...প্যান্টের পেছন ফেটে আলিবাবা চিচিং ফাঁক। অনেক আগের প্যান্ট। সে আলগোছে ডানহাতে স্পর্শ নিয়ে দেখে, বাস্তবিক খারাপ অবস্থা। একেবারে কনডম। এখন কি করবে? একটানে নিউটাউন যাবে নাকি দোকানে? কিছু তো করতে হবে। পিয়ার মহম্মদ বসে আছে। প্রায় ফ্রি কিংবা দু-টাকায় নেয়া ত্রিশ-চল্লিশ পিস জিনিস চায়নিজ প্যাকেটে গুনে গুনে তিনটি ভরে পনেরো-কুড়ি টাকায় বিক্রি...একে বলে ধান্ধা। এই করে পিয়ার মহম্মদের গুটি লাল! আকমলের কি? তার বয়স একুশ। পাশের বাড়ির রুকসানা স্বপ্নে জাগরণে এসে মনে টোকা দেয়। রাতে ঘুমের মধ্যে নাচিয়ে বেড়ায়। ভিজে যায় সবকিছু। লজ্জা লজ্জা! এখন তার প্যান্ট ছিড়ে গেছে। গরিবের কনডম জীবন। সে কেন স্বপ্ন দেখে?
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই নভেম্বর, ২০১৭ সকাল ৭:২১
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

একমাত্র আল্লাহর ইবাদত হবে আল্লাহ, রাসূল (সা.) ও আমিরের ইতায়াতে ওলামা তরিকায়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:১০



সূরাঃ ১ ফাতিহা, ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
৪। আমরা আপনার ইবাদত করি এবং আপনার কাছে সাহায্য চাই।

সূরাঃ ৪ নিসার ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×