আপনাকে যদি বেছে নিতে বলা হয়, তাহলে কোন বিশ্বাস আঁকড়ে ধরবেন?
- নির্দোষ প্রমানিত না হওয়া পর্যন্ত দোষী?
- দোষী প্রমানিত না হওয়া পর্যন্ত নির্দোষ?
‘সামহোয়্যার অন দ্য আর্থ’ বা কোন এক অজ্ঞাত স্থানের ঘটনা দিয়ে, অনেক সময় মুভি শুরু হয়।
উপরের প্রশ্নের উত্তরের জন্যে, আমি কয়েকটি ঘটনা তুলে ধরব, যেগুলো ‘সামহোয়্যার অন দ্য আর্থ’ এ ঘটেছে।
আসলে, ঘটনাস্থল ইচ্ছে করেই বলছি না। তবে, আলোচনার খাতিরে বলা যেতেই পারে যে, ঘটনাগুলো সত্যি নাও হতে পারে!!
ঘটনা – ১
সময় – ২০০৬ সাল
স্থান – সামহোয়্যার অন দ্য আর্থ
প্রথম বিশ্বের এক অতি ক্ষমতাধর দেশের এক স্পেশ্যাল ফোর্স স্থানীয় এক মিলিশিয়া বাহিনীর গোপন কম্পাউন্ডে আক্রমন করে। ঐ অঞ্চলে সংঘটিত ইতিপুর্বেকার, অন্য আর দশটা সামরিক অভিযানের মতই, এটি ছিল অত্যন্ত গতানুগতিক ও সাদামাটা একটি অভিযান।
মিলিশিয়া বাহিনীর সদস্যদের ট্রাকিং ডিভাইস দিয়ে ট্র্যাক করে, তাদের কম্পাউন্ডে ঢুকে ১৬ – ১৭ জনকে হত্যা করা হয় আর বন্দি করা হয় ১৭ জনকে। একটি গুপ্ত অস্ত্রভান্ডার খুঁজে বের করে সেটাও ধংস করা হয়। গুরুতর আহত একজন বন্দিকে উদ্ধার করে, সবাই ঐ কম্পাউন্ড থেকে নিজেদের বেস ক্যাম্পের দিকে রওয়ানা দেয়।
বিশেষ বাহিনীর সদস্যরা ঐ জায়গা থেকে চলে যাওয়ার অব্যবহিত পরেই মিলিশিয়া বাহিনীর পালিয়ে যাওয়া সদস্যরা ফিরে এসে ঘটনাস্থলকে পরিষ্কার করে এবং মৃত সহযোদ্ধাদের অস্ত্রগুলো সরিয়ে এমনভাবে ছবি তুলে ও ভিডিও করে; যা দেখে যে কেউ মনে করবে, কিছু নামাজরত মুসুল্লিকে হত্যা করা হয়েছে। এমনকি তারা একটা প্রেস রিলিজও এই ছবিগুলোর সাথে আপলোড করে দেয়; যেখানে বলা হয় যে, মসজিদে ঢুকে নামাজরত মুসুল্লিদেরকে ঠাণ্ডা মাথায় হত্যা করা হয়েছে।
এই ভিডিও এবং ছবিগুলো ইন্টারনেটের কল্যাণে সবার নজরে পড়ে।সন্দেহাতীতভাবে, আরবী এবং ইংরেজী সংবাদ মাধ্যমগুলো এটি লুফে নেয় এবং স্বাভাবিক ভাবেই অতি দ্রুত সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। এমনকি, এই সামরিক অভিযানে অংশ নেয়া সেনা সদস্যরা তাদের বেস ক্যাম্পে ফিরে বিস্তারিত রিপোর্ট করার আগেই ছবিগুলো ভাইরাল হয়ে যায়।
অতি অল্প সময়ের মধ্যেই এই অতি সাধারণ এবং গতানুগতিক একটি সামরিক অভিযান দুনিয়ার তাবৎ সংবাদ মাধ্যমে স্থান করে নিতে যেমন বেশী সময় লাগে না। তেমনি, দুনিয়ার বিভিন্ন দেশে নিন্দা, মিছিল, কুশপুত্তলিকা দাহ করা, প্রতিবাদ ইত্যাদির সুনামি বয়ে যেতেও খুব একটা দেরী হয় না।
কপাল ভালো যে, ঐ অপারেশনে অংশ নেয়া স্পেশ্যাল ফোর্সের সদস্যদের হেলমেটে ক্যামেরা থাকায় এবং তাদের সাথে ‘ক্যামেরা ইউনিট’ থাকায় পুরো ঘটনার ভিডিও করা ছিল। এরপরও প্রায় তিন দিন ধরে তারা চেষ্টা চালায় শুধুমাত্র সত্য ঘটনাটুকু মিডিয়াতে তুলে ধরার জন্যে। আরো ভয়াবহ বিষয় হলো, এই ঘটনার ব্যাপারে খুব কম লোকই তাদের কথা বিশ্বাস করে, যা কিনা আসলেই সত্যি ছিল। এরই পাশাপাশি, প্রায় মাসব্যাপী এক তদন্ত চালানো হয়, যার পুরো সময়টা ঐ স্পেশ্যাল ফোর্সকে কোন সামরিক অভিযানে অংশ নিতে দেয়া হয়নি।
