somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কাঁঠাল চাঁপা

০১ লা মে, ২০১৮ রাত ১:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



- তোকে সারপ্রাইজ দিব বলে আগে জানাইনি। যদিও আমি নিজেও কিছুটা সারপ্রাইজড হয়ে গেছি।
বলেই কিশোরীর উচ্ছলতায় হাঁসতে থাকে অর্পণা।
মনকাড়া সেই হাঁসি, যা দেখে অনেক ছেলেই দ্বিতীয়বার তাকাতে বাধ্য হয়েছে অনেক দিন।

অর্পণা হাসতে হাসতে বললেও, জয়ীতা এখনো পুরোপুরি সহজ হতে পারছে না।
বিষণ্ণ একটা লম্বা দিন একাকী কাটানোর পরে, দীপন আর অর্পণাকে একত্রে দেখে কি না কি সব ভাবছিলো এতক্ষণ!
নিজেকে নিজের কাছেই ছোট মনে হচ্ছে, এখন। নিজের স্বামী আর সবচেয়ে কাছের বান্ধবীকে নিয়ে তার এমনটি ভাবা যে মোটেও উচিৎ হয়নি, সেটা বুঝতে আর বাকী নেই।

এতক্ষণ উৎকণ্ঠায় আর কান্না আড়ালের চেষ্টায় চোখ তুলে তাকাতে পারছিল না।
আর এখন, লজ্জায় চোখ তুলে তাকাতে পারছে না সে।
কিন্তু এমনটি কেন হচ্ছে? ব্যস্ততা, অবসাদ নাকি অন্য কিছু?

কিছুদিন আগে একটা নাটক দেখেছিল টিভিতে, এক দম্পতির সন্দেহবাতিকতাকে কেন্দ্র করে হাসির নাটক।
স্বামী এবং স্ত্রী দুজনই পরস্পরকে সন্দেহ করে, আর তাদের সন্দেহ থেকে নানা ধরনের সমস্যার উদ্ভব হয় – সেই সব সমস্যাকে হাস্যরসাত্নক ভাবে তুলে ধরা হয়েছিল সেই নাটকে।
যদিও নাটকের সমাপ্তি টানতে গিয়ে নাট্যকার দেখিয়েছিলেন যে, দুজনেই তাদের নিজ নিজ ভুল বুঝতে পারে এবং শুধরে নেয়।
বাস্তবে কি এমনভাবে ভুল শুধরে নেয়া সম্ভব ? সে নিজে কি আদৌ এই সমস্যায় ভুগছে? নাকি, সে অন্য কোন মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত?

- দীপন, জয়ীতাকে সাজিদের সাথে একটু পরিচয় করিয়ে দাওনা।
অর্পণার কথায় জয়ীতার চিন্তায় ছেদ পড়ে; সেই সাথে ‘সাজিদ’ নামের উচ্চারনে কিছুটা সলাজ জড়তাও তার কানে বাজে।

অবাক হয়ে এবার তাকায় সে অর্পণার দিকে।
গাড়ির ভিতরের হালকা আলোতেও অর্পণার চোখেমুখে হাসির ঝিলিক তার দৃষ্টি এড়ায় না।
একটু কেমন যেন অন্যরকমও লাগছে তাকে এখন!

- জয়ি, মীট সাজিদ, হাজব্যান্ড অব অর্পণা ।
- সাজিদ, দিস ইস জয়ীতা; ইউ হ্যাভ অলরেডি হার্ড এবাউট হার।
অনেকটা রোবোটিক কন্ঠে দীপন বলামাত্রই, সাজিদ সামনের সীটে বসে থেকেই যতটুকু সম্ভব পিছনে ঘুরে তার দিকে তাকিয়ে একটা প্যাকেট এগিয়ে দিয়ে বলে উঠে,
- আপনার সাথে দেখা হওয়ার অপেক্ষায় ছিলাম। আসলে, অর্পণার মুখে আপনাদের কথা এত শুনেছি যে, তর সইছিল না। আর, এটা শুধু আপনার জন্যে।

উইন্ডসিল্ড ভেদ করে যেটুকু আলো সামনে থেকে গাড়ির ভিতরে আসছিলো, পুরোটাই তার পিছনে থাকার পরেও সাজিদের চেহারা পুরোপুরি অন্ধকারে ঢেকে যায়নি। তাই, প্যাকেটটা নেয়ার জন্যে জয়ীতা কিছুটা সামনের দিকে ঝুঁকে, তার হাসিমাখা মুখের দিকে তাকিয়ে নিজের অজান্তেই কিছুটা চমকে উঠে।

প্যাকেটটা নিয়ে ধন্যবাদ দিতে দিতেই সে আবার সিটে হেলান দিয়ে বসে।
প্যাকেটটা খুব সুন্দর একটা পার্পল কালারের র‍্যাপিং পেপার দিয়ে মোড়ানো; কোনায় তিনটা প্লাস্টিকের কাঁঠালচাঁপা।
গিফট বক্স প্যাকিং এর এমন সুন্দর সুন্দর আইটেম এখন গিফট শপগুলোতে অহরহ পাওয়া যায়। কিন্তু, জয়ীতা অবাক হয়েছে কাঁঠাল চাঁপা ফুল দেখে; এই ফুল সচরাচর চোখে পড়ে না। তার চেয়ে বড় বিষয় হলো, কাঁঠালচাঁপা ফুল এক সময় তার অসম্ভব প্রিয় ছিল।

