somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কিংকর্তব্যবিমূর

২৬ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



বিস্ময়ের ঘোর কাটেনা, জয়ীতার।

কিংকর্তব্যবিমূর হয়ে স্থাণুর মত দাঁড়িয়ে যায়, তার নিজের জায়গায়। সে কিছুই বুঝতে পারছে না, এমন কি কোন কিছু ভাবতেও পারছে না। হাজারো প্রশ্ন মনের ভিতর ঘুরপাক খাচ্ছে।

দীপন কেন অর্পণার সাথে?
গত কয়েকদিন অর্পণা কোথায় ছিল?
অর্পণা এতদিন পরে কোত্থেকে এলো?
অর্পণার সাথে দীপনের কি সম্পর্ক ?
দীপনই বা গত কয়েকদিন ধরে এমন আচরণ করছিল কেন তার সাথে?
তবে কি, দীপন আর অর্পণার মাঝে কিছু ঘটেছে?

সামনে তাকায়, দীপনের দিকে, কিন্তু দীপন ততক্ষণে গাড়ির দিকে হাটতে শুরু করে দিয়েছে। তাই, তার চেহারা দেখতে পারে না। অর্পণার দিকে চোখ তুলে তাকানোর বৃথা চেষ্টা করে, তাকায় পর্যন্ত। কিন্তু, কেন জানি বহু পরিচিত এই মুখটা এখন অপরিচিত মনে হয়।

সে কি কাঁদতে শুরু করেছে ? না, চোখে পানি চলে আসছে ? অর্পণাকে চোখের পানি দেখতে দেয়া যাবে না। কান্না ঢাকার চেস্টায় সে মাথা নিচু করে গাড়ির দিকে এগুতে শুরু করে। হাতল ধরার আগ মুহূর্তে দীপন প্রায় দৌড়ে এসে তাকে থামিয়ে দিয়ে পিছনের দরজা খুলে দেয়।

মুহূর্তের মধ্যে জয়ীতা সব বুঝে ফেলে। এতদিন গাড়ির সামনে ড্রাইভারের পাশের সিটটা ছিল তার, দীপন গাড়ী চালাতো আর সে তার পাশের সীটে বসে রাজ্যের খুনসুটি করত। অন্য যারাই গাড়িতে উঠত, সবাই বসত পিছনে। আজ , এই মুহূর্ত থেকে তার আর সেই অবস্থান নেই; তাহলে কি অর্পণা এখন থেকে তার জায়গা দখল করলো ?

অর্পণা ? যাকে কিনা সে সবচেয়ে কাছের মানুষ মনে করতো।
কীভাবে সম্ভব?
সে তো তার আর দীপনের মাঝের সব কিছুই জানে; তাও এক্কেবারে গোড়া থেকেই! সে এত বড় বেইমানী করতে পারল? গত সাতটা বছর ধরে যে অর্পণাকে সে এত ভালো জেনে এসেছে, তার আসল চেহারা এমন কুৎসিত ! আর, জয়ীতা এতোই বোকা যে, একে সে চিনতে পারেনি, উল্টো তাকে একজন মহামানবী মনে করে এসেছে।

একই ডিপার্টমেন্টের ছাত্রী হওয়ার সুবাদে জয়ীতা আর অর্পণার প্রতিদিনই একত্রে সময় কাটানো হতো। আত্নার টান এমন পর্যায়ে পৌছালো যে, এক সিনিয়র আপুকে হাতে পায়ে ধরে জয়ীতা যখন হলে সিট ম্যানেজ করে ফেললো, তখন অর্পণার খুশী দেখে কে! এরপরে পুরো ভার্সিটি লাইফে তাদেরকে কখনো আলাদা দেখা যায়নি, দুজন সব সময়ই একত্রে থেকেছে।

নীলক্ষেতে বই কেনা থেকে শুরু করে, শাহবাগের মোড়ে চটপটি খাওয়া অথবা বলাকা হলে সিনেমা দেখা – কোন কিছুতেই একজন আরেকজনকে ফেলে যেত না। একজন অসুস্থ হলে, আরেকজন যেন আরো বেশি কষ্ট পেত; যতটা না শারীরিক তার থেকে অনেক অনেকগুন বেশি মানসিক। সম্পর্কটা এক পর্যায়ে দুজনেরই পরিবারে সংক্রমিত হতে দেরী হলো না; এমনকি কয়েকটা ছুটি একজন আরেকজনের বাড়িতেও কাটিয়েছে।