ঘটনা – ২
সময় – ১৯৮৬ সাল।
স্থান – সামহোয়্যার অন দ্য আর্থ।
বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সশস্ত্র আন্দোলন হতে দেশের অখন্ডতা রক্ষা আর তাদের ক্রমবর্ধমান নাশকতামুলক কর্মকাণ্ড হতে নিরীহ জনসাধারণকে নিরাপদ রাখার লক্ষ্যে সরকার সেনাবাহিনী মোতায়েনে বাধ্য হয়। এমনি এক এলাকায় সেনাদের ক্যাম্পের আশে পাশের এলাকায় সেনারা স্থানীয়দের জন্যে স্কুল নির্মাণ করে, মহিলাদের স্বাবলম্বী করার জন্যে সেলাই মেশিন প্রদান করে, পুকুর করে মাছ চাষ করতে দেয়, ধর্মকর্ম করার জন্যে মন্দির তৈরি করে দেয়।
কিছুদিন পরে, বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সশস্ত্র দলের তরফ হতে গ্রাম প্রধানের কাছে নোটিশ এল যে, শরণার্থী হিসাবে তাদেরকে নিজের দেশ ছেড়ে পাশের দেশে চলে যেতে হবে; আদেশ না মানলে সবাইকে মেরে ফেলবে। কিন্তু গ্রামের কেউ যেতে রাজী নয়। তাই সেনারা নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করল।
সপ্তাহ খানেক পর, সেনাদের টহল দলকে এম্বুশ করল বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সশস্ত্র দল। নিরীহ গ্রামবাসী মারা পড়তে পারে ভেবে, এম্বুশে পড়া টহল দলের নেতা তাদেরকে গ্রামের মাঝে গুলি চালাতে নিষেধ করে। পাশাপাশি, অন্য আরেকটি টহল দল নিয়ে সন্তর্পণে গ্রামের অন্যদিক দিয়ে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের কাছাকাছি চলে যায়। এরপর, শুরু হয় দুপক্ষের মধ্যে গুলী বিনিময়, মারা পরে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ৩ সশস্ত্র সন্ত্রাসী।
যেহেতু পুরুষ ছাড়া শরণার্থী নিবে না বিচ্ছিন্নবাদিরা, তাই গ্রামের পুরুষদের রাতে ঘুমনোর ব্যবস্থা সেনা ক্যাম্পের পাশে করা হল। আর ক্যাম্প কমান্ডার আরো কিছু সেনা নিয়ে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ধাওয়া করতে গেলেন। তাদের নাগাল না পেয়ে ফিরে এলেন দিন কয়েক পরেই। ফিরে এসে দেখে, পুরো গ্রামে কোন মানুষ নেই, আর সব পুড়ে শেষ।
কয়েকদিন পরেই, মানবধিকার সংস্থার চিঠি এল । অভিযোগ, ক্যাম্পের সেনারা আগুন দিয়ে মন্দিরসহ পাড়ার সব বাড়িঘর পুড়িয়ে দিয়েছে, মেয়েদের ধর্ষণ করেছে, গুলি করে ৩-জন নিরীহ গ্রামবাসীকে হত্যাও করেছে।
সেনারা গ্রামে গেলে, যে বাচ্চাগুলো তাদের দেখলে ছুটে আসতো, যে মহিলারা তাদের ভাত রেধে খাইয়েছে, তাদের নাকি ঐ সেনারা হত্যা আর ধর্ষণ করেছে। নিজের হাতে গড়া স্কুল আর বাড়িঘরে নাকি এই সেনারাই আগুন লাগিয়ে দিয়েছে।
এই সেনারা কোন বিশেষ বাহিনী নয়, এদের হেলমেটে কোন ক্যামেরাও ছিল না। তাই, এদের প্রমান করারও কোন উপায় নেই যে, তারা এমন জঘন্য কাজ করেনি। যারা সাক্ষী দিতে পারত, সেই মানুষগুলোতো ততদিনে শরণার্থী হয়ে অন্য দেশে!
