- তোকে সারপ্রাইজ দিব বলে আগে জানাইনি। যদিও আমি নিজেও কিছুটা সারপ্রাইজড হয়ে গেছি।
বলেই কিশোরীর উচ্ছলতায় হাঁসতে থাকে অর্পণা।
মনকাড়া সেই হাঁসি, যা দেখে অনেক ছেলেই দ্বিতীয়বার তাকাতে বাধ্য হয়েছে অনেক দিন।
অর্পণা হাসতে হাসতে বললেও, জয়ীতা এখনো পুরোপুরি সহজ হতে পারছে না।
বিষণ্ণ একটা লম্বা দিন একাকী কাটানোর পরে, দীপন আর অর্পণাকে একত্রে দেখে কি না কি সব ভাবছিলো এতক্ষণ!
নিজেকে নিজের কাছেই ছোট মনে হচ্ছে, এখন। নিজের স্বামী আর সবচেয়ে কাছের বান্ধবীকে নিয়ে তার এমনটি ভাবা যে মোটেও উচিৎ হয়নি, সেটা বুঝতে আর বাকী নেই।
এতক্ষণ উৎকণ্ঠায় আর কান্না আড়ালের চেষ্টায় চোখ তুলে তাকাতে পারছিল না।
আর এখন, লজ্জায় চোখ তুলে তাকাতে পারছে না সে।
কিন্তু এমনটি কেন হচ্ছে? ব্যস্ততা, অবসাদ নাকি অন্য কিছু?
কিছুদিন আগে একটা নাটক দেখেছিল টিভিতে, এক দম্পতির সন্দেহবাতিকতাকে কেন্দ্র করে হাসির নাটক।
স্বামী এবং স্ত্রী দুজনই পরস্পরকে সন্দেহ করে, আর তাদের সন্দেহ থেকে নানা ধরনের সমস্যার উদ্ভব হয় – সেই সব সমস্যাকে হাস্যরসাত্নক ভাবে তুলে ধরা হয়েছিল সেই নাটকে।
যদিও নাটকের সমাপ্তি টানতে গিয়ে নাট্যকার দেখিয়েছিলেন যে, দুজনেই তাদের নিজ নিজ ভুল বুঝতে পারে এবং শুধরে নেয়।
বাস্তবে কি এমনভাবে ভুল শুধরে নেয়া সম্ভব ? সে নিজে কি আদৌ এই সমস্যায় ভুগছে? নাকি, সে অন্য কোন মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত?
- দীপন, জয়ীতাকে সাজিদের সাথে একটু পরিচয় করিয়ে দাওনা।
অর্পণার কথায় জয়ীতার চিন্তায় ছেদ পড়ে; সেই সাথে ‘সাজিদ’ নামের উচ্চারনে কিছুটা সলাজ জড়তাও তার কানে বাজে।
অবাক হয়ে এবার তাকায় সে অর্পণার দিকে।
গাড়ির ভিতরের হালকা আলোতেও অর্পণার চোখেমুখে হাসির ঝিলিক তার দৃষ্টি এড়ায় না।
একটু কেমন যেন অন্যরকমও লাগছে তাকে এখন!
- জয়ি, মীট সাজিদ, হাজব্যান্ড অব অর্পণা ।
- সাজিদ, দিস ইস জয়ীতা; ইউ হ্যাভ অলরেডি হার্ড এবাউট হার।
অনেকটা রোবোটিক কন্ঠে দীপন বলামাত্রই, সাজিদ সামনের সীটে বসে থেকেই যতটুকু সম্ভব পিছনে ঘুরে তার দিকে তাকিয়ে একটা প্যাকেট এগিয়ে দিয়ে বলে উঠে,
- আপনার সাথে দেখা হওয়ার অপেক্ষায় ছিলাম। আসলে, অর্পণার মুখে আপনাদের কথা এত শুনেছি যে, তর সইছিল না। আর, এটা শুধু আপনার জন্যে।
উইন্ডসিল্ড ভেদ করে যেটুকু আলো সামনে থেকে গাড়ির ভিতরে আসছিলো, পুরোটাই তার পিছনে থাকার পরেও সাজিদের চেহারা পুরোপুরি অন্ধকারে ঢেকে যায়নি। তাই, প্যাকেটটা নেয়ার জন্যে জয়ীতা কিছুটা সামনের দিকে ঝুঁকে, তার হাসিমাখা মুখের দিকে তাকিয়ে নিজের অজান্তেই কিছুটা চমকে উঠে।
প্যাকেটটা নিয়ে ধন্যবাদ দিতে দিতেই সে আবার সিটে হেলান দিয়ে বসে।
প্যাকেটটা খুব সুন্দর একটা পার্পল কালারের র্যাপিং পেপার দিয়ে মোড়ানো; কোনায় তিনটা প্লাস্টিকের কাঁঠালচাঁপা।
গিফট বক্স প্যাকিং এর এমন সুন্দর সুন্দর আইটেম এখন গিফট শপগুলোতে অহরহ পাওয়া যায়। কিন্তু, জয়ীতা অবাক হয়েছে কাঁঠাল চাঁপা ফুল দেখে; এই ফুল সচরাচর চোখে পড়ে না। তার চেয়ে বড় বিষয় হলো, কাঁঠালচাঁপা ফুল এক সময় তার অসম্ভব প্রিয় ছিল।
অনেক দিন পর আজ সে কাঁঠাল চাঁপা ফুল দেখছে, যদিও নকল ফুল।
ছোটবেলায় স্কুলের মেইন গেইট দিয়ে ঢোকার পর পরই প্রায় আট – দশটা কাঁঠালচাঁপা ফুলের গাছ ছিল।
যখন সবগুলো গাছে ফুল ফুটত, শুধু মিষ্টি সুগন্ধেই পুরো ক্যাম্পাস ভরে যেত।
তখন তার মনে হত, শুধু সুগন্ধ দিয়েই যদি একজন মানুষকে পাগল করতে হয়, তাহলে কাঁঠালচাঁপা ফুলই যথেষ্ট।
এরপরও সে কাঁঠালচাঁপা ফুল দেখেছে, তবে দূর থেকে অথবা নার্সারিতে গিয়ে; যেখানে গাছ থাকত হাতে গোনা মাত্র কয়েকটা আর ফুলও থাকত তেমনি অল্প।
তাই, সুগন্ধে পাগল হওয়ার সুযোগ আর কখনো সে পায়নি।
ইঞ্জিন স্টার্ট হওয়ার শব্দে সে কিছুটা সচকিত হয়ে উঠে।
- আজ কফি সাজিদ অফার করছে। তাই, আমরা তার পছন্দের একটা কফি শপে যাচ্ছি। তার দিকে না তাকিয়েই দীপন কথাগুলো বললেও, এগুলো যে তার উদ্দেশ্যেই বলা তা বুঝতে এতটুকু দেরী হয় না জয়ীতার ।
- জানিস, সাজিদও তোর মতো কফি পাগল।
বলেই আবার হাসতে থাকে অর্পণা; তবে কিছুটা মুচকি হাসির মত করে হাঁসছে সে এখন।
অর্পণার এই হাঁসি তার অতি চেনা – এর মানে হলো অর্পণা এখন খুভ ভালো মুডে আছে।
শুধু তাই নয়, লম্বা সময় নিয়ে প্রাণ খুলে গল্পের জন্যে সে মুখিয়ে আছে।
ফুরসত পাওয়া মাত্রই উগড়ে দিবে।