থার্ড ইয়ারের কোন এক সময় দীপনের আবির্ভাব ঘটে তাদের দুজনের মাঝে। একই ডিপার্টমেন্টের হওয়া সত্ত্বেও দীপনকে জয়ীতা অতটা খেয়াল করেনি কখনো। আসলে, সে কোন ছেলেকেই খেয়াল করতো না। কলেজে পড়ার সময়ই ছোট বোন বোকার মত প্রেমে পড়ে যায় পাড়ার এক মাস্তানের। এরপরে, তাদের পরিবারে যে অশান্তি নেমে আসে, তা দেখেই জয়ীতা পারতপক্ষে ছেলেদেরকে কাছে ঘেষতে দেয় নি। বরং রীতিমত ভয় নিয়ে এড়িয়ে চলত। তারপরেও কীভাবে কীভাবে যেন দীপনের সাথে একটা বন্ধুত্ব গড়ে উঠলো; যা স্টাডি ট্যুরে গিয়ে কিছুটা ভিন্ন মাত্রা পেয়ে যায়। তবে, অর্পণা শুরু থেকেই তাদের মাঝে সেতুবন্ধনে সহায়তা করেছে। কখনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে আসেনি, উল্টো ছোট খাট অনেক ভুল বোঝাবুঝিতে সময়ে সময়ে সেই মিটমাটে এগিয়ে এসেছে, স্বউদ্যোগে।

ভাবতে ভাবতেই আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের মতো বুক ঠেলে কান্না আসছে জয়ীতার। কান্নার দমকে দমকে সারা শরীর কেঁপে কেঁপে উঠছে তার। চোখ ভর্তি পানি, সব কিছু ঝাপসা হয়ে আসছে; কোন মতে একটু ঘুরে গাড়ির পিছনের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করে সে। দীপন এখনো দরজা খুলে দাঁড়িয়ে আছে; জয়ীতা প্রায় তার গা ঘেঁষে এগিয়ে গিয়ে কোনমতে গাড়ীতে উঠে বসে। পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় তার প্রিয় পারফিউমের সুবাস নাকে এসে লাগে; গত ঈদের শপিং এর সময় নিজে পছন্দ করে কিনেছিল সে।

গাড়িতে বসেই দু হাত দিয়ে মুখ ঢেকে ফেলে; কান্না আড়াল করার চেস্টায়। দরজা বন্ধ করায় ভিতরে লাইটও অফ হয়ে গেছে, বাইরেও অন্ধকার নেমে এসেছে কিছুক্ষণ আগেই; তাই তার এই কান্নাভেজা চেহারা লুকোতে তাকে অত চেষ্টা করতে হচ্ছে না। উড়না দিয়ে চোখ মোছার মধ্যেই টের পাচ্ছে, তার পাশে কেউ একজন উঠে বসছে। চোখ মুখ ঢাকা থাকলেও, এমনকি মাথা ঘুরিয়ে না দেখেও সে বুঝতে পারে, অর্পণা তার পাশে উঠে বসেছে।

অর্পণা তো সামনে বসার কথা, দীপনের পাশে !
এখানে তাহলে, অন্য কোন মেয়ে উঠলো নাকি ? মুহূর্তের মধ্যেই জয়ীতার কান্না ছাপিয়ে বিস্ময় জেগে উঠে। তাড়াতাড়ি চোখ মুছে, পাশে তাকিয়ে অর্পণার অবাক চাহনি দেখে সে বুঝে উঠতে পারে না, এ কীভাবে সম্ভব! সামণের সিট ছেড়ে অর্পণা হঠাত পিছনে এসে বসছে কেন ?

অন্যদিকে, অর্পণা বিস্মিত হয়ে চেয়ে আছে জয়ীতার দিকে, কি হয়েছে জয়ীতার ? দেখা হওয়ার পর থেকেই কেমন উদ্ভট আচরন করছে। আগে যেখানে প্রতিদিন দেখা হলেও, দেখা হওয়া মাত্রই জড়িয়ে ধরত, আজ তাকাচ্ছে না পর্যন্ত।

জয়ীতার ভাবনায় ছেদ পড়ে সামনের সিটে ঈষৎ নড়াচড়ায়। হঠাৎ চোখের কোনে হালকা ভাবে ধরা পড়ে আরেক জনের অবয়ব; সামনের সিটে বসে আছে তাদেরই সমবয়সী এক যুবক। নিজেকে নিয়ে এতই মগ্ন ছিল যে, তার উপস্থিতি জয়ীতা খেয়ালই করেনি এতক্ষণ।

সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১:১৩
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×