উল্লেখ্য, প্রায় একই প্দ্ধতি অনুসরণ করে আনুমানিক লাখখানেক মানুষকে শরণার্থী করা সম্ভব হয়েছিল, ঐ অঞ্চলে।
ঘটনা – ৩
সময় – ২০১৮ সাল।
স্থান – সামহোয়্যার অন দ্য আর্থ।
সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের অত্যাচার আর নিপীড়নে সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। চাঁদার দাবীতে জলবেষ্টিত এই এলাকার সাথে যোগাযোগের একমাত্র উপায় নৌকা/লঞ্চ ইত্যাদি চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে বাইরের দুনিয়ার সাথে প্রায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। প্রায় মাস খানেক ধরে একমাত্র বাজারও বয়কটে বাধ্য করছে। এরই মধ্যে কয়েকটি হত্যাকান্ডও ঘটে গেছে।
এমনি এক পরিস্থিতিতে, স্থানীয় সেনা ক্যাম্পের তরুন সেনা অফিসার কয়েকজনকে আটক করতে সক্ষম হয়। যার ফলো আপ হিসেবে, গোপন খবর আসে যে পাশের গ্রামে আরো কয়েকজন সশস্ত্র সন্ত্রাসী রাত কাটাবে। তখন ঐ তরুন অফিসার এক টহল দল নিয়ে অভিযানে নেমে পড়ে। তবে, এবার আর কাউকে ধরতে পারে না।
অভিযান চলাকালীন সময়ে, টহল দলের এক সদস্য দুই দিকে বেড়াবিহীন এবং দরজায় কাপড়ের টুকরো দিয়ে আড়াল তৈরি করা হয়েছে – এমন এক ঘরে ঢুকে কয়েকজনকে কম্বল গায়ে শুয়ে থাকতে দেখে। এদের পরিচয় নিশ্চিত হতে, কম্বল তুলে চেহারা দেখতে গিয়ে একজনে কিশোরীর গায়ে হাত লাগে, তার। কিশোরী ভয়ে চিৎকার দেয়।
পাশের ঘরেই অনুসন্ধানরত তরুন অফিসার দৌড়ে এসে, দেখে এক কিশোরী দরজায় দাঁড়িয়ে কাঁদছে। বিস্তারিত অনুসন্ধান করে, উপস্থিত গ্রামবাসীর সামনেই নিশ্চিত হয় যে, গায়ে হাত দেয়া ছাড়া বেশী কিছু ঘটেনি। তবে, তার অনুমতি ছাড়াই, টহল দলের ঐ সদস্য অন্ধকারে নিয়ম বহির্ভূতভাবে ঐ ঘরে ঢুকেছে বলে, সকলের সামনেই তার বিরুদ্ধে যথাযথ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ঐ গ্রাম ত্যাগ করে। নিজের ক্যাম্পে ফেরার পথে, গ্রাম প্রধানকে ডেকে ঘটনার বিস্তারিত জানিয়ে দেয় নিজে থেকেই। উদ্দেশ্য সকলেই যাতে প্রকৃত ঘটনা জানতে পারে।
পরেরদিন, তার হেডকোয়ার্টার থেকে জানতে চাওয়া হয় যে, কি ঘটেছিল ঐ রাতে। কারণ, স্থানীয় জেলা শহর হতে আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল এক প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়ে দাবি করছে যে, ঐ রাতে কিশোরী দুই বোনকে ধর্ষণ করা হয়েছে, তাদের মা-বাবাকে অস্ত্রের মুখে ঘরের বাইরে আটকে রেখে।
ইতিমধ্যে, এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে মানবাধিকার সংস্থাগুলো অতিশয় ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়ল, প্রতিবাদের ঝড়ের পর ঝড় বইতে লাগলো দেশজুড়ে, রাজধানীতে মশাল মিছিল, আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে অভিযোগ – লঙ্কা কান্ডের কিছুই বাকী থাকল না।