অনেক দিন পর আজ সে কাঁঠাল চাঁপা ফুল দেখছে, যদিও নকল ফুল।
ছোটবেলায় স্কুলের মেইন গেইট দিয়ে ঢোকার পর পরই প্রায় আট – দশটা কাঁঠালচাঁপা ফুলের গাছ ছিল।
যখন সবগুলো গাছে ফুল ফুটত, শুধু মিষ্টি সুগন্ধেই পুরো ক্যাম্পাস ভরে যেত।
তখন তার মনে হত, শুধু সুগন্ধ দিয়েই যদি একজন মানুষকে পাগল করতে হয়, তাহলে কাঁঠালচাঁপা ফুলই যথেষ্ট।
এরপরও সে কাঁঠালচাঁপা ফুল দেখেছে, তবে দূর থেকে অথবা নার্সারিতে গিয়ে; যেখানে গাছ থাকত হাতে গোনা মাত্র কয়েকটা আর ফুলও থাকত তেমনি অল্প।
তাই, সুগন্ধে পাগল হওয়ার সুযোগ আর কখনো সে পায়নি।

ইঞ্জিন স্টার্ট হওয়ার শব্দে সে কিছুটা সচকিত হয়ে উঠে।

- আজ কফি সাজিদ অফার করছে। তাই, আমরা তার পছন্দের একটা কফি শপে যাচ্ছি। তার দিকে না তাকিয়েই দীপন কথাগুলো বললেও, এগুলো যে তার উদ্দেশ্যেই বলা তা বুঝতে এতটুকু দেরী হয় না জয়ীতার ।

- জানিস, সাজিদও তোর মতো কফি পাগল।
বলেই আবার হাসতে থাকে অর্পণা; তবে কিছুটা মুচকি হাসির মত করে হাঁসছে সে এখন।
অর্পণার এই হাঁসি তার অতি চেনা – এর মানে হলো অর্পণা এখন খুভ ভালো মুডে আছে।
শুধু তাই নয়, লম্বা সময় নিয়ে প্রাণ খুলে গল্পের জন্যে সে মুখিয়ে আছে।
ফুরসত পাওয়া মাত্রই উগড়ে দিবে।


সর্বশেষ এডিট : ০১ লা মে, ২০১৮ দুপুর ১২:১৯
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

প্রতি মাসে সামু-ব্লগে ভিজিটর কত? মার্চ ২০২৪ Update

লিখেছেন জে.এস. সাব্বির, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৮

মার্চ ২০২৪ সালে আমাদের প্রিয় সামু ব্লগে ভিজিটর সংখ্যা কত ছিল? জানতে হলে চোখ রাখুন-

গত ৬ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভিউ ছিল জানুয়ারি মাসে। ওই মাসে সর্বমোট ভিজিট ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রোএক্টিভিটি এবং কম্পাউন্ড ইফেক্ট: আমার গুরুত্বপূর্ণ দুইটি শিক্ষা

লিখেছেন মাহদী হাসান শিহাব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১১



আমার গুরুত্বপূর্ন দুইটা লার্নিং শেয়ার করি। এই দুইটা টুল মাথায় রাখলে দৈনন্দিন কাজ করা অনেক সহজ হয়। টুল দুইটা কাজ করতে ও কাজ শেষ করতে ম্যাজিক হিসাবে কাজ করে।

এক.

স্টিফেন কোভের... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রসঙ্গ রূপান্তরঃ ট্রান্সজেন্ডার, সমকামিতা এবং যৌনতা বিষয়ক কিছু আবশ্যিক আলাপ

লিখেছেন সায়েমার ব্লগ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৩

প্রসঙ্গ রূপান্তরঃ
ট্রান্সজেন্ডার, সমকামিতা এবং যৌনতা বিষয়ক কিছু আবশ্যিক আলাপ

১।
যৌন প্রাকৃতিক, জেন্ডার নয়।জেন্ডার মানুষের সৃষ্টি (social, cultural construction)। যৌনকে বিভিন্ন সমাজ বিভিন্ন সময়ে যেভাবে ডিল করে, তাঁকে ঘিরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্মৃতির ঝলক: প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অনুভূতি এবং মনের শান্তির খোঁজে

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০১



সরল প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সংমিশ্রণে একটি ঘূর্ণায়মান পথ জুড়ে ঘুরে বেড়ানোর অবস্থানে আমি খুব শান্তি অনুভব করি। নদীর জল ছুঁয়ে পথ ধরে হাঁটতে হাঁটতে নৈসর্গিক সৌন্দর্যের সঙ্গে এক আন্তরিক সংযোগ অনুভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

×