কয়েকদিনের মধ্যেই নিশ্চিত হওয়া গেল যে, মেয়ে দুজনের বাবা-মা ঐ রাতে গ্রামের বাইরে ছিলেন। গণধর্ষণের সুযোগ ছিল না, কারণ ঘরের ভিতরে মাত্র একজন প্রবেশ করেছিল। আর, ধর্ষণতো দুরের কথা, কোন ধরণের শারীরিক জোরজবরদস্তির চিহ্নও ঐ দু’বোনের বড় জনের শরীরে নেই। আর , ছোট বোনকে তো স্পর্শই করেনি কেউ, ঐ রাতে।
মানবাধিকার কমিশনের এক তদন্ত দল , ঘটনার সাথে জড়িত সকলকে জিজ্ঞাসাবাদ করলেন, ডাক্তারি রিপোর্ট দেখলেন এবং বুঝলেন যে ভুয়া তথ্যের ভিত্তিতে তারা এতটা উৎকন্ঠিতও সরব হয়েছিলেন। অবশ্য, সকলের উৎকণ্ঠা আর নিন্দামিশ্রিত প্রতিবাদ যতটা প্রচার পেয়েছে, উনাদের উদঘাটিত তথ্যাবলী আর ঐ তরুন অফিসারের টহল দলের নিরাপরাধ প্রমানিত হওয়া কিংবা কিছু লোকের ‘কান নিয়েছে চিলে’ বলে চিলের পিছনে দৌড়ানোর অভ্যাস ইত্যাদি অতটা প্রচার করার প্রয়োজন কেউ অনুভব করেনি।
মেয়ে দুজনকে মেডিক্যাল করানোর জন্যে হাঁসপাতালে না আনলে কিন্তু, ঐ তরুন অফিসার আর তার টহল দলের দায় মুক্তির কোন উপায় থাকত না! বরং তাদেরকে ব্যস্ত থাকতে হত নিজেদের নির্দোষ প্রমান করতে।
ঘটনা – ৪
সময় – ১৯৯৬ সাল।
স্থান – সামহোয়্যার অন দ্য আর্থ।
এবারও ঘটনার নায়ক এক তরুন সেনা অফিসার। যে কিনা ইতোমধ্যেই কয়েকটি সাফল্যজনক অভিযান চালিয়ে এলাকার সাধারণ জনগণের কাছে হিরো কিন্তু আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলের চক্ষুশূলে পরিণত হয়েছে। জাতীয় পর্যায়ের এক নির্বাচনের আগের রাতে স্থানীয় এক প্রগতিশীল ও প্রতিবাদী নারী নেত্রীকে অপহরণের অভিযোগ তোলা হয় তার বিরুদ্ধে।
অপহরনের ঘটনার বর্ণনা অনুযায়ী, ঐ নেত্রীসহ নেত্রীর দুই ভাইকে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে, দুই ভাইকে গুলি করা করেছিল, রাত প্রায় ২ টার দিকে। অথচ, ঘটনাস্থলের প্রায় ৭৫ গজের মধ্যেই আরেক ঘরে থাকা অপহৃতার অন্য দুই ভাই সেই গুলীর শব্দ শুনতে পায়নি। এমন কি, প্রায় ৭০০-৮০০ গজ দূরে নির্বাচনী কর্তব্যে আগত প্রায় ৯০ জন মানুষ যাদের মধ্যে বেসামরিক প্রশাসনের কর্মকর্তাও ছিলেন, তারাও শুনেনি। অপহৃতার ঘরে ব্যবহার্য কাপড়চোপড়, বইপত্র ইত্যাদি পাওয়া যায়নি, যেন অপহরণকারীরা তাকে দৈনন্দিন ব্যবহার্য জিনিসপত্রসহ অপহরণ করেছে।
এখানেই শেষ নয়, নিখোঁজ নেত্রী তার নিজের দলের প্রতিপক্ষ দলের প্রার্থীর পক্ষে প্রচার চালাচ্ছিলেন। একাধিক উদাহরণ আছে, যেখানে এমন বোকামির সাজা হিসেবে অন্তত অপহরণ বা মারধোর করা হয়েছে, অনেক ব্যক্তিকে; ঐ নির্বাচনী প্রচারাভিযান চলাকালীন সময়েই ।
অপরদিকে,ঐ তরুন সেনা অফিসারের এই ঘটনায় জড়িত না থাকার সপক্ষে যথেষ্ট প্রমান থাকে সত্ত্বেও শুধুমাত্র নিখোঁজ নেত্রীর ভাইয়ের মুখের কথার ভিত্তিতে তাকে দোষী দাবি করা বিচারের আওয়াজ তোলা হয়েছে। যদিও সম্ভাব্য অপহরণকারীর ব্যাপারে ঘটনার পর পরই দেয়া তার ভাইয়ের বক্তব্য, আর অন্য সময় দেয়া বক্তব্যে যেমন ভিন্নতা আছে; তেমনি নির্বাচনের ফলাফলের আগে ও পরে সম্ভাব্য অপহরণকারীর পরিচয় ভিন্ন ভিন্ন দেখা গেছে, ঐ নেত্রীর পার্টির প্রেস রিলিজে।
ঘটনার পড়ে এক অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির মতে, নিখোঁজ নেত্রী নিজ ইচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছায় হোক অপহৃত হয়েছে বলে মতামত দেন। কিন্তু যেহেতু অপহরণ কারীকে চিহ্নিত করতে পারেনি, তাই কারো বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহনের সুপারিশ করেনি। তদুপরি, প্রতি বছর ঐ তরুন সেনা অফিসারের বিচারের দাবীতে অনেক অনেক কার্যক্রম ও নানা ধরণের আয়োজন করা হয়।
নিরাপত্তা রক্ষার জন্যে যাদেরকে দায়িত্ব দেয়া হয়, তারাই যদি অপরাধ করে , তাও আবার হত্যা, ধর্ষণ, বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়া, অপহরণ ইত্যাদির মত জঘন্য অপরাধ; তাহলে কোন অজুহাত দেখানো বা সাফাই গাওয়ার বিন্দুমাত্র সুযোগ থাকতে পারে বলে মনে হয় না।
ঘটনাগুলোর সংবেদনশীলতা এত বেশী আর ভিলেন এমনি এক চরিত্র যে, এগুলো খুব স্বাভাবিকভাবেই অতি আলোচিত।
সাধারণ বিবেকবান যে কোন মানুষই যেখানে এ ধরণের ঘটনার প্রতিবাদ করবেন, সেখানে যদি প্রতিবাদ নিশ্চিত করার জন্যে বিশেষ কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়, তাহলে প্রতিবাদের পারদের মাত্রা কোন উচ্চতায় উঠতে পারে, তা সহজেই অনুমেয়।
আমাদের চারপাশে এমনি ঘটনা অস্বাভাবিক কিছু নয়।
এমন অনেক ঘটনাতেই, উদোড় পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে।
সবচেয়ে ভয়াবহ ব্যাপার হল, অন্যকে দোষী সাব্যস্ত করার জন্যে অনেক ক্ষেত্রে নিজেই ঘটনা ঘটিয়ে কৃতকর্মের দোষ আরেকজনের উপর চাপিয়ে দেয়ার নানাবিধ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। ফলশ্রুতিতে, নির্দোষ প্রমান করার কোন উপায় না থাকলে, অভিযুক্তকে দোষী হিসেবেই বিবেচনা করা হয়েছে, প্রায় সকল ক্ষেত্রেই । শুধু তাই নয় বরং অভিযোগকে ভাইরাল করে, প্রতিবাদ আর বিচারের দাবীর সুনামি বইয়ে দেয়া হয়েছে।
এমন ঘটেই চলছে, এবং আরো চলতে থাকবে, হয়তবা।
তবে, আমি বা আপনি এক্ষেত্রে কোন বিশ্বাস লালন করছিঃ
- নির্দোষ প্রমানিত না হওয়া পর্যন্ত দোষী?
- দোষী প্রমানিত না হওয়া পর্যন্ত নির্দোষ?
ইচ্ছে হলে, উত্তরটা আপনার নিজের কাছেই রেখে দিতে পারেন।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জুন, ২০১৮ রাত ১১